somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আগস্ট বিপ্লবের দিনগুলি

২৫ শে আগস্ট, ২০০৯ বিকাল ৩:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০০৭ সালের ২০আগস্ট রাতে ছাত্র সেনাবাহিনী মুখোমুখির জের ধরে সে দিনই রাতে এবং তার পরের দিন ছাত্র বিক্ষোভ বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে মূহুর্তের মধ্যে ছড়িয়ে যায় দেশব্যাপী। এই আন্দোলনের সংগঠক হিসাবে খুব কাজ থেকে দেখা এই ছাত্র আন্দোল।

আগস্ট ছিলো প্রস্তুতির মাস
গত বছর আগস্টে ঘটে যাওয়া ছাত্র আন্দোলনকে আমি আগস্ট বিপ্লবই বলি। দেশের এই চরম দম বন্ধ করা অগণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার মধ্যে ছাত্রদের এই ফুসে উঠাটা শুধু ছাত্র সেনাবাহিনীর মধ্যেকার অহম বা ইগোর লড়াই দেখলে চলবে না। এটা সেনাবাহিনী সমর্থিত সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণরোষেরে সেটাই ছিলো প্রথম সূচনা যার নেতৃত্ব ছাত্র সমাজ দিয়েছিলো। ব্যাপকতার দিক দিয়ে এটা ছিলো ৯০’র গণ অভ্যুথানের পরে ছাত্রদের নেতৃত্বে প্রথম কোন সরকারের বিরুদ্ধে বড় ধরণের আন্দোলন যা দেশব্যাপি সাধারণ জনগণ দ্বার ব্যাপক সমর্থিত হয়েছিলো।
২০০৭ সালের আগস্ট মাসে দেশের উত্তরাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। কোটি কোটি মানুষ পানি বন্দি হয়ে করুন অবস্থায় দিনানিপাত করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি প্রগতিশীল বামপন্থি ছাত্র সংগঠন ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বন্যার কাজের সুবিধার্থে এসকল সংগঠন ব্যানারের নাম দেয় বন্যার্ত সহযোগীতা কেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। যদিও উক্ত নামে ২০০৪ সালের আগস্টের বন্যায় বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক, তাই আবারো নামটি নিয়ে এাবারো ছাত্র শিক্ষক বৃন্দ বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর অভিপ্রায় নেমে পড়ে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক তানজিম উদ্দিন খানকে আহবায়ক আর আমাকে ( মোহাম্মদ আরিফুজ্জামানকে) সমন্বয়ক করে বন্যার্ত সহযোগিতা কেন্দ্রের কাজ শুরু হয়। জরুরী অবস্থার ধুয়া তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিমন্ত্রনে (!) পুলিশ আমাদেরকে প্রথমদিনই কাজে বাধা দেয়। পুলিসকে আমি জানাই যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা বন্যার্ত মানুষরে পাশে দাঁড়াতে চায়, তত্বাবধায়ক সরকারও বলছে সম্মিলিতভাবে এই বন্যা মোকাবেলা করেত, তবে আমাদের কেন বাঁধা দিচ্ছেন?’ এমন প্রশ্নের উত্তরে পুলিশের ডিসি দক্ষিণ আমাকে জানায় (এখন আর মনে করতে পারছি না ও সময়ে ডিসি দক্ষিণে কে দায়িত্বে ছিলেন) , বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রক্টরের আমন্ত্রণে আমরা এখানে এসেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চায় যে বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ বন্যার ব্যাপারে কোনরূপ ত্রাণ তৎপরতা না চালায়। আপনাদের অনুরোধ করছি যে আপনারা ভিসি ও প্রক্টর স্যারের সাথে দেখা করুন।’ আমার পাশে দাঁড়ানো ছিলো নিউ এজের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি দোদুল। দোদুলকে দেখলাম খুব চিৎকার করছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিসের এই আচারণে সে খুবই ক্ষুব্দ। যা হোক আমরা সাবই মিলে ভিসির সাথে দেখা করতে গেলাম, গিয়ে শুনি তিনি নেই। দেখা হলো প্রক্টর আ ক ফিরোজ। প্রক্টর আমাদের অনেক বোঝালেন এবং শেষতক বললে, কোনভাবেই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ত্রাণ উত্তোলনের কোন কাজ করতে অনুমতি দিবেন না।’ আমাদেরও পরিষ্কার উত্তর ছিলো, আমরা করবো, যদি কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় দায়ি থাকবে।’ আমরা প্রক্টরের রুম থেকে ফিরে চলে এলাম ডাকসু ভবনের সামনে যেখানে ত্রানের কাজ আমরা শুরু করেছিলাম।

অবশ্য বিবিসি ঐ দিনই আমাদের সংবাদটি গুরুত্বের সাথে প্রচার করে এবং উপদেষ্টাদের কাছে বিষয়টি তুলে ধরে। উপদেষ্টা সম্ভাবত তপন চৌধুরী বিষয়টির জন্য ভুল শিকার করে এবং আন্তরিকভাবে ক্ষমা চান। পরের দিন নিউ এজ সহ বেশ কয়েকটি দৈনিকে খবরটি গুরুত্বের সাথে ছাপা হয়। আগস্ট আন্দোলনের কথা বলতে গেলে পেছনের ইতিহাস একটু টানা এই কারণে প্রয়োজন যে আগস্ট আন্দোলনের নেতৃত্ব, তার উদ্দেশ্য সর্ম্পকে পরিস্কার বলে বলার দরকার। অর্থ্যাৎ এই রকম একটি আন্েদালনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে নেতৃত্ব দেবার কিছু শর্ত বিদ্যমান ছিলো।

