somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা গানের ক্রমবিকাশ ধারা (প্রথম পর্ব)

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাঙ্গালীর নিজের গান তো গায়ই পরের গান ও গায়। পরের গান বলতে বুজাচ্ছি দরবারি, হিন্দুস্তানী রাগ সঙ্গীত। ধ্রুপদ, খেয়াল, টপ্পা, ঠুংরী হচ্ছে রাগ সঙ্গীতের প্রধান চারটি রীতি। বাংলা ভাষায় রচিত যে গান সে গানই আমাদের একান্ত নিজস্ব। বাংলা ভাষায় রচিত গান দুই ধরনের লোক সঙ্গীত আর নাগরিক সঙ্গীত। নাগরিক গানই বাংলার প্রধান গান। লোক সঙ্গীত আবহমান বাংলার গান, বাংলার গ্রামের গান, সহজ সরল অভিব্যক্তিতে ভরা সঙ্গীত রীতি। আমি চেষ্টা করব শুরু থেকে বাংলার গানের একটা তালিকা দিতে, হয়ত অনেকেই আমার সাথে একমত হবেন না কিন্তু মত পার্থক্য থেকেই তো পূর্নাঙ্গ তালিকা হবে। আজ এখানে আমি তুলে ধরব রবীন্দ্র পূর্ববর্তী গানের মুল ধারা।

চর্যাগীতি
চর্যা একটি সর্বভারতীয় রাগ সঙ্গীত।বাংলা ভাষায় চর্যাগীতি রচিত হয় ৯৫০ থেকে ১২০০ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে। অনেক্র ধারনা নবম শতাব্দী থেকেই চর্যাগীতি রচিত হয়েছে।বাংলা ভাষায় রচিত গানের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম নিদর্শন। ১৯০৭ সালে মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজকীয় গ্রন্থগার থেকে তিনটি পুথি সংগ্রহ করে আনেন। ১৯১৬ সালে কলকাতায় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নিজেই তিনটি পুথি একত্র সম্পাদনা করে প্রকাশ করেন নাম দেন “হাজার বছরের পুরানো বাংলা ভাষার বৌদ্ব গান ও দোহা”। চর্যার ভাষা ছিল সাঙ্কেতিক।

গীতগোবিন্দ
সেই বৌদ্বগীত যুগের অবসান করে বৈষ্ণব কবি জয়দেব রচিত করলেন গীতগোবিন্দ। তিনি দ্বাদশ শতকের মধ্যভাগের কবি। গীতগোবিন্দ মূলত রাধাকৃষ্ণর প্রেম লীলা নিয়ে রচিত। এখন পর্যন্ত মোট চব্বিশটি গানের হদিশ পাওয়া যায়। গীতগোবিন্দ এসে চর্যাগীতিকে হঠিয়ে দিল। এর প্রতিটি গানের ওপর জ়য়দেব তাল ও সুরের নাম উল্লেখ্য করে দিয়েছেন। অতি সরল সাংস্কৃতিতে জ়য়দেব এ গান রচনা করেন।প্রথম দিকে জয়দেবের সুরে গাওয়া হলেও পরবর্তীতে কীর্তনীয়ারা এতে কীর্তনের সুর আরোপ করেন।

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন
জয়দেবের পর বাংলা গানের মুল ধারায় আর্ভিবুত হন বডু চন্ডীদাস।তার রচিত অসামান্য গীত গ্রন্থটির নাম শ্রীকৃষ্ণকীর্তন। ১৪৫০ থেকে ১৫০০ সালের মধ্যে এই গ্রন্থ রচিত হবে বলে ধারনা করা হয়। বসন্ত রঞ্জন রায় বাকুড়া জেলার কাঁকিল্যা গ্রামের দেবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের বাড়ী থেকে শ্রীকৃষ্ণ কীর্তনের পান্ডুলিপি উদ্বার করেন। এবং ১৯১৬ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ হতে তার সম্পাদনায় এটি প্রকাশিত হয়। গীত গোবিন্দের প্রধান তিনটি চরিত্র রাধা, কৃষ্ণ ও বড়াই।

