মেয়েটা আমার প্রেমে পড়েছিলো, জানিনা কিভাবে বা কি কারনে! এতো মানুষ পৃথিবীতে অবশিষ্ট থাকতে আমাকেইবা কেনো! সবাই বলে, আর আমিও বেশ ভালো করে জানি, প্রেমে পরতে কোন কারন লাগেনা। মানুষ প্রেমে আচমকাই পরে। প্রেমে পরতে কোন ধন-সম্পদ,সুন্দর চেহারা, সুঠাম দেহ লাগেনা; লাগেনা সোনালী অতীত কিংবা সুবর্ণ ভবিষ্যত। ঘণীভূত মেঘ থেকে যেমন বৃষ্টির ফোটা গুলোর পৃথিবীতে পরা ছাড়া আর কোন উপায় থাকেনা, তেমনি মেয়েটারও বোধহয় আর কোন উপায় ছিলোনা। আমি আসলে এসব প্রেম ভালোবাসার জন্য কখনই যোগ্য ছিলাম না, তাই ওর প্রেমে পরাটা আমার যোগ্যতা নয়, বরং তার উদারতা। ও শুধু ভালবেসেই গেলো, বিনিময়ে কখনো কিছুই চাইলোনা। ও যখন আমার ছন্নছাড়া জীবনের অনিয়মগুলো দেখে উদ্বিগ্ন হতো, আমি তখন তার প্রতি আরও উদাসীন হয়েছি। ও যখন তার অতীত জীবনের কষ্টগুলো বলে শান্তি খুঁজতে চেয়েছে, আমার কাছে মনে মনে শান্তনা প্রত্যাশা করেছে, আমি তখন অন্যদিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হেসেছি, সে হাসি নির্লজ্জের হাসি। সে যখন আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলো, আমি তখন তার চোখে তাকিয়েছিলাম,কি উজ্জ্বল আর আনন্দ মাখা ছিলো সে চোখ, সে চোখে ছিলো আমার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস,কোথায় সে এতো বিশ্বাস পেলো জানিনা, কিন্তু আমি তো তার হাত ধরতে পারিনি, কেনো জানি আড়ষ্ঠ হয়ে গিয়েছিলো আমার হাত, বাড়িয়ে দেওয়ার সাহসটুকু পাইনি। হাত আমার পকেটেই ঢুকানো ছিলো, আর ঠোঁটে ছিলো সেই নি্লজ্জের হাসি। সে হাত ফিরিয়ে নিয়েছিলো, তখন আমি তার চোখের দিকে তাকাতে পারিনি, কোন মানুষ ওই অবস্থায় তার চোখের দিকে তাকাতে পারতো বলে আমার মনে হয়না। কিছুক্ষন নিরবতা, তারপর আবার সেই আগের মতো ব্যাবহার, কেমন করে সে পারে এতো তাড়াতাড়ি সব কিছু ভুলে যেতে আমি নিজেও জানিনা। আমার সংগে বেশি সময় কাটাবে বলে, রিক্সাতে না উঠে সে হেটে যাওয়ার জিদ করতো। বুঝতে পারতাম, তার হাটতে অনেক কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু তারপরো তাকে কিছুতেই রিক্সায় উঠতে রাজি করাতে পারতামনা। সামান্য কিছু বলার কারনে, কতোদিন সে রাগ করে না খেয়ে থেকেছে। অথচ, আমি যদি ব্যাস্ততার কারনে কখনো দেরি করে খেতাম তাহলেও তার সে কি চেঁচামেচি, কতো অভিযোগ, কতো অনুযোগ। ও যখন আমার পাশে হাটতো, কিছুক্ষন গল্প করেই আমি আর কথা বাড়ানোর কোন প্রসঙ্গ খুঁজে পেতাম না। তখন ও কোথা থেকে সব গল্প নিয়ে এসে জোগাড় করতো, আর নিজে নিজেই সেই গল্প বলে যেতো, আমি শুধু মাঝে মাঝে হ্যা-না বলতাম। কখনও ও নিজের গল্প শুনে নিজেই হেসে অজ্ঞান। ইন্টারনেটে চ্যাট এর সময়ে যখন সে ব্যাস্ত থাকতো অন্য কোন কাজে, অথবা ইন্টারনেট স্পীড স্লো থাকতো, তখন সাথে সাথে ফোন করে রাগ করতে নিষেধ করতো। আশ্চর্য, এতকিছুর পরেও আমি ওর উপর রাগ করি কি করে!
আমি সবসময় তার জিদের কাছে হেরেছি …… না না মিথ্যা কথা …… আমিও একবার জিতেছিলাম, তবে সেভাবে যেনো আর কেউ না জিতে, অমন একবার জেতার চাইতে লক্ষবার হারাও অনেক সুখের। তখন আমার লম্বা ছুটি, প্রায় বিয়াল্লিশ দিন। আমি বাড়ি যেতে চেয়েছিলাম, সব কিছু ঠিকঠাক। বিকেলে শেষ বারের মতো দেখা করতে আসলো ও আমার সাথে। দেখা করে, ওকে পৌছে দিয়ে, টিকেট কাটতে যাবো, পরদিন সকালেই ট্রেন। ও অনেক অনুরোধ করেছিলো থাকার জন্য। আমার বন্ধুদের সবাইকে অনুরোধ করেছিলো, আমাকে জোর করে হলেও যেনো যেতে না দেয়। কিন্তু তখনো আমার মুখে সেই নির্লজ্জের হাসি। কিছুতেই রাজি হইনি থাকার জন্য। যখন ওকে পৌছে দিতে যাই, রাস্তার মধ্যে অজস্রবার অনুরোধও আমার মন গলাতে পারেনি। তার চাওয়া বেশি কিছু ছিলোনা, সে শুধু চেয়েছিলো মাত্র দুইটি দিন। হায়!!! আমার বিয়াল্লিশ দিনের লম্বা আর বিরক্তিকর ছুটির মধ্যে সামান্য দুটি দিন কি তার জন্য খুব বেশি চাওয়া ছিলো। আর সেই দুটি দিন ও আমার হাত ধরে ঘুরতে চায়নি, চায়নি কোন দামী রেস্তোরায় বসে ডিনার করতে। শুধু চেয়েছিলো, আমি যেনো তার কাছে থেকে অন্তত দুই কিলোমিটার দূরের একটি রুমে থাকি, এতেই তার শান্তি। কিন্তু তাতেও আমি রাজি হইনি, সে প্রথম বারের মতো আমার জিদের কাছে হেরেছিল, আমি জিতেছিলাম। আচ্ছা, চোখের জল ছাড়া কি কাঁদা সম্ভব?? কান্না তো অন্তরের বিষয়, তার সাথে চোখের জলের কি সম্পর্ক!! ও বোধহয় সেদিন কেঁদেছিলো, আমি সেদিনো তার চোখের দিকে তাকানোর সাহস পাইনি। কান্না বললে তার কষ্টটাকে ছোট করে দেখা হবে, সেটা কান্নার চাইতেও বেশি ছিলো। রাতে ঘুমিয়েছিলো কিনা সেটাও আমাকে বলেনি।
কোথায় যেনো একটা উক্তি পড়েছিলাম “পৃথিবীর সবচাইতে কাপুরুষ ব্যাক্তি হলো সে, যে কিনা নিজে ভালবাসার কোন ইচ্ছা ছাড়াই কোন নারীর মনে ভালোবাসার সৃষ্টি করে।" উক্তিটা যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে আমি শুধু এই পৃথিবী নয় পুরো মহাবিশ্বের মধ্যে সবচাইতে কাপুরুষ ব্যাক্তি।