রুনুর সুইসাইড নোট
এক
কিছু ভাগ্যাহত অথবা ভাগ্যবান ছাড়া প্রত্যেকের জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে একটা অদ্ভূত অবস্থা এসে দরজায় কড়া নাড়ে। পর্যায় না বলে যেকোন সময়েই বলাটা অধিক যুক্তিযুক্ত।
অবস্থাটার নাম "হোয়াই মী স্টেজ"।
রুঢ় বাস্তবতা হল, এটা দুঃখের একটা পর্যায়। হোয়াই মী স্টেজে কোন সুখানুভূতি থাকেনা। ভেজা কাপড় নিংড়ানোর পরেও কোন বলবান হাত হয়তো মুচড়িয়ে দুফোটা পানি আবিষ্কার করতে পারে, কিন্তু হোয়াই মীতে শতচেষ্টা করেও এক রত্তির সুখানুভূতি দেখার সম্ভাবনা শূণ্য। আদতে ঐরকম প্রয়াস চালানোও পুরোপুরি অর্থহীন, কোন কোন ক্ষেত্রে হাস্যকরও বটে। এখানে বেশ কয়েকটা কাজ করা যেত পারে।
এক, ব্যাপারটাকে উপভোগ্য করার ব্যবস্থা করা।
দুই, Que sera sera=whatever will be will be.
হাস্যকর ব্যাপার হল, দ্বিতীয় উপায়টা বেছে নিতে পারার মানে হোয়াই মী কাটিয়ে উঠতে পারা। ব্যপারটা মুখে এক অন্তরে আরেক।
এই অবস্থার মুখোমুখি হতে দেখেছি তারেককে।
প্রথম উপায়টাও বেছে নিয়েছিল অল্পকিছু সময়ের জন্য। সময়টাকে উপভোগ্য করে তোলা হয়েছিল কিছু দেশীয়, ভিনদেশি উৎকট তরল এবং ধুম্রশলাকা সহযোগে।
চিত্রকর্মের শখও জেগেছিল তার তখনই।
আরে এটা কোন ব্যাপারই না, এমনটাতো হয়ই এরকম সস্তা কিছু শান্তনা বাণী আউড়িয়ে নিজেকে প্রবোধ দেয়ার চেষ্টায় লিপ্ত থাকত সারাক্ষণ। তাতে যে কোন ফল পাচ্ছিল না তা না, তবে ফলাফল হতাশাজনক। ক্লান্ত হয়ে আসারপরও ঘুমদেবী তার সাথে যোগাযোগ করার কোন চেষ্টা করছে না। তুচ্ছতাচ্ছিল্যভরে অথবা বেখেয়ালে ঘুম পাঠাতে ভুলে যায় অনেকটা সময় পর্যন্ত। কোন একটা মাধ্যমের সাহায্য নিয়ে অল্পকিছু ঘুম নিয়ে আসতে পারে সে। তবেও তাও খুব অল্পসময়ের জন্য।
ঘুমদেবী ভুলে গেলেও স্বপ্নদেবতা তাকে একমুহুর্তের জন্যও ভুলতে চাচ্ছে না। ভয়ংকর লাল রক্তাক্ত চোখে এসে হাজির হয় হঠাতই। তারেকের ঘুম ভেঙ্গে যায়। উঠেই জানালার কপাট সক্রোধে বন্ধ করে, জানালায় একপাশে গুজে রাখা পর্দাটা টেনে দেয় ভীষণ আক্রোশে। আরো নিশ্চিত হওয়ার জন্য উল্টোপাশে ফিরে শুয়ে চোখ বন্ধ করে। ঝিম মেরে পড়ে থাকে একলা ঘরটায়। তার নির্ঘুম, বন্ধ চোখের ব্যাপারটা বোধহয় টের পায় স্বপ্নদেবতা। অন্তত জানালা এবং সাদা দেয়ালে প্রবল রোদ সেটাই জানান দেয় দিনভর।
শেষবেলায় সূর্য অস্তমিত হবার পরেই জানালাটা খুলে দেয়া হয়, পর্দা সরিয়ে রেখে হতাশ চোখে অন্ধকার দেখে। অসীম পর্যন্ত, অথবা কে জানে তার চেয়েও আরও দূর বিস্তৃত কালো অন্ধকারকে তার মনে হয় একটা অন্তহীন বিশাল সমুদ্র। যেখানে কোন ঢেউ নেই, কোন সুর নেই, নেই মিষ্টি সমীরণ, লুকায়িত কোন সত্য নেই, যা কেউ কখনো আবিষ্কারের প্রয়োজনও নেই। এই সমুদ্রের কোন সম্মোহনী শক্তিও এতদিন ছিল না তবে আজকাল মনে হয় কিছুটা সম্মোহিত করার শক্তি জুটিয়েছে নচ্ছার অন্ধকারটা।
শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করে। তাকিয়ে থাকেও সে। ক্লান্ত চোখে ক্লান্তিহীনতার ভান করে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একসময় শুয়ে পড়ে। ব্যস্ত ঘুমদেবীকে বার্তা পাঠায় ছোট ছোট কয়েকটা বটিকা পেটের মধ্যে চালান করে দিয়ে। ঘুমদেবী সাড়া দেয় তার পিছন পিছন হতচ্ছড়া স্বপ্নদেবতাও এসে পড়ে কোত্থেকে যেন।
তারেককে নিয়ে চলে যেতে চায় কোন তুষাররাজ্য। যেতে অনীহা প্রকাশ করলেও তাতে কোন লাভ হয় না। একপ্রকার জোরপূর্বক নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। ব্যাপারটাকে আরও অসহনীয় করে তুলতেই যেন একদলা বরফকণা ছুড়ে মারে কেউ একজন।
ধড়ফড় করে উঠে বসে সে। জানালা গলে বৃষ্টির ছাট ঢুকে পড়তে দেখে অবাক হয়। নাহ, তাহলে অবাক হবার ক্ষমতা পুরোপুরি চলে যায়নি তার। অবাক চোখে বৃষ্টি দেখে। স্মৃতি হাতড়ায় কোন ফেলে আসা বৃষ্টিদিনের।
স্মৃতির প্রায় পুরো অংশজুড়েই থাকে দুটো মায়াময় চোখ। যে চোখে ঘৃণাগ্নি জ্বলতে দেখেছে সে। ভাবতেই গা গুলিয়ে উঠে আবার। জানালার কপাট বন্ধ হয়, পর্দায় ঢেকে নিশ্চিত দেয়াল তুলে দেয়া হয় বৃষ্টি আর দৃষ্টির মাঝখানে।
দুই
আজকে অবস্থার কিছুটা উন্নতি ঘটেছে বলেই মনে হয়। সন্ধ্যা হবে হবে এমন একটা সময়, ঘরে অন্ধকার প্রবেশ করার তাল গুনছে। তারেকের হাতে একটা গ্লাস, গ্লাসের মধ্যে কিছু আছে কি নেই বোঝা যাচ্ছে না। সে বসে আছে জানালার দিকে মুখ করে। তাকে দেখাচ্ছে মূর্তির মত।
-কিরে চুদির ভাই কোন খোজ খবর নাই ক্যান?
গলা শুনেই চমকে পিছনে তাকাল তারেক। সুইচবোর্ড হাতড়ে লাইট জ্বালিয়ে আমিও চমকে উঠলাম। উস্কখুস্ক চুল, মনে হ্য় বেশ কয়েকদিন হাত দেয়া হয় নি। চোখ জমাট বাধা রক্তের মত লাল, দেখলেই ভয় ভয় লাগে।
-কিরে তুই কি অসুস্থ? তোরেতো এইডস রোগীর মত দ্যাখা যাইতাসে। কি হৈসে?
কোন জবাব পাবার আশা করি নি অবশ্য। কিছুদিন আগেই তার সাথে একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবুও সৌজন্যতা বলে কথা, একটু আধটু আন্তরিকতা যে নেই তাও বলা যাবে না। তারেক স্কুল জীবনের বন্ধু।
আমাকে দেখা মাত্রই, গ্লাসটা লুকিয়ে ফেলল। শুকনো মুখে বলল, কিছু না ভালই আছি।
কাছে গিয়ে বসতে বসতেই খেয়াল করলাম হাতের বিভিন্ন জায়গায় কাটা দাগ। সাধারন ব্লেডের, দেখেই আমার গা গুলিয়ে উঠলো। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত কষ্টগুলো হয়ত বের করে দিতে চেয়েছিল নয়ত মানসিক যন্ত্রণা দেহের মধ্য দিয়ে ভুলে থাকার চেষ্টা। অনেক ভেবেও পেলাম না, মানুষ এইসব পারে কিভাবে?
