আমরা এখন শুনবো আবুল মিয়ার জীবন
ঘটে যাওয়া ভয়ংকর একটি ভুতের গল্প । দুর্বল
চিত্তের পাঠকদের অনুরোধ জানাচ্ছি রেডিও বন্ধ
করে কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ার জন্য
। পরবর্তীতে কোন সমস্যা হলে আমরা
দায়ী থাকবেনা।
আসুন ,তাহলে আমরা শুনি আবুল মিয়ার ভুতের
গল্প.......
আবুল মিয়াঃ সেদিন ছিলো আষাঢ় মাস ।
আমি বাজার কইরা বাড়ী ফিরতাছি ।
আমাবইশ্যার রাইত । ঘুটঘুটা আইন্ধাইর । এক হাত
দুরের জিনিষও দেখা যায়না । তখন আবার
ম্যালা রাইত । গ্রামের রাস্তা তো,
একটা কাকপক্ষীও নাই । আমি তো হালার
ভয়ে অস্থির । বিভিন্ন সূরা আর
দোয়া পড়তে পড়তে হাটতাছি । আমার
হাতে ছিল দুইখান ইলিশ মাছ । সাড়ে ৬শ
টাকা দিয়া কিনা। হালায় দাম চাইছিলো ২
হাজার । আমি কইছি থাপ্পর দিয়া তোর দাঁত
ফালায়া দিমু হারামজাদা ! চিনোস আমারে ।
যাই হউক , রাত্রে বেলা ইলিশ মাছ
নিয়া বারি ফিরতাছি , ইলিশ মাছ আবার
‘তেনাগো’ বিশেষ পছন্দের জিনিষ । সেই
কারনে আমার ডর আরো বাইরা গেলো ।
অবশ্য এখনকার ইলিশে আগের সেই গন্ধ আর শুয়াদ
(স্বাদ) নাই । ইলিশ আনতেনে আমার নানাজান ।
আহারে কি গন্ধ !! কি টেস্ট !!
আইনা নানীরে কইতেন ... ‘ও করিমের মা ...’
উপস্থাপকঃ আমরা সে গল্প না হয় আরেকদিন
শুনবো , আমরা মূল গল্পে ফিরে আসি ।
যাই হউক । কিছুদুর হাটার পর হাল্কা চান্দের
আলোতে দেখি সামনে মিঞাবাড়ির বটগাছ
দেখা যায়।
উপস্থাপকঃ কিন্তু আপনি তো বললেন
আমাবস্যার রাত।
ইশ , ভাইজান , আপ্নে বড়ই সমস্যা করেন , কইলাম
না এইটা ভুতের গল্প । এইখানে চান্দ মিনিটের
মধ্যে উঠবো , মিনিটের মইধ্যে নামবো ।
এতো প্রশ্ন করলে কইলাম আমি নাই ,
ডাইক্কা আইন্না বেইজ্জত !!
উপস্থাপকঃ আচ্ছা , আচ্ছা আমরা ঘটনায়
ফিরে আসি । আপনি বটগাছ দেখলেন ... তারপর ?
এই বটগাছের আবার বিরাট কাহিনী । এই গাছের
ডালে ফাঁস দিয়া কুলসুমা মরছিল ।
আহারে কুলসুমা । দেখতে বড়ই সউন্দর ছিল ।
স্কুলে আইতে যাইতে কুলসুমের
সাথে রংতামাশা করতাম । ‘টুনির মা’
কইয়া ডাক দিতাম । কুলসুম কিছু কইতো না ।
ডরে তার মুখ দিয়া কথাই বাইর হইতোনা । খিক
খিক খিক ...
