somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মায়াবী

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১০:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দু'দিন হলো বাসায় নতুন ভাড়াটে এসেছে । অবশ্য এখন পর্যন্ত কারোর সাথে দেখা হয়নি । এমনকি ঐ বাসা থেকে কোন সারাশব্দও পাওয়া যায় না , যেন কোন মানুষজন নেই ! আমার খুব ইচ্ছে করছে গিয়ে দেখে আসি , কেমন ভাড়াটে এসেছে । কিন্তু মা বলে দিয়েছে যেন না যাই , কারন এমন অনেকেই আছেন যারা অযথা কেউ এলে বিরক্ত হয় । তাছাড়া মাত্র দু'দিন হল এসেছে । ওরা তো এখানেই আছে , পালিয়ে যায়নি । কথাটা ঠিক । আমিও তাই কিছু বলিনি আর ।

বিকেলে ছাদে গেলাম , একটু ঘুরতে । দেখলাম একজন অচেনা ভদ্রমহিলা তার থেকে শুকনো কাপড় নামাচ্ছেন । একটু দূরে আমার বয়সী একটা মেয়ে ছাদের রেলিং এর কাছেই বসার যায়গায় আকাশের দিকে চেয়ে বসে আছে আছে । মুখটা দেখা যাচ্ছে না । কেমন যেন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে । বুঝতে পারলাম , এরা আমাদের নতুন ভাড়াটে । আমি এগিয়ে গিয়ে ভদ্রমহিলাকে সালাম দিয়ে বললাম , " ভালো আছেন আন্টি ? "
উনি আমার দিকে তাকালেন । তার চেহারায় এক ধরনের বিষন্নতা । তিনি একটু হাসলেন । " ওয়ালাইকুম সালাম , হ্যা ... ( দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ) ভালো আছি । তুমি ভালো আছো ? "
" জ্বী :) , আপনারা বোধহয় নতুন এসেছেন । আমরা আপনাদের পাশের ফ্লাটেই থাকি । "
" ও আচ্ছা , আমার বাসায় এসো মা । "
" জ্বী আন্টি , যাবো । :) ও কি আপনার মেয়ে ? "
" হ্যা , ওর নাম আলো " :)
" যাক , একজন নতুন বন্ধু পাওয়া গেলো । " :)
আন্টি কেমন যেন হয়ে গেলেন , হাসি উধাও । একটু চুপ করে ওর দিকে তাকিয়ে থেকেই বললেন , " আশা করছি ওকে আসলেই বন্ধু হিসেবে নিবে । "
আন্টির কথাটা একটু কেমন যেন লাগলো । ঠিক বুঝতে পারলাম না । তবু বললাম , " অবশ্যই আন্টি " :)
আন্টির ডাকে মেয়েটি আস্তে আস্তে আমাদের দিকে আসতে থাকলো । মেয়েটির চেহারা খুব মায়াবী , কিন্তু দৃষ্টিটা অন্যরকম !
" আমি সুজাতা , কেমন আছো তুমি ? "
আমার দিকে তাকালই না । সোজা গিয়ে মায়ের হাত ধরলো। মনে করেছিলাম ওর মার সাথে কথা বলছি দেখে হয়তো আমার সাথে ও আমার সাথে কথা বলবে , সহজেই বন্ধুত্ব করবে । কিন্তু... ! খুব খারাপ লাগলো । এমন ভাবে আমাকে এড়িয়ে চললো !!
ওরা নিচে চলে গেলো । আমি ছাদে একা । মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো । কারো সাথে বন্ধুত্ব করতে চাইলে কেউ বুঝি এমন করে ! আমি দেখতে এতই খারাপ !? মন খারাপ করে সারা বিকেল ছাদে বসে কাটিয়ে দিলাম । শেষ বিকেলে সূর্যটা আমাকে টাটা দিয়ে চলে গেলে আমিও নিচে নেমে এলাম । বাসায় এসে দেখি পাশের বাসার ঐ আন্টি মাকে আল্লাহ হাফেয বলে বের হয়ে যাচ্ছেন । আমায় দেখে একটু হেসে উনি উনার বাসায় চলে গেলেন ।
" একটু আগে যে এসেছিলেন , উনি আমাদের পাশের বাসায় থাকেন । খুবই ভদ্র মহিলা । কিন্তু ... "
" উনার মেয়েটা খুবই অভদ্র , তাই না ?? আমি জানি । ছাদে দেখা হয়েছিলো । বাব্বাহ ! কি ভাব মেয়েটার ! আমার দিকে ফিরে চাইলো না !! " খুব রাগ নিয়ে মাকে কথা গুলো বললাম । কিন্তু মার আমাকে উল্টো ধমক দিয়ে বললেন," চুপ কর । কি সব যা তা বলছিস । কি জানিস তুই ঐ মেয়ের সম্পর্কে ?? " আমি মা'র ধমকে অবাক ! চুপ করে গেলাম ।
রাতে খাবার সময় হয়েছে । খেতে বসে মাকে জিজ্ঞেস করলাম , " মা আমি সরি । মেয়েটা কেন এমন বলবে ? "
মা যা বললেন তা শুনে আর কান্না থামাতে পারিনি । " মেয়েটার নাম আলো । ছোট বেলায় একটা গাড়ি এক্সিডেন্টে ওর বাবা মারা যায় । একই গাড়িতে ও ছিলো । মাথায় খুব আঘাত পায় । দৃষ্টি শক্তি চলে যায় । এখন ওরা ওদের মামার সাথে একই বাসায় থাকে । মেয়েটার সাথে ওর মামাতো ভাই বোন কেউ মিশে না । সবাই ওকে অপয়া বলে ডাকে । মেয়েটা প্রায়ই অসুস্থ থাকে। ডাক্তাররা তেমন কিছুই বলতে পারে না । সারাদিন একটা রুমেই থাকতে হয় ওকে । মামার ফ্যামিলির কেউ ওকে সহ্য করতে পারে না । " মায়ের সাথে কথা হয় যখন , তখন আন্টি বলেছিলেন এসব। মা আমাকে বললেন, " মেয়েটা অনেকক্ষণ ছিলো বাসায় । একা একা বসেছিলো তোর রুমে । আমি বলেছি যখনই পারে আমাদের বাসায় যেন চলে আসে । তোর সাথে কথা বলবে , গান শুনাবে । কিন্তু কি আশ্চর্য আমার কথা শুনে মেয়েটার চোখে পানি চলে আসে । ওর মা ওকে বাসায় দিয়ে আবার যখন আসে তখন বলে এতদিন একা একা ছিলো , কাউকে বন্ধু হিসেবে পাবে ও ভাবেনি ! তাই হয়তো এমন করলো । তুই কিন্তু ওকে একদম কষ্ট দিবিনা । " :)
" ওমা ! তুইও দেখি আলোর মত কান্না করছিস ! কি আশ্চর্য , কান্নার কি হলো ? " মা আমার চোখে পানি দেখে ফেলেছে । তারাতারি চোখের পানি মুছে খাওয়া শেষ করে নিলাম ।

