নিজে লিখতে পারি না। সবার লেখার যোগ্যতা থাকে না। আমার যে নেই সে অনেক আগেই বোজার মত সামান্য বোধ টুকু আমার হয়েছে। কয়েক দিন এখান থেকে ওখান থেকে দুই চার লাইন জোড়া দিয়ে কয়েক টা ব্লগ পোষ্ট করছিলাম। ভাগ্যিস ব্লগের মানুষ গুলো অসাধারন মননশীলতা নিয়ে আসে তাই আমার সব অখাদ্যগুলো অপছন্দ করলেও কোন দিন নিন্দা করে নাই। আমি সব সময় কৃতজ্ঞতার সাথে আমার সেই সব ব্লগ বন্ধুদের মহানুভবতা স্বরন করি।
লিখতে হয়ত পারিনা কিন্তু পড়তে পারি, সে পড়ার অভ্যাস একেবারে ছোট থেকে আমার ছিল। এখনকার মত তখন হাতের মধ্যে ইলেক্ট্রনিক বই না কি যেন বলে নোট প্যাড অনলাইন এই সব ছিল না। ছিল কাগজে ছাপার অক্ষরে কালো কালো ক্ষুদ্র কিছু শব্দ। মনে আছে একটা নতুন বই হাতে পেলে প্রথমে কিছুক্ষন চোখ বুজে উপলদ্ধি করতাম বইটাকে। যখন বুজতাম বইটা আর আমার মাঝে আত্মীক যোগাযোগ তৈরী হয়ে গেছে তখন নাকের কাছে নিয়ে সদ্য কেনা নতুন বইয়ের সোদা গন্ধ নাকে নিতাম। আহ সে বোজানো যাবে না।
তখন ইলেক্ট্রিসিটি প্রায় সময় ই থাকত না সন্ধ্যার সময় কারেন্ট আসত হ্যারিকেন ধরানোর জন্য। মা খালারা বিরাট আয়োজন করে হ্যারিকেনের চিমনিগুলো মুছে প্রতিটা হ্যারিকেনে সলতে ঠিক মত আছে কিনা দেখে নিয়ে প্রজাপতি মার্কা ম্যাচ জ্বালিয়ে হ্যারিকেনে আগুন দিত। সব চেয়ে ভালো হ্যারিকেনিটা এক নিমেষে ছো মেরে তুলে নিয়ে যেয়ে ক্লাশের পড়া মুখস্থ করার অজুহাতে তুলে নিয়ে যেতাম। যেই দেখতাম বাবা এসে অফিসের হিসাব খাতাটা খুলে গম্ভীর মুখে বসেছে আর মা খালারা পানের বাটা নিয়ে রান্না ঘরে ঢুকছে আস্তে করে গল্পের বইটা পড়ার বইর নীচে চালান করে নিবিষ্ট মনোযোগে পড়া শুরু করতাম। মাঝে মাঝে মার হাতে ধরা খেতাম আর ফলশ্রুতিতে অব্যশাম্ভাবী ভাবে তাল পাখার হাতল আর আমার পিঠের সাথে আর সংযোগ স্থাপন হত।
সন্ধ্যাবেলা পাড়ার সম বয়সীদের সাথে খেলা ধুলা করে যখন বাসায় আসতাম বাড়ীর পাশের বট গাছ টা থেকে হাজার হাজার টিয়া পাখির আর বকের কলকাকলীতে নিজের কান চেপে ধরে অতি সাবধানে নিজের মাথা বাচিয়ে ( পাখিদের বর্জ্য থেকে) বাসায় ফিরে দুধ আখের গুড় দিয়ে মাখিয়ে এক থালা ভাত সাবাড় করে পড়ার বইর অজুহাতে গল্পের বই পড়ার জন্য মনটা আন চান করত।
বই কেনার টাকা আসত পুরানো পেপার বিক্রি করে আর মার কাছ থেকে আবদার করে যা পেতাম তাই দিয়ে। ছোট কাকা বাসায় আসলে আমাদের আনন্দের সীমা থাকত না কারন ছোটকাকা মানে আন লিমিটেড আবদার পুরন। ৪/৫ টা নতুন বই এক সাথে কেনা যেত। অপেক্ষায় থাকতাম কবে ছোট কাকার মেডিকেল কলেজ বন্ধ হবে আর বাসায় আসবে।
তখন মনে হয় ক্লাশ থ্রিতে পড়ি দস্যু বনহুর পরে সমবয়সীদের মাথায় ভুত চাপল দস্যু বনহুরের মত মাটির নীচে গর্ত করে একটা ডাকাত দল বানাবো যারা অত্যাচারীদের পাশে গিয়ে দাঁড়াবে। অনেক কষ্ট করে ২টা কোদাল ম্যানেজ করলাম ৭ জনের দল টা নিরবিছিন্ন থানা কাউন্সিলের কলোনীর পাশে ঝোপাঝাড়ে ঘেরা জায়গাটায় ৩/৪ ঘন্টা কোদাল চালিয়ে হাতে ফোস্কা ফেলে দস্যু হবার চিন্তা বাদ দিয়ে নিহার রঞ্জনের কিরীটি রায় অথবা বোমকেস বক্সী হবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম।