ঘটনা শুরু যেখান থেকে
বন্যার্ত সহযোগিতা কেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ব্যানারের মধ্যে প্রায় ১৭০/১৮০ জন সাধারণ ছাত্র ছাত্রি কাজ করছিলো। বন্যা ঝড় জলচ্ছ্বাসের মত কোন প্রাকৃতিক ( তবে প্রাকৃতিক দূর্যোগ কতটুকু প্রাকৃতিক এই নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন আছে। সেটা খোদ বন্যার্ত সহযোগিতা কেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে তুমুলভাবে বিদ্যমান ছিলো)
সংগঠনের মধ্যে ছিলো সংস্কৃতির নয়া সেতু, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন ( বদর উদ্দিন ওমর), ল্যাম্পপোস্ট, বাংলাদেশ বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলন, জাতীয় ছাত্র দল, বিপ্লবী ছাত্র সংঘ, মুখপত্র, প্রপদ ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী। ফলে আগস্টে এই ব্যানারে বেশ কিছু মানুষ আগ থেকেই সংগঠিত ছিলো। ঢাকসুর দোতলায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তপক্ষ আমাদেরকে বাধ্য হয়েছিলো বন্যার কাজ করার জন্য একটি রুম ( ঢাকসুর কনফারেন্স রুম) ছেড়ে দিতে।
২০ আগস্ট দুপুর বেলা আমাদের কিছু কর্মীর কাছে শুনলাম খেলার মাঠে সেনাবাহিনীর সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের গন্ডোগোল বেঁধেছে। তবে পরিস্থিতি আন্দাজ না করার দরুন আমি বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে এলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে আমার কিছু জরুরী কাজ থাকায় আমাকে ক্যাম্পাস ছাড়তে হলো।
আমি ভেবেছিলাম বিষয়টি দ্রুত মিমাংশা হয়ে যাবে। যেহেতু দেশে জরুরী অবস্থা চলছে, সে কারণে ছাত্ররা বেশি দূর এগোবে না। আমার সকল হিসাব নিকেশ ভুল প্রমান করে দিয়ে শিক্ষার্থীরা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। বিষয়টি আর মিমাংশার মধ্যে যে নেই তা বুঝতে পারলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বামপন্থি নেতা কর্মীর ফোন পেয়ে। শুধু বামপিন্থ নেতা কর্মীরাই নয়, বন্যার্ত সহযোগীতা কেন্দ্রের মধ্যে যারা কাজ করছিলো এরকম অনেক সাধারন শিক্ষার্থীরাও ফোন করছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের খবর জানিয়ে। সংস্কৃতির নয়া সেতুর সমন্বয়ক আহসানকে ফোনে চেষ্টা করে ব্যার্থ হলাম। নয়া সেতুর আরেক কর্মী আরিফুল সাজ্জাত সব্জীবকে ফোনে পেলাম। সজীবের কাছ থেকে জানতে পারলাম সেনাবাহিনীর সাথে ছাত্রদের তুমুল সংঘর্ষের কথা। সজীব আমকে জানালো আহসান-এর পায়ের পাতার মধ্যে দিয়ে রড ঢুকে গেছে। ওর অবস্থা বেশ খারাপ। হিল্লোলকে ( বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী) সেনাবাহিনী আটকে রেখেছে, তার বর্তমান অবস্থা জানা যাচ্ছে না। আামাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরতে নিষেধ করে দিলো সজীব। পরে রাতে হিল্লোলকে ছেড়ে দেয়। অবশ্য আমি যেখানে ছিলাম সেখান থেকে রাতে ক্যাম্পাসে ফেরাটা বেশ কঠিন হতো। রাতে আমাকে আবার ফোনে সজীব জানালো, নির্যাতন বিরোধী ছাত্র ছাত্রি বৃন্দের ব্যানারে আগামিকাল সকাল ১১ টায় অপরাজেয় বাংলায় বিক্ষোভ ও সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এখানে বলে রাখা দরকার নির্যাতন বিরোধী ছাত্রী ছাত্রী বৃন্দের এই ব্যানারটি ২০০২ সালের ২৩ জুলাই মধ্য রাতে শামসুন্নাহার হলে পুরুষ পুলিসের ভয়াবহ নির্যাতনের প্রতিক্রিয়া হিসাবে গড়ে তোলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী যার পেছনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলো বামপন্থি ছাত্র ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। এর পর থেকে বিশ্ববিদ্যালযের বেশ কয়েকটি সফল ছাত্র আন্দোলন এই মঞ্চটি থেকে হয়েছে। হুমায়ুন আজাদেও উপর হামলা এবং বাস দুর্ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রি হ্যাপির মৃত্যুও, ফজিলাতুন্নেসা মুজব হলের আন্দোলনে মঞ্চটি নের্ততৃ দিয়েছিলো। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে মঞ্চটির আবেদন বা গ্রহণযোগ্যতা ছিলো। নির্যাতন বিরোধী ছাত্র ছাত্রী বৃন্দের এই ব্যানারটির আমি ছিলাম সমন্বয়ক। এমন কোনো আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে দিয়ে নয়; আমি এই দায়িত্ব পাই হ্যাপির সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যুর পরে যে আন্দোলন হয় সে আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী হিসাবে আমি সমন্বয়ের দায়িত্ব পাই। আর এ কারনে আমার কাছে বার বার ফোন আসছিলো। তবে তখন পযর্ন্ত ঘঠনার আরো বাকি।

