দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছিলো ক্ষমতা লোভী, রক্তপিপাসু স্বৈরাচারের সাথে গণমানুষের লড়াই, দাসত্বের বিরুদ্ধে মুক্তিকামী মানুষের লড়াই। সাদা বনাম কালোর লড়াই, মন্দ বনাম ভালোর লড়াই। আমেরিকান যীশু বনাম জার্মান অ্যান্টি যীশুর শেষ লড়াই। বর্তমান প্রজন্ম হলিউডি মুভি দেখে এখন জানে, কেমন মহানুভব ছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ করে যাওয়া আমেরিকান সেই প্রজন্মরা।
১৯৩৯ সালে যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়, তখন যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী যে দুটো দেশের বিশ্বজুড়ে তেমনভাবে কলোনি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিলো না, তারা হলো জার্মানি আর চীন। বাদবাকি বড় দেশগুলোর ছিলো কলোনিয়াল শাসন ব্যবস্থা, সে ব্রিটেনই হোক (ঐ সময় সারা বিশ্বের ২৫ ভাগ ছিলো তাদের দখলে) আর সোভিয়েত রাশিয়াই হোক। গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থার মাধ্যমেই হিটলারের পার্টি ক্ষমতায় এসেছিলো জার্মানিতে, যদিও পরে তারা দমন নীতি চালিয়ে স্বৈরাচারতন্ত্র কায়েম করে। ব্রিটেন, হল্যান্ড, বেলজিয়াম ছিলো রাজতন্ত্রের অধীনে। আমেরিকাতে গণতন্ত্র থাকলেও ফিলিপাইন, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং মধ্য আমেরিকায় কলোনিয়াল ব্যবস্থা ছিলো তাদের। সেই তাদের মুখেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে “স্বাধীনতা আদায়ের ক্রুসেড” খেতাব দেয়াটা মনে বেশ পুলকই জাগায় বৈকি!
১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর পার্ল হারবারে আক্রমণ ছিলো আমেরিকার জন্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের টার্নিং পয়েন্ট। অক্ষশক্তি যখন পোল্যান্ড আক্রমণ করে, তখনো আমেরিকার ‘বিশ্ব-বিবেক’-এর উপরে আস্থা ছিলো। অক্ষশক্তি যখন ফ্রান্সকে মেরে তক্তা বানিয়ে দেয়, তখনো আমেরিকার বিশ্ব-বিবেকের উপরে আস্থা ছিলো। অক্ষশক্তি যখন ইউরোপের সাথে সাথে এশিয়াও দখলে নিতে শুরু করলো, তখনো আমেরিকার বিশ্ব-বিবেকের উপরে আস্থা ছিলো............অন্তত ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ না অক্ষশক্তি আমেরিকার পার্ল হারবারে কোনো ঘোষণা ছাড়াই আক্রমণ করে বসলো। ঠিক তখন হতেই তারা বিশ্ব-বিবেকের উপরে আস্থা হারিয়ে ফেললো, আর আস্থা রাখতে শুরু করলো ‘আমেরিকান-বিবেক’-এর উপরে......
