তানভির গাড়ির দরজা খুলে দিল...আমি নেমে অর আগেই ভিতরে ঢুকলাম...কেন যেনো মনে হয়েছিল...হয়তোবা এই জায়গা টা আজ রাতের আমার আশ্রয় হতে পারে।তানভির কে দেখলাম রেস্ট হাউসের কর্মচারি গুলকে বলতে ওর বন্ধুরা আসলে যেনো ও যে এখানে আছে সেটা না বলে...। কর্মচারি গুলো প্রভু ভক্ত কুকুরের মত মাথা নাড়ে।তানভির আমাকে নিয়ে উপরে উঠা শুরু করে...আমি কতগুলো সিড়িঁ ভেঙ্গেছি আমার খেয়াল নেই...আমার শুধু মনে হয়েছে , আজ রাতের জন্য আমার থাকার একটা জায়গা চাই...যে করেই হোক আজকের রাত তা পার করে আমাকে যুবুর কাছে পৌছাতে হবে...
আমি রুমে ঢুকি...আমি শুনি
----তুমি ঠিক আছো? কোন সমস্যা নেই তো?
----হুম...আমি ভাল আছি...এখন...
----কি খাবে বল?
----আমার এ নিয়ে চিন্তা করতে ইচ্ছা করছে না...তুমি তোমার ইচ্ছা মত অর্ডার দাও।
----আরে বাবা...বলই না...
----নো...প্লিজ...
----ওকে...
কিছু একটা জিজ্ঞেস করছিল তানভির আমাকে...আমি খেয়াল না করেই হুঁ হাঁ করেছি। তানভির কে আমি চিনি না...ও কেমন আমি এটাও জানি না...খারাপ মনে হয় নি অবশ্য খুব এক্টা...ওকে কি বিশ্বাস করা যায়?
শেষ বারের মত করে দেখি কাউকে।
-----তুমি বস...ফ্রেশ হও...আমি একটু বাইরে থেকে আসছি...তুমি দরজাটা ভাল মত লাগিয়ে দাও...আমি ছাড়া অন্য কেউ নক্ করলে খুলবে না।
-----ওকে...আমি লাগিয়ে দিচ্ছি।
দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে আমি একটু শ্বাস নেই...এতক্ষন পর খেয়াল হল...আমি অনেক্ষন
ধরে ফোন টা দেখি না...ব্যাগ থেকে বের করে দেখি... আম্মুর নম্বর থেকে অনেক গুলো কল। খুব কল ব্যাক করতে ইচ্ছা করে...পারি না...নিজেকে আটকাই...
ওয়াশ রুমে গিয়ে একটু নাকে মুখে জল দেই। ক্লান্তি কাটানোর ব্যর্থ চেষ্টা।
কিছুক্ষন পর দরজায় মৃদু আওয়াজ শুনি..
-----এই নাও তোমার মাথা ব্যাথার ওষুধ...
-----ওহ্...থ্যাংক্স...
ওষুধ তা দেখে মনে পড়ে যায় মাথা ব্যথার কথা...ব্যাথা টা না থাকলেও ওকে দেখিয়ে খেয়ে ফেলি ওষুধ টা...
টেনশনে গলা থেকে কোন খাবার নামতে চায় না...তবুও খাই...পেট টাকে ভরাতে হবে...হঠাৎ খেয়াল করি তানভির আমার দিকে তাকিয়ে আছে...আমি একটু লজ্জা পাই...হেসে দেই...
-----তুমি কি আজকে সারা দিনে কিছু খেয়েছ?
-----কেন?
------না...মনে হল...
-----ও...নাহ...আমি কিছু খাই নি আজকে...
-----বল কি? কেন?
-----কিছু না...এমনি...খেতে ইচ্ছা করে নি...
তানভির আর কিছু বলে নি...কিন্তু আমার টেনশন কেন যেন বেড়ে যায়।
কিছুক্ষন পর তানভির অর জুতো খুলে...মনে হয় ও একটু রিলাক্স হতে চায়...নাকি এর পরে আর কিছু খুলতে আরম্ভ করবে...
নাহ ...কিছু খোলে না...টিউব লাইট তা নিভিয়ে দেয়...রুমে শুধু ল্যাম্পের আলো...
তানভির আমার পাশে এসে বসে...।
-----তোমার কি হয়েছে? আমার মনে হচ্ছে কিছু একটা ঠিক নেই...।বলো আমাকে।
দ্বিতীয় বার জিজ্ঞেস করার আগেই আমি কেঁদে ফেলি। তানভির অবাক হয় না...শুধু আমার আরেকটু কাছে এসে বসে।
আমি ওকে সব কিছু খুলে বলি...প্রথমে ও কিছুক্ষন আমাকে বকাবকি করে...তারপর আমার বয় ফ্রেন্ডকে কিছুক্ষন গালি গালাজ করে...আমাকে শুধু একটা কথাই জিজ্ঞেস করে...
