করোনা ভাইরাস নিয়ে মানুষের মাঝে যে এক মারাত্মক মৃত্যুভীতি দেখা দিয়েছে, তা প্রায় অনস্বীকার্য্য এবং আমার কাছে এক পৈশাচিক আনন্দের উৎস। বিভিন্ন পেপার পত্রিকায় দেখলাম এই করোনা ভাইরাসে নাকি ৪ থেকে ৬ কোটি মানুষ মারা যাবে সারা বিশ্বে। এর প্রতিষেধক এখনো আবিস্কার হয়নি। তবে উন্নত দেশ গুলো নিজেদের গরজেই বিপুল বিক্রমে ঝাপিয়ে পড়ছে এর প্রতিষেধক আবিস্কারে।
মজাই লাগছে, আমাদের দেশের এক শ্রেনীর মানুষের অতি উদ্বিগ্নতা দেখে। আবার এক শ্রেনীর মানুষের মাঝে ডাক্তারির প্রতিভা বিকাশিত হয়েছে। নাসিরউদ্দীন হোজ্জার সেই বিখ্যাত গল্পটি মনে পড়ল, তাকে একবার বাদশাহ তৈমুর লং জিজ্ঞাস করল “হোজ্জা বলতো আমার দেশে কোন পেশার মানুষ সব থেকে বেশী?” হোজ্জা নির্ধিদ্ধায় বলল “হুজুর ডাক্তার”। তৈমুর তো রেগে মেগে টং, “ফাইজলামি কর আমার লগে দেশে এত মানুষ বিনা চিকিৎসায় মরে আর তুমি কিনা কও ডাক্তার বেশী।” “হুজুর রাগ কইরেন না, প্রমান দিতাছি” এই বইলা হোজ্জা পরদিন এক খান চাঁদর মুড়ি দিয়া রাজ প্রাসাদে হাজির। সবাই জিগায় “হোজ্জা কি হইছে” হোজ্জা বলে “জ্বর” আর সাথে সাথে সবাই একটা না একটা ডাক্তারি দাওয়াই দিতেছে, কেউ বলে ঠান্ডা লাগাইও না, কেউ বলে ঠান্ডা পানিতে গোসল কর, কেউ বলে বেলের শরবত খাও, কেউ বলে থানকুনি খাও। এমন কি তৈমুর নিজেও হোজ্জারে কিছু উপদেশ দিল হোজ্জার জ্বর কমানোর। হোজ্জা তখন চাঁদর খানি ফেলে বলল, “আমার কিছু হয় নাই, মহামান্য বাদশাহ আমাকে জিজ্ঞেস করছিলো এই রাষ্ট্রে কোন পেশার লোক বেশী আমি সেটা হাতে কলমে দেখিয়ে দিলাম।” বাদ দিন এই গুলা আপনাদের মত সূক্ষ্ম রুচিবোধ সম্পন্ন মানুষদের কাছে স্থূল রসিকতা।
করোনা এখনো অফিশিয়াল ভিজিটে এই দেশে আসছে এমন কোন প্রমান পেপার পত্রিকায় দেখি নাই, তবে আনঅফিশিয়াল ভিজিটে লুকাইয়া ছাপাইয়া আসার চেষ্টা করছে যা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নিউজে দেখি, কোন একবার দেখালাম বেনাপোল কাষ্টমস কমিশনার তার ফেসবুকে ঘোষনাই দিয়া বসছেন করোনা রোগী পাওয়া গেছে (দেখুন করোনা ভাইরাস বেনাপোল কাস্টমস কমিশনারের কাণ্ড )। সব ডাক্তার আর কি! কয়েকজন নাবিক ফাবিককে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে এই টাইপের বিভিন্ন নিউজ দেখে মনে হয় করোনা এদিক ওদিক দিয়া ঢোকার পায়তাড়া করছে, কিন্তু খুব একটা সুবিধা এখনো করতে পারছে বলে মনে হয় না।
আমি এক ধরনের পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছি এক শ্রেনীর উচ্চবিত্ত মানুষের মাঝে মৃত্যু ভীতি দেখে। এরা বড় বড় গাড়ীতে করে ঘুরে বেড়ায়, বিরাট বিরাট আলীশান বাড়িতে থাকে সামান্য জ্বর জ্বারিতে এরা স্কয়ার, ইউনাইটেড মেডিকেলে লাখ লাখ টাকা খরচ করে চিকিৎসা নেয়। তাদের অসাহত্ব এখন একটা সার্জিক্যাল মাস্কের মাঝে এসে স্থান নিয়েছে। কি অসায়তা! আহা কি লজ্জাজনক আত্মসমর্পন! এক শ্রেনীর ব্যাবসায়ী এইবার মাস্কের ব্যাবসা করে শতকোটি টাকার মালিক হবে যদি করোনা থেকে নিজে বাচে আর কি!