ঘুম আসছে না । বারান্দায় গিয়ে বসলাম । ঠান্ডা বাতাস , আর চাদের আলোকে সঙ্গী করে চুপচাপ বসে আছি । ভাবছি আমি নিজেকে অনেক দুঃখী ভাবি । আমি কই দুঃখী !!? এ তো দেখি আমার চেয়ে বেশি !
লাইট বন্ধ করে অন্ধকার রুমে একা বসে আছি । ভাবছি , আলো কিভাবে আধারকে সঙ্গী করে এতদিন আছে । নিকষ কালো আধারে এতটা অসহ্য লাগছে কেনো আমার !! এতোদিন তো এমন লাগেনি !! আলো কিভাবে বছরের পর বছর এই আধার সহ্য করছে ? ভাবতেই বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো ! খুব কান্না পাচ্ছে ।
জানালা খুলে শুয়ে পড়লাম । এমন সময় একটা সুর কানে এলো । এতো মায়াবী সুরে কে গাইছে !
" চোখের আলোয় দেখেছিলাম , চোখের বাহিরে ,
অন্তরে আজ দেখবো যখন আলোক নাহিরে ... "
বুঝতে বাকি রইলো না এটা আলোর গলা । এতো মায়াবী কন্ঠ আল্লাহ তাকে দিয়েছে চোখের আলো নিভিয়ে ! কি অপূর্ব ! ও বোধহয় অন্তর দিয়েই এখন সব কিছু দেখে ।
হঠাৎ গান থেমে গেলো । রাতের নিস্তবদ্ধতা খুব কানে বাজতে লাগলো ! চোখের কোনে পানি নিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম ।

২৫/০৭/২০১৪
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজনীতি, করিডোর ও কৌশলী সেনাবাহিনী: একটি নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত?

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ২৭ শে মে, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনীর ভূমিকা এবং অবস্থান নিয়ে নানা প্রশ্ন ও জল্পনা কল্পনা তৈরি হয়েছে। গতকাল ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাসদর থেকে যেভাবে নিজেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস পেলেন জামায়াত নেতা আজহারুল

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে মে, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫





একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে খালাস পেয়েছেন জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম।

দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আজহারুলের করা আপিল সর্বসম্মতিতে মঞ্জুর করেছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আরো দুটি মৃত্যু

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৩:১১



'আরো দুটি মৃত্যু' গল্পটা আমি পড়েছি।
দাঙ্গা বিরোধী গল্প। এবং একজন মহিলার মৃত্যু। সেই মহিলা আবার গর্ভবতী। দারুণ গল্প, এটা আমি বলিব না। তবে গল্পটার মধ্যে গভীর এক... ...বাকিটুকু পড়ুন

বস্তুর মূল্য নির্ধারিত হয় দক্ষতা বিকাশ করে প্রয়োগ ক্ষেত্রে....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৭ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৪:৪৬

বস্তুর মূল্য নির্ধারিত হয় দক্ষতা বিকাশ করে প্রয়োগ ক্ষেত্রে....


এটি ১,০০০ গ্রামের একটি লোহার বার, যার দাম মাত্র ১০০ ডলার।

★ এটিকে ঘোড়ার জুতোতে পরিণত করুন, এবং এর মূল্য বেড়ে ২৫০... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনীতিবিদদের কিছু হাস্যকর মন্তব্য !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৭ শে মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১০


বাংলাদেশের রাজনীতিতে দিকনির্দেশনা মূলক বক্তব্যের তুলনায় মেঠো বক্তৃতা বেশি শোনা যায়। যারা রাজনীতি করেন তাদের প্রজ্ঞার একটি বিষয় জড়িত আছে। কিন্তু মাঝেমধ্যে উনারা এমন সব বক্তব্য দেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×