২০০৬ সালের এপ্রিল মাস । অফিসে কাজ করছি খুবই ব্যস্ত । এমন সময় একটা ছোকড়া মতো ছেলে এসে বলল " ম্যাডাম একটা একাউন্ট ওপেন করবো ।" দেখলাম সে আগেই সব প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস জেনে সাথে করেই এনেছে । একটু ভালোই লাগলো - এমন স্মার্ট কাস্টমার পেয়ে । যাহোক একাউন্ট ওপেন করে দিলাম - আর বললাম এটিএম কার্ড আর চেকবই সময় মতো বাসার এড্রেস এ চলে যাবে । শুধু পিন নম্বরটা ব্রাঞ্চে এসে কালেক্ট করা লাগবে ।
কয়েকদিন পর সেই কাস্টমারটা আবার এসেছে । বললাম - কিছু হেল্প লাগবে আপনার ? সে বলল - তার লোন লাগবে । আমি বললাম - ৬ মাস একাউন্ট মেনটেইন করেন - তারপর দেখবো দেয়া যায় কিনা । কয়দিন পর আবার এসে বলল " আমার ডলার লাগবে " । কারণ দেখিয়ে বললাম কেন তাঁকে আমরা ডলার দিতে পারছিনা । এভাবে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে , নানান অজুহাতে সে আমার কাছে আসা শুরু করলো । একদিন খুব বৃষ্টির দিনে অফিসে হঠাৎ এসে বলল " আমার সাথে কফি খেতে যাবেন?" আমার তো মাথায় বাজ ! আমার ডেস্কে থাকা অন্য কাস্টমার ফিক করে হেসে ফেললো । যাহোক সেদিনের মতো বিদায় করলাম । এভাবে কিছুদিন গেলো ।
একদিন সিকিউরিটি গার্ড এসে বলল " আপা আপনার ভিজিটর এসেছে" আমি বললাম - আমার কাছে পাঠিয়ে দিতে । গার্ড বলল " উনি ভেতরে আসবেননা । আপনাকে বাইরে ডাকছেন " । একটু বিরক্ত হয়ে বাইরে এসে দেখি সেই ছোকড়া কাস্টমার পেছনে দুইহাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । দেখে মনে হচ্ছে চোরকে হাত বেঁধে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ । তাঁকে দেখেতো আমার মেজাজ গরম । আমি বললাম - কি ব্যাপার আবার কি চান ?
সে হাত দুটো সামনে এনে এক তোড়া ফুল দিয়ে ইংলিশে বলল " আমি জানিনা কিভাবে একজন মেয়েকে প্রপোজ করতে হয় । শুধু জানি - আমি এই ফুলগুলো আপনার জন্য কিনেছি । আপনি কি করবেন সেটা আপনার ব্যাপার" । বলেই পেছন ফিরে হনহন করে হেঁটে চলে গেল । একবারও পেছনফিরে তাকালো না । আমিতো পুরা বেকুবের মতো দাঁড়িয়ে আছি । কাস্টমাররা ব্যংকে আসা যাওয়ার পথে আমাকে দেখছে । গার্ডরা সব আমার দিকে তাকিয়ে মজা নিচ্ছে ।
এভাবে চলতে চলতে - কয়েকমাস কেটে গেলো । এই কয়মাসে সেই কাস্টমারটা আমাকে বিভিন্নভাবে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে কয়লা বানিয়ে ছেড়েছে । সেইসব কথা আরেকদিন বলবো ।
তবে খুবই নাটকীয় ভাবে ২০০৬ সালের অক্টোবর মাসের ঠিক এইদিনে সেই ছোকড়া কাস্টমারটার সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেলো । আজ আমাদের বিয়ের ৫ বছর হলো
ছোট করে শুধু একটা কথাই বলবো - এই ছেলেটার কাছ থেকে আমি অনেক অনেককিছু পেয়েছি , অনেক কিছু শিখেছি। তবে সবচেয়ে বেশী যেটা পেয়েছি তা হলো স্বাধীনতা । আর যেটা নতুন করে শিখেছি তা হলো বিপদ্গ্রস্থ মানুষকে সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করা । যতদিন বেঁচে থাকি - আমি যেন আমার ছেলে আর এই ছেলের বাবা'র হাত ধরে চলতে পারি ।