একখান ‘বিশেষ’ কারনে কুলসুমা গলায় ফাঁস
দিছিল । সেই কথা আপনেরে আলগা কইরা কমু , তয়
হেইদিন কুলসুমার কথা মনে হইতে আমি বুঝলাম
‘ডর’ কি জিনিশ । তিনবার সুরা এখলাস
পইড়া হাটা দিলাম । পূর্ণিমার রাইত , সব কিছু
পস্ট দেহা যাইতাসে । আতকা দেখি আমার
সামনে একটা কালা বিলাই ।
আমি বুঝলাম এইটা কুলসুমা ছাড়া আর কেউ না।
আমারে শাস্তি দিতে আইছে ।
আমি মাথা ঠাণ্ডা রাইখা কইলাম ‘আম্মা ,
তুমি আমারে মাফ কইরা দ্যাও ‘
বিলাই এ কয় ‘ম্যাও’ । বড়ই আজিব ব্যাপার !!!
এইদিকে ‘ভাদ্র’ মাসের
গরমে আমি ঘামে ভিইজা জুবজুবা।
আমি কুলসুমা (বিলাই) রে কইলাম , ‘আমি আর
জিন্দেগিতে কোন মাইয়ার দিকে চউখ
তুইলা তাকামু না , কেউরে মিসকল দিমুনা, মাফ
করো আম্মা , বারি যাইতে দ্যাও ...
কুলসুমা কয় ‘ম্যাও’ ... চিন্তা করছেন অবস্থা ?
এমন সময় শুনি পেছনে বেটা মাইনশের গলার
আওয়াজ । আমি আপনাদের অনুষ্ঠানের মত
কইরা ডাক দিলাম ... ‘কেডা ? কেডা ওনে ?’
আওয়াজ আইলো ‘জী , আমি রহিম । ভালা আছেন
নি ভাই ?’
রহিম রে দেইখা আমার জানে শান্তি আইল ।
আবার লগে ডর ও লাগলো । এত রাইতে রহিম
এইহানে কি করে ?
সামনে তাকায়া দেখি কুলসুমা (কালা বিলাই)
নাই !!! তহন আমার মনের সন্দেহ আরও
বাইড়া গেলো । তাইলে কি বিলাইটা রহিমের
রুপ ধইরা আইলো ? আমি তাকায়া দেহি আমাদের
রহিমের মতো এই রহিমের শইল্যের রঙ ধলা না,
কালা !!! বিলাইয়ের রঙ ও কালা আছিল । কুলসুমার
গায়ের রঙ ও কালা আছিল । দুইয়ে দুইয়ে চাইর
হইতে সময় লাগলো না।
তয় আমি যে ভয় পাইছি সেইটা রহিম
(না কুলসুমার আত্না ?) রে মোটেও বুজবার দিলাম
না । একবার যদি ব্যাটা টের পায় আমি ভয়
পাইছি , ব্যাটা আমার ঘাড় মটকাইয়া খাইবো ।
আমি জোরে জোরে হাটতে থাকলাম
লগে সূরা পড়তে থাকলাম । বাড়ি আমার
আরো মিনিট দশেকের পথ ... কেমতে যে যাই । যত
সূরা মুখস্ত আছে সব পড়া শুরু করলাম ।
এইদিকে রহিম আমার পিছ পিছ হাটতাছে।
রহিমের সাথে হাল্কা গফসফও করা শুরু করলাম।
এর মধ্যে দুইবার রহিম জিগাইলো আমার ব্যাগের
মধ্যে কি ? আমি কিছু কইলাম না । হালায়
যদি একবার টের পায় ইলিশ মাছ তাইলে আমার
আর বাইচা থাহনের কোন আশা নাই ।
কিছু সময় পড়ে আমি রহিমরে কইলাম চইত্র মাসের
গরম টের পাইতেছ রহিম ? কেমুন গা জলতাছে ?
কিন্তু পেছনে কোন উত্তর নাই ! আমি কইলাম ‘ও
রহিম , রহিম ।‘ উত্তর নাই ।
পিছনে তাকায়া দেহি রহিম নাই । আমার
ধারনাই সত্যি হইলো । আমি জানের
ডরে উইঠা দিলাম দৌড় । কুলসুমার ভুত আবার
কোন সময় চইলা আসে ঠিক নাই ।
এমন সময় পেছন থাইকা শুনি রহিমের গলা ‘ও
মিয়া ভাই , ও মিয়া ভাই ।‘ কুলসুমার ভুত আবার
চইলা আইছে । আমি দৌড় থামাইলাম না ।
জানের শক্তি দিয়া দৌড়াইতে থাকলাম ।
কুলসুমার ভুত ‘রহিম’ ও আমার
লগে দৌড়াইতে থাকলো । আর কইতে থাকলো ও
মিয়া ভাই আমারে লইয়া যান ।
আমারে লইয়া যান’ আরে আমি কি আর এতোই
বুকা ?