না আমি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানিকে যীশু আর আমেরিকানকে এ্যান্টি যীশু হিসাবে দেখাতে এই পোষ্টের অবতারনা করছি না, এটাও সত্যি জার্মানি অসংখ্য ইহুদী নারী শিশুকে পিশাচের মত হত্যা করেছে বিভিন্ন কনসেনট্রেসন ক্যাম্পে, সেটা কিন্তু ১৯৪১ সালে শুরু করেনি, করছে ১৯৩৯ সালে কিন্তু আমেরিকার হুশ আসছে ৪১ সালে যখন তার নিজের ওপর আঘাত আসছে। বিশ্ব বিবেক, বর্তমান সভ্যতার ধারক ও বাহক বিশ্বকে গনতন্ত্র উপহার দিয়েছে, যখন নিজের তার পিঠে জাপানী চাবুকের আঘাত পরে।
এ তো গেল সেদিনের ঘটনা, আমেরিকার ইতিহাসের দিকে যদি তাকান তবে দেখবেন কলম্বাস যেদিন ভুলক্রমে আমেরিকায় পা ফেলল সেদিন থেকেই আমেরিকার বর্তমান সাদা প্রজন্মের উত্তরসুরীরা সব গুলো ছিল চোর ডাকাত, গুন্ডা, বদমাস কারন কলম্বাসের ওই সব জাহাজের নাবিক সহ প্রায় সব অফিসার ছিল তৎকালীন উপরোক্ত গুনে গুনী। এই ঘটনা পনেরশ শতাব্দীর শেষ ভাগে। সেকালে সমুদ্র অভিযানে যারা যেত তারা প্রায় সবই ছিল জলদস্যু এবং নাবিক গুলো ছিল গলাকাটা ডাকাত। এক পর্যায়ে এই আমেরিকাকে সে কালের আর এক মহাজন ব্রিটিশরা কালে কালে দখল করে উপনিবেশ স্থাপন করে। এই উপনিবেশ স্থাপন করতে যে সব ব্রিটিশদের সাদা পবিত্র পা এই আমেরিকা ভু খন্ডে পড়ে তাদের প্রায় সবই ছিল সেকালে ব্রিটেন থেকে বাদ দেয়া রদ্দি পচা মাল, মানে চোর ডাকাত, খুনী বা দ্বীপান্তরের অভিযোগে অভিযুক্ত বদমাশ গুলো। এর বাইরে কিছু মানুষ আসে ভাগ্যের অন্বেষনে আমেরিকার বিস্তীর্ন ভুখন্ডের লোভে।
এই সব চোর, বদমাস, ভাগ্যান্বেষী গুলো অথবা তারো আগে যখন ইতালীয় নাগরিক ক্রিস্টোফার কলম্বাস স্পেনের তৎকালীন রানির অর্থানুকূল্যে ১৪৯২ সালের ১২ অক্টোবর আমেরিকা ভূখণ্ডে অবতরণ করেন তখন সেখানে কি মানুষ বাস করত না? অবশ্যই করত। কলম্বাসের ভুলের খেসারত আজীবন দিয়ে গেছে নেটিভ আমেরিকানরা। কলম্বাস মনে করছিলো সেকালের ভু স্বর্গ ইন্ডিয়া আবিস্কার করছে, যার কারনে সে আমেরিকা নামে নতুন এক মহাদেশ আবিস্কার করেও তার ভ্রান্ত ধারনার কারনে স্থানীয়দের বাদামী গায়ের রং দেখে এদেরকে “রেড ইন্ডিয়ান” নামে অভিহিত করে। নিজেদের জাতি সত্ত্বা হারিয়ে সেকালে আদিবাসী আমেরিকানরা আজো “রেড ইন্ডিয়ান” নামে দুনিয়ায় পরিচিতি লাভ করছে। অথচ আমেরিকার আধিবাসীদের গোত্র ভিত্তিক আলাদা নাম আছে।
