সবুজাভ নীল জল। ছোট ছোট নুড়ি পাথর, গভীর সবুজ শৈবাল, সোনালী, নীল, কাল, রুপালী রঙের মাছ গুলো ওদের এই ছোট্ট কাচের ঘর টাকেই সমুদ্র ভাবে। কৃ্ত্রিম ঢেউ ওদের মন টাকে দোলা দেয় । ওরা খেলা করে। পরিষ্কার পানিতে একটু ময়লা পড়লেই সাথে সাথে তুলে ফেলা হয় তা। প্রতিদিন ৩ বার করে খাবার দেয়া হয় ওদের। ওদের রঙ্গীন গা এত যত্নে চকচক করে। মাঝেমধেয় ইচ্ছে করে মাছ গুলোকে কোন সমুদ্রে ছেড়ে দিয়ে আসি। ওরা ওদের আসল স্থান টা দেখুক। কিন্তু ভয় হয় যদি পথ হারিয়ে ফেলে এত বড়...এত গভীর জলে? অতো নোংরা জলে বেঁচে থাকবে তো?
রাতে যখন রুমের আলোটাও নিভানো থাকে, আক্যুরিয়ামের নীল আলো রুমের ছাদে একটা হাল্কা জোছনাময়ী আবেশ তৈ্রি করে। শুধু তারারা জ্বলে না। আমার রুমে তারা নেই, সূর্য নেই, চাঁঁদ নেই। সব কিছু তো আর কৃ্ত্রিম করা যায় না।কৃ্ত্রিম , কৃ্ত্রিম, কৃ্ত্রিম...ঘুমিয়ে পড়ি । ঘুমের ঘোরে মা আমাকে অনেক সান্তনা দেয়। কতো দিন তোমায় দেখি না। এক দিন, এক মাস, নাকি এক বছর,নাকি এক যুগ?
প্রতি দিন ঘুমানোর আগে জানালার পর্দাটা একটু ফাঁক করে রাখি যেন ভোর বেলায় আলো এসে আমার ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেয়। আলার্ম এ কখনই আমার ঘুম ভাঙ্গে না।ঘুম থেকে উঠেই আয়নায় নিজেকে দেখে ভাবি, কালকের থেকে আজ আমাকে সুন্দর দেখাচ্ছে। কি স্বপ্ন দেখলাম তা ভাবতে ভাবতে বাথ্রুমে গিয়ে ব্রাশ টা ভিজিয়ে তাতে টুথ পেস্ট লাগিয়ে দু পা এগিয়ে হোস্টেলের বারান্দায় গিয়ে দাড়াই। মাঝে মধ্যে ছেড়ে দেওয়া কল টাও বন্ধ করতে ভুলে যাই, মানুষ কে দেখিয়ে দেখিয়ে ব্রাশ করি। যদিও অন্যের দাঁত ব্রাশ করা দেখতে আমার মোটেই ভাল লাগে না। ব্রাশ করতে করতে ভাবি, আজ কোন জামাটা পড়ে বাইরে যাব।
হাত মুখে ধুয়ে, রুমে এসে ল্যাপ্টপ টা অন করে ফেইসবুক এ লগ ইন করে আপডেটস দেখি। ঘড়ির কাটা গুণতে গুণতে রেডি হয়ে ভায়োলিন এর ব্যাগ টা কাধে ঝুলিয়ে ৫ম তলা থেকে জুতোয় অনেক শব্দ করতে করতে নিচে নামি। মনে মনে সবাইকে জ্বালাতন করতে পেরে একটু খুশিও হই। এত সকালে আমি একা বাইরে যাবো রেওয়াজ করতে, আর তোমরা সবাই ঘুমোবে আরামসে, সেটা কিভাবে হয় ?
চলবে...............।।