রাত যতো বাড়তে থাকলো পুলিসের আক্রমনও আরো হিংস্রতায় রূপ পেলো। প্রায় প্রত্যেক হল থেকে খবর আসতে থাকলো, হলগুলো যেনো এক একটা যুদ্ধ ক্ষেত্র। শামসুন্নাহার হলের প্রপদের কর্মী নূরীকে (বর্তমানে একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক) ফোন করলাম, নুরী আমাকে জানালো আগামীকালের বিক্ষোভ সমাবেশে ওর হল থেকে মিছিল আসবে। আমি যেনো ব্যানারের ব্যবস্থা করে রাখি। আমি নুরেিক প্রতিশ্রƒতি দিলাম ব্যানার আনার। এর পর আমি ফজিলাতুন্নেসা হলের দীপান্বীতা, সোমা, নীতুকে ফোন দিলাম। ওরা আমার কাছ থেকে আগামীকালের কর্মসূচী জানতে চাচ্ছিলো। আমি আগামীকালের কর্মসূচী জানিয়ে ওদেরকে বললাম হলে কর্মসূচীর সমর্থনে মিছিল করতে। ওরা হলের ফ্লোরে ফ্লোরে মিছিল করতে থাকলো কর্মসূচীর সমর্থনে। রাত ১২ টার পরে আহসান-এর ( সংস্কৃতির নয়া সেতুর সমন্বয়ক) সাথে আমার যোগাযোগ হলো। ও আমাকে জানালো ২১ তারিখ ভোর ৭টায় আজিজ মার্কেটের নীচ তলায় বিপ্লবী মৈত্রীর অফিসে মিটিং ডাকা হয়েছে। বন্যার্ত সহযোগিতা কেন্দ্রর মধ্যে যে সব সংগঠন আছে তারা সহ প্রগতিশীল ছাত্র জোট ( বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন-সাকি গ্র“প, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী) মিটিং এ থাকবে। আমি যেনো চলে আসি। আমার উপর বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হলো লিফলেট ও ব্যানার করার। আমি দায়িত্ব নিয়ে বেশ খানিটা বেকায়দায় পড়ে গিয়েছিলাম।

বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর আরফানকে (বর্তমানে পাঠশালায় ফটোগ্রাফীর উপর অধ্যায়নরত) ফোন করে বললাম ব্যানার করার জন্য। তবে আমি ভরসা পেলাম না। গণ সাংস্কৃতিক ফ্রন্টের লাল্টু ভাইয়ের সাথে ফোনে কথা বললাম তিনি কোন হেল্প করতে পারবেন কিনা ব্যানার তৈরীর ব্যাপারে। তিনি আমাকে আশস্ত করলেন।
রাত যতো বাড়ছিলো পুলিসের আক্রমন ততো বেশি করে হিংস্র হয়ে উঠছিলো। সেই সাথে বাতাসে ভাসছিলো নানা গুজুব। ফজিলাতুন্নেসা হল থেকে নীতু (র্বতমান স্কলািস্টকার িশক্ষক) বার বার ফোন করে আমার কাছে জানতে চাচ্ছিলো কেউ মারা গেছে কিনা। ওদের হলে ছাত্রলীগের মেয়েরা প্রচার করে বেড়াচ্ছে পুলিসের গুলিতে দুজন ছাত্র মারা গেছে আরো অনেকে আহত। আমি বুঝে উঠতে পারছিলাম না এখন কী করবো। আমি নিশ্চিত ছিলাম এরকম কোন ঘঠনা ঘঠেনি। এসব ছাত্রলীগের বাজে প্রচার যেনো আন্দোলন খারাপ দিকে মোড় নেয়। আমি নিতুকে বললাম, এখনই খবর নিয়ে তোকে জানাচ্ছি।
প্রথম আলোর বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্টার আনুকে ( আনু আনোয়ার) ফোন দিলাম। আনু আমাকে নিশ্চিত করলো যে এরকম কিছু ঘঠেনি। যে ছেলেটাকে নিয়ে এরকম খবর রটানো হচ্ছে তার গায়ে পুলিসের রাবার বুলেট লেগেছে। সে এখন পুরোপুরি ভালো আছে। আনু সেই ছেলেটির পাশে দাঁড়িয়ে আমার সাথে ফোনে কথা বলছে বলে আমাকে জানালো। আনুর দেওয়া তথ্য আমি ফজিলাতুন্নেসা হলের ছাত্রীদেরকে নীতুর মাধ্যমে জানিয়ে দেই। আর সতর্ক করে দেই এসব গুজবে কান না দিতে।
এরপর আমার সাথে কথা হয় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক তানজিম উদ্দিন খানের ( তানজিম স্যার) সাথে। তানজিম স্যারকে আগামীকালের বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচীর কথা জানিয়ে দেই। তানজিম স্যারকে একটা দায়িত্বও আমি দেই। সেটা হলো, বিক্ষোভ মিছিলের আগে যে সংহতি সমাবেশ হবে সে সমাবেশে আমরা কিছূ শিক্ষক চাই। আকমল স্যারকে ( ড. আকমল হোসেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ) আগামীকালের সংহতি সমাবেশে যেনো আনা হয়। তানজিম স্যার আমাকে আশ্বাস দেয় আকমল স্যারকে আনার ব্যাপারে। তানজিম স্যার বার বার সতর্ক হয়ে আন্দোলন করার পরামর্শ দেয়। ছাত্রি হলগুলো থেকে কেমন জমায়েত আসতে পারে বলে আমার কাছ থেকে অভিমত জানতে চান। আমি তাকে আশ্বস্ত করি আগামিকালের বিক্ষোভ সমাবেশটায় যে ভালো সংখ্যক শিক্ষার্থীর উপস্থিতি থাকবে এ বিষয়ে। তানজিম স্যারের সাথে কথা শেষ হবার পর আমি লিফলেট লিখতে বসে যাই কম্পিউটারে।