এই রেড ইন্ডিয়ানদের ওপর আমাদের বিবেক বর্তমান আমেরিকার উত্তরসুরীরা কি নৃশংস হত্যাকান্ড চালিয়েছে তার খোজ কয়জন রাখেন? কলম্বাস থেকেই শুরু করি, সে আমেরিকার বাহামাস দ্বীপপুঞ্জে নামে সেখানে তখনকার আদিবাসীদের যে গোত্র বাস করত তাদের নাম আরাওয়াক। হিস্পানিওলার একটি প্রদেশে ১৪ বছরের উপরের সব স্থানীয় ইন্ডিয়ানকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সোনা তিন মাস পরপর জমা দেওয়ার আদেশ করেন কলম্বাস। যারা এতে ব্যর্থ হয় তাদের দুই হাত কেটে ফেলা হতো এবং ফলশ্রুতিতে রক্তপাতে তারা মারা যেত। অনেকে সহ্য করতে না পেরে পালানোরও চেষ্টা করতো। তাদেরকে হিংস্র কুকুর দিয়ে খুঁজে বের করে মেরে ফেলা হতো। যাদেরকে বন্দী করা হতো তাদেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে অথবা আগুনে পুড়িয়ে মারা হতো।
এত নির্মমতা সইতে না পেরে আরাওয়াক গোষ্ঠীর লোকরা বিষ পানে গণ-আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। মায়েরা তাদের ছোট ছোট বাচ্চাদের বিষ খাইয়ে মেরে ফেলে, যাতে স্প্যানিশরা সেসব বাচ্চাদেরকে কুকুরের খাবারে পরিণত করতে না পারে। এভাবে নানা উপায়ে প্রায় ৫০ হাজার আদিবাসী আত্মহত্যা করে। খুন, অঙ্গহানী ও আত্মহত্যার কারণে মাত্র দুই বছরে হাইতির ২ লক্ষ ৫০ হাজারের অর্ধেক জনসংখ্যা লাশে পরিণত হয়, যার সবকিছুই ঘটে শুধুমাত্র স্বর্ণ উত্তোলনকে কেন্দ্র করে।
হলিউডি ওয়েষ্টার্ন মুভি দেখেন? যদি দেখে থাকেন তবে দেখবেন সাদা চামড়ার নিষ্ঠুর চেহারা এক নায়ক বিশাল এক ঘোড়ায় চড়ে বেড়াচ্ছে যার স্যাডলে রাইফেল আর দুই কোমড়ে দুই পিস্তল, গলায় রুমাল আর মাথায় হ্যাট। যাকে প্রায়ই ধাওয়া করছে অসভ্য বর্বর ইন্ডিয়ানরা। যাদের দয়া মায়া কিছুই নাই। ভয়ংকর সব দৃশ্য জীবন্ত পুড়িয়ে মারা থেকে শুরু করে জ্যান্ত চামড়া উঠানো পর্যন্ত নৃশংসতার কোনটাই এই সব রেড ইন্ডিয়ানরা বাদ দেয় না হলিউডি মুভিতে। অথচ আপনি যদি একটু ইতিহাস ঘাটেন তবে দেখবেন আসলে ঘটনা সম্পূর্ন উল্টো। সে কালের তুলনায় আধুনিক বন্দুক পিস্তলের মুখে আমেরিকান আদিবাসীদের (রেড ইন্ডিয়ান) তীর ধনুক, চাকু পাথর কতটুকু কার্যকর ছিল তার প্রশ্ন এই লেখার পাঠকদের কাছে রেখে গেলাম। এক পর্যায়ে আদিবাসীরা নিজ ভুমে পরবাসী হয়ে গুটি কতক টিকে গেল। আজকেও হয়ত এই সব আদিবাসীদের উত্তরপুরুষদের ছিটেফোটা দেখতে পাবেন সরকার কর্তৃক নির্বাচিত কোন কোন এলাকায়। যেভাবে এখন সাফারি পার্কে বাঘ সিংহ দেখতে যান আর কি অনেকটা তেমন। এক পর্যায়ে আদিবাসীরা শেষ হয়ে গেল এবং সাদাদের হুকুম তো খাটতে হবে মানুষ কোথায় পাবে? উদ্ভাবনী শক্তিতে অদ্বিতীয় সে সময়ের সাদা মানুষেরা দেখল মানুষের মত দেখতে কিছু কালো প্রানী আফ্রিকায় পাওয়া যায়, এরা মানুষের মত কথা বলে, মানুষের কথা বোঝে, আবার মানুষের কাজও করিয়ে নেয়া যায় এই সব পশুদের দিয়ে। প্রয়োজনে এই সব কালো মহিলা পশুদের সাথে জৈবিক ক্ষুধা নিবৃত করাও যায়। তো ধরে নিয়ে আস এই সব পশুদের।
