নাহ! এখানে থাকলে চলবেনা, আসুন ভেতরে যাই। খুব সাবধান, কোন শব্দ যেনো না হয়। সিঁড়ি দেখে উপরে আসুন, পা মচকাবেননা। ওই তো সেই রুম। আরে দেখুন, এতো ফাহাদ সাহেব। চিনতে পারলেননা? অনেক বড় অফিসার, এই বয়সে অনেক টাকা-পয়সা কামিয়েছেন, বিয়ে-টিয়ের ঝামেলায় জড়াননি এখনো। তাহলে এই নির্ঝঞ্জাট জীবনে কেন এই অনর্থক রাত জেগে থাকা? যদিও বিষয়টি ব্যাক্তিগত, তারপরেও আপনাদের বলি। বাড়ি থেকে ফাহাদ সাহেবের জন্য পাত্রী দেখা চলছে। বেশ কয়েকটা মেয়ে দেখাও হয়ে গেছে। সুন্দরী পাত্রী, উচ্চশিক্ষিত, অভিজাত পরিবার। কিন্তু প্রতিবারই কোন না কোন কারনে ফাহাদ সাহেব বিয়েতে সম্মতি দেননি। আজকেও তিনি গ্রাম থেকে এসেছেন, গিয়েছিলেন পাত্রী দেখতে। বাদবাকী তার মুখ থেকেই শুনুন।
“মেয়েটি সুন্দর ছিলো। কিন্তু কথা-বার্তা শুনে তো মনে হয়না আগে কখনো কোন ছেলের সাথে ঘনিষ্ঠতা ছিলোনা।তাহলে কি শুরুতেই মিথ্যা বললো? মিথ্যা দিয়ে কি কোন ভালো সম্পর্কের শুরু হতে পারে? নাহ! কখনই না, মিথ্যা দিয়ে যে সম্পর্কের শুরু তা কখনই টিকতে পারেনা। বললো যে, ফোন ব্যাবহার করে অনেক আগে থেকেই, তাহলে কি আমার মতোই……। আর ফেসবুক থাকাটাই বা মেনে নেই কি করে। আমার মতো কি তারো অচেনা বন্ধু আছে? সেও কি রাত জেগে চ্যাট করে তাদের সাথে? মিতুর সাথে তো আমারো ফেসবুকেই পরিচয় হয়েছিলো। কতো চ্যাট, দেখা করা,আর তার পরে প্রেম। সম্পর্কটাকে দৈহিক দিকে না গড়ালেও পারতাম। কিন্তু এই মেয়েগুলোই এমন, আমি না চাইলেও এরা নিজেরাই ওদিকে গড়াবে। আর সেটা না পারলে অন্য এক ছেলেকে খুঁজে নিবে। আর সীমার সাথে তো ভালো সম্পর্কই করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ওই আমাকে ছেড়ে চলে গেলো। আর এই যে ফোন, কতো যে রাত নির্ঘুম কাটিয়েছি এই ফোনে কথা বলে। কেউ আমার পাশে থাকলোনা। নিজের প্রয়োজন ফুরালে সবাই চলে গেলো। একবারের জন্যও আমার কথা কেউ ভাবলোনা।এ জন্যই তো এখন আর কারো উপরে আস্থা রাখতে পারিনা।
সাথীর কথা ইদানিং খুব মনে পড়ে। খুব ভালোবাসতো মেয়েটা আমাকে। এবরশন এর আগে খুব ভয় পেয়েছিলো, করতে চায়নি। আমি জোড় করে অনেক কিছু বুঝিয়ে, অনেক মন ভোলানো আশ্বাস দিয়ে রাজি করিয়েছি। মেয়েরা আসলে নিজেদের অনেক চালাক মনে করে, কিন্তু আমার মতো উপরে বোকার মতো অভিনয় করা ছেলেদের মনের কূট-পরিকল্পনা ধরার মতো বুদ্ধি এদের কখনই ছিলোনা। কতো রাত একসাথে কাটিয়েছি সাথীর সাথে। ভাবছেন, এমনিতেই রাত কাটাতে রাজি হয়েছিলো? না, আপনি ভূল করছেন, এর জন্য আমাকে অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হয়েছে। বিয়ের আশ্বাস দিতাম, ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনে কথা বলে বুঝাতাম তাকে ছাড়া আমি বাঁচবোনা, সেই আমার জীবনে একমাত্র মেয়ে। অনেক টাকা খরচ করে গিফট পাঠাতে হতো, প্রায়ই দামী রেস্টুরেন্ট এ ডিনার করাতে হতো। সবকিছু কি এতো সহজে পাওয়া যায়? তারপরে ওর বাসা থেকে হঠাত করেই বিয়ে ঠিক করলো। আমার কাছে এসে সেকি কান্না! আমি পাত্তা দেইনি। ওর কান্না শোনার মতো সময় আমার হাতে ছিলোনা। চলে গিয়েছিলো সাথী, একেবারেই চলে গিয়েছিলো, যাওয়ার সময় বলে গিয়েছিলো, আমি নাকি কখনো সুখী হতে পারবোনা…। পাগল মেয়ে!
এখন কোন ভাবেই কোন মেয়েকে বিশ্বাস করতে পারিনা। বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে গেলে মনে হয়, এই মেয়েটাও হয়তো অন্য কোন যুবকের সাথে…”।
আসুন, নেমে আসুন, আস্তে করে নেমে আসুন, সাবধানে নামবেন। উপরের ঐ ফাহাদ সাহেব আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। সবকিছুতেই নিজের ছায়া দেখতে পাচ্ছেন। উনি কালো সানগ্লাস পরেছেন। এখন সবকিছুই তারকাছে কালো মনে হচ্ছে। সাদাকেও উনি কালো দেখেন। নিজের দোষটুকু উনার চোখে পরেনা। আসুন বাইরে আসুন, ওখানে খাকবেননা।
বাইরে থেকে সূর্যের আলো ঘরে ঢুকছে। রাস্তায় লোকজনের চলাচলের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। ছোট বাচ্চারা প্রাতঃভ্রমনে বেরিয়েছে বাবা-মার সাথে। ফাহাদ সাহেবের বড্ড ঘুম প্রয়োজন। ফাহাদ সাহেবের চোখে ঘুম আসেনা।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৩৫