ইলা চলে গেল , আমাকে ছেড়ে ...ওর এত কষ্টের তিন সন্তান...আমাদের সন্তান...ওর নিজের হাতের সাজানো ঘর...একটু একটু করে সংসারের হাত খরচ থেকে বাঁচিয়ে গড়ে নেওয়া দুই একটা হাতের বালা..বারান্দার প্রতিদিন জল ঢেলে বড় করা পাতা বাহারের কচি কচি পাতা...কোন টাই কি ওকে মায়ায় জড়াতে পারে নি ? আচ্ছা...ও কি এখন ওগুলোর জন্য কষ্ট পায়? আমার কাছে আবার আসতে চায়? আমাদের ছেলে মেয়ে গুলোকে আবার সরষে দিয়ে ইলিশ মাছ রেঁধে মুখে তুলে ভাত খাওয়াতে চায়?
আমারও আর সেই ঘরে থাকা হয় নি। বিয়ের প্রায় ১৭ বছর পর সেই বাড়িটা আমাদের জীবনে আসে...।ইলা কি খুশিটাই না হয়েছিল...। বলত...যাক...এখন থেকে আর বাড়িওয়ালিদের ফুটানি আর হরেক রকম কথা সহ্য করতে হবে না।বাড়িটা তে প্রথম যেদিন প্রবেশ করে ইলা, সেদিন ওর মুখ থেকে বাড়িওয়ালাদের এত দিনের সহ্য করা কথার চাপা ক্ষোভ, প্রচন্ড গরমের মধ্যে ঘাম ঝরিয়ে মাটির চুলোয় রান্না করার কষ্ট,আমার অজানা ওর নিশ্চুপ বেদনা গুলো...সব কিছু যেন এক মুহুর্তে মিলিয়ে যায়...১৭ বছর পর আমাদের আরেকবার নতুন সংসার শুরু হয়...যে সংসারে আগের মত হাত টানাটানি নেই...রিকশার ঝাঁকুনি নেই...ড্রইং রুমের সেই পুরোন সোফা নেই...রান্না ঘরে আর মাটির চুলার চখ জ্বালানো ধোঁয়া নেই।ইলা আবার নতুন করে সংসার সাজাতে শুরু করে। নতুন জানালার নতুন পর্দা, ড্রইং রুমের ঘিয়ে রঙের দেয়ালে দু একটা পেইন্টিং...ঘরের কোনে বড় একটা ফুলদানি...আর দেয়াল জুড়ে একটা বই এর আল্মারি...একদম মধ্যবিত্তের রুচিশীল ঘরের মত...।১৬ বছরের মেয়েটিকে পাড়ার ছেলে দের হাত থেকে বাঁচিয়ে ঘরের আনতে আনতে ক্লান্ত ইলা রাতে আমার পাশে শুয়েই রাজ্যের গল্পের পশরা মেলে ধরত...কখন শুনেছি মধ্যরাত আবধি...কখন বা ঘুমিয়ে পড়েছি...গল্প শুনতে শুনতে ।ইলা হয়ত সকালের অফিসের কথা ভেবে আমাকে আর ডেকে তুলতো না...এখন বড় আফসোস হয়, কেন ঘুমিয়ে পড়তাম সেই সময়ে? ইলা আমাকে আর কি কি গল্প শোনাতে চেয়েছিল? আজ এই ভর দুপুরে, বৃদ্ধাশ্রমের একটি রুমে...জানালার পাশে ইজি চেয়ারে ছেলের দেওয়া আইপডে গান শুনেতে শুনতে ইলার কথা বড়ও মনে পড়ে...কাল ফ্রেমের চশমাটা খুলে জানালার পাশে রাখি...একটু তন্দ্রা চাই...সেই তন্দ্রায় ইলা কে নিয়ে আবার সেই পুরোন বাসা টায় পুরোন সংসারে ফিরে যেতে চাই...।
চলবে.........।।