
''আমার বন্ধু রাত''
অদ্ভুত একটা মায়ায় আটকে যাই প্রতি রাতে। আমি রাতে ঘুমাতে ভয় পাই কারন মায়া ভঙ্গ হতে দিতে চাইনা। অন্ধকারের মায়া, নেশা ধরানো মায়া। আমার কষ্টগুলো কালো, আবার রাতের রং কালো তাই সহজেই আড়াল করে ফেলতে পারি কষ্টগুলো। আমি দিনে ঘুমাই, কারন ঘুমের ভেতরেও একটা অন্ধকার জগৎ। সেখানেও আমার কষ্টগুলো জ্বালাতন করেনা।
আমি রাতে জাগি, কারন রাত হল শব পোড়ানোর আসল সময়! ভাবছেন কিসের শব? হুম, কষ্ট শব। ব্যার্থ হবার অপমানের শব।হেরে গিয়ে লুকানো কান্নাগুলো স্মৃতির বোতলে ভরে রেখেছিলাম, রাতের বেলা সেগুলো জ্বেলে দেই।
আমি ইনসমনিয়াক, আমি মনেকরি এটা ঈশ্বরের আশীর্বাদ। কষ্টগুলো কবর দিয়ে শান্ত মনে আনন্দগুলো ভাগাভাগি করি রাতের সাথে। আনন্দ গুলো একটার সাথে আরেকটা গিঁট দেই রাত জেগে। সুখের খোঁজে সেই গিঁট দেয়া আনন্দগুলো বেয়ে আমি অন্ধকার পাহাড়ে উঠি। কখনো অন্ধকার অরণ্য আমাকে ডেকে নিয়ে যায়। আবার কখনোবা অন্ধকারের স্রোতে গা ভাসিয়ে হারিয়ে যাই। আমার বন্ধু রাত।
''অপরিনিত ছায়ামূর্তি''
তারপর হেঁটে যাই শিরার মত ছিটিয়ে থাকা গলি ধরে। অপরিকল্পিত নৈশ ভ্রমনের সঙ্গী হয় কিছু অচেনা অস্থিরতা সম্পন্ন ছায়ামূর্তি, ধ্রুব দূরত্ব বজায় রেখে হেঁটে চলা কুকুর, পরাবাস্তব চিন্তাশক্তি আর কামিনী ফুলের ঘ্রান। ক্ষণকাল হেঁটে পিছন ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করতেই দেখি নিজের ছায়ার বিকৃত রূপ! বালির তৈরি অবকাঠামো গুঁড়িয়ে যাওয়ার মত নিজের ছায়া ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ধ্রুব দূরত বজায় রেখে হেঁটে চলা কুকুরের কর্কশ চিৎকার বাড়তে থাকে ছায়া বিলীন হয়ে যাওয়ার সাথে সমানুপাতিক হারে। আর কামিনী ফুলে ঘ্রান হারিয়ে যেতে থাকে ব্যাস্তানুপাতে। নাসিকা রন্ধ্রে পানসে আবহ! ছায়া বিলিন! দুটো ছায়ামূর্তি সামনে এসে স্থির হয়ে দাড়ায়, হাঁটু গেড়ে বসে মাথা নুইয়ে সম্মানিত করে। নিজ শরীর কাঠামো অবলোকন পূর্বক স্নায়ু শীতলতা! দূর থেকে ভেসে আসে পেঁচার ডাক, সাথে মৃদু স্বরে অচেনা গোঙ্গানি! পিছন ফিরে দেখি নিজের রক্তাক্ত ছায়া! অপরিনিত ছায়ামূর্তি!

''কংক্রিটের বাঁধন''
শহরের সাথে বাঁধন ঢিলে হয়ে গেছে প্রাচীন ল্যাম্প পোস্টের। কিন্তু কেন? নিয়নের বাতিটা আগের মত আলো দেয়না তাই? নাকি ল্যাম্প পোস্টের থামে মরিচা ধরেছে বলে? আচ্ছা ঐ বৃদ্ধ যে কিনা পাশেই রাতভর চা বিক্রি করে সে কি জানে এই বাঁধন ঢিলে হওয়ার কারন? নাকি দোষ ল্যাম্প পোস্টের? রাতের শহরের বুকে নিশীথিনীদের আনাগোনা কি ল্যাম্প পোস্টেকে ঈর্ষান্বিত করে?