১৮৬৩ সাল পর্যন্ত আমেরিকায় নিয়মিত দাস আসত, যেহেতু এই দাসরা আসলে পশু অথবা তার থেকেও খারাপ পন্য হিসাবে গন্য হত তাই তাদেরকে সেভাবেই আনা হত, চলুন দেখি কিভাবে আনা হত দাস নামক এই সব পন্য ১৮০৮ সালের দিকে দাস ব্যবসা নিষিদ্ধ ঘোষিত হয় বহু দেশে। তারপরেও চোরাবাজারে হরদম বেচাকেনা হতে থাকে দাস নামে বহু মানুষ। দাসের চালান আসত জাহাজের খোলে ভরে। যাত্রার আগে দাসদের সবাইকে খোল থেকে বাইরে এনে মেয়ে-পুরুষ নির্বিশেষে দাঁড় করানো হতো উলঙ্গ করে! তারপর মাথা মুড়িয়ে, লবণ মেশানো পানিতে শরীর ধুইয়ে বসানো হতো খেতে। দেওয়া হতো যৎসামান্য খাবার। এরপর বুকে সিলমোহর গরম করে ছেঁকা দিয়ে বসিয়ে দেওয়া হতো বিশেষ চিহ্ন। বিক্রি হয়ে যাওয়ার পর দাসের মালিক আরও একটি চিহ্ন বসাবেন কপালে, একই পদ্ধতিতে, তপ্ত সিলমোহর কপালে বসিয়ে! এভাবে অব্যক্ত যন্ত্রণার মধ্যদিয়ে মানুষের গায়ে খচিত হতো ক্রীতদাসের চিহ্ন। এরপর একজনের পা আর একজনের পায়ে বেঁধে সারি সারি ফেলে রাখা হতো ক্রীতদাসদের। শিকলের আরেক প্রান্ত বাঁধা থাকত জাহাজের দেয়ালে, নড়াচড়ার উপায় ছিল না কোনোভাবে। দিনে দুবার দেওয়া হতো সামান্য খাবার আর পানি।
সামান্যতম প্রতিবাদ করার চেষ্টা করলেই গায়ে পড়ত নির্মম চাবুক। সপ্তাহে একদিন লোক আসত দাসদের নখ কেটে দিতে। কেউ যাতে নিজেদের মধ্যে মারামারি করে মরতে না পারে কিংবা ধারালো নখ দিয়ে শিরা কেটে আত্মহত্যা করতে না পারে, এই জন্য ছিল এই ব্যবস্থা। মৃত্যু তো রুখতেই হবে, কারণ দাস ব্যবসা মানেই কাঁচা পয়সা, দাসের মৃত্যু মানেই লোকসান। জাহাজের খোলগুলো ছিল মাত্র দুই ফুট উঁচু। তার ভিতর অবিশ্বাস্যভাবে গাদাগাদি করে থাকতে হতো ক্রীতদাসদের। ১৮৪৭ সালে ‘মারিয়া’ নামের একটি জাহাজের পঞ্চাশ ফুট দীর্ঘ আর পঁচিশ ফুট চওড়া একটি খোলে পাওয়া গিয়েছিল ২৩৭ জন দাস। ‘ব্রুকস’ জাহাজের একশ ফুট লম্বা আর পঁচিশ ফুট চওড়া একটি খোলে ঢোকানো হয়েছিল ৬০৯ জন দাস। ব্রুকস-এর ক্যাপ্টেন খোলের ভিতর বসিয়েছিলেন আরও একটি তক্তা, তাতে দুই ফুট উঁচু খোলে ধরানো হয়েছিল দুই প্রস্থ মানুষ। সোজা হয়ে শোয়া তো দূরের কথা, পাশ ফেরারও উপায় ছিল না। এভাবে ব্রুক্সসের দাসদের থাকতে হয়েছিল টানা দশ সপ্তাহ। মল-মূত্র-কফ-থুথু-বমি সব জড়ো হতো ওখানেই।
এমন অনাচার সহ্য না করতে পেরে অনেক সময়ই আত্মহত্যা করতে চাইত ক্রীতদাসরা। তারা খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিত মরার জন্য। কিন্তু এত সহজে তো লোকসান দিতে রাজি নয় জাহাজের ক্যাপ্টেন। তাই প্রত্যেক জাহাজেই রাখা হতো বিশেষ একটি যন্ত্র, যার সাহায্যে দাসের ঠোঁট কেটে দাঁত ভেঙে পেটে নল ঢুকিয়ে খাইয়ে খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখা হতো। একবার এক শিশু দাস কোনোমতেই খেতে রাজি না হওয়ায় চাবুক মেরে হত্যা করা হয় তাকে। তারপর ওই শিশুর মাকে বাধ্য করা হয় সন্তানের মৃতদেহটিকে সাগরের বুকে নিক্ষেপ করতে। শাস্তি দেবার জন্য খোলের ভিতর বন্দি দাসদের শরীরে নল দিয়ে ছিটিয়ে দেওয়া হতো ফুটন্ত পানি।