সকাল ভোরে আহসানের জন্য একটা জিনস প্যান্ট নিয়ে আমি শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেটের দিকে যাই। গত রাতে আহসানের পায়ের মধ্যে রড ঢুকে যাবার সময় তার প্যান্টটাও ছিড়ে যায়। আহসানের হাতে প্যান্ট দিয়ে নীলক্ষেতের ব্যানার লেখার দোকানে যেয়ে লাল্টু ভাইয়ের রেফারেন্স দেওয়ার সাথে সাথে কাজ হয়। কাক ডাকা ভোরে কোনো কাপুড়ের দোকান খোলা না থাকায় অন্য যেসব মানুষ ব্যানার লিখতে অর্ডার দিয়ে গেছিলো তাদের কারো একজনের কাপুড় দিয়ে তিনটি ব্যানার বানানোর কাজ শুরু করতে দিয়ে আমি শাহবাগের আজিজ মার্কেটে এসে জানতে পারলাম, আজকের মিটিংয়ে প্রগতিশীল ছাত্রজোট আসছে না। ফলে মিঠিং করার আর তেমন কোনো কারন নেই।
এবার আমি নীলক্ষেতের পাশে ধানমন্ডি থানা (বর্তমানে নিউমার্কেট থানা) পাশে অবস্থিত গাউসুল আজম মার্কেটের একটি কম্পিউটারের দোকানে এসে রাতে কম্পোজ করা ফাইল থেকে একটা প্রিন্ট নিয়ে ফটোকপির দোকানে গেলাম। কম্পোজের দোকান ও ফটোকপির উভায় দোকান আমার পূর্ব পরিচিত হওয়ায় ওরা আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলো। ছোট ছোট হ্যান্ডবীল আকারের লিফলেটগুলো এ৪ সাইজে প্রিন্ট নিয়ে কেটে কেটে লিফলেট বানিয়ে নিলাম। আমি যখন কলাভবনে পৌছালাম তখন প্রায় ৯.৩০ মিনিট বাজে।
লিফলেট প্রায় ৩০ মিনিটের মধ্যেই বিলি হয়ে গেলো। লিফলেটে সাধারন বক্তব্য দিয়ে আজকের কর্মসূচী দেওয়া হয়েছিলো। তখনো ব্যানার এসে পৌছেনি।
সংস্কৃতির নয়া সেতুর রোমানকে দায়িত্ব দিলাম নীলক্ষেত থেকে ব্যানার আনার। এর মধ্যেই দেখা গেলো ব্যানার ছাড়া ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মিছিল বের করে দিয়েছে। মিছিলের সামনে ছাত্র ইউনিয়নেরও কিছু নেতাকর্মীদের দেখতে পেলাম। ছাত্রলীগের এই মিছিলে কোন সাধারণ শিক্ষাথী নেই। মিছিল থেকে ছাত্র ইউনিয়নের আসাদ ( যাকে আমরা বন্ধু আসাদ বলে ডাকতাম, বর্তমানে ডি নেটে কাজ করে) আমাকে লাইব্রেরীর সামেন হাত তুলে ইশারা করলো। তার গা খালি, গায়ের শার্টটি কোমরে বাঁধা। এদিকে আমাদের সাথে যে সব নেতা কর্মীরা ছিলো তারা বেশখানিকটা উদ্বিগ্ন ছিলো, কেন এখনো মিছিল শুরু করছিনা নির্যাতন বিরোধী ছাত্র ছাত্রী বৃন্দের ব্যানারে। আমি ওদের আশ্বস্ত করলাম মেয়েদের হল থেকে মিছিল আসার পরই আমাদের পূর্ব ঘোষিত বিক্ষোভ মিছিল ও সংহতি অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে।
শামসুন্নাহার ও রোকেয়া হলের মেয়েরা পর পর মিছিল করে আসবে। ওদেরকে ব্যনার দেয়ার কথা ছিলো। ওরা ব্যনার ছাড়া আসবে না। কারণ আন্দোলন ছিনতাই হয়ে যায় এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীই কম বেশি জানে। একটু পরে রোমান ব্যনার নিয়ে চলে এলে প্রথম ব্যনারটি রোকেয়া শামসুন্নাহারের মেয়েদের জন্য নুরীকে ফোন করে পাঠিয়ে দিলাম।
একটু পরে নীতু, সোমা, শিখা বড়ো মিছিল নিয়ে আসলো অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে। এর মধ্যেই শামসুন্নাহার হলের মেয়েরা নির্যাতন বিরোধী ছাত্র ছাত্রী বৃন্দের ব্যানার নিয়ে নিয়ে কলা ভবনের দিকে মিছিল করে আসছে। মিছিলের আগে প্রপদের নুরীকে দেখে ভালো লাগলো । আমি মিছিলের পেছনে দাড়ালাম। দেখি কিছু মেয়ে কাঁদছে। এগিয়ে গেলাম ওদের কাছে। আমার সাথে সাকি গ্র“পের ফেডারেশনের আরিফও এলো। মেয়েরা আমাদেরকে জানলো, ছাত্রলীগের মেয়েরা তাদেরকে ব্যানার ধরতে দিচ্ছে না। এমনকি তাদেরকে নির্যাতন বিরোধী ছাত্র ছাত্রী বৃন্দের ব্যানারে আন্দোলন করতে দিবে না বলে দিয়েছে। মেয়েরাও ছাত্রলীগের মিছিলে যাবে না। নির্যাতন বিরোধী ছাত্র ছাত্রী বৃন্দের ব্যানার ছাড়া তারাও মিছিল করবে না। আমি আর আরিফ তাদের আশ্বস্ত করলাম যে নির্যাতন বিরোধী ব্যানারেই আন্দোলন হবে। মেয়েরা আবার মিছিলের দিকে এগিয়ে গেলো। ভালো লাগলো এসব মেয়েদের কথা শুনে যে, সাধারণ শিক্ষার্থী শাসকশ্রেণীর সন্ত্রাসী ছাত্র সংগগঠনগুলোকে পরিত্যাগ করছে। এবং প্রকাশ্য তাদের অবস্থানের কথা জানিয়ে দিচ্ছে।
আকমল স্যারকে দেখে আমি এগিয়ে গেলাম। আকমল স্যার কলা ভবনের পশ্চিম পাশ দিয়ে ঢুকছিলো। স্যার আমাকে তাড়াতাড়ি ভিসির বাড়ির সামনে যেতে বললেন। ওখানে বেশ কিছু শিক্ষার্থীর জটলা ছিলো। সামনে এগুতেই দেখলাম, আমাদের প্রক্টর লম্বা ভাসন দিচ্ছেন স্বাধীনতা ভাস্কার্যের উপর দাড়িয়ে। প্রক্টরের ভাসনের কথা মোটা দাগে বললে এমন দাঁড়ায় যে, খেলার মাঠে একটা ভুল বোঝা বুঝি হয়েছে। এটা আজকের মধ্যেই নিস্পত্তি হয়ে যাবে। ওরকমটাই প্রক্টর স্যারকে আশ্বাস দিয়েছে সেনাবাহিনীর উর্ধতন মহল। তাই অযাথা এখানে জটলা না করে রুমে ফিরে যাবার পরামর্শ দেন প্রক্টর আ ক ফিরোজ।