তবে যখন মাঝ রাত্তিতে জোছনা হয়, তখন কি প্রেম জাগেনা ওদের? আমি চাই ল্যাম্প পোস্ট শহরের বুকে বেচে থাকুক অনন্তকাল।"
''ধূসর সমাধি''
টিনের চালে কুয়াশা পড়ে টুপ...টাপ, টুপ...টাপ। মাঝ রাতে ঘুম ভাঙ্গে, ভাবি বৃষ্টির প্রারম্ভে জলের খেলা। হেলাফেলা...! হিম শিতল কোন বাতাস বয়ে যায় দেহের দক্ষিণাঞ্চলে! অস্ফুট ভাবে বিদেশি ভাষায় একটা গালি বের হয়ে আসে ভোকালকর্ড পেরিয়ে। খাটো হয়ে আসে নিঃশ্বাস, সজোরে শ্বাস টেনেও ফুসফুস পুর্ন যাচ্ছেনা। নাসিকা রন্ধ্র শুকনো তামাকের ঘ্রান শুকতে চায়। ছ্যাত...! এক ঘষায় ম্যাচের কাঠিতে অগ্নিসংযোগ ঘটে। ঠোঁটের কোনে ধরে থাকা ধুম্র শলাকার অগ্রভাগের কাছে যেতেই সেই অগ্নিকুন্ডুলিকে টেনে নেয় শলাকার ভেতর দিয়ে মুখ গহ্বরে প্রবেশমান বায়ুচাপ! প্রতিটি টান একটু একটু করে পুড়তে থাকে নিষ্প্রভ নিউরোনজাত বাসনার সুখ। চকচকে অ্যাশট্রে তে একটু একটু করে ধূসর সমাধি গড়ে ওঠে! বাসনা পোড়া শেষে সমাধির উপরেই ধুম্র শলাকার উচ্ছিষ্ট উপুড় করে গুজে দিই। বাহ! শলাকাটা যেন ধূসর সামাধিতে মুখ থুবড়ে মুষড়ে পড়া ফুল!
(বন্ধু রিয়েল ডেমোন কে উৎসর্গ করা হয়েছিল)

''খেলাঃ একজন লাস্যময়ী বনাম একজন ভদ্দরলোক''
অবাক রাত্রি ভ্রমনে দেখা মিলল লাস্যময়ী যুবতীর সাথে। ভদ্দরলোকেরা যেন কি নামে ডাকে তাদের? ওহ! হা- নিশীথিনী। পরিপাটি চুল দেখেই বোঝা যায় তেলে চিটচিটে হয়ে আছে। হলুদ চুলের ফিতা আর ঠোঁটে খ্যাত রঙা লাল ঠোঁটপলিশ! ভদ্দরলোকেরা দিনের আলোতে ভদ্র! দিনের বেলায় হলুদ ফিতা, লাল ঠোঁটপলিশ তাদের কাছে খ্যাত লাগে। রাত হলেই ভদ্দরলোকের ভদ্রতা উবে যায়। সস্তা পাউডারেই যেন খুঁজে কাম প্রসাধন! রঙ্গলীলা শেষে আবার খোলসে ঢুকে পড়ে ভোরের আলো ফুটবার আগেই। কেউ দেখে ফেলল না তো! সচকিত চোখে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে- নাহ! কেউ দেখেনি। যুবতীর কোন খোলস নেই, দিনে রাতে সব সময় একই রকম। সেই লাস্যময়ী আর ভদ্দরলোক খদ্দেরের মধ্যে মিল কোথায় জানেন?
যেই বদ্দরলকের কাছে দিনের আলোতে লাস্যময়ী খ্যাত উপাধি পায়, সেই লাস্যময়ীর কাছে ভদ্দরলোকটি খ্যাত উপাধি পায় রাতের আধারে।
একজন খোলসে আবৃত থাকেন আরেকজন খোলস ছাড়া। যুবতীর কাছে পরাজিত হয় তথাকথিত কাপুরুষ ভদ্দরলোক! পরাজয়টা যুবতীর কুমারীত্বের কাছে ভদ্দোরলোকের মনুষ্যত্বের!
________________________________________
এই সিরিজের ১ম লেখাঃঘুমচোখকল্প-১
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১২ রাত ১:০১