★বিষয়:: নজরুল সমালোচনা ☞
নজুরল সমালোচনার অন্যতম লেখা "শাশ্বত বঙ্গে'র" প্রবন্ধ "নজরুল ইসলাম " - কাজী আব্দুল ওদুদ ৷ আমি শুধু ওদুদের সমালোচনা উল্লেখ্ করে খন্ডনের চেষ্টা করব ৷ একটা কথা মাথায় রাখব সমালোচনা মানে good and bad side দুটোই ৷ সেগুলো::
★1: প্রাবন্ধিক ওদুদ বলেন "বিদ্রোহী কবিতার মূল বিষয়ে সঙ্গতি নেই, এছাড়াও বিদ্রোহ যুগের অন্যান্য রচনায় / কবিতার সামগ্রিক অর্থ সামঞ্জস্য সবযায়গায় রক্ষা করতে পারেন নি ৷ " যদিও তিনিঁ নজরুলের বিদ্রোহীপনার যথেষ্ট প্রশংসা করেছেন ৷ আমার বক্তব্য: আমি স্বীকার করি কিছুটা অস্ঙ্গতি আছে তারপরও বিদ্রোহী কবিতার মূলবক্তব্য অনিয়ম আর উচ্ছৃশ্ঙ্খলতার প্রতিবাদ তা সর্বত্র প্রতিফলিত হয়েছে ৷সমস্ত কাহিনীসূত্রের একাত্মতা এখানে পাব না, এখানে বিদ্রোহ ও কিছুক্ষেত্রে আনুগত্যও রয়েছে
★2: নজরুল রচনায় অনবদ্য প্রকাশ নেই, অন্তর আত্মার প্রকাশ নেই, কবির কল্পনালোকে তার প্রকাশ নেই ৷
আমার খন্ডণ: নজরুল বিদ্রোহ, তারুন্য, সাম্যবাদ, যৌবনস্তুতি, কমিউনিজম নিয়ে, বিশ্বমানবতা নিয়ে বেশি কাজ করেছেন, গভীর আত্মার সমাহিত চৈতন্যের কথা নজরুল ওভাবে না দেখালেও তার জাগ্রত বিদ্রোহী সত্তা, তারুন্যের বন্দনা, আর প্রেমের বার্তাই বা কম কীসের? নজরুল কল্পনা নয় বাস্তবতা, দীনের দীনতা , লাঞ্ছিত এর কান্না আর কষ্ট নিয়ে বেশি লিখেছেন ৷
★3: নজরুল রচনার কিছু চূড়ান্ত মুহূর্তে তার লীলাবাদের/pantheism কথাই প্রকাশ পেয়েছে ৷
আমার খন্ডন;: এটা ত্রুটি হতে পারে না, এটা বিশেষত্ব হতে পারে, ওদুদ যেভাবে বলেন নজরুলের প্রায়শই লীলাবাদ পরিলক্ষিত, কিন্তু তার সাম্যবাদীর মতো কালজয়ী গ্রন্থে লীলাবাদ/ ভগবানের উপর পরম সমর্পণ ণয় বরং বলশেভিক আন্দোলনের communism ই পরিলক্ষিত ৷
★4/ ওদুদ বলেন লীলাবাদের অতিশয় প্রভাবের জন্য নজরুল type / প্রতীকী চরিত্র সৃজন করেছেন বেশি ৷
আমার খন্ডণ : রবীন্দনাথের জীবনদেতা, সৌন্দর্যলক্ষী সমগ্র জীবনপ্রবাহের অনেকাংশে বিরাজিত তেমনি নজরুলেরও বিদ্রোহীভাব, অপূর্ব উন্মাদনা সর্বদা পরিলক্ষিত তারপরও তিনি প্রেমের প্রতীকে, দারিদ্রের প্রতীকে, শোষনের প্রতীকে নানা চরিত্র সৃষ্টি করেছেন ৷ বলা বাহুল্য প্রাবন্ধিক , নজরুলের স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্র্যের কথাও অকপটে স্বীকার করেছেন ★5/ তিনি নজরুলের শ্যামাসংগীত এর প্রশংসা করেছেন ৷
★6/ নজরুলের যুগ সচেতেনতারও প্রশংসা করেছেন ৷
মূলত নজরুল যুগন্ধর কবি, যুগের বার্তাবাহক, অন্যরা তদ্রুপ নয় এমনকি রবীন্দ্রনাথও নয় ৷ তিনি বার্ধক্য, জরা নিয়ে নয় বরং জীবন আর চেতনার কথা বলেছেন ৷ ওদুদ নজরুলের বিদ্রোহী কবিতা নিয়ে যতোটা আলোচনা করেছেন অন্য রচনা নিয়ে ততোটা আলোচনা করেন নি ৷ তিনি নজরুলের ইসলামী সঙ্গীত আর শ্যামাসংগীত এর প্রশংসা করেছেন ৷ নজরুলের গদ্যজীবন বেশি বিস্তৃত নয়, তার কাব্যজীবনটা বিস্তৃত যেখানে মানবপ্রেম, প্রকৃতিপ্রেম, বিশ্বমানবতাবোধ সর্বত্রই পরিলক্ষিত ৷ নজরুলের প্রয়োজনীয়তা ছিল, থাকবে , তারঁ বিশ্বজনীনতার জন্যে ৷ নজরুল শুধু ব্যক্তির নাম নয় বরং একটি যুগের নাম ৷ তারঁ রচনায়ও অন্যান্য যুগপ্রতিনিধিত্বকারী কবিদের মতো ত্রুটি থাকবে এও স্বাভাবিক তারপরও এই একবিংশের পুজিঁবাদী, সাম্রাজ্যবাদী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়বার জন্যে নজরুল-চেতনা আজও প্রয়োজন ৷একটা কথা মনে রাখা প্রয়োজন কবি শুধু সৌন্দর্যের উপাসক নয় , তাকে বিশ্ব মানবতার পূজারীও হওয়া উচিত ৷ কখনো কোন কবির /লেখকের একটি রচনা দিয়ে নয় বরং তারঁ সামগ্রিক রচনা, যুগমানস ইত্যাদি দিয়েই কোন কবির মানদন্ড নির্ধারন করতে হয় ৷
ⓒরচনায়: শুভ খান ৷
বাংলা বিভাগ
সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ ৷ প্রথম প্রকাশ: 17/3/15 ৷ লেখাটি একই সাথে amarblog.net/শুভ১২৩ ঠিকানায়ও প্রকাশিত ৷