somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এই আমার প্রিয় ভাই, শহীদ নোমানী ভাই !

১৪ ই মার্চ, ২০০৯ রাত ১২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন ছুটি চলছে
। সব সাথী-কর্মীরা নিজ নিজ বাড়িতে । এমন সময় শিশির ভাই সদস্য বৈঠকে বললেন , দেশের কয়েকটি এলাকায় দায়িত্বশীলেরা সফরে যাবেন । এতে কর্মীদের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারনে যে দূরত্বটুকু তৈরী হয়েছে তা ঘুচে যাবে । সেই হিসেবে তখনকার সভাপতি যুবায়ের ভাইয়ের সাথে আমিও গেলাম রাজশাহীতে ।

রাজশাহীতে যাব, ভেবেই অদ্ভূত আনন্দ লাগছিলো । আমার সাংগঠনিক জীবনের প্রথম আলোড়ন তুলেছিলো রাবি শিবিরের রক্তাক্ত মতিহার বইটি । রক্তাক্ত মতিহারের প্রতিটি শিবির কর্মীর শাহাদাতের ইতিহাস সেই যে স্কুল জীবনে মনের গভীরে গেঁথে গেছে আর মুছতে পারিনি ।

রাতে কলাবাগান থেকে গাড়িতে উঠলাম । খুব ভোরে যেখানে নামলাম, যায়গাটা আমার অতি অতি পরিচিত বিনোদপুর । কত যে শুনেছি এর নাম !

ঘোরের মধ্যে তখন অনেকটা । কে যে আমাদের এগিয়ে নিতে এসেছিলেন, এখন মনে পড়ছেনা । যতদূর মনে হয় , নোমানী ভাই আর ফরহাদ আলম ভাই । আমরা ......(কি নামের যেন একটা স্কলার ফাউন্ডেশন আছে) এসে পৌছুলাম ২ মিনিটেই । যুবায়ের ভাই বললেন বিশ্রাম নিতে । আমি বাসে ঘুমিয়েছি , ঘুমাতে ইচ্ছা করছিলোনা, তবুও ঘুমিয়ে পড়লাম ।

৯ টার দিকে ফ্রেশ হয়ে রেডী হতেই বুঝতে পারলাম , সেক্রেটারী নোমানী ভাই যুবায়ের ভাইকে সঙ্গ দেবেন আর তখনকার বায়তুলমা'ল সম্পাদক ফরহাদ ভাই আমাকে নিয়ে শহরে ঘুরবেন বলে সাইদী ভাই ঠিক করে দিয়েছেন ।

আমরা সবাই মিলে প্রথমে গেলাম কোর্টে । সেদিন মিথ্যা মামলার আসামী সালেহী ভাইকে কোর্টে হাজির করা হবে । সালেহী ভাইকে দেখলাম কোর্টে গিয়ে । কোর্ট থেকে ফেরার পথে গেলাম হারিয়ে । যাই হোক, ফরহাদ ভাই আমাকে খুজে বের করলেন ।

এরপর রাজশাহী মহানগরী অফিসে । দুপুরের খাওয়া আমাদের এক সাথী সোহেলদের বাসায় । আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার রাজশাহী এলাকার প্রায় সবাই এসেছে ।

বিকেলবেলায় আমরা নিজেরা নিজেরা গেলাম পদ্মার তীরে ।

সন্ধ্যার পর শুরু হলো রাবি ক্যাম্পাস ভ্রমণ ।

হ্যা...................................

নোমানী ভাইয়ের শরীরের ঘ্রান এ নাকে এসেছিলো তখন । হোন্ডায় আমরা তিনজন পুরো ক্যাম্পাস ঘুরলাম । নোমানী ভাই একে একে পরিচয় করিয়ে দিলেন ছাত্রশিবিরের রক্তাক্ত ইতিহাসের সাথে জড়িত ঐতিহাসিক স্থানগুলো । একে একে কয়েকটা হলে গিয়ে হলের ভাইয়াদের সাথে পরিচিত হলাম ।

নোমানী ভাই যেখানেই যাচ্ছেন , হলের দারোয়ান নোমানী ভাইকে এগিয়ে দিচ্ছেন সঙ্গে করে । আর গর্বভরে আমাদের দুজনকে শুনানোর চেষ্টা করছেন রাবি শিবিরের প্রতি তাদের আস্থা আর ভালোবাসার কথা । কে কত বছর ধরে এখানে শিবির দেখে আসছেন, সেই ফিরিস্তিও দিচ্ছেন কেউ কেউ ।

বেশ কয়েকজন ভাইয়া লিচু খাওয়ালেন । জানলাম , এখানের লিচু পেড়ে সমান ভাগ করে প্রতিটি ছাত্রদেরকে দেয়া হয় ।

আমরা ফিরলাম রাত নটার দিকে । হল থেকে বেরিয়ে নোমানী ভাই হোন্ডায় স্ট্যার্ট দিয়ে ঘুরাতেই তিনজনই পড়ে গেলাম । মাত্র স্টার্ট হয়েছে তাই তেমন কিছু হলোনা । নোমানীভাই নীচে, তার গায়ের ওপরে হোন্ডা । বোকা আমি হোন্ডাটা সরিয়ে দিলেই উনি উঠতে পারেন । তা না করে নোমানী ভাইয়ের দুহাত ধরে টানতে লাগলাম । আহা ... ঘন দাড়িওয়ালা আমার প্রিয় ভাইয়াটা । তুমি শহীদ হয়ে গেছো !

ঢাকার মেহমানদের জন্য স্কলারস ফাউন্ডেশনে ব্যাপক খাবারের আয়োজন । আমি , যুবায়ের ভাই, ফরহাদ ভাই , নোমানী ভাই , সাইদী ভাই ..খেলাম । এরপর পাশের রুমে বসে নানা গল্প করতে করতে সাড়ে এগারোটার মত বেজে গেলো । নোমানী ভাই ই ফোন করে টিকেটের ব্যবস্থা করে রেখেছেন । রাত ১২ টার দিকে আমাদেরকে বিনোদপুর বাস স্টেশনে নিয়ে এলেন নোমানী ভাই । দুমিনিটের মধ্যে বাস চলে এলো ।

আমার চোখের সামনে ভাসছে এখনো নোমানী ভাইয়ের সাথে সেই সময়টা । বাস সামনে সাঁই করে চলে গেলো আর উনি তাকিয়ে রইলেন আমাদের গতির দিকে ....

শহীদ নোমানী ভাইয়া , আল্লাহর কসম , জান্নাতের সিঁড়িতে বসে তুমি খুব শিঘ্রী দেখতে পাবে, তোমার রক্তের সুগন্ধি কত দ্রুত এই বাংলার ছাত্রদেরকে ইসলামের আলোকিত রাজপথে তুলে নিয়ে আসছে পরম মমতায় .....! তোমার প্রতিফোঁটা রক্তের বদলায় বাংলার সবুজ জমীনে তোমার সাথীরা আরো দৃঢ় পদক্ষেপে দ্বীন কায়েমের পথে এগিয়ে যাবে নির্ভিকভাবে ! ...










ভিডিও : চেতনার সেনানী (শহীদ শরীফুজ্জামান নোমানী) Part-1
ভিডিও : চেতনার সেনানী (শহীদ শরীফুজ্জামান নোমানী) Part-2
ভিডিও : Speech of C.P before Janajah Of Shaheed Shorifuzzaman Nomani



যেমন ছিলেন তিনি.....সহকর্মীদের ভাষ্যে...
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০০৯ দুপুর ১২:০৪
৩৪টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×