১৮৪৪ সালে ‘কেন্টাকি’ জাহাজের দাসরা বিদ্রোহ করলে নির্মমভাবে দমন করা হয় ওই বিদ্রোহীদের। কাউকে গলায় দড়ি দিয়ে, কাউকে গুলি করে মেরে কিংবা জীবন্ত অবস্থাতেই বরফে সাগরের পানিতে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়। এমনতর কাহিনীর যেন শেষ নেই কোনো। ‘ব্রিলান্ড’ জাহাজের ক্যাপ্টেন হোমানস দাস ব্যবসা করত লুকিয়ে-চুরিয়ে। কেননা তখন দাস ব্যবসাকে করা হয়েছে বে-আইনি। এমনই এক চালানের সময় তার জাহাজের পিছু নিল ব্রিটিশ নৌবাহিনীর চারটি জাহাজ। হোমানস দেখল মহাবিপদ, তার জাহাজের খোল ভর্তি ক্রীতদাস, ধরা পড়লে তো আর রক্ষা নেই। বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ৬০০ জন দাসকে পরপর মালার মতো বাঁধলেন একে অন্যের সাথে, তারপর জাহাজের সব বড় বড় নোঙর বেঁধে তাদেরকে ডুবিয়ে দিলেন সাগরের পানিতে। নৌ-বাহিনীর লোকেরা জাহাজ পরীক্ষা করে ফিরে গেল সন্তুষ্ট হয়ে। ওই জাহাজে কোনো ক্রীতদাস নেই! পেছনে পরে রইল ৬০০ মৃত মানুষের দেহ।
ওগুলো দূর অতীতের কাহিনী। খুজলে সারা বিশ্বের সব জাতিতে এই ধরনের ঘটনা পাওয়া যাবে এটা হোয়াইট সুপ্রিমেসীতে যারা বিশ্বাস করে অথবা তাদের পদলেহী সুবিধাভোগী তারা এই যুক্তি টানবে, এক্ষেত্রে একটু স্মরন করিয়ে দেই, সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ারে জিউ হলোকাষ্টের সময় ইহুদীদের যে সব কনসষ্ট্রেশন ক্যাম্প ছিল তার মুল দায়িত্ব ছিল জুইস কিছু মানুষের হাতে যাদের "ক্যাপু" বলা হত। এদের ওপর আবার খবরদারি করত নাৎসিরা আবার সে সময় কালোদের ওপর যে নিগ্রহ হত তা হত মুলতঃ তাদের স্বজাতির দ্ধারা যারা কিছুটা ভালো থাকা বা ভালো খাবারের লোভে। এটা অন্যায়ের কিছু নাই, কারন ঐ সব পরিস্থিতিতে নিজে বাচলে বাপের নাম। যাক বর্তমানে ও কিছু কালুয়া আছে যারা সামন্য কিছু সুবিধার জন্য সাদাদের পদলেহন করতে দ্বিধা করেনা। আগে যা হয়েছে মানে সেই বিংশ শতাব্দীতে তা নিয়ে আমার অভিযোগ নেই কারন সে সময় পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন, কিন্তু এই যুগে!!! এটা ঠিক আমার বোধগম্য না।
