খেয়াল করে দেখেছেন, কিছু মানুষ কিন্তু নির্দিধায় অনধিকার চর্চা করে যাচ্ছে আমাদের সাথে … শরীর, মন, মস্তিষ্কের অনেক খানি জায়গা জুড়ে নিয়ে বসে আছে ওরা । না তারা সেখান থেকে যায় … না অন্য কাউকে সেই জায়গাটার দখল নিতে দেয়। রাতের ট্রেনে চেপে বাড়ি ফিরছেন। জানলা দিয়ে অনমনে তাকিয়েই আছেন … হয়ত বাইরে অনেক অন্ধকার, কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। তবুও আপনি তাকিয়ে আছে… কিন্তু এই ত্রিমাত্রিক জগৎটা নিয়ে আপনার কোন মাথা ব্যাথা নেই। আপনার সর্বোচ্চ মনোযোগ ঐ দ্বিমাত্রিক ছবিটার দিকে যেটা আপনার অবচেতন মন আপনার মস্তিষ্কে একেই চলেছে। কিন্তু কি আশ্চর্য !!! এখানেও সেই মানুষটা ছাপান্নটা দাত বের করে হাসছে । আপনি একটু নড়ে চড়ে বসলেন … মন থেকে তাড়াতে চাইলেন অসভ্য মানুষটাকে। হয়ত এক্সাম হলে বসে আছে… খুব অল্প সময় বাকি, শেষ সেটটা লিখছেন। হঠাৎ খেয়াল করলেন আপনার ঠোটের কোনায় কিভাবে যেন এক চিলতে হাসি চলে এসেছে। নিজেকেই বকা দিয়ে বসলেন… ধুর, এটা কি ওর কথা মনে হবার মত সময়। বিছানায় গিয়েছেন হয়ত সোয়া বারোটাই, ঘুমোতে ঘুমোতে আপনার বেজে গেল একটা পঞ্চান্ন … কল্পনা যেন ফুরোতেই চায়না !!!
একটা অবুঝ শিশু হয়ে জন্মাবার পর আমরা যখন পরিবেশ থেকে শিখতে থাকি , আমাদের মস্তিষ্কে ক্ষুদ্র জায়গা জুড়ে নিউরনের কানেকশান একটা নিদিষ্ট অংশের জন্য ডেডিকেটেড হয়ে যায়। এবং ঐ ডেডিকেটেড অংশটুকু কেবলমাত্র ঐ নিদির্ষ্ট কাজটাই সম্পাদন করে। সায়েন্টিফিক্যালি নিয়েন না … আমার কেন জানি মনে হয় আমাদের শরীরের কোন এক খুব গুরুত্ত্বপূর্ণ ফাংশান এক্সিকিউট করবার মত ঐ অসভ্য মানুষটাকে মস্তিষ্কে একটা ডেডিকেটেড জায়গা করে দিয়ে বসি। এরপর ক্ষুধা পেলে মস্তিষ্ক যেমন খাবারের কথা মনে করিয়ে দেয়, বিপদ আসলে আত্মরক্ষার কথা স্মরন করিয়ে দেয় ঠিক তেমনি একা সময়গুলোতে আমাদের মস্তিষ্ক ঐ অসভ্য মানুষটার কথা মনে করিয়ে দেয়।
আমাদের আশেপাশে দশটা পাচটা মানুষ যেমন আমরা একই না … ঠিক আমাদের চাওয়া পাওয়া গুলাও ভিন্ন, আমাদের ভালোবাসাটাও ভিন্ন… ভালোবাসার ধরনটাও ভিন্ন। কিছু মেয়ের কাছে বিকেলের জানালা খুলে ওপাশের বাড়ির ছেলেটার আনমনে গিটার টিউন করতে দেখাটাও ভালোবাসা। হয়ত কিছু ছেলের কাছে ভালোবাসার মানে হয় একটা মেয়েকে রোজ ওর টিউশানে যাবার পথে ফলো করা … আপনাকে আমাকে এটা এডমিট করতেই হবে যে এক-পাক্ষিক ভালোবাসা বলে কিছু একটা আছে। কখনো অপর মানুষটির ভালোবাসেনা, কখনো কখনো সে জানতেই পারেনা… আরেকটা সেটা বোকার মত জানাতেই পারেনা। স্বেচ্ছায় একাকিত্ত্ব বরন করে নেবার অনেক গুলা কারনের মধ্যে একটা বেশ উল্লেখযোগ্য একটা। সময় অসময় ঐ মানুষটিকে খেয়াল আসে … বৃষ্টি এলে মনে হয় ওকে যদি বৃষ্টিতে ভিজতে দেখতে পারতাম, কুয়াশা বাড়লে মনে হয় ইশ , ওকে যদি আমার চাদরটা দিয়ে জড়িয়ে দিতে পারতাম। কিছুই ভালোনা, না শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা না রিচার্ড মার্ক্সের গান। ধীরে ধীরে এই মানুষগুলোই স্বপ্রোনোদিতভাবে “ভালো লাগেনা” রোগিতে পরিনত হয় … তার পরবর্তী পর্যায়ে স্বঘোষিত “অসামাজিক”।
তবুও ‘ভালো লাগেনা’ রোগীগুলা এই অসভ্য মানুষগুলাকে ভুলতে চায় … ওরা বুঝে যে এই বিচ্ছিরি প্রতিবিম্বগুলা শুধু ক্ষতিই করে চলেছে। ভুলতে গিয়ে কেউ কেউ ঘরের ত্রিমাত্রিক কোনে নিজেকে গুটিয়ে ফেলে , কেউবা বিষাক্ত নিকোটিন অমৃতের মত রোজ ফুসফুসে নিয়েই চলেছে। তবে সময় থেমে নেয় … ধীরে ধীরে অনেক জল বয়ে যায়। কোন একটা দিন এদের অনেকেই মস্তিষ্কের হারিয়ে ফেলা ঐ অংশটুকু অসভ্য মানুষটার থেকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় … কিন্তু কিছু অভ্যেস এরা ছাড়তে পারেনা। মেয়েটা ঘরের ত্রিমাত্রিক কোনটাকেই বেছে নেয় বেচে থাকার ভালো লাগা গুলো শেয়ার করবার জন্য… ছেলেটা হয়ত “তামাক পাতা” ।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০১৬ রাত ৯:৩৯