হোয়াইট নাইলের পাড়ে ছুটির দুপুর
জুবাতে হোয়াইট নাইলের উপর একমাত্র ব্রিজ
ছুটির দিনগুলোতে জুবা শহরে বেড়াতে বের হতাম। শহর ছাড়িয়ে নদী পাড় হয়ে ওপারের খোলা মেলা সবুজে ছাওয়া জায়গা দেখতে বেশ ভাল লাগত। সেসব জায়গাতে চীনারা অনেক বড় এলাকা লীজ নিয়ে কৃষি খামার বানিয়েছে। একটু আধুনিক গ্রাম গ্রাম পরিবেশ। খামার গুলোতে অনেক স্থানীয়রা কাজ করে। এখানকার পাহারাদাররাও স্থানীয়। বিদেশী হিসেবে আমাদের ভেতরে যাওয়ার ব্যাপারে তেমন কোন সমস্যা ছিল না। আমরা মাঝে মাঝে এসব খামার থেকে ফ্রেস শাক সব্জি কিনে আনতাম। ফসলের মাঠ থেকেই তারা এগুলো তুলে দিত।
বেড়ানোর জায়গা বেশী নেই তাই ঘোরাফেরার পর নদীর পাড়ের রেস্টুরেন্ট গুলোতে এসে একটু বিশ্রাম সাথে হালকা কিছু নাস্তা পানীয় সেরে নিতাম।এইসব হোটেলগুলোর লোকেশান চমৎকার। নদীর একদম ধার ঘেঁসে সুন্দর জেটি বানিয়ে, কাঠের মজবুত পাটাতনের উপর ছাতা বসিয়ে সুন্দর বসার আয়োজন আছে। সেখানে বসে নদীর ঠাণ্ডা বাতাসের সাথে খোলামেলা দৃশ্য দেখে সময় বেশ ভাল কেটে যেত। জুবা শহরে ছবি তোলা মানা, এখানকার হোয়াইট নাইলের উপর একমাত্র ব্রিজের ছবি তোলা একেবারে দুঃসাধ্য ব্যাপার। তবে শুভঙ্করের ফাঁকি আছে এখানে। এইসব হোটেল গুলোতে বসে মনের সুখে নদীর পাড় ও ব্রিজের ছবি তোলা যায়। এখানে কবি নীরব।
ও পাড়েতে যতসুখ আমার বিশ্বাস
এপারের তুলনায় ওপার এখনও তেমন উন্নত হয়নি। বেশী দেরী নেই আর ওপাড়েও নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা গড়ে উঠবে। ওপাড়ে একটা জেটি আছে, মাঝে মাঝে এই জেটি পারাপারের কাজে লাগে। হোটেলের পাটাতনের সাথে বাধা নৌকা কিংবা ছোট স্পীড বোটে করে শৌখিন মানুষেরা নদী ভ্রম্নে বের হয় মাঝে মাঝে। তবে ভাল চালক না হলে নদীতে না যাওয়াই ভাল। নদীর তলাতে অনেক পাথুরে পাহাড় এবং ডুবো চর আছে, যে কোন সময় এখানে অসতর্ক হলে বিপদ নেমে আসতে পাড়ে।
নদী পাড়ের হোটেল
গতানুগতিক রুটিনের বাহিরে এখানে এসে সময় কাটাতে বেশ ভাল লাগে। মাঝে মাঝে এখানে কনসার্টের আয়োজন হয়। তখন স্থানীয় কিংবা উগান্ডার ব্যান্ড দল আফ্রিকান বা ইংরেজি গান গেয়ে দর্শকদের আনন্দ দেয়। নদীর পাড়ে কিছু সময় কাটিয়ে আবার আমরা শহরের ভিড়ে হারিয়ে যেতাম। এভাবে কিছু সময় কাটিয়ে আবার ফিরে আসতাম নিজেদের প্রবাসী নিবাসে।
অনেক দিন জুবা শহরে বেড়াতে যাওয়া হচ্ছে না। জীবনযাত্রা এখন অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসছে। বহুদিন পর শনিবার বাহিরে গেলাম। প্রথমে টম্পিং এলাকার কাছেই একটা চীনা দোকানে গেলাম। এখানে একটা রেস্টুরেন্ট ছিল, বেশ ভালই চলছিল। গত দুই মাসে প্রায় সব বিদেশী জুবা শহর ত্যাগ করে চলে গেছে তাই রেস্টুরেন্ট ব্যবসা এখন বন্ধ। নীচের তালার দোকানটা এখন খোলা। চীন থেকে অনেক পণ্য এসেছে। সব তাক জিনিসপত্রে ভর্তি। দোকানে খদ্দের প্রায় নেই বললেই চলে। কাউন্টারে একজন চীনা যুবতী বসে বই পড়ছে।
আজকে চীনা খাবার খাব তাই এখানে আসা। এখানে হটপট নামে একটা প্যাকেট আছে, এর ভেতর নানা মসলার মিশেল থাকে। এক লিটার পানির সাথে এক কাপ তেল সাথে এই প্যাকেটের পুরো মসলা মিশিয়ে দিতে হয়। কিছুদিন আগেও এক প্যাকেট দশ এস এস পিতে পাওয়া যেত, এখন দাম বেড়ে গেছে তাই পনের এস এস পি দিতে হল। রাতে ইন্ডাক্সান হিটারে সসপ্যান বসিয়ে দুই প্যাকেট মসলা, দুই লিটার পানি সাথে দুই কাপ তেল দিয়ে জ্বাল দিতে থাকলাম। বেশ সুন্দর গন্ধে রুমটা ভোরে গেল একটু পরে।