হোয়াইট সুপ্রেমেসীর আর এক জঘন্য নিদর্শন কু ক্লাক্স ক্লান। কাগজ কলমে দাস ব্যাবসা শেষ হবার পর এই সব কালো মানুষ গুলোকে বশে রেখে ভয় দেখিয়ে হত্যা করে কাজ করানোর জন্য সাদা মানুষদের যে সংগঠন তৈরী হয়েছে তার নাম কু ক্ল্যাক্স ক্লান। আমেরিকান বর্নবাদের এক চুড়ান্ত নিদর্শন এই কু ক্ল্যাক্স ক্লান। ১৮৬৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কনফেডারেট আর্মির ছয়জন প্রবীণ সৈন্য টেনিসির পুলাশকিতে প্রথম ক্লান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৮৬০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে প্রথম কু ক্লাক্স ক্লান বিকশিত হয়। হাজার হাজার কৃষ্ণাঙ্গ এবং সাদা মানবাধিকার কর্মী এক কুখ্যাত কু ক্ল্যাক্স ক্ল্যানের হাতে নিহত হয়। এদের বর্ননায় গেলে লেখা আর শেষ হবে না। তাই ওদিকে না যাই। বর্তমানেও এই কুখ্যাত সংগঠন গোপনে কাজ করে যাচ্ছে।
মানবাধিকারের জন্মদাতা আমেরিকার পূর্ব পুরুষদের বিচার ব্যাবস্থার আর একটা দারুন উদাহরন ছিল লিঞ্চিং মব। সোজা বাংলায় যাকে বলে গনধোলাইয়ে মৃত্যু। অবশ্য উনারা মারা মারি খুব একটা করতেন না, সোজা ধরে ফাঁসি অথবা পুড়িয়ে হত্যা। ইতিহাসবিদদের ধারণা, ১৮৮১ থেকে ১৯৬৮-র মধ্যে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৪৭৪৩ জনকে মব লিঞ্চিং করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩৪৪৬ জন কৃষ্ণাঙ্গ। দক্ষিণের ১২ টি প্রদেশে ১৮৭৭ থেকে ১৯৫০-এর মধ্যে এইভাবে মারা হয়েছে ৪০৮৪ জনকে। বাকি ৩০০ জন মরেছে অন্যান্য প্রদেশে। বিখ্যাত উপন্যাস সিনেমা “টু কিল আ মকিং বার্ড” এর গল্প আবর্তিত হয়েছে এই লিঞ্চিং মবকে নিয়ে। ছবিটা দেখার মত।
১৮৬৫ সালের এপ্রিলে আব্রাহাম লিংকন খুন হওয়ার পর প্রস্তাবিত ইউনিয়ন পুনর্গঠনের দায়িত্ব পড়ে তার রাজনৈতিক উত্তরসূরি এন্ড্রু জনসনের কাঁধে। টেনেসিতে জন্মগ্রহণকারী ইউনিয়নবাদী এই রাজনীতিবিদ অঞ্চলভিত্তিক রাজনৈতিক শক্তিমত্তায় বিশ্বাসী ছিলেন। ফলশ্রুতিতে তিনি ইউনিয়ন পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে দক্ষিণাঞ্চলের শ্বেতাঙ্গদের দাবিগুলোকে প্রাধান্য দেন। মূলত গৃহযুদ্ধের জন্য দক্ষিণের শ্বেতাঙ্গরাই বেশি দায়ী। অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন, দক্ষিণের রাজ্যসমূহকে যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে রাখার জন্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের দাবিগুলোও প্রাধান্য দেয়ার দরকার ছিল। সে কারণেই হয়তো এন্ড্রু জনসন এমন কৌশল অবলম্বন করেন। অনেক বিতর্কের পরেও সংবিধানের নতুন সংশোধনীতে দক্ষিণের রাজ্য সমূহের আংশিক সমর্থন আদায় করতে পেরেছিলেন তিনি। এরই মাঝে দক্ষিণের অনেক আইনসভা কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য বিধিনিষেধ স্বরূপ নতুন ব্ল্যাক কোড আইন পাশ করে। এতে করে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে তাদের জীবনযাত্রা। এসব দেখে কংগ্রেসের রিপাবলিকানদের একাংশ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মূলত দক্ষিণাঞ্চলে ব্ল্যাক কোডের আড়ালে আবারও দাসপ্রথার প্রবর্তনের চেষ্টা করছিল শ্বেতাঙ্গরা। কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটাধিকার তখনো সুদুর পরাহত।