প্রক্টর স্যারের পরামর্শে একটা দোটানায় পড়ে যায় একটি বড়ো অংশের শিক্ষার্থিরা। আমি বুঝতে পারছিলাম ঘঠনা কোন দিকে মোড় নিচ্ছে। আন্দোলন যদি এখানেই ডিভাইডেড হয়ে যায় তবে এ আন্দোলন এখানেই শেষ হয়ে যাবে।
আমার পাশে দাড়ানো লুবানা তাবাসসুম (ছাত্র ফেডারেশ- সাকি গ্র“প)। আমি লুবানাকে বলি প্রক্টরের পাশে দাড়িয়ে সত্যটা বলার জন্য এবং আজকের পূর্বঘোষিত কর্মসূচী অনুযায়ী আন্দোলন চালিয়ে যেতে। লুবানা যখন তেমন কিছুই বলতে পারছিলো না, তখন এক প্রকার বাধ্য হয়েই আমি প্রক্টর স্যারের ডান পাশে দাড়িয়ে চিৎকার করে বলি, ‘এই প্রক্টর বিগত জোট সরকারের অজ্ঞাবহ দাস ছিলো এখন হয়েছে সেনাবাহিনীর দাস। মূলত ইনি জামাতের লোক। এই প্রক্টরকে আমরা বিশ্বাস করি না। আমরা চাই আন্দোলন চালিয়ে যেতে। আপনারা এই প্রক্টরের কোন কথা বিশ্বাস করবেন না।’ এবার কাজ হয়। প্রক্টর ভাব বুঝতে পেরে এলাকা ত্যাগ করে। আমি লুবানাকে ইশারা করি শ্লোগান ধরতে। লুবানা ‘ুদনিয়ার মজদুর’ বলে শেল্গান ধরে। কিছু সাধারণ শিক্ষার্থী গলা মেলায়। আমি লুবানার এরকম আচারণে বেশখানিকটা চমকে উঠি। এটাতো কোন বামপন্থি আন্দোলন না। একটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন। যেখানে প্রধান বিষয় হচ্ছে সেনাবহিনীর অগণতারিন্ত্রক আচারণের প্রতিবাদে আন্দোলন হচ্ছে। আমার তখন মনে হয়েছিলো এই শ্লোগান সমগ্র আন্েদালনকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আমি লুবানাকে থামতে বলি এবং নিজেই শ্লোগান ধরি। শিক্ষঅর্থীরা এবার আমার সাথে সাথে গলা মেলায়। আমি টিএসসির দিকে হাটতে শুরু করি শিক্ষার্থীরাও মিছিলকে এগিয়ে নিয়ে যায় টিএসসির অভিমুখে। আমরা মিছিল নিয়ে টিএসসির দিকে এগুতে শুরু করলে বিষ্টির মতো টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে পুলিস।
মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। আবারো চেষ্টা করে মিছিল শুরু হয়। মিছিল এবার পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষীণ করে। টিএসসির রাজু চত্বরে এসে সমাবেশ করে মিছিলটি। সমাবেশে ঘোষণা দেওয়া হয় বিকাল ৩.৩০ মিনিটে মধুর কেন্টিনে প্রেস কনফারেন্স। প্রেস কনফারেন্স থেকে পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে।
এরপরে আন্দোলনকর্মীদের বড়ো একটা অংশ নিয়ে আমরা মধুর কেন্টিনে যাই। প্রগতিশীল জোটের নেতাদের সাথে কথা হয়। বিশেষ করে সাকি গ্র“পের ফেডারেশন সভাপতি আরিফের সাথে কথা হয়। ছাত্র ফ্রন্টের নেতৃবৃন্দের সাথেও আলাপ হয়। সবাই একমত হয় যে আন্দোলনটা সম্মিলিতভাবে এগিয়ে নিতে হবে।

আপোষকামী বামপন্থী আর শাসকশ্রেণীর ঐক্য
এরপর শুরু হয় দাবী নিয়ে দর কষাকষি। প্রথমে সংস্কৃতির নয়া সেতুর সাথে আন্দোলনের দাবী নিয়ে যুক্তি তর্ক চলতে থাকে। নয়া সেতুর নেতৃবৃন্দের দাবী ছিলো জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার করতে হবে। আর অন্যান্য দাবীর সাথে কোনো দ্বীমত নেই। বন্যার্ত সহযোগীতা কেন্দ্রের মধ্যে যে সব সংগঠন ছিলো তারা সংস্কৃতির নয়া সেতুর এই দাবীর সাথে একাত্ব ঘোষণা করলেও সাকি গ্র“পের ফেডারেশন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কোনভাবেই এই দাবীর সাথে ঐক্যবদ্ধ করা যায়নি। তাদের মতামত ছিলো সাধারণ শিক্ষার্থী জরুরী অবস্থার পক্ষে। উল্লেখো এরকম একটি যুক্তি তার দিয়েছিলো জরুরী অবস্থার মধ্যে যখন ড. মুহাম্মদ ইউনুস বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে বক্ততা দিতে চেয়েছিলো তখন কিছু বামপন্থি সংগঠন ছাড়া প্রগতিশীল ছাত্রজোটের ( একমাত্র বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী বাদে) সংগঠনগুলো বলেছিলো, ‘জরুরী অবস্থা ভঙ্গ করে মিছিল করা যাবে না। কারণ সাধারণ ছাত্ররা এটাকে সার্পোট করবে না। কিন্তু দেখা গলো মাত্র ২৮ জনের একটি মিছিল সেদিন ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে ভুয়া বানিয়ে দিয়েছিলো। সে বিষয় আরেকদিন বলা যাবে।
এরও অনেক পরে ফেডারেশন বাইরে ফোনে অনেক আলাপ করার পর রাজি হয় জরুরী অবস্থা প্রত্যাহারের বিষয়টিতে। আমরা তখনো কিন্তু বুঝতে পারিনি এখনো বুঝতে পারি না সাকি গ্র“পের ফেডারশেন এতো দ্রুত কিভাবে জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার করতে রাজি হয়ে গেলো!
