১৩ তারিখে রিজভি ভাই এসেছিলেন আমার অফিসে। কথায় কথায় জানতে পারলাম ১৪ তারিখে সোনারগা হোটেলে যে কনসার্টটা হবে এতে তিনি যাবেন যদি সঙ্গী পান। আর এর আয়োজক খান ভিসন এর পক্ষ থেকে রিজভী ভাইকে ৩/৪ টা টিকেট দেয়ার কথা। আমি বিনা শর্তে রিজভী ভাইএর সাঙ্গ দেয়ার জন্য রাজি হয়ে গেলাম।
ভালবাসার সমস্ত দিন কাটলো অফিসে, ব্যাস্ততম একটা দিন । সকাল ১০ টা থেকে শুরু করে একটানা কাজ করলাম রাত ৯টা পর্যন্ত। এর পরে রিজভী ভাইএর সাথে গেলাম সোনারগায়ে। আমরা মোট ১৫০ জন এর মত মিডিয়া কর্মী ছিলাম ইনভাইটেড। ঘন্টা খানেক আমরা সবাই আড্ডা দিলাম করিডোরেই। পরে বিপত্তিটা ঘটলো যখন আমরা প্রবেশ করতে গেলাম! হোটেল রিগেন্সির টিকেট এর পিছনে সোনারগা লিখে সিল সাইন দিয়ে যে টিকিট আমাদেরকে ধরিয়ে দিয়েছিলো খান ভিসন কর্তৃপক্ষ তা সোনারগা কর্তৃপক্ষও মেনে নিচ্ছেনা এমন কি খান ভিসনের যে রিপ্রেজেনটিটিভ আছে সেও ঢুকতে দিচ্ছেনা। খান ভিসনের বড় কর্তারা রেখেছেন মোবাইল অফ! সে এক অপমান জনক পরিস্থিতি। রিজভী ভাইএর লজ্ঝা কে দেখে!! একটু পর পর বলতেছেন...অরুণ ভাই আপনারে এই ভেজালের মইদ্ধে ফালাইলাম । হে হে হে। অপমানটাকে লক্ষ গুনে বৃদ্ধি করার জন্য সোনারগা কর্তৃপক্ষ করিডোর থেকে আমাদেরকে জোর করে সরায়ে দিয়ে রাস্তায় চলে যাবার জন্য বাধ্য করলো, হুইসেল..পুলিসের গাড়ির মত সাইরেন কত কি যে হেরা বাজাইলো!!
পাঁচতারা হোটেলের কর্তৃপক্ষ ও দারোয়ানদের ব্যাবহারযে এতটা খারাপ হতে পারে তা কল্পনায়ও ছিলোনা। বারবার যখন ওদেরকে বলা হচ্ছিলো যে আমরা সবাই মিডিয়ার লোক..ব্যাপারটা সমাধানের চেষ্টা চলছে..ততই যেন ওদের অপমানের ইচ্ছাটা চাড়া দিয়ে ওঠছে। ঘটনাটা এমন...যে ব্যাটারা আজ পাইছি তোদেরকে!!
