১) থ্রী জর্জেস ড্যমঃ
পুরো দুনিয়ার সবচাইতে বেশি বিদ্যুৎ তৈরিকারী প্ল্যান্ট এর পেছনে সব চাইতে বড় অবদান এই বাধ এর, যা কিনা চায়নাতে অবস্থিত। ২০১১ সালে কার্যক্রম শুরু করা এই প্ল্যান্টের জন্য নির্মিত বাধের পুরো দৈর্ঘ ৬৬০ কিলোমিটার আর গড় পুরুত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। ষাটটি আইফেল টাওয়ার গলিয়ে ফেললেও এই বাধের এর জন্য প্রয়োজনীয় ইস্পাত পাওয়া যাবেনা। পুরো নদীর বাধ ব্যাতীত শুধু প্ল্যান্টের জন্য বাধের যে অংশটুকু আছে তার দৈর্ঘ্য প্রায় আড়াই কিলোমিটারের কাছাকাছি আর উচ্চতা ১০০ মিটারের মতো। এই দৈত্যাকৃতির বাধ যেই উদ্দেশ্যে সেই প্লান্টের ক্ষমতা জেনে নিতে ইচ্ছা করছেনা ? মাত্র ১৭,৬০০ মেগাওয়াট।
২)ইতাইপু পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রঃ
“ইতাইপু” নামের অর্থ গান গাওয়া পাথর। সাধে কি আর এই নাম! মানুষের সুখের স্বার্থে একেবারে পর্বত সমান পাথরের স্তুপ দিয়ে বানানো হয়েছে ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ে সীমান্তে অবস্থিত এই এর বাঁধ। এই বাঁধ বানাতে যে পরিমান কনক্রীট লেগেছে, তা দিয়ে ২১০টি ফুটবল স্টেডিয়াম বানানো যেতো আর যে পরিমান লোহা লেগেছে তা দিয়ে ৩৮০টি আইফেল টাওয়ার বানানো যেতো। এতো কিছু করেছে কি করে সেকথা ভাবছেন? তাহলে জেনে নিন, যে পরিমান শ্রম এর পেছনে লেগেছে, তা দিয়ে প্রতি ঘন্টায় একটা করে ২০ তলা ভবন বানানো যেতো। এই ৬৫ তলা ভবনের সমান উচু এই বাঁধটাই সাহায্য করেছে ১৪০০০ মেগাওয়াট এর বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে, যা কিনা প্রতিদিন ৪৩০০০ ব্যারেল তেল পোড়ানোর সমান শক্তি ।আর এই বিশাল পরিমানের বিদ্যুৎ গ্রাহকদের কাছে পৌছে দিতে ব্যাবহৃত হচ্ছে ৪,৩০৯ কিলোমিটার দৈর্ঘের বৈদ্যুতিক তার।
৩) গুরি ড্যাম পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রঃ
ভেনাজুয়েলাতে অবস্থিত এই প্ল্যান্ট ১০,২৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ তৈরি করতে সক্ষম, যা কিনা দেশের মোট প্রয়োজনের ৪০ শতাংশ। প্রায় ৬০তলা সমান উঁচু এই বাঁধটি ১৩০০ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। এর কনক্রীট দিয়ে প্রায় ১০০টি ফুটবল স্টেডিয়াম বানানো যেতো। আর তেল সমৃদ্ধ দেশ হওয়া সত্বেও বলিভিয়া পানিবিদ্যুৎ কে বেছে নিয়েছে, সেই কারনে তারা প্রায় ২.৭ মিলিওন ব্যারেল তেল বেশি রপ্তানি করতে পারছে।যদি তারা এই পরিমান বিদ্যুৎ পেট্রোলিয়াম চালিত কোন প্লান্ট থেকে করতে চাইতো তাহলে শুধু সেই প্লান্ট থেকেই ২০ মিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড তৈরি হতো প্রতি বছর।
৪) টিউচুরি ড্যাম পাওয়ার প্ল্যান্টঃ
ব্রাজিলিয়ানরা শুধু চর্মগোলক নিয়েই খেলাধুলায় পারদর্শী না, তারা বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়েও খেলা করে। ব্রাজিলের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্লান্টটি পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে যায়গা দখল করে আছে। এই বাঁধ থেকে যে পরিমান পানি বিদ্যুৎ উতপাদনে ব্যাবহার করা হয় তা পুরো পৃথিবীর যেকোন প্ল্যান্টের চেয়ে বেশি। প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১২০০০ টি হাতির ওজনের সমান পানি টার্বাইনে এসে পড়ে। ১৯৮৪ সালে তৈরিকৃত এই প্ল্যান্টটির উৎপাদন ক্ষমতা ৮৩৭০ মেগাওয়াট।
৫) গ্র্যান্ড কোউলি ড্যাম পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রঃ
এটি যুক্তরাষ্ট্র এর বৃহত্তম পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এই প্ল্যান্ট এর বাধ এর উচ্চতা প্রায় পঞ্চাশ তলা উচু বিল্ডিং এর সমান। আর দৈর্ঘ প্রায় দেড় কিলোমিটার। বাধ থেকে টার্বাইন পর্যন্ত প্রতি মিনিটে আটাশ হাজার ঘনমিটার পর্যন্ত পানি নিয়ে যাওয়ার ব্যাবস্থা রাখা হয়েছে এই পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রে।নায়াগ্রা ফলসে যদি টার্বাইন বসানো হয় তাহলে উচ্চতার কারনে যে পরিমান শক্তি পাওয়া যেতো এখানেও ঠিক সেই পরিমান শক্তি পাওয়া যায়। এই প্লান্টে কি পরিমান বিদ্যুৎ তৈরি হয় জানেন ? মাত্র ৬৮০৯ মেগাওয়াট।
[[ বিদ্রঃ চার নং এর নামের সঠিক উচ্চারন নিয়ে দ্বিধা আছে। কেউ জানলে সংশোধন করে দিবেন। ]]
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:০৯