বেলুন বিক্রি করে এমন একটা ছেলে ফুটপাথে বসে কানতেছে। বয়স হবে আট কি দশ। উত্তরায় জমজম টাওয়ারের একটু দূরে যে বাংলাদেশ আই হসপিটাল আছে, এর সামনে। চোখের ডাক্তার দেখিয়ে মাত্রই বের হয়েছিলাম। চোখে ডায়ালাইসিস করার জন্য কী একটা ড্রপ দিয়েছে, চোখে ভালোমত দেখতেছিও না। কিন্তু রয়ে রয়ে কান্নাটা কলিজায় গিয়ে ধাক্কা দিলো। ঘিরে থাকা দশ, বারো জন মানুষকে জিজ্ঞাসা করলাম
- কী হইছে ভাই?
একজন দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললেন
- এলাকার নেতাগুছের কয়েকজন ওরে মাইরা এগারোশো টাকা নিয়া গেছে।
পকেট থেকে একশোটা টাকা দিলাম, অন্যরাও দিলেন। মোট উঠলো তিনশো পচিশ টাকা। ছেলেটার এইদিকে কোন আগ্রহই নাই। আরো যা জানা গেলো, ছেলেটা থাকে আজমপুর। ঘরে সৎ মা। বাবা প্রচন্ড মাইর দেয়। ওর টাকায় বাসা ভাড়া দেওয়া হয়। টাকার হিসাব দিতে না পারলে ওরে মারবে, এই ভয়ে ও কানতেছে।
ঝাপসার মত করে দেখলাম, বাম হাতটা কিছুটা বাঁকায়ে কোলের উপরে রাখা। জিজ্ঞাসা করলাম
- তোমার হাতে কী হইছে?
কানতে কানতে কয়
- আব্বায় ঐদিন ফ্যানের লগে ঝুলায়া পিটাইছে, এরপর আর এই হাত আর লাড়তারিনা।
একজন বললো
- চলো, তোমারে বাসায় দিয়া তোমার আব্বারে বুঝায়ে আসি।
পোলার কান্না তবু কমে না। ঝরঝর করে চোখ দিয়ে পানি পড়তেছে। পাশের এক লোক বললো
- ভাই এই বয়সে ওর স্কুলে ভর্তি হওয়ার কথা। ওরে কামাইয়ে নামায়ে আবার যে ফ্যানের লগে ঝুলায়ে মারতে পারে, তারে কী বুঝাইবেন? পোলাটার দায়িত্ব'তো নিতে পারবো'না আমরা, ফাও আরো বিপদ বাড়াবো।
পাশ থেকে আরেকজন বললো
- বাবা'রে যা পাইছোস, তা নিয়াই বরং বাড়ী যা, আমি রিক্সা করে দিচ্ছি। ঐ নেতারা হয়ত আশেপাশেই আছে, এই টাকাটাও তোরে মাইরধইর কইরা নিয়া যাইবো।
ছেলেটা তুষের আগুনের মত রয়ে রয়ে জ্বলতে জ্বলতে কানতেই থাকলো। বেলুন বিক্রি করে নিজেই ইনকাম করছে ঠিকই, কিন্তু আশ্রয় বলতে এখনো সৎ মায়ের সংসারে ফ্যানে ঝুলায়ে পিটানো বাপ। নিজের আশ্রয় নিজে খোঁজার বয়স বা বুদ্ধি এখনো হয় নাই। আকাশে আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট আছে, বিষয়টা ছেলেটা হয়ত জানে না। জানলে যদি রাষ্ট্রকে বিচার দিতো। নিশ্চয়ই ঐ নেতাদেরকে স্যাটেলাইটে খোঁজে বের করে ওর এগারোশো টাকা উদ্ধার করে দিতো। সোনার বাংলাদেশে সুশাষণ চলতেছে, আমরা বোকারাই শুধু তা পাবার সিস্টেমটা জানি না।