অবশেষে যখন আমরা ফুটপাতে এসে অবাক হতবাক হয়ে দাড়ায়ে আছি, তখন খান ভিসনের একজন মোটামোটি সিনিয়র টাইপ লোক আসলেন। রিজভী ভাই তারে কঠিন ধমকের সুরে...পর পর দুইবার বল্লেন "ইট ইজ ঠু মাচ...", আল্লাহ বাঁচাইছে যে ঠু... বলার সময় তিনি ওই বেটার দিকে তাক করেন নাই। করলে ঠু এর শব্দে না হলেও আওয়াজের জোরে ব্যাটা উইরা যাইতো ।
ব্যাটা দেখি ভালউ ভয় পাইসে, মাফ টাফ চাইয়া আমাদেরকে ভিতরে ঢুকাইলো ভিতরে। শফিনের গান শুনলাম কয় একটা। এরপরে বিরতিতে বের হইলাম হল থেকে। ভাবছিলাম, খাওয়া দাওয়ার অটো ব্যাবস্থা আছে। দেখলাম নাই। পরে সবচেয়ে কমদামি খাওয়া খুঁজে পাইলাম লিলিপুট বার্গার। এক ইঞ্চি ব্যাসার্ধের যে বার্গার হতে পারে তা আমার ধারণায় ছিলো না। এবং এর দাম হচ্ছে মাত্র ১০০ টাকা করে! দোকানে যে বার্গার পাওয়া যায় তার দশ ভাগের একভাগ সাইজের একটা বার্গারের দাম যদি ১০০ টাকা হয় তাহলে হিসাবের ফলাফল হইলো, প্রমান সাইজের একটা বার্গারের দাম এক হাজার টাকা মাত্র! বার্গার খাওয়ার পরে পানি খাইতে গিয়া পড়লাম আরো বিপত্তিতে, সাধারণ পানি নাই, পানির কনিষ্ঠতম বোতলের মূল্য প্রায় ১৫০ টাকা। পরে আর কি করা দেখলাম এক গ্লাস সেভেন আপের মূল্য ১০০ টাকা। তাই সেভেন আপ ই সই। রিজভী ভাই থ্যাংকিও ফর পেয়িং দা বিল হে হে হে...
কিছুক্ষন পরে শুরু হলো আলিফের গান। গানযে কত বিরক্তিরক হইতে পারে তার প্রমান তারা হাড়ে হাড়ে দিয়েছে। এইদিক দিয়ে তারা জামাই বউ সার্থক। ৮/১০ টা গানের মইধ্যে একটা ছিলো বাংলা (ওইটা বাংলা ছিলো কিনা তা আমি সিওর না অবশ্য)। আর বাকীগুলান হইতাছে হয় হিভ্রু না হয় সংস্কৃত। গানের তোড়ে বমি করতে ইচ্ছা হইলো কিন্তু একহাজার টাকা মূল্যের বার্গারের ১/১০ অংশ আমার পেটে!! তা তো আর ফেলা যায় না !!!
আল্লাহ আমাদের উপর রহম করলেন, আলিফের গান শেষ হলো। তবে মাম্মা ওড়না ছাড়া স্কার্ট পরিহিত আলিফ মানে সুপারি গাছে ডাব, এইটা সবাই এক বাক্কে রাজি হইছে।(অবশ্য বাক্যখানা বের হইছিলো ক্রাইম রিপোর্টার মাঝহার ভাইএর মুখ দিয়া, পরে আমরা সবই সমর্থন দিসি)।
পেটের খুধায় জান যায়। পরে হোটের হতে মাত্র ১০০ পা ফেলিয়া চক্ষু মেলিয়া দেখলাম ফুটপাতে হাফপ্লেইট বিরিয়ানি বিক্রি করতেছে। আমি আর রিজভী ভাই খাইলাম। তৃপ্তিময় খাওয়া, বিল হয়েছে অত্যাধিক!!! দুইজনের বিল হয়েছে ২,০০০ পয়সা, মানে ২০ টাকা। হায়রে দুনিয়া এত পাশাপাশি এত ফাড়াক। এক মাটি হতেই উৎপাদিত ফসলের তৈরী খাদ্য স্থান ভেদে কত তফাৎ!!
আবার ফিরলাম হোটেলে, শুরু হলো ফ্যাসন শু। প্রতিটা মেয়েই নট মোর দেন ১৫ মনে হলো আমার কাছে। এত ছোট ছোট মেয়েরা যে কেন এই প্রফেশনে আসলো তা ভেবেই পেলামনা, মাঝখান থেকে মনটাই খারাপ হয়ে গেল। সারা রাত এরা এই বয়সে বাইরে প্রগ্রাম করে বেড়াচ্ছে। এদের কি পড়শুনা নাই! এদেরকি পরিবার নাই??
(যাই হোক রিজভী ভাই থ্যাংকিও এগেইন। নেক্সট টাইম কোন ইনভাইটেশান পেলে আমারে দাওয়াত দিতে ভুইলেন না কিন্তু!! হে হে হে)
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ২:২২