এর পর বিরাট কাহিনী টাহিনী করে ১৯৬৫ সালের মার্চ মাসে কৃষ্ণাঙ্গ নেতা মার্টিন লুথার কিং কিছু সংখ্যক আন্দোলনকারীকে সঙ্গে নিয়ে বিশাল লোকসমাগম তৈরি করে আলাবামার রাজপথে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন পরিচালনা করেন। তাদের দাবি ছিল কৃষ্ণাঙ্গ আমেনিকানদের ভোটাধিকারের সমস্ত বিধিনিষেধ তুলে নেয়া এবং পূর্ণাঙ্গ নাগরিক সুবিধা আদায় করা। দুর্ভাগ্যবশত তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আক্রমণ করে শ্বেতাঙ্গ সংগঠনের কর্মীরা। এতে করে আন্তর্জাতিক বিশ্বের নজর পড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গ অধিকার আন্দোলনের দিকে। পরের বছর প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন ভোটাধিকার আইনে স্বাক্ষর করেন। এতে করে মার্কিন নাগরিকদের ভোটাধিকার অর্জন করতে স্বাক্ষরতাসহ বিভিন্ন প্রকার যোগ্যতা প্রমাণের পদ্ধতি বাতিল হয়। এগুলো সেদিনকার কাহিনী।
মহান আমেরিকা, গ্রেট আমেরিকা বর্তমানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বে যত গুলো যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছে তার প্রায় সব গুলোতেই তার সক্রিয় অংশ গ্রহন ছিল বা আছে। আর যাতে সক্রিয় নাই সেগুলোতে পেছন থেকে কল কাঠি নাড়ছে। আবার অনেকে বলবেন, এই মহান জাতি এখন বিশ্বে সব দেশ থেকে তাদের দেশে মানুষ নিয়ে এক মাল্টি কালচার জাতি তৈরী করে পৃথিবীর সামনে এক উদাহরন তৈরী করছে, বাস্তবতা হল সে তার নিজের প্রয়োজনে সুস্থ্য এবং প্রসপেরাস জীবনের লোভ দেখিয়ে মুলতঃ বিশ্বের ব্রেইন ড্রেইন করছে। বর্তমানে ইউনি পোলার বিশ্বে সারা পৃথিবী এক অস্থির সময় কাটাচ্ছে সেখানে খুব স্বাভাবিক ভাবেই এক মোড়লের দেশে মানুষ ভালো আছে। সে লোভেই সোনার দেশের দিকে যাবার জন্য সবার এক পা বাড়ানো। এতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু সেই ভালো জীবনের লোভে আমরা যেন আমাদের উৎসকে ভুলে না যাই। রুটস বইটা সবার একবার পড়ে দেখা উচিত।
সত্যি কথাটা হলো, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছিলো শয়তানের সাথে শয়তানের লড়াই। সাধারণ জনগণ ছিলো বিভ্রান্ত, আর দাবার চাল দেয়ায় ব্যস্ত পলিটিশিয়ানরা ছিলো বিভ্রান্ত, সর্বস্ব হারানো জনগণকে ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ কায়েমে ব্যস্ত। ১৯৪৫ সালের ১৬ এপ্রিল থেকে যখন সোভিয়েত রেড আর্মি বার্লিনের দিকে এগুতে থাকে শেষ ফয়সালার জন্যে, তখন আমেরিকান জেনারেল আইজেনহাওয়ারের