অনেকেই বাবা দিবস উপলক্ষে বাবাদের নিয়ে লিখছেন আজ। আমার বাবাও আমার কাছে বিশেষ একজন, তার অনেক বীরত্বও আছে। কিন্তু আমার মতো লোক সেগুলো লিখতে গেলে আমার বাবার সুনাম হবে নাকি দুর্নাম হবে বলা মুশকিল। আমার লেখনী দিয়ে তার বর্ননা দিতে গিয়ে তার মাহাত্ন নষ্ট করতে চাইনা। আবার বাবা দিবসে বাবাকে নিয়ে না লিখলে কেমন জানি ফাঁকা ফাঁকা লাগে। তাই অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিলাম নিজের অনাগত সন্তানের বাবাকে নিয়ে লিখব।
আমার যতো লক্ষনীয় বৈশিষ্ট আছে সেগুলোর মধ্যে সবচাইতে তীব্র্য আর সবার আগে চোখে পরার মতো বৈশিষ্ট হলো আমার শারীরিক গড়ন। উচ্চতার দিক দিয়ে বোধহয় সাধারন বাঙ্গালীর মতই, তবে অনেকেই খাটো বলবেন(দাবিটা সত্য ও বটে ) কিন্তু এব্যাপারে কাকুতি মিনতি করলে সবাই মেনে নিবে হয়তো। সমস্যাটা অন্যখানে, সেটা আমার উচ্চতা নয়, প্রশস্ততা। কেউ যদি আমাকে মোটা বলে তবে সেটা আমার জন্য স্বস্তির কারন হবে কিনা জানিনা তবে ওই লোক যে পাগল সেটা প্রমানের জন্য আর কোন যুক্তির প্রয়োজন হবেনা। আমাকে দেখলে একেবারে ছোট বাচ্চা মনে হয় । আর এটা নিয়ে ঝামেলাও কম পোহাতে হয়নি আমাকে। তবে আমার চাইতে যে মানুষটাকে বেশি ঝামেলা সহ্য করতে হয়েছে তিনি হলেন আমার আম্মা। ছোট বেলায় নাকি আমার পেছনে খাবার নিয়ে একবাড়ি থেকে অন্য বাড়ি পর্যন্ত্ দৌড়ে বেড়িয়েছেন, তারপরো খাওয়াতে পারেননি । আর তার সেই খাওয়ার হুকুম অমান্য করার শাস্তি আমি আজও টের পাচ্ছি।
আমার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বন্ধুরা দেখা হলে এখনো বলে “আরে !!!!! তুই তো এখনো আগের মতই আছিস, একটুও বদলাসনি ” মনে মনে হতাশ হলেও, অনেক কষ্ট করে মুখে হাসি আনি। এই ঘটনা তো মামুলি ব্যাপার, আরো অবিশ্বাস্য ঘটনা আছে। …………… তখন আমি অনেক ছোট, সব কিছু মনে রাখার মতো শক্তি তখনো ছিলোনা, বুঝতামও না তেমন কিছু, তারপরও আব্বা যখন বাসাতে প্রাইভেট পড়াতো তখন তার কোল ঘেষে বসে থাকতাম, আর মাঝে মাঝে সামনের বই থেকে দুই একটা শব্দ উচ্চারন করে নিজের বিদ্যার গভীরতা জাহির করতাম। সে কারনে আব্বার অনেক ছাত্র আমাকে বেশ ভালো করে চিনতো। আমাকে তারা অনেক ভালোবাসতো।
এই কয়েক দিন আগের কথা, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। রেল স্টেশনে এক বড় ভাইয়ের সাথে দেখা, আমি তার নাম শুনেছিলাম, কিন্তু কোনদিন দেখিনি ,[আসলে দেখেছিলাম, কিন্তু সেটা অনেক আগে, ছোটবেলায়, ভূলে গিয়েছিলাম] আমি তাকে দেখে চিনতে পারিনি, কিন্তু তিনি আমাকে দেখে চিনে ফেলেছেন । তিনি আমার নাম পর্যন্ত মনে রেখেছেন, আমি তো অবাক, নাম না হয় মনে আছে , কিন্ত এতদিন পর আমার চেহারা কি করে মনে রাখে!!!!!! প্রায় ১৬ বছরের কথা !! কি করে চিনতে পারলো সেটা জিজ্ঞেস করায় উনি বলল “তুমি তো সেই আগের মতোই আছ, আমি প্রথম দেখাতেই চিনতে পেরেছি।” আমি তো পুরাই অবাক।