-------তুমি এত বোকা কেন? তোমার মত একটা সুন্দর মেয়ে যুবায়ের এর মত একটা আধবুড়োর জন্য ঘর থেকে পালিয়েছে...আর তার প্রেমিকের কোন খবর নেই...এত বোকা কেন তুমি হ্যা?
-------তানভির...যুবু আসবে...।আমি ওকে ভালবাসি...আমি ওকে চিনি...ও যখন বলেছে ও আসবে...তখন ও আসবেই...না আসলে আমাকে বলতো।
------তোমার ছেলে দের চেনা এখন বাকি আছে...।বুঝেছো?
------না তানভির...।আমি ওকে চিনি...ও আসবেই।
------জিনিয়া...সে আসুক...এটা আমিও চাই...কিন্তু যদি না আসে? তখন তুমি কোথায় যাবে ? এখন সময় বেশি একটা হয় নি...। রাত বাড়ার আগে চলো তোমাকে নিজে আমি দিয়ে আসি...আমার চোখের সামনে তুমি এত বড় রিস্ক নিতে যাচ্ছো...এটা হতে পারে না...।
-------দেখো তানভির...এখন তুমি যদি আমার সাথে আমার বাসায় যাও , বাবা মা তোমাকে ভুল বুঝবে...
-------কোন ভুল বুঝবে না...চল আমি তোমাকে দিয়ে আসি...।
------না প্লিজ...আমি তোমার পায়ে পড়ি...আজকে রাত টা আমাকে এখানে থাকতে দাও...যুবু অবশ্যই আসবে।। আমি ওকে চিনি।
তানভির চিন্তায় রুম এর এ পাশ থেকে ও পাশে যায়...এখন আমার থেকে ওকে বেশি চিন্তিত মনে হচ্ছে।তানভির আমাকে বার বার বলে বাসায় চলে যেতে...নিজেকে বড় বেশরম মনে হতে থাকে...।অন্যসময় হলে কখন চলে যেতাম...
-----আচ্ছা...তানভির...যা বলেছি ভুলে যাও...আমি যদি আজ রাতে তোমার সাথে থাকতে চাই...তুমি কি রাজি হবে?
তানভির আমার দিকে অবাক হয়ে কতক্ষন চেয়ে থাকে...না বুঝতে পেরে আমাকে আবার জিজ্ঞেস করে...
-----মানে? কি বল তুমি?
-----কেন ? অবাক হচ্ছো? ভুলে যাও আমার কোন বয় ফ্রেন্ড আছে...আমি বাসা থেকে পালিয়েছি...তোমার কাছে সাহায্য চেয়েছি...শুধু ভেবে নাও...যে আমি তোমার সাথে আজকের রাত কাটাতে চাই...তুমি আমার কাছে যা চাবে তাই পাবে......কি রাজি ?
-----এভাবে বলার কোন দরকার ছিল না , জিনিয়া। বেশি বলে ফেলেছ...তোমার ডাকে সাড়া দেবে না এমন সাহস ছেলে দের নেই...আমিও দিতাম...কিন্ত আমি জানি তুমি কেন এ কথাটা বল্লে...।।তুমি আজকে থাক...কিন্তু তোমাকে প্রমিজ করতে হবে কালকে সকালে তুমি বাসায় যাবে...অন্যকোথাও না...
আমি কি প্রমিজ টা করব? আমি তো বাসায় যাবো না...তবে প্রমিজ় না করলে তানভির আমাকে বিশ্বাস করবে না...
------ওকে ...প্রমিজ়।
তানভির কে একটু চিন্তা মুক্ত মনে হয়...ও টেলিভিশনের রিমোট নিয়ে বিছানায় আমার পাশে এসে বসে...আমই ওকে না দেখার ভান করে বিছানায় শুয়ে পরতে নেই...আমি ওকে কথা বলার আর কোন সু্যোগ দিতে চাই না...। সারাদিনের ক্লান্তির চোখ এখন ঘুমের ভান ধরে...।ঘুম কি আর আসে?