শেষে দৌড়াইতে দৌড়াইতে বাড়ি আইসা পৌঁছাইলাম
। এখন আর আমার কোন ডর নাই! এমন সময়
হালা ভুতও আইসা উপস্থিত । আমি কইলাম
কুলসুমা তুই এইহান থাইকা যা ... নইলে কিন্তু
আমি মাওলানারে ডাকমু ...
ভুত রহিমে আমারে কইলো ‘ ও ভাইজান , আপনের
কি হইছে আমারে কুলসুমা কোন ক্যান ? আপনের
কি হইছে ।
আমি ভালো কইরা খেয়াল কইরা দেখলাম
রহিমের শরীরের ছায়া মাটিতে পড়তেছে । তার
মানে এইটা ভুত না , ভুতের শরীরে কোন
ছায়া থাকেনা।‘
বুঝলাম , এইটা আসলেই রহিম , কুলসুমার ভুত না!!
আমি রহিমরে কইলাম ‘আমার পিছন
থাইকা আতকা তুই গেসিলি কই ?’
রহিম শরমের হাসি দিয়া কইল ‘মুততে গেছিলাম
ভাই , ক্ষেতের ধারে’
আমি আবার কইলাম ‘শালা , কইয়া যাবিনা ?’
রহিম কইলো ‘ক্যাম্নে কমু ভাই ? মুতার
কথা কইতে শরম লাগে , কিন্তু আপ্নে দৌড়
দিলেন ক্যান ? কি হইছিলো ?
আমি আর সত্য ঘটনা কইলাম না। আমি কইলাম
‘কিছু না , মনে হয় কুলসুমারে দেখছিলাম , তাই
দৌড় দিলাম ।‘
রহিম রাগ কইরা বলে ‘তাই
বইলা আমারে রাইখা দৌড় দিবেন ?
যে ভয়ডা পাইছিলাম । যাই হউক আমারে এক খান
লুঙ্গি দেন ।‘
আমি জিগাইলাম ‘লুঙ্গি চাস কেন ?’
রহিম আবারো শরমের হাসি দিয়া কইলো ‘ ভাই
অর্ধেক কামের মাঝে আপনে উইঠা দিলেন দৌড় ,
আমিও দিলাম দৌড় , বাকি অর্ধেক
দৌড়াইতে দৌড়াইতেই... ‘ রহিম আর কিছু
কইতে পারলোনা। শরমে তার মুখ লাল
হইয়া আছে।
আমি কইলাম ‘ছিঃ রহিম , তুই এতো ডরাস ?
তোরে আমার ছুটো ভাই হিসেবে পরিচয় দিতেই
লজ্জা করবো । যাউজ্ঞা ,
লুঙ্গি বদলাইয়া বাড়িত যা,
কাইল্কে আইনা ফেরত দিছ । রহিম
লুঙ্গি লইয়া বাড়িত চইলা গেলো। আমিও এই
ঘটনার কথা মনে কইরা হাসতে হাসতে বিছানায়
শুইতে গেলাম ।
‘বৈশাখ’ মাস । হটাত কইরা ঝড়-তুফান শুরু হইলো ।
আমি খেতা মুড়ি দিয়া আরামসে ঘুমাইতে গেলাম
। আর ভাইবা দেখলাম , রহিম যদি সময়
মতো না আইতো তাইলে ঐ কুলসুমার ভুত
‘কালা বিলাইটা’
আমারে জানে মাইরা ফেলতো । কার দোয়ায়
বাইচা আইছি কে জানে ?