বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত সাহিত্যিক এস এম রইজ উদ্দীন আহমদ
কাজী নজরুল ইসলাম, কবি জসীম উদ্দীন, আবুল মনসুর আহমেদ, ফররুখ আহম্মদ হালের সৈয়দ শামশুল হক, আনিসুজ্জামান, নির্মলেন্দু গুন এদের সাথে এক কাতারে এই ২০২০ সালে উচ্চারিত হবে আর একটি বিখ্যাত নাম এস এম রইজ উদ্দীন আহমদ। নিশ্চয়ই এতক্ষনে সবাই বুজে গেছেন, সবাই চিনে গেছেন বাংলা সাহিত্যের এই অমর সাহিত্যিক যার অসামান্য অবদানের দান স্বরূপ বাংলা একাডেমী এবার উনাকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার “স্বাধীনতা পুরস্কারে” ভুষিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আমি অতি নগন্য মানুষ আমার জানা না জানায় কিছুই আসে না, তাই অতি লজ্জার সাথে স্বীকার করেই নিচ্ছি বাংলা সাহিত্যের এই উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম বা উনার লিখিত কোন বই বা কবিতা আজ পর্যন্ত আমার চোখে পড়ে নাই অথবা কারো মুখে নামও শুনিনি (অবশ্য আমার সাথে যাদের আলাপ আলোচনা হয় তাদের অধিকাংশই আমার মত মুর্খ কিসিমের মানুষ।)
“স্বাধীনতা পুরস্কার” আগে যাদের নাম দিয়েছে অন্তত তাদের নাম দু একবার হলেও আগে পিছে শুনছি কিন্তু এইবার এমন এক প্রচার বিমুখ লজ্জাবতীর লতা টাইপের মানুষকে এই পুরস্কারের জন্য সন্মানিত বাংলা একাডেমী মনোনীত করল যে, তার নাম তো আমার মত গন্ডমুর্খ দূরে থাক দেখলাম অনেক গুনী জন ও শুনে নাই এদের মাঝে তো আজকে “প্রথম আলোর” আনিসুল হক সাহেব (দেখুন রাষ্ট্রীয় পুরস্কার: জিব কাটো লজ্জায় ) বা সাবেক বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক জনাব অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান তো বিস্ময় প্রকাশ করে বলেই ফেলছেন “এবার সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার পেলেন রইজউদ্দীন, ইনি কে? চিনি না তো। কালীপদ দাসই (কালীপদ দাস যিনিও সাংস্কৃতি অঙ্গনে অসামান্য অবদানের জন্য এইবার স্বাধীনতা পুরস্কারে ভুষিত হয়েছেন) বা কে! হায়! স্বাধীনতা পুরস্কার!’ (দেখুন হায় স্বাধীনতা পুরস্কার! ) যাই হোক সে উনারা বিস্ময়াভুত হতেই পারেন! বড় মানুষ বড় মানুষদের নিয়েই বিস্ময়াভুত হয়, আর আমাদের মত অকাট মুর্খদের লজ্জা ছাড়া কিছুই নাই তাও নিজেদের অজ্ঞতায়।
স্বাধীনতা পুরস্কার
যাই হোক উনাকে নিয়ে গুগল ইঞ্জিনে সার্চ দেয়া শুরু করলাম, ইঞ্জিন গরম হয়ে বিকট আওয়াজ দেবার পর উনাকে নিয়ে যে যৎসামান্য তথ্য পেলাম তাতে জানলাম উনি একজন মুক্তিযোদ্ধা ৮ নাম্বার সেক্টরের অধীনে এবং জন্ম ১৯৬০ সালে!!!! মানে ১১ বছর বয়সে উনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশ স্বাধীন করে এইবার সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার পেলেন। (অপ্রাসাঙ্গিক ভাবে উল্লেখ্য আমার নিজের ছোট সন্তানের বয়স ১০ বছর তার দিকে তাকিয়ে অনুভব করছিলাম কিভাবে ৩০৩ রাইফেল (যুদ্ধের সময় প্রচলিত ছিল মুলতঃ) তুলে গুলি করে এই ছেলে রিকয়েলসের ধাক্কা সহ্য করবে, অবশ্য আমার মত অযোগ্য পিতার অযোগ্য সন্তান দিয়ে উনাদের মত অসামান্য মানুষদের হিসাব করাও বোকামী) একজন সাবেক সরকারী কর্মকর্তা এই প্রতিথযশা সাহিত্যিক জনাব এস এম রইস উদ্দিন। (দেখুন উইকিতে এস এম রইজ উদ্দিন আহম্মদ)