কোন ঈদে বাবা নতুন প্যান্ট কিনে দিতে না পারলে কোন অসুবিধা ছিল না বড় মামা বা মেজ মামার পুরানো প্যান্ট গুলো কেটে কাট ছাট করে নতুন প্যান্ট পেয়ে যেতাম। বড় আনন্দ বড় সুখ।
স্কুলে লিখতাম রুল টানা রাফ খাতায়, তখনো ইকোনো বলপেন মার্কেটে আসে নাই তাই পাইলট কলম ই ভরসা ছিল এখন হয়ত অনেকেই একে ঝর্না কলম হিসাবে একে জানেন। দুই ধরনের পাইলট কালি ছিল নীল রংয়ের আর কালো রংয়ের। আমার অবশ্য নীল কালির প্রতি সামান্য পক্ষপাত ছিল। কলমের মাঝ বরাবর প্যাচ ছিল সেই প্যাচ খুলে কলমকে দুই ভাগে ভাগ করে নীচের ফাপা পেটে কালি ভরে গোটা গোটা অক্ষরে কাগযে লিখে যেতাম। জানি না বাবা আর কিছু না হলেও হাতের লেখা সুন্দর করার প্রতি ঝোক ছিল। প্রতিদিন হাতের লেখা দেখত কেমন হচ্ছে। এর সুফল অবশ্য এখনো পাচ্ছি।
আমাদের সে সময় কোজাক চকলেট পাওয়া যেত। দশ পয়সা দিয়ে ওই কোজাক চকলেট (লাঠি চকলেট) কিনলে তার মাঝে ছোট ছোট টারজান, ওয়ান্ডার ওম্যান, কোজাক, বায়োনিক ওম্যান ছোট ছোট ছবি থাকত। খুব যত্ন করে এই ছবি গুলো অনেক দিন সংগ্রহ করে রাখতাম।
ছোট কাকা ডাক্তার হবার পর প্রথম আমাদের বাসায় সাদা কালো ন্যাশনাল টিভি আসে সেই ১৯৮৪ সালে। সে টিভি আমরা দেখি ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত। বাসায় টিভি আসার আগে এলাকার ধনী কন্ট্র্যাক্টর সাহেবের বাসার জানালা দিয়ে অনেক দুপুরে টারজান দেখতাম। তবে নানু ( কন্ট্র্যাক্টর এর স্ত্রী) ভালো মানুষ ছিল যখনি দেখত আমরা জানালা দিয়ে টিভি দেখছি ভেতরে ডেকে নিয়ে মড়া (বেতের টুল) পেতে বসতে দিত। মনে হয় বাবা সরকারী চাকুরী করত দেখে এই সন্মানটা পেতাম।
এই দেখুন কি লিখতে যেয়ে কি লিখছি? এটাই সমস্যা, যারা লেখতে পারে না তারা এক বিষয় লিখতে যেয়ে আর বিষয়ে চলে যায়। ধান ভানতে শিবের গীত যাকে বলে, বলছিলাম কেন সামুতে আগের মত ভালো লেখা আসেনা। আমি সামান্য তিন মাসের মত সামুতে আমার ব্লগ নামের অত্যাচার মানে লেখালেখি করেছি, কি সব লেখা লেখা আসত সে সময় ইমন ভাইয়ের মৃত্যুর মাস খানেক আগে আমার ব্লগ নামক এই আধুনিক মাধ্যম টার সাথে পরিচয়। কিসব অসাধারন লেখা একের পর এক। কোনটা শেষ করার আগেই চলে আসত আর এক টা দুর্দান্ত লেখা। এ যেন বিয়ে বাড়িতে কোরমা খাব না রোষ্ট খাব এর জোর প্রতিযোগিতা।
সামু ছিল বাংলা ব্লগে পথিকৃত। আজকে সামুর পোষ্ট গুলোর দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি কি লেখে এই সব? আমি কাউকে অসন্মান করি না। শুধু বলতে চাই একটা ভালো লেখা লিখতে হলে পড়তে হয়। দয়া করে সবাই আগে পড়াশুনা করুন তারপর লিখুন।
মাঝে মাঝে লিখতে মন চায় কিন্তু নিজের সীমাবদ্ধতা জানি বলে ওদিকে পা বাড়াই না।