পদাবলীকীর্তন

শ্রীকৃষ্ণকৃর্তনের পর শুরু হয় বাংলা গানের এক সোনালী অধ্যায়। যদিও শ্রীচতৈন্যর (১৪৮৬-১৫৩৩) পূর্বেই পদাবলীর সূচনা কিন্তু তাকেই বলা হয় পদাবলীর জনক। তিনি যে বৈষ্ণব আন্দোলন শুরু করেন তার প্রধান বাহন হল পদাবলী, পদাবলীর অধিকাংশ পদই হিন্দুদের দ্বারা রচিত কিন্তু কিছু কিছু মুসলমান ও কিছু পদ রচনা করেন। হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় সঙ্কলিত ১৯৮০ সালে প্রকাশিত বৈষ্ণব পদাবলীতে ৩৭৫৬ টি পদ আছে।

মঙ্গলগান
বাংলা গানের মূল ধারায় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক না থাকলেও মঙ্গল্ গান নামক এক ধরনের কাহিনী গানের উল্লেখ্য পাওয়া যায়।চ র্তুদশ শতক থেকে অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত বেশ কিছু আলেখ্য বা কাহিনী গান রচিত হয়েছিল। এই গান মূলত শাক্ত দেবদেবীর মাহাত্য বর্ননামূলক। মঙ্গল গানের উল্লেখ্য যোগ্য শাখা তিনটি মনসামঙ্গল, চন্ডীমঙ্গল, ধর্মমঙ্গল।

শাক্তগীতি

রামপ্রসাদ (১৭২০-১৭৮১) সেন কে শাক্তগীতির জনক বলে ধরা হয়।শাক্তগীতি বলতে দেবী কালী ও দূর্গা বিষয়ক গানকে বুজায়। রামপ্রসাদ শ্যামা সঙ্গীত ও অগমনী উভয় ধারারই সূচনাকারী। বিশ শতকে সর্বশ্রেষ্ট শ্যামা সঙ্গীত রচয়িতা কাজী নজরুল ইসলাম বেশ কয়েকটি বীর রসাত্মাক শ্যামা সঙ্গীত রচনা করেন। শাক্তগীতিকে সমৃদ্ব করেন কমলাকান্ত ভট্টাচার্য।

টপ্পাগান
লক্ষ্মৌ নিবাসী গোলাম নবী টপ্পা রীতি উদ্ভাবন করেন। কিন্তু যার হাত ধরে টপ্পা জনপ্রিয় হয় তার নাম নিধু বাবু। নিধু বাবুরা পুরুষানুক্রোমে কলকাতার কুমার টুলির বাসিন্দা ছিলেন। খেয়ালের সাথে পাঞ্জাবী লোক সঙ্গীত মিশিয়ে টপ্পার গঠন। গোলাম নবীর পাশাপাশি নিধু বাবুও বেশ কিছু টপ্পা রচনা করেন। নিধু বাবুর পাশে কালী মির্জা (১৭৫০-১৮২০) টপ্পা কে সাধারন প্রিয় করেন।

ব্রক্ষ্মসংগীত

রাজা রামমোহন রায় (১৭৭৪-১৮৩৪) ব্রক্ষ্মসংগীতের স্রষ্টা। ব্রক্ষ্মবিষয়ক ধর্মের নামে ব্রক্ষ্ম ধর্ম ও ব্রক্ষ্ম স্তবমূলক গানের নাম ব্রক্ষ্ম সংগীত। ১৮২৮ সালে “ব্রক্ষ্মসঙ্গীত” নামে তার একটি প্রার্থনাগীতি সংকলিত হয়।ব্রক্ষ্মসংগীত মূলত রাগ সঙ্গীত ভিত্তি করে রচিত। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ কিছু ব্রাক্ষ্মসংগীত রচনা করেন তার সুযোগ্য উত্তরসূরী রবীন্দ্রনাথ ব্রক্ষসংগীত কে করেছেন ঐশ্বর্যম্ন্ডিত।ব্রাক্ষ্ম ধর্ম আজ অস্তমিত কিন্তু এখন ও ব্রক্ষ্ম সংগীত পরম আদরে গাওয়া হয়।

এখানে আমি খুব সংক্ষিপ্ত আকারে রবীন্দ্র পূর্ববর্তী গানের বিভিন্ন ধারার বর্ননা দেবার চেষ্টা করছি, যদি অনুমতি করেন তবে পূর্বুল্লেখিত ধারা গুলোর বিস্তারিত আলোচনা করার ইচ্ছে আছে। এরপর বর্ননা আসবে রবীন্দ্র পরবর্তী গানের ধারা।
চলবে

কৃতজ্ঞতাঃ করুনাময় গোস্বামী, আরো অনেকে
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ৭:৪৭
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সত্যি বলছি, চাইবো না

লিখেছেন নওরিন হোসেন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৮



সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০


শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্থান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্থান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×