১৯৯২ সালের ১১ই আগষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক সম্ভান্ত পরিবারে তিনি জন্মগ্রহন করেন। ছোটবেলা থেকেই কবিতার প্রতি আগ্রহ ছিল। সুকান্ত ভট্রাচার্যের কবিতা তাকে প্রবল আকর্ষন করতো। ঝোকের ফলে একসময় লিখতে শুরু করেন কবিতা। তার কবিতা স্থানীয় ভাবে বেশ কয়েকটি পত্রিকা ও সাময়িকীতে ছাপা হয়েছিল। কবিতা লিখলেও আজীবনই তিনি ছিলেন প্রচারবিমুখ।
কিন্তু বন্ধুদের আগ্রহে তিনি বিভিন্ন সময় লিখেছেন কবিতা, গল্প, গান। তার পুরো নাম- এইচ এম রেজাউর রহমান রাজিত। কিন্তু লেখার সময় ব্যবহার করতেন শুধু রাজিত রহমান। তাই রাজিত রহমান নামেই তাকে অধিকাংশ মানুষ চেনে।
একসময় ফেসবুকে কবিতা লেখা শুরু করলেন। নিজের দু:খ গুলো লিখতে লাগলেন কি বোর্ডের মাধ্যমে-
--সবাই পরিবর্তন চায়।
"এই জায়গাটা আমার জন্য পারফেক্ট না",
"এটা আমার জন্য উপযুক্তনা",
"এখানে থেকে কিছু হবেনা",
"ধুর্ এর দ্বারা কিচ্ছু হবেনা"
"দিস ইজ আনফেয়ার"
এরকম কথা বলে সবাই সরে যায়।
দায়িত্ব নেইনা কেউই !--
বাস্তব জীবনের কথাগুলোই তার কবিতাই ফুটে উঠছে বারবার। হাসপাতালের বেডে শুয়েই তিনি হয়তো বুঝতে পরেছিলেন তার নিজের অবস্থা-
--অস্থির সময় কাটছে
আমার হৃদপিন্ডের স্পন্দন,
আর তোমার ভেলকিবাজির উপঢৌকন;
কি করি, কোথায় রাখি
অসীমেও জায়গা কমে যায়!
লক্ষ্যবহীন জীবনে লক্ষ্য নির্ধারনের তাগাদা।
অথচ গন্তব্য গুলো ক্রমশই হচ্ছে অচেনা।
তোমার রেখে যাওয়া মগ এ ঠোটের ছোয়া,
আর বাতাসে জানলার পর্দা উড়ে যাওয়া,
সব মিলিয়ে যাচ্ছে।
ছোঁড়া হবার আগেই বুড়ো হলাম!
রাগ হলেই মুখ ব্যজার,
আনন্দ পেলে মৌনিক হাসি
অথবা
ঝিমানো বাস্তবতা!--
রাজিত রহমান ছিলেন একজন একনিষ্ঠ সংগঠক। চাঁপাইনবাগঞ্জে প্রজন্ম জোট প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার একদল তরুন কর্মীর স্বপ্নের উপর ভিত্তি করে। তার ইচ্ছা ছিল, জেলার মেধাবীরা দেশের আনাচে কানাচে শিক্ষা-কাজের সন্ধানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও যারা বুকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রতি ভালবাসা লালন করেন, তাদেরকে সম্পৃক্ত করে জেলার উন্নয়নে কাজ করা। শুধু শিক্ষা স্বংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে নয়, গণমানুষের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়েও কাজ করার প্রত্যায় ছিল তার মাঝে। তার স্বপ্ন ছিল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাকে দেশের অন্যতম সেরা জেলা হিসেবে দেশের সামনে তুলে ধরা। -
--আমার অনেক পানি দরকার,
বিশুদ্ধ পানি।
শহরটা কে ধুবো তাই।
এ শহর নোংরা হয়ে গেছে,
শহরের মানুষগুলা সব নোংরা হয়ে গছে।
আমার তাই অনেক পানি দরকার, বিশুদ্ধ পানি।
এ শহরের মানুষগুলা নোংরা হয়ে গেছে,
তাদেয় মনটা নোংরা হয়ে গেছে।
পারার মোড়ের চা এর স্টলে এ,
কোচিং এর বাইরে,
স্কুল কলেজ ক্যাম্পাসে,
কোর্ট চত্বরে,
থানার বাইরে,
নদীর ঘাটে,
হসপিটালের বারান্দায়,
সব জায়গায় মানুষ ধান্দা করছে |--
২০১১ সালের ৯ জুন মহানন্দা নদীকে দুষনের হাত থেকে রক্ষা ও পুন: খননের দাবিতে মানববন্ধন ও পদযাত্রা কর্মসূচী পালন করে এই সংগঠনের কর্মীরা। এটিই ছিল প্রজন্মজোটের প্রথম কর্মসূচী, যার মূল উদ্যোক্তা ছিলেন রাজিত রহমান। সংগঠনের প্রতিষ্ঠলগ্নে যার ভূমিকা ছিল অগ্রগন্য। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। জেলার ঐতিহ্যবাহী সংগঠন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাহিত্য পরিষদেরও একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন তিনি।
আমি তাকে ফেসবুক ছেড়ে ব্লগে লিখার পরামর্শ দিই। প্রথমে না না করলেও পরে সম্মতি দেয়। রাজিত রহমান তার রাজিত রহমানের সামু আইডি তে মাত্র কয়েকদিন কিছু কবিতা প্রকাশ করেছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই তার নাড়িতে জটিল রোগ বাসা বাঁধে । ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে প্রথমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে রাজধানীর গ্রীন লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পিজির স্পেশালিস্ট ডা. তৌহিদুল ইসলাম জানান যে, তার পুরো নাড়িই পচে গেছে। পরে অপারেশন করে পুরো নাড়িই কেটে ফেলা হয় । পরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসায় নিয়ে যাওয়া হলে ক্রমসই তার অবস্থার অবনতি ঘটে। গত কয়েকদিন তিনি কোমায় থাকার পর আজ সকালে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করে।
তিনি উন্মোচন, সামহোয়ারইন, একুশে ব্লগেও কিছু দিন লিখেছিলেন। নাগরিক ব্লগেও তিনি লিখতেন।
আমরা তার বেদেহী আত্নার শান্তি কামনা করছি।