আধ বোজা চোখে আমি দেখি...তানভির একবার টেলিভিশনের দিকে...আর একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে...। ও টেলিভিশনের ভ্যলিউম কমিয়ে দেয় আমার ঘুমের সুবিধার জন্য...হঠাৎ আমার মনে হয় আমি তো যুবু কে একবার ও ফোন দেই নি...ও তো আমাকে একবার ফোন দেয় নি...একবার জানতে চায় নি যে রাতে আমি কোথায় আছি...ফোন টা বের করে ওকে কল দেই...পর পর অনেক বার কল দেই...কিন্তু ফোন বন্ধ...তানভির বুঝতে পারে...একটা ব্যঙ্গের হাসি হাসে...আমি কাটানোর জন্য বলি...
------ও মনে হয় ফ্লাই করেছে...এইজন্য অফ্ পাচ্ছি...।
------আচ্ছা...।তুমি ঘুমাও...।
নিজেকে ঠিক একি কথা বুঝাই...কিন্তু মনে মনে ভয় জাগে...আসবে তো?
এসব চিন্তা করতে করতে কখন যে তন্দ্রার মত কিছু একটা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে টেরও পাই না...। শুধু অনুভব করি একটা বিশ্বাসী হাত আমার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে...। মায়ের কথা মনে পড়ে...আমাকে যেন কেউ আর খুঁযে না পায় সেজন্য সিম টাও চেঞ্জ করে ফেলেছি...।খুব কাঁদতে ইচ্ছা করে...আমি আর নিজেকে আটকাতে পারলাম না কেন জানি...কারন টা মনে হয়...এখন রাত...।রাতের কাছে কোন আবেগ লুকানো যায় না...তানভির এর দুটো হাত আমাকে কাছে টানে...আমি ওকে আর শক্ত করে জড়িয়ে ধরি......। তানভির যেনো সবকিছু বুঝতে পেরে আমাকেও জড়িয়ে ধরে...।এই মুহুর্তে আমার সব চেয়ে বেশি দরকার ওকে...।আমি কাঁদতে কাদঁতে ঘুমিয়ে পরেছিলাম মনে হয়...
বাসায় থাকলে কখন নিজে থেকে ঘুম ভাঙতো না আমার...কাজের মেয়ে টার দশ বার ডেকে যাওয়ার পরও যখন ঘুম ভাঙতো না...আম্মুর এক বকুনিতে ঘুম থেকে উঠে যেতাম আমি...আজকে তো আমাকে কেউ ঘুম থেকে ওঠার জন্য ডাকতে আসে নি...আজকে এম্নিতেই ঘুম ভেঙ্গেছে...।কারন আজ আমি অন্যদিনের মত বাসায় না...
তানভির এর দিকে তাকাই আমি...।অনেক মায়া লাগে ওকে দেখে...। নিজেকে অনেক ঋণী মনে হয়...।
ওকে ডাক দেই...।
এমন সময় মোবাইল এ একটা মেসেজ আসার শব্দ শুনি...।খুশিতে নেছে ওঠে মন টা...খুলে দেখি...আমাকে যুবু ওর এর বন্ধুর বাসায় যেতে বলেছে...ও ওর বন্ধুর বাসায় আছে...
আমি তানভির কে গর্ব করে বলি...
----দেখেছো...আমি বলেছিলাম না যুবু আসবে...ও এসেছে...
----তাই? ভাল তো...কিন্তু তুমি প্লিজ একটা বার চিন্তা করে দেখ...যা করছো।।ঠিক করছ কিনা...।আমি তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি...
-----না তানভির...আমি একতা রাত বাসার বাইরে কাটিয়ে ফেলেছি... আমি আর বাসায় ফিরতে পারবো না...
------জিনিয়া...তুমি প্লিজ আমার কথা একতা বার শোন...দরকার হলে আমি নিজে গিয়ে তোমার বাবা মায়ের সাথে কথা বলে আসি...।
----না তানভির... আমাকে আমার জায়গায় যেতে দাও...
----ও কে...আমার আর তোমাকে কিছুই বলার নেই...শুধু মনে রেখ...।একদিন এর জন্যে অনেক কষ্ট পাবে...।
আমাকে তানভির যুবুর ফ্রেন্ডের বাসার একটু আগে নামিয়ে দেয়...ও আমার সাথে আস্তে চেয়ে ছিল...আমি বারন করেছি...আমি চাই না ও জানুক তানভির এর কথা.
আমি সেই বাসায় ঢুকার আগে ভাবতে থাকি...যুবু কে এইবার যেয়ে এমন ভাবে জড়িয়ে ধরব...আর ছাড়ব না কোন দিন...আমাকে ছেড়ে আর কোথাও যেতে দেবো না কখন ও...কলিং বেল টিপে কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকি...। কেউ খুলে না...আবার টিপি ...এবার খুলে যায়...আশা করেছিলাম আমার যুবু সোনা কে দেখব...।
ভেতরে ঢুকে দেখি...আরও অনেক গুলো অচেনা মধ্যবয়সী......।আমার একটু ভয় হতে থাকে...আমি ওদের কে জিজ্ঞেস করি
----যুবায়ের কোথায়?