এইবার খোজে নামলাম উনার সাহিত্য কর্ম কি কি আছে, দেখলাম উইকিপিডিয়ায় তার উল্লেখ্যাযোগ্য সাহিত্য কর্ম হিসাবে উল্লেখ্য করেছে; কেমন করে স্বাধীন হলাম (কবিতা),পুষ্পিতারণ্যে বিথী (উপন্যাস),পরলোকে মর্তের চিঠি (পত্রোপন্যাস),রবীন্দ্রজীবনে ভবতারিনীর প্রভাব ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (প্রবন্ধ), দেখে এলাম নেদারল্যান্ড: ভূমি প্রসঙ্গ (ভ্রমণ কাহিনী), আগস্ট ট্রাজেডি ও তারপর! (ইতিহাস) (আচ্ছা বইগুলোর কোন কোনটায় নামের বানান ভুল আছে এগুলো কি উইকির ভুল না অরিজিন্যাল বইয়েই এভাবে নাম দেয়া আছে!)। অত্যান্ত উল্লেখ্য যোগ্য সব বই তবে মুর্খ আমি নামও জানি না, তবে আমি নিশ্চিত আপনারা যারা সামু ব্লগে লিখছেন তারা নিশ্চয়ই এই সব উল্লেখ্যযোগ্য বইর সাথে পরিচিত। বড়ই রইস আদমী জনাব সাহিত্যিক রইজ উদ্দীন যে হাতে (১১ বছর বয়সে) অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন সেই হাতেই আবার সাহিত্যের প্রায় সব শাখাতেই পদচারনা করে বাংলা সাহিত্যকে অনন্য ভুমিকায় নিয়ে গেছেন।
এইবার আসুন দেখি উনি কি কি অন্যান্য অসামান্য পুরস্কার পেয়েছেন, দু একটির উল্লেখ্য করি বেশী উল্লেখ্য করলে আপনাদের ধৈর্য্য চ্যুতি ঘটবে তাই দু একটি উল্লেখ্য করব গাঙচিল সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রইজ উদ্দিন ২০০৮ সালে সাউথ এশিয়ান কালচারাল সোসাইটির দেওয়া ‘আন্তর্জাতিক মাদার তেরেসা স্বর্ণপদক’, ২০১৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের একটি মাসিক সাহিত্য পত্রিকা থেকে সম্মাননা (উৎসাহীরা দেখুন এখানে তার পুরস্কার প্রাপ্তির লিষ্ট এত বড় পুরস্কার পাব বুঝতেই পারিনি: স্বাধীনতা পদকজয়ী রইজ উদ্দিন )
মহান সাহিত্যিকের একটি বিখ্যাত কবিতা
এ এমন উচ্চতা যে উচ্চাতায় বর্তমান বাংলা সাহিত্যের কবি মহাদেব সাহা, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবু সায়ীদ স্যার, হুমায়ুন আহম্মেদরা পৌছানোর যোগ্যতা রাখেন নি। শুনছিলাম উনি নাকি ফেসবুকে কবিতা লেখেন, ফেসবুকে আমার কোন আইডি নাই তাই স্ত্রীর আইডি দিয়ে উনার নাম সার্চ করেও উনার আইডি পেলাম না (অভাগা যেদিকে চায় সাগর শুকিয়ে যায়)। যাই হোক অনেক কষ্টে গুগল ইঞ্জিন কে ষ্টার্ষ্ট দিয়ে ওপরের কবিতাটি পেলাম। কি অসাধারন শব্দশৈলী, অসাধারন বাচনভঙ্গি, অভুতপূর্ব বানান (অবশ্য রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ইনারাও অনেক নতুন শব্দ বাংলায় সংযোজন করেছিলেন)। উনার এক খানা সাক্ষাৎকার পেলাম (দেখুন স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়ে রইজ উদ্দিন: 'কৌলিন্যের দাবিদারদের কাছে আমি খুব একটা পরিচিত না' )। অবাক ব্যাপার হল বড় কোন পত্রিকা উনার “অনুভুতি কেমন” টাইপের প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য মনে হয় এখনো যায় নি, কেন যায়নি তার কোন যৌক্তিক অযৌক্তিক কারন খুজে পেলাম না।
কথা আর বাড়াব না, বাংলা সাহিত্যের এই রকম মহান রইস সাহিত্যিক কে আগে না চেনার জন্য সবার কাছে মার্জনা প্রার্থনা পূর্বক বাংলা সাহিত্যের ধারক ও বাহক বাংলা একাডেমীকে অসংখ্য ধন্যবাদ এই সাহিত্যিক কে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০২০ সালে “স্বাধীনতা পুরস্কার" প্রাপ্তদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন ২৫শে মার্চ এক রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।
ব্যাখ্যাঃ কেউ যদি এই লেখা পড়ে মনে করেন তার সময় নষ্ট হয়েছে তবে তার উদ্দেশ্যে স্বান্ত্বনা বানী এটুকুই আপনার পড়ার চেয়ে আমার লিখতে বেশি সময় গেছে। তবে জেনে রাখবেন এটা এই দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার। আর কারো ভালো লাগলে আমার কিছুটা হলেও স্বান্ত্বনা লাভ হবে।
পরিশিষ্টঃ আজকে ১৩ ই মার্চ নিউজ পেপারে খবর আসছে জনাব রইজ উদ্দীনের নাম স্বাধীনতা পুরুস্কার থেকে বাদ দেয়া হয়েছে, সেক্ষেত্রে প্রশ্ন থেকে যায় যারা উনাকে সিলেক্ট করে আজকে বাদ দেবার মত রাষ্ট্রীয় অপমানজনক পরিস্থিতি তৈরী করছে তারা কতটুকু দায়ী? (দেখুন স্বাধীনতা পদক থেকে বাদ পড়লেন সেই রইজ উদ্দিন )
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১:৩৩