এমন অনেক মজার ঘটনা আছে। আরো একটা বলি, আমি তখন কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি। কলেজ ছুটি হওয়ার কারনে, বাসাতে এসেছি। আমি বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছি, পাশেই রাস্তা। কিছুক্ষন দাড়ানোর পর স্কুলের ছাত্ররা আমাদের বাসায় প্রাইভেট পড়া শেষে বের হয়ে যাচ্ছিলো। রাস্তা দিয়ে হেটে যাওয়া একলোক আমাকেও স্কুলের ছাত্র ভেবে জিজ্ঞেস করে “কাল কি স্কুল বন্ধ?” আমি তো অবাক, পাগলে কারে কি জিজ্ঞেস করে !!! আমি কোন উত্তর না দেওয়ায় উনি এমন ভাবে তাকালো যেনো বলতে চায় “আজকালের ছেলেরা এতো বেয়াদপ যে বড়দের প্রশ্নের উত্তরও দেয়না”।
আর আমার নানাবাড়ির আত্নীয়রা তো আমাকে আর আমার ছোট ভাইকে নিয়ে প্যাচ লাগায়ে দেয়। আমি যে বড় সেটা মেনে নেওয়ার মতো কষ্টকর জিনিস যেনো এই দুনিয়াতে আর নেই। :#> :#>
তাই বলে ভাববেননা যে আমি শুধু এই ধরনের অপমানাত্নক অভিজ্ঞতারই মুখোমুখি হই। বিপরীত অভিজ্ঞতাও আছে। একবার ট্রেনে করে বাসাতে যাচ্ছিলাম। সাধারনত, আমি যে কামরায় বসি তার আশেপাশে তিন-চার কামরাতে কোন মেয়ে থাকেনা। সেদিন কার মুখ দেখে যে ঘুম থেকে উঠেছিলাম জানিনা, আর সেদিন সেই বিরল ঘটনাটাই ঘটল। কিঞ্চিত পুলকিত বোধ করতেছিলাম, সেটাও হাওয়া হয়ে গেলো যখন বুঝতে পারলাম উনি বিবাহিত। তবে মেয়েটার বয়স আমার চাইতে বেশি হবেনা। আলাপ চারিতার এক পর্যায়ে উনি জানতে চাইলেন আমি কিসে পড়ি, উত্তর দেওয়ার পর জানতে চাইলেন কোন বর্ষ, আমি বললাম “ফাইনাল ইয়ার”। উনি জানতে চাইলেন মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ার কিনা। এবারো আমি আকাশ থেকে পরলাম যেনো। যেখানে সবাই আমাকে ভার্সিটি থেকে স্কুলে নামিয়ে দেয়, সেখানে এই মেয়ে আমাকে বিএসসি থেকে মাস্টার্সে তুলে দিয়েছে। তখন আমি অনেকখানি অবাক আর কিঞ্চিত আনন্দিত। যাই হোক একবার তো কেউ বয়সের চাইতেও বড় ভেবেছে, সেটাও আবার একটা মেয়ে।
বিদ্রঃ আমি এরকম অনেক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি, তাই বলে ভাববেননা এই বিষয়টা নিয়ে আমি হতাশাগ্রস্থ। বরং আমি সবসময় অন্যদের আদর পেয়েছি, নিজের শিশুসুলভ চেহারার জন্য। আর এর জন্য আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞ।
পুনশ্চঃ লেখালেখির সাথে আসলে আমার যায়না। খুব আবেগ কাজ না করলে লিখতে পারিনা। অন্য সবাই যেমন ইচ্ছা করলেই লিখতে পারে আমি তা পারিনা। তারপরো, আগের লিখাতে যারা প্রশংসা করেছিলেন তারাই আজ আমার লেখার অনুপ্রেরণা। বিশেষ করে বোকামন ও সেলিম আনোয়ার ভাইয়ের কথা বলতেই হবে। তাদের মতো মানুষের কারনে আমার মতো মানুষরা আজও লেখার সাহস পায়। কৃতজ্ঞ ।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০১৩ বিকাল ৩:০০