এই রান্নার আয়োজন একটু আগে থেকে করতে হয়। চীনা দোকান থেকে বের হয়ে জুবা বিমানবন্দরের সামনে দিয়ে কনিও কনিও মার্কেটে চলে এলাম। এটা জুবা শহরের বড় পাইকারি বাজার। এখানে শাক সবজি থেকে শুরু করে সব কিছুই পাওয়া যায়। আজ রাতের পার্টির জন্য গাজর, ক্যাপসিকাম, আলু মাশরুম টমেটো কিনলাম। সবগুলোই পিস হিসেবে দাম, আমাদের দেশের সাথে তুলনা করলে অনেক দাম হবে। এরপর এক হানা কলা কিনলাম পনের এস এস পি আর তিনটা আম কিনলাম বার এস এস পি দিয়ে।
রাস্তা ঘাট স্বাভাবিকই মনে হল, তবে তা বলি কি করে, জুবাতে এখন ও প্রায় পঞ্চাশ হাজার শরণার্থী আছে। প্রতিদিনই এদের সাথে দেখা হচ্ছে। তাঁরা আরও অনেক দিন এভাবে কাটাবে বলেই মনে হয়। জীবনকে সহজ করে নিয়ে তাঁরা শিবিরের ভেতরেই ছোট দোকানপাট খুলে বসেছে। সামনে একটা ছোট টুল বা টেবিলের উপর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সাজিয়ে বসেছে তারা।এসব দোকানে তাজা শাকসবজি, মাংস, তেল ডাল সবই আছে। এর সাথে আছে আধুনিক যুগের অতি দরকারি মোবাইল কার্ড। জীবন কাটাতে হবে তাই জীবনের প্রয়োজনে তারা তাদের সাময়িক বাসস্থান একটু খানি হলেও আরামদায়ক করার চেষ্টা করছে।
সারা আফ্রিকা জুড়ে নৃশংস গণহত্যা চলেছে যুগ যুগ ধরে। অনেক স্বাধীন দেশেও নিজেদের মধ্যে অন্তকলহ চলছে।নতুন স্বাধীন দেশ সাউথ সুদান ও এর ব্যতিক্রম নয়। লাইবেরিয়াতে সামুয়েল দো গণহত্যা চালিয়ে ছিল, সিয়েরা লিয়নের ফ্রি টাউনের রাস্তায় পড়ে ছিল মানুষের লাশ। এসবই ছিল ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য। পশ্চিম আফ্রিকার দেশ আইভরি কোস্টে প্রেসিডেন্ট বাগবো গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত হয়েও একগুঁয়েমি করে ক্ষমতা ধরে রেখেছিল, এর ফলে বেরেছিল অযথা হত্যা আর রক্তপাত। বুরুন্ডি আর তার পাশের দেশ রুয়ান্ডার নৃশংস গণহত্যা পৃথিবীর মানুষ আজও ভুলতে পারেনি। এই ধরনের জাতিগত সংঘাতের দিকে সাউথ সুদান এগিয়ে যাক এটা কারো কাম্য নয় এখন।
স্বাধীনতার আগে প্রায় আট বছর এদেশে স্বায়ত্তশাসন ছিল। এই সময়ে শাসনের দায়িত্বে যারা ছিল তারা দেশটাকে অব কাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারত কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। প্রদেশগুলোর সাথে সড়ক যোগাযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। রাস্তায় বিশাল বিশাল খাদ, যান চলাচলের জন্য যা কখনই কাম্য নয়। নীল নদের উপর জুবা শহরে নতুন একটা ব্রিজ বানানো হয়ে উঠেনি আজ অবধি। বাজার অনুন্নত, বহু বছর ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই, পানীয় জলের লাইন এখনো কার্যকরী হয়ে উঠেনি। এসব উন্নয়ন অনেক আগেই হতে পারত কিন্তু তা হয়নি। মানুষের দুর্ভোগ তাই সময়ের সাথে সাথে বেড়েছে। স্বাধীনতা তাই তাদের কাছে এখনো ফলদায়ী হয়ে উঠেনি। আস্তে আস্তে পরিস্থিতি একটু শান্ত হয়ে আসছে, সবাই দিনের শেষে একটু শান্তি চায়। শান্তির পায়রা এদেশে উড়ুক এটাই আমাদের সবার কাম্য।
জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা
বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আত্মপোলব্ধি......
আত্মপোলব্ধি......
একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !
হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।
আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।
আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন