somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এখন অনেক রাত......

১০ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চারিদিকে নিঝুম অন্ধকার। দূর থেকে কুকুরের ডাক শোনা যায়। গভীর রাতে এই মফস্বলের কেউ জেগে নেই, রাস্তা গুলো ধু-ধু ফাকা দুচারটে বাড়িতে জানালা খোলা, কিন্তু আলো জ্বালানো নেই। ঐ যে দূরের বাড়িতে দেখা যায়, ওটার দুতলার জানালাটাও খোলা। সেই জানালায় আলো দেখা যায়, একটা ছায়া নড়াচড়া নজরে পরছে। চলুন তো দেখা যাক এতো রাত পর্যন্ত জেগে থাকার কি কারন থাকতে পারে।এখানেই দাড়ান, এখানেই দাড়ান, এখান থেকে ঘরটা সরাসরি দেখা যায়। এক যুবক ঘরময় পায়চারী করছে। মুখে সিগারেট ধরানো। জানালা বরাবর হেটে যাচ্ছে আর একটার পর একটা সিগারেট টেনে যাচ্ছে।



নাহ! এখানে থাকলে চলবেনা, আসুন ভেতরে যাই। খুব সাবধান, কোন শব্দ যেনো না হয়। সিঁড়ি দেখে উপরে আসুন, পা মচকাবেননা। ওই তো সেই রুম। আরে দেখুন, এতো ফাহাদ সাহেব। চিনতে পারলেননা? অনেক বড় অফিসার, এই বয়সে অনেক টাকা-পয়সা কামিয়েছেন, বিয়ে-টিয়ের ঝামেলায় জড়াননি এখনো। তাহলে এই নির্ঝঞ্জাট জীবনে কেন এই অনর্থক রাত জেগে থাকা? যদিও বিষয়টি ব্যাক্তিগত, তারপরেও আপনাদের বলি। বাড়ি থেকে ফাহাদ সাহেবের জন্য পাত্রী দেখা চলছে। বেশ কয়েকটা মেয়ে দেখাও হয়ে গেছে। সুন্দরী পাত্রী, উচ্চশিক্ষিত, অভিজাত পরিবার। কিন্তু প্রতিবারই কোন না কোন কারনে ফাহাদ সাহেব বিয়েতে সম্মতি দেননি। আজকেও তিনি গ্রাম থেকে এসেছেন, গিয়েছিলেন পাত্রী দেখতে। বাদবাকী তার মুখ থেকেই শুনুন।

“মেয়েটি সুন্দর ছিলো। কিন্তু কথা-বার্তা শুনে তো মনে হয়না আগে কখনো কোন ছেলের সাথে ঘনিষ্ঠতা ছিলোনা।তাহলে কি শুরুতেই মিথ্যা বললো? মিথ্যা দিয়ে কি কোন ভালো সম্পর্কের শুরু হতে পারে? নাহ! কখনই না, মিথ্যা দিয়ে যে সম্পর্কের শুরু তা কখনই টিকতে পারেনা। বললো যে, ফোন ব্যাবহার করে অনেক আগে থেকেই, তাহলে কি আমার মতোই……। আর ফেসবুক থাকাটাই বা মেনে নেই কি করে। আমার মতো কি তারো অচেনা বন্ধু আছে? সেও কি রাত জেগে চ্যাট করে তাদের সাথে? মিতুর সাথে তো আমারো ফেসবুকেই পরিচয় হয়েছিলো। কতো চ্যাট, দেখা করা,আর তার পরে প্রেম। সম্পর্কটাকে দৈহিক দিকে না গড়ালেও পারতাম। কিন্তু এই মেয়েগুলোই এমন, আমি না চাইলেও এরা নিজেরাই ওদিকে গড়াবে। আর সেটা না পারলে অন্য এক ছেলেকে খুঁজে নিবে। আর সীমার সাথে তো ভালো সম্পর্কই করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ওই আমাকে ছেড়ে চলে গেলো। আর এই যে ফোন, কতো যে রাত নির্ঘুম কাটিয়েছি এই ফোনে কথা বলে। কেউ আমার পাশে থাকলোনা। নিজের প্রয়োজন ফুরালে সবাই চলে গেলো। একবারের জন্যও আমার কথা কেউ ভাবলোনা।এ জন্যই তো এখন আর কারো উপরে আস্থা রাখতে পারিনা।

সাথীর কথা ইদানিং খুব মনে পড়ে। খুব ভালোবাসতো মেয়েটা আমাকে। এবরশন এর আগে খুব ভয় পেয়েছিলো, করতে চায়নি। আমি জোড় করে অনেক কিছু বুঝিয়ে, অনেক মন ভোলানো আশ্বাস দিয়ে রাজি করিয়েছি। মেয়েরা আসলে নিজেদের অনেক চালাক মনে করে, কিন্তু আমার মতো উপরে বোকার মতো অভিনয় করা ছেলেদের মনের কূট-পরিকল্পনা ধরার মতো বুদ্ধি এদের কখনই ছিলোনা। কতো রাত একসাথে কাটিয়েছি সাথীর সাথে। ভাবছেন, এমনিতেই রাত কাটাতে রাজি হয়েছিলো? না, আপনি ভূল করছেন, এর জন্য আমাকে অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হয়েছে। বিয়ের আশ্বাস দিতাম, ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনে কথা বলে বুঝাতাম তাকে ছাড়া আমি বাঁচবোনা, সেই আমার জীবনে একমাত্র মেয়ে। অনেক টাকা খরচ করে গিফট পাঠাতে হতো, প্রায়ই দামী রেস্টুরেন্ট এ ডিনার করাতে হতো। সবকিছু কি এতো সহজে পাওয়া যায়? তারপরে ওর বাসা থেকে হঠাত করেই বিয়ে ঠিক করলো। আমার কাছে এসে সেকি কান্না! আমি পাত্তা দেইনি। ওর কান্না শোনার মতো সময় আমার হাতে ছিলোনা। চলে গিয়েছিলো সাথী, একেবারেই চলে গিয়েছিলো, যাওয়ার সময় বলে গিয়েছিলো, আমি নাকি কখনো সুখী হতে পারবোনা…। পাগল মেয়ে!
এখন কোন ভাবেই কোন মেয়েকে বিশ্বাস করতে পারিনা। বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে গেলে মনে হয়, এই মেয়েটাও হয়তো অন্য কোন যুবকের সাথে…”।

আসুন, নেমে আসুন, আস্তে করে নেমে আসুন, সাবধানে নামবেন। উপরের ঐ ফাহাদ সাহেব আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। সবকিছুতেই নিজের ছায়া দেখতে পাচ্ছেন। উনি কালো সানগ্লাস পরেছেন। এখন সবকিছুই তারকাছে কালো মনে হচ্ছে। সাদাকেও উনি কালো দেখেন। নিজের দোষটুকু উনার চোখে পরেনা। আসুন বাইরে আসুন, ওখানে খাকবেননা।
বাইরে থেকে সূর্যের আলো ঘরে ঢুকছে। রাস্তায় লোকজনের চলাচলের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। ছোট বাচ্চারা প্রাতঃভ্রমনে বেরিয়েছে বাবা-মার সাথে। ফাহাদ সাহেবের বড্ড ঘুম প্রয়োজন। ফাহাদ সাহেবের চোখে ঘুম আসেনা।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৩৫
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×