এরকম অবস্থায় ঠিক হয় প্রেস কনফারেন্সের পেপারটি প্রপদ সবার মতামত নিয়ে তৈরী করবে।
এর মাঝে আমি, আহসান, সজীব সহ বেশ কয়েকজন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী মধুর কেন্টিনের বাইরে বসে চা খাচ্ছিলাশ। শহীদ মধু দার ছেলে অরুন দা এ সময়ে হন্ত্য দন্ত্য হয়ে আমার কাছে এসে বলে, তুহিন দা ( ক্যাম্পাসে আমাকে সবাই এ নামে চেনে) আপনার সাথে কথা আছে।’ আমি একটু সরে এসে দাদার কথা শুনি। দাদা দ্রুত কথা বলে। অরুন দাদা যা বললো তার মানে এরকম দাঁড়ায় যে আন্দোলন বিভক্ত হয়ে যেতে পারে। আমরা যেনো সবাইকে নিয়ে আন্দোলন করি। আমি তাকে আশ্বস্ত করলাম যে আন্দোলন সবাইকে নিয়ে করা হচ্ছে।
এরপর সাবেক এক বামপন্থি ছাত্র নেতা আমার কাছে এলেন। আন্দোলনের বিস্তারিত শুনলেন। তারপর আমাকে আর আহসানকে বললেন, এখন ছাত্রদল ছাত্রলীগকে সাথে নিয়ে আন্দোলন কর। ওরাও এই পজিশনে তোদের নেতৃত্বে আন্দোলন করবে।’ আমি বললাম, সকাল থেকে মিছিল হচ্ছে। ছাত্রদল ছাত্রলীগ উভায়ই ছিলো। আলাদা করে কী কিছু বলার দরকার আছে?’ সাবেক এই বামপন্থি ছাত্রনেতা আমাকে জানালেন, ওদের কিছু দাবী দাওয়া হয়তো তোদের দাবীর সাথে অন্তর্ভক্ত করার ব্যপারে বলতে পারে। তোরা ঝামলো করিস না। তা ছাড়া আন্দোলনের চরিত্রতো তোদেরক বুঝতে হবে। এই আন্দোলন দিয়ে তোরা নিশ্চয়ই বিপ্লব করতে পারবি না।’ আমি সাফ জানিয়ে দিলাম, ছাত্রলীগ ছাত্রদল আন্দোলন করতে পারে সে ব্যাপারে কোনো বাঁধা নেই। তবে ছাত্র সংশ্লিষ্ট নয় এমন কোনো দাবী যদি অন্তর্ভূক্ত করতে চায় তবে তা হতে সম্ভব নয়।
এরপর ছাত্রদলের উচ্চপর্যায়ের কিছু নেতাদের নিয়ে আসা হয় মধুর কেন্টিনের সামনে আমাদের সাথে কথা বলতে। আমি আগের অবস্থায় একদম অনড় থাকি। ছাত্রদলের দাবী ছিলো দূর্নীতির দায়ে আটক নেতাদের মুক্তি।
শাসকশ্রেণীর ছাত্র সংগঠনের সাথে আর বসতে আমরা রাজি না থাকায় তারা চরম যড়যন্ত্রের জন্য তৈরী হতে থাকে। অবশেষে লিখিত বক্তব্য সাংবাদিক সম্মেলনে পাঠ করা হয়। সাংবাদিক সম্মেলনের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন প্রপদের শুভ্রা চক্রবর্তী। লিখিত বক্তব্য শেষ করা মাত্র ছাত্রদলের ক্যাডাররা বাশ নিয়ে মধুর কেন্টিনের পশ্চিম দিক হতে প্রবেশ করে সংবাদ সম্মেলনের নেতৃবৃন্দের উপর সন্ত্রাসী কায়দায় আঘাত করে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা। সংবাদ সম্মেলনের উপস্থিত নেতৃবৃন্দের ধারণাও ছিলো না যে তাদের উপর আক্রমন হতে পারে। ফলে তাদের কোন প্রস্তুতি না থাকায় ছত্র ভঙ্গ হয়ে যায় নির্যাতন বিরোধী ছাত্র ছাত্রী বৃন্দের নেতৃবৃন্দ। এসময় মধুর কেন্টিন থেকে নির্যাতন বিরোধী ছাত্র ছাত্রী বৃন্দের নেতৃবৃন্দ বের হয়ে গেলে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন-এর নেতারা মধুর কেন্টিনের যে টেবিলে সংবাদ সম্মেলন হচ্ছিলো সে টেবিলের উপর দাড়িয়ে বক্তৃতা দিতে থাকে যে আন্দোলন শেষ হয়ে যায়নি।
উল্লেখ্য যে পুরো সংবাদ সম্মেলনটি সিএসবি নিউজ ( বর্তমান সরকার ২১ আগস্ট আন্দোলনের পরে বন্ধ করে দেয়) সরাসরি স¤প্রচার করেছে।
তবে আন্দোলনকে এভাবে দখল করার তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে। যার ফলাফল ২২ আগস্ট যখন শিক্ষক সমিতির ব্যানারে আন্দোলন করার চেষ্টা করা হচ্ছিলো তখন কিন্তু সাধারণ ছাত্র ছাত্রী শিক্ষক সমিতির মিছিলে যায়নি।
তবে ২১ আগস্ট সন্ধার সময় আমরা বিবিসির মাধ্যমে জানতে পারি সরকার সবগুলো দাবীই মেনে নিয়েছে শুধু জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার করা ছাড়া।

এ আলো ছড়িয়ে পড়লো সবখানে