নির্দেশে আমেরিকান সৈন্যরা বার্লিনের বাইরে জার্মানির পশ্চিম প্রান্তে চুপচাপ বসে থাকে। কারণ তাদের চিন্তা ছিলো, বার্লিন দখল করে তাদের কোনো লাভ নেই। ওটায় তারা লাভের গুড় কিছুই পাবে না। ওটা ইউরোপের অংশ। আর সোভিয়েত রেড আর্মি যখন ১৬ এপ্রিল ১৯৪৫ সালে বার্লিনে অগ্রসর হয়ে ২ মে সেটা দখল করে ফেলে, তখন রচিত হয় আরেকটা কলঙ্কজনক অধ্যায়ের। বার্লিন হয়ে যায় ইতিহাস কুখ্যাত একটা নগরী, যেখানে সর্বাধিক পরিমাণ নিরীহ নারীরা গণ ধর্ষিতা হয়েছিলো। ইতিহাস যে রচিত হয় বিজয়ীদের দ্ধারা।
তাহলে কেন এই বক্তব্য যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছিলো ভালোর সাথে মন্দের লড়াই? কারণ বেশীরভাগ মানুষই বুঝে উঠতে পারে না, কোথায় ‘প্রতিশোধ’ আর ‘ন্যায়বিচার’-এর পার্থক্যকারী সীমানাটা অবস্থিত। সেটাকেই কাজে লাগিয়ে ক্ষমতাবানেরা গুটি চালে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে। ন্যায়বিচারের নামে চলে শোধ। শোধের পরে আসে প্রতিশোধ। এভাবেই চলতে থাকে একে অপরের চোখ উপড়ে ফেলার কাজ। আর গান্ধীর বলে যাওয়া কথাটাই দিন শেষে সত্য প্রমাণিত হয়, “An eye for an eye only ends up making the whole world blind”.
বর্তমানে এক তরফা অভিযোগ যেভাবে চীনের দিকে দেয়া হচ্ছে করোনা নিয়ে তাতে সামনে একটা ঝামেলা বাধলেও বাধতে পারে, অথচ হু থেকে শুরু করে বাকী সবাই বলছে এই ভাইরাস মনুষ্য সৃষ্টি না প্রাকৃতিক, অথচ প্রপাগান্ডার কারনে এখন অনেকেই বিশ্বাস করতে শুরু করছে এটা চীনের কোন এক গবেষনাগার থেকে এ্যাক্সিডেন্টালি ছড়িয়ে পড়ছে। নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য সবার চেহারাই এক, তাতে গায়ের রং সাদা হোক আর পীত হোক আর যাই হোক। মধ্য দিয়ে আমাদের মত সাধারন মানুষ গুলো এর প্রতিফল ভোগ করে তা সাদা, কালো, পীত, ব্রাউন কোন ব্যাপার না। যেমনটা ঘটছে সাধারন আমেরিকানদের ক্ষেত্রে ভিয়েতনামে।
কয়েকদিন আগে ব্লগার সুপারডুপার ভাই আর এক পোষ্টের কমেন্টে নচিকেতার একটা গানের উদ্ধৃতি দিয়েছিল প্রসঙ্গক্রমে, প্রাসাঙ্গিক ভাবে সেই গানের লাইন কটা তুলে দিলামঃ
বিজয়ীরা বরাবর ভগবান এখানেতে,
পরাজিতরাই পাপী এখানে
রাম যদি হেরে যেত, রাবায়ন লেখা হত
রাবন দেবতা হত সেখানে
কেন পথ নিয়ে মাথাব্যাথা?
কেন পথ নিয়ে মাথা ব্যাথা, জেতাটাই বড় কথা
হেরে গেলেই শেম শেম
ইটস এ গেম, ইটস এ গেম।।
এই পর্যন্ত যারা কষ্ট করে পড়ছেন তারা দয়া করে সাড়ে চার মিনিটের এই ভিডিওটা দেখে নেবেন। দেখবেন মানুষের পৈশাচিকতাঃ
ছবিঃ অন্তর্জাল, সূত্রঃ লেখায় বিভিন্ন জায়গায় নীল শব্দগুলোতে ক্লিক করলেই লিংক পাওয়া যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০২০ রাত ৮:১১