ইউরোপে মধ্যযুগে যখন প্লেগ আক্রমন করল যাকে কেতাবি ভাষায় বলা হয় “ব্লাক ডেথ” তাতে প্রায় ৭৫ থেকে ২০০ মিলিয়ন মানুষ মারা যায়। ১৩৪৬ সাল থেকে ১৩৫৩ সালের মাঝে মাত্র ৭/৮ বছরে। মজার ব্যাপার কি জানেন? সে প্লেগের চিকিৎসা ব্যাবস্থা কি ছিল? প্রথমেই ধারালো ব্লেড দিয়ে রোগীর কনুইয়ের ভেতরের যেদিকে সবচেয়ে বেশি ব্যথা হচ্ছে, সেই অংশটা কেটে ফেলা হতো। এরপর সেখানে জোঁক লাগিয়ে দেয়া হতো যেন সেগুলো বিষাক্ত রক্ত চুষে নিতে পারে। রোগীর অসুখের মাত্রা যদি বেশি হতো, তবে এভাবে অন্যান্য আরো জায়গায় কেটে জোঁক লাগিয়ে রাখা হতো। রক্ত পান করতে করতে জোঁকগুলো যখন খসে পড়তো, তখন ক্ষতস্থানটি পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে দেয়া হতো।
প্লেগকে ঈশ্বরের অভিশাপ মনে করে নিজেকে ক্রমাগত চাবুক মারতো। লোকে ভাবতো, এতে করে হয়তো উপরওয়ালার ক্ষমালাভের মাধ্যমে রোগমুক্তি ঘটবে। আক্রান্ত স্থানে মুরগি ঘষত। তাহলে জীবাণু নিরীহ এ প্রাণীর দেহে স্থানান্তরিত হয়ে যাবে বলে ভাবত তারা। মুরগিতে কাজ না হলে কবুতর কেটে টুকরা টুকরা করে এর নাড়িভুঁড়ি সারা শরীরে মাখাত। ফোস্কা গলিয়ে সেখানে মানবমল, গাছের রজন ও মূল পিষে লাগিয়ে রাখত। ধনী ব্যক্তিরা পান্না চূর্ণ করে সেটা তরকারি সিদ্ধ পানিতে মিশিয়ে এক ঢোকে গিলে নিত। পচা গুড় খাওয়ানো হতো, সেটিও থাকতো কমপক্ষে দশ বছরের পুরনো। মলমূত্রের গন্ধযুক্ত বাতাস বাইরের পরিষ্কার (কিন্তু প্লেগের জীবাণুযুক্ত) বাতাসকে তাড়িয়ে দেবে, এ আশায় মানুষজন পয়ঃপ্রণালীতে গিয়ে বসে থাকতো। মানবমূত্র দিয়ে গোসলের কথাও শোনা যায়। কখনো কখনো ‘ইহুদীরাই এমন প্রাণঘাতী রোগের জন্য দায়ী’ এমনটা ভেবে তাদেরকে একত্রে বেঁধে, ঘরের ভেতর আটকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা হতো।
এখন করোনায় আক্রান্ত ব্যাক্তিদের উপরোক্ত চিকিৎসার ট্রাই করানো যেতে পারে। আমার এই লেখা পড়ে এবং নিম্ন শ্রেনীর জোক শুনে হয়ত আমাকে আপনার পিশাচ শ্রেনীর কিছু একটা মনে হতে পারে। সেটা অবশ্যই পারে কিন্তু বাস্তবতা হল এই রোগ হলে এই মুহুর্তে কিন্তু ধনী গরীব কারো নিস্তার নেই। তবে ব্যাপারটা আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে আমার কাছে অতটা সিরিয়াস কিছু মনে হয় না, কারন ইউরোপ আমেরিকায় একজন দুই জন কোন রোগ শোকে মারা গেলে যেভাবে চিক্কুর চেচামেচি চালায় তাতে আমার কাছে হাসি ছাড়া আর কিছুই পায় না। বেচে থাকার কি প্রবল আকুতি।
আজকে জুমার নামাযের পর সব মসজিদে করোনা ভাইরাসের সংক্রমন ঠেকানোর জন্য আল্লাহর কাছে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়েছে, ওদিকে ইণ্ডিয়ায় ‘ওম নম শিবায়’ বলে খেয়েই নিন গো মূত্র ও গোবর৷ মুহূর্তে ভ্যানিশ হয়ে যাবে করোনা ভাইরাস৷ (দেখুন গো মূত্র ও গোবর খেলেই ভ্যানিশ করোনা ভাইরাস, দাবি স্বামী চক্রপানির )। মধ্যযুগ থেকে আমাদের তথাকথিত আধুনিক যুগে উত্তরনেও অপরিচিত রোগের চিকিৎসা কিন্তু সেই একই আছে। যার যার সৃষ্টকর্তার কাছে সারেন্ডার।
এই দেশে এক দিনে সড়ক দূর্ঘটনায় ২২ জন প্রান হারালে পেপারে কোন নিউজ হয় না, হলেও অতি সাধারন ভাবে আসে যেন ডাল দিয়ে ভাত খেয়েছি টাইপের ( দেখুন সড়ক দূর্ঘটনার খতিয়ান সড়ক বিভীষিকায় করোনা আতঙ্কও কুপোকাত )। এই নিউজের পর করোনা নিয়ে ভয় পাওয়া অন্তত এই দেশের সাধারন মানুষের, আমার কাছে অসাধারন বলদামি মনে হয় (দেখুন নবীগঞ্জে একই পরিবারের ৯ জনসহ সারা দেশে নিহত ২৩ ) গতকাল দেখলাম যে সোয়াবিন তেল ২০২ টাকা ছিল আজকে তা ২২৫ টাকা হয়েছে। স্কুলে ছেলেদের বেতন বাড়ছে। আমার মাথায় চিন্তা কিভাবে এগুলো সামলাব। করোনা ভাইরাস সামলানো আমার কাছে দুধ ভাত। প্রতি মুহুর্তে আমরা মারা যাচ্ছি, সেখানে করোনা বড় জোর এক মুহুর্তে মেরে ফেলবে এর থেকে বেশি আর কি? আর যারা এই দেশে বা এই বিশ্বে বেচে থাকার উপযুক্ত তারা না হয় করোনা নিয়ে ভাবুক। আমি ভাবছি কালকে কি ভাবে বেচে থাকব।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০২০ রাত ৯:৩২