ঢাকা বিশ্ববিধ্যালয়ে যখন আন্দোলন চলছিলো তখন একই সাথে নিউমার্কেট এলাকায়ও চলছিলো হকারদের সাথে পুলিসের মারপিট। হকাররা ছাত্রদের আন্দোলনে একাত্ব ঘোষণা করার পেছনে সব থেকে বড় কারণ হলো, বর্তমান সেনা সমর্থিত সরকার আসার পর থেকে সমানে বস্তি আর হকার উচ্ছেদ করা হয়েছে। ফলে চরম দরিদ্র এসব মানুষের ক্ষোভ নিয়ে প্রথম থেকেইে এই সরকারকে যাত্রা শুরু করতে হয়েছে।
আমরা আরো খবর পেলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গির নগর বিশ্ববিদ্যালয়ও আন্দোলনে নেমেছে শিক্ষার্থীরা।
২১ আগস্টে আমাদের আর কিছু করার ছিলো না। আন্দোলনের চরিত্র অনুযায়ী আমরা প্রায় শতভাগই সফল হয়েছিলাম। ২১ আগস্ট ঠিক হয় আমরা ২২ আগস্ট বিজয় মিছিল করবো। বিজয় মিছিলের প্রস্তুতি নিয়ে যার যার রুমে ফিরে এলাম সবাই।
২২ আগস্ট আমি সকালে মহাখালি আসি একটা কাজে। মহাখালি এসে দেখলাম কুরুক্ষেত্র ঘঠে গেছে এখানে। ব্যাংকের একটু সামনে তিতুমির কলেজ। তিতুমির কলেজের ছাত্ররা রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উপর পুলিস সেনাবাহিনীর নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে। দেখে ভালো লাগলো যে আমাদের উপর আক্রমনটার কারনেই ছাত্ররা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তবে বাড়াবাড়ি ভালো লাগছিলো না। যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে সরকার নতী স্বিকার করেছে, সেখানে আমাদের ইচ্ছে থাকলেও আর কী সাধারণ শিক্ষার্থীদের নামে কোন রাজনৈতিক কর্মসুচী দেওয়া সম্ভব? আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সাথে বামপন্থি রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলাম তারা মনে করছিলো সম্ভব নয়। যে সম্ভাবনা ছিলো তা গতকালের সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগ আর ছাত্রদলের হামলার মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে গেছে।

জনগণের আন্দোলন দখল হয়ে যায় যেভাবে
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের শিপলু ভাই আমাকে ফোন করে জানালো যে নির্যাতন বিরোধী ছাত্র ছাত্রী বৃন্দের ব্যানার সাকি গ্র“পের ছাত্র ফেডারেশন বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি আরিফ নামাতে দিচ্ছে না। আমি আরিফকে ফোন করার চেষ্টা করলাম, ফোনে পেলাম না। তড়িঘড়ি করে ক্যাম্পাসে চলে এলাম। এসে যা দেখলাম তা আশা করিনি। আওয়ামী লীগ বিএনপি এক হয়ে গেছে। তাদের মনোনিত শিক্ষকদের নেতৃত্বে একটি মিছিল শহীদ মিনারে যাচ্ছে। এবার আমরা ঘঠনা আচঁ করতে পারছিলাম। তবে ওরা নির্যাতন বিরোধী ছাত্র ছাত্রী বৃন্দের ব্যানার ব্যবহার করেনি। কিভাবে একটা আন্দোলন এরা গ্রাস করে তা বুঝতে পারছিলাম। তবে মিছিলে সাধারন শিক্ষার্থীদেরকে দেখা গেলো না। সবই ছাত্রদল ও ছাত্রলীগ।
এবার আমরা অপেক্ষা করছিলাম বাকি ঘটনার জন্য। সূর্য্যসেন হলে খেতে গেলাম দুপুরে। নাসির ( ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। বতৃমানে একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক) আমাকে জানালো এফ রহমান হলে বোমা তৈরী হচ্ছে। ছাত্রদল আর লীগ মিলে বানাচ্ছে। এফ রহমান হলের পাশে নীলক্ষেত পুলিস ফাঁড়ি, ওরা পুলিসদের উপর আক্রমণ করতে চায়। ওরা ভয়ঙ্কর কিছু একটা করবে। আমি এফ রহমান হলের দিকে গেলাম। দেখলাম ওখানে কিছু ছাত্র পুলিসের সাথে ইট মারামারি করেছ। তবে ছাত্রলীগের এক নেতা যে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠি, আমাকে বললো স্থান ত্যাগ করতে। এখানে সবাই আমাদের উপর ক্ষেপে আছে।