----ও ভেতরের রুমে আছে...আপনি ভেতরে যান...
একি রে বাবা...আমি আস্লাম...।অথচ দরজা খুলতে এল না...রুমে বসে আছে? দেখা হয়ে নিক...আজকে ইচ্ছা মত ঝারবো...।
আমি নিজের ঘর ছেড়ে বের হয়ে আসতে পেরেছি...আর ও আমার জন্য একটু এই রুমে আসতে পারল না?
আমি ভেতরে ঢুকে যুবু কে দেখে ঝগড়ার কথা ভুলে যাই...। ওকে জড়িয়ে ধরি...।আচমকা ও আমার হাত ছাড়িয়ে নেয়...খেঁকিয়ে ওঠে
---- তুমি জানো ,তোমার জন্য কত কষ্ট করে আমি এসেছি?
----কষ্ট করেছ...আমিও করেছি? মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি একটু থাকার জন্য। তুমি তো আসবে বলে যেদিন আসার কথা ছিল ওইদিন আসলে না...এখন তুমি এইসব কথা কেন বলছো? তুমি বলেছিলে আমাকে বিয়ে করবে...চল...আমরা এখনি বিয়ে করব...
----আচ্ছা।। তুমি বস।।তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে...
-----কি কথা?
-----আরে অগুল পরে বললে ও হবে...আমি অনেক ক্লান্ত।। আগে আসো দুজন কিছুক্ষন গল্প করি...অনেক দিন তোমাকে দেখি না...আসো...।আমার কাছে আসো...
আমাকে জড়িয়ে ধরে ও..পরম চুম্বনে ...ওর উষ্ণ জিহবা...আমাকে সিক্ত করে...আমি উড়তে থাকি আকাশে...আচমকা...ও আমার গলাটা চেপে ধরে আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই...।আমাকে বিছানায় ফেলে দেয়...।আমি চিৎকার করে বলি...
----এসব হচ্ছে কি? কি হয়েছে তোমার?
-----চুপ কর্ মাগী..
আমি আর চিন্তা করার সময় পাই না... নিজেকে বাচানোর ও কোন পথ খুজে পাই না...কুত্তার মত ঘেউ ঘেউ করতে করতে সে আমার দিকে গায়ের উপর ঝাপিয়ে পড়ে...কামড়ে আমাকে ক্ষতবিক্ষত করে...ওই রুম থেকে বাকি কুত্তাগুলোও আসে ...আমার কুত্তা তাকে সাহায্য করার জন্য...
আমি রক্তাক্ত হই...আমার হৃদয় টাকে ওরা দুমড়ে মুচড়ে ফেলে...জুতোএ তলায় পিষে ফেলে... নিজেকে এক দঙ্গল কুত্তার টানা হেঁচড়া করা এক খাবলা মাংসের পিন্ডের মত মনে হয়...ব্যথা সইতে সইতে আমি এক সময় অজ্ঞান হয়ে যাই ব্যথা থেকে দৌড়ে পালাবার জন্যে।
কতক্ষন অজ্ঞান ছিলাম জানি না ...জ্ঞান ফেরে...সব কয়টা কুত্তা আরামে ঘুমাচ্ছিল...আমার কাঁদার সময় ছিল না...।কোন ভাবে আমি ওই বাসা থেকে পালিয়ে আসি...। কোনো ভাবে বাসার গেইট এ পৌছে দরজায় জোরে জোরে লাথি মারি...।সব রাগ...সব ক্ষোভ ওই দরজার উপর...চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করে সব দোষ তোর...।তুই কেন আমাকে বের হতে দিয়েছিলি...? আমি চিৎকার করতে পারি নি...আমি একটা কথাও বলতে পারি নি...দরজা খুলেছিলো কে আমার মনে নেই।
এরপরের প্রায় ১ বছর , আমার প্রতিদিন ঘুম এসেছে ঘুমের ইঞ্জেকশন এ...তিন বেলা গাদা গাদা ওষুধ খেয়ে ...মেন্টাল হসপিটাল এর একটা রুমে...ছিটকিনি ছাড়া একটা টয়লেট এ কেঁদে......।
এসব ই ছিল আমাকে কথা বলানোর ব্যর্থ চিকিৎসা...কথা আমি এখনও বলি না...এখন শুধু আমার শরীর কথা বলে...আমার শরীরে অই কুত্তাদের বীজ ঢুকে গেছে...
now... I am a slut....a bitch.........