চারপাশ থেকে খবর আসতে থাকলো ঢাকা শহরের গরিব মানুষ রাস্তায় নেমেছে। অথচ কোন নেতৃত্ব নেই। সজীবের কথাটা খুব মনে পড়ে গেলো। সজীব একটা জাতীয় মুক্তির ইস্তেহার তৈরী করেছেলো। ওর ইচ্ছে ছিলো অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে দাড়িয়ে ইস্তেহারটি পাঠ করবে। তারপরে জাতীয়ভাবে ছাত্রদের নেতৃত্বে আন্দোলনের ডাক দিবে। ভাষা আন্দোলনের সময় ছাত্ররা যেমন ভূমিকা নিয়েছিলো। যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের একটা বিরাট সংগ্রামের ঐতিহ্য আছে; মানুষ এই চরম নেতৃত্বহীন অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের পাশে থাকবে। অন্যান্য বামপন্থি ছাত্র সংগঠন রাজি থাকলেও সাকি গ্র“পের ফেডারেশন কোনভাবেই রাজি হলো না। অথচ এখন মানুষ মাঠে নামছে কোন নেতৃত্ব নেই , নেই কোন আহবান। যদিও সজীবের আশাটা উচ্চাভিলাশী ছিলো তথাপি আমরা চেষ্টা করে দেখলে আজকের মতো আন্দোলনকে দখল করাটা বেশ কঠিন হয়ে যেতো। ১৪ দফাও হাজির করেছিলো সজীব।
গতকাল যদি সজীবের লিফলেটটি অপরাজেয় বাংলায় ছাত্রদের মাঝে পড়া যেতো, তারপর যদি দেশেব্যাপি একটা ডাক দেওয়া যেতো? এরকম অনেকগুলো যদি থাকলে বোধ হয় কোন কাজ শেষ পযর্ন্ত আর হয় না। আমাদের আকাশ ছোয়া স্বপ্ন অনেকগুলো যদির মধ্যে ডুবে গেলো চীরতরে।
শেষ পযর্ন্ত সরকার হল ভ্যাকেন্টের ঘোষনা দিয়েছে। সন্ধার পরে কাফ্যু জারী করেছে। এ সবকিছুই করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ন্ত্রনে আনার জন্য। শাসকশ্রেণীর কাছে এখোনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কদর আছে, আছে ভয় পাওয়ার মতো অনেক উপকরণ। কিন্তু এতো অল্প সময় ছেলে মেয়েরা কোথায় যাবে। ছেলেরা না হয় কোথাও কোনভাবে রাত কাটাবে। কিন্তু মেয়েরা?
আমি ফজিলাতুন্নেসা হলে ফোন করে নীতু সোমাকে বললাম, যথা সম্ভব মেয়েদের পাশে দাঁড়াতে। বিশেষত ফাস্ট ইয়ার সেকেন্ড ইয়ারের মেয়েদের পাশে দাঁড়াতে। কারণ ফাস্ট ইয়ার সেকেন্ড ইয়ারের মেয়েরা ঢাকায় তেমন কাউকে চেনে না। এমনিতে মফস্বল বা গ্রাম থেকে আসা এসব মেয়েরা ঢাকা শহরই কম চেনে তার পরে আবার মাসের শেষ পর্যায় এরা কোথায় যাবে। সে তুলনায় আমাদের মতো যারা মাস্টার্সের শিক্ষার্থী তাদের অনেক চেনা জানা।
শহর দেখতে বের হলাম। মানুষ যে দিকে যেমন পারছে ছুটছে। ট্রাকে, তেলের লরীতে, বাসের ছাদে। কোথায় নেই মানুষ। এরম মধ্যে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়া হলো। এক ধরণের ভিতি ছড়ানোর জন্য কী সরকার এসব করছে? নাকি সরকারের অবস্থা সত্যিই খুব নাজুক। ছাত্ররা এমন কী করেছে যার জন্য সরকারের অবস্থা এরকম টাল মাটাল হয়ে গেলো। সেনাবাহিনী দিয়েও সরকার বাগে আনতে পারছে না পরিস্থিতি?
কারোর সাথে আর যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। সবার জন্য কষ্ট হচ্ছিলো। কে কোন অবস্থায় আছে জানাটা খুব দরকার ছিলো।
এরকম পরিস্থিতি ছিলো ২২ আগস্ট ২০০৭ সাাল। তার পরের ঘঠনা সবাই জানেন। কিভাবে ছাত্রদের গ্রেফতার করা হয়েছিলো? আর কিভাবেই বা নির্যাতন বিরোধী ছাত্র ছাত্রী বৃন্দের লড়াকু নিয়ন্ত্রিত আন্দোলন ছাত্র শিক্ষকে মুক্ত করে এনেছিলো।
দির্ঘদিন বন্ধের পরে যখন শিক্ষকরা অপরাজেয় বাংলার সামনে মানব বন্ধন করছিলেন, সেদিন (দিনটি এখন আর আমার মনে নেই) বিবিসিকে বলেছিলাম, ‘সরকার আগুন নিয়ে খেলছে। এর পরিনাম ভালো হবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি আগ্নেগিরির উপর বসে আছে। যে কোন মূহুর্তে আগ্নেগিরির অগ্নুৎপাত হতে পারে।’ আমার এ ভবিষৎ বানী যে কোন অংশে ভুল বা অতিরঞ্জিত ছিলো না তার জ্বলন্ত উদাহরণ নির্যাতন বিরোধী ছাত্র ছাত্রী বৃন্দের নিয়ন্ত্রীত আর সঠিক দিক নির্দেশনায় আন্দোলন সফলতার মুখ দেখে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সম্পাদক ড. আনোয়ার হোসেন তার কারাগারের দিনগুলি বইয়েও নির্যাতন বিরোধী ছাত্র ছাত্রী বৃন্দের প্রশংসা করেছেন তাদের আন্দোলনের পদ্ধতির কারনে।
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×