অনেকক্ষণ খুটিয়ে খুচিয়ে প্রশ্ন করার চেষ্টা করলাম, অতি অবশ্যই বৃথা চেষ্টা।
ডাক্তার দেখা, আমার পরিচিত সাইকোলজিস্ট আছে। চল?
তারেক হাসি হাসি মুখ করে বলল, হুদাই পাগলের ডাক্তার দেখামু ক্যান।
আমিও দেখলাম যুক্তিযুক্ত কথা।
-তাইলে থাক বৈসা, আর এইসব বালছাল খাওয়া ছাড়। যা দেখতাসি বাজারেতো কিছুদিন পরে আর ব্লেড খুইজা পামু না, এইগুলা এইবার বন্ধ কর। এইসবের আর ফায়দা কি।
তারেক শূণ্যচোখে জানালার দিকে তাকিয়ে বলল, Que sera sera!
আমি হাল ছেড়ে দিয়ে চলে আসি। এই সময় একটু আধটু এমন হবেই, সময় যাক ঠিক হয়ে যাবে। মনে মনে নিজেকে প্রবোধ দেই।
আসতে আসতে এইসব চিন্তা করছিলাম। ব্যাপারটা নিয়ে বান্ধবীর সাথেও আলোচনা করা হল। তারও একই মত, সময় গেলেই ঠিক হয়ে যাবে।
সেদিনই তারেকের সাথে আমার শেষ দেখা। সপ্তাহখানিক পরে তারেকের মৃত্যুর খবর পেয়েছিলাম। আত্মহত্যার কেইস। অল্পকিছুলোকের উপস্থিতিতে শেষকৃত্যানুষ্ঠান সম্পন্ন হল।
তবে আমার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু ছিল সুইসাইড নোট। সেটা পাওয়া গেল না। পুলিশ আলামত হিসেবে গায়েব করে দিয়েছে।
তিন
ছুটির দিনগুলোর অলিখিত নিয়ম হল অস্বাভাবিক ব্যস্ততা। পরিবার ব্যবস্থাপনার কাজগুলোর পাশাপাশি প্রায়ই দুপুর বেলায় নিমন্ত্রণজনিত ব্যস্ততা এবং সামাজিকতা রক্ষা করার প্রত্যয়ে সেগুলোতে উপস্থিত হওয়াটা প্রায়ই বাধ্যতামূলক হয়ে দাড়ায়। অনীহাস্বত্তেও হাসি হাসি মুখ করে সেগুলোতে পরিবারের সদস্যসমেত উপস্থিত হতে হয়। পরিচিত, অর্ধপরিচিত অথবা নিতান্তই অপরিচিতদের সাথে কুশল বিনিময় করে তবেই সামাজিকতা রক্ষা করতে হয়। শেষপর্বে থাকে উচ্চফ্যাটযুক্ত কিছু অখাদ্য গলাধকরণ প্রক্রিয়া। তারপর বিদায়ক্ষণ যখন উপস্থিত হয় তখন কোন আবেগঘন দৃশ্যের অবতারণা ঘটে না। বরং এরকম দমবন্ধ পরিবেশ থেকে মুক্তির যেন চাপা একটা আনন্দ থাকে সবার মধ্যে। তবে আমি আনন্দিত হই না বরং বিকেলবেলার ঘুমের সময়টা পেরিয়ে যাওয়ায় এবং অখাদ্য ভক্ষণ পরবর্তী সময়টাতে শরীরে ভর করে অবসন্ন একটা ভাব।
-ঘরে বাজার নাই। ছুটি পাইসো যাও বাজারে যাও।
প্রাতঃরাশ পূর্বে দৈনিক পত্রিকা হাতে নিয়া বসতেই তাগাদা দিল আমার স্ত্রী রুনু। আমি মোটেও ভ্রুক্ষেপ না করে দৈনিক পত্রিকায় মনঃসংযোগের চেষ্টা চালিয়ে গেলাম।
-কি হৈল? এমনে বৈয়া থাকবা নাকি। যাওনা। দুপুরে আবার সীমির মামাত বোনের বিয়া, ঐখানে যাইতে হইবতো।
কিছুক্ষণ পরপরই এমন তাগাদা পেয়ে পেয়ে বিরক্তির মাত্রা বাড়ছিল, কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না, শুধু বিরক্তি। সব স্ত্রীলোকদেরই কি অনর্গল বকে যাওয়ার এমন অদ্ভূত ক্ষমতা থাকে? হয়তো থাকে না নয়তো কে জানে থাকতেও পারে।
-বালের বাজার।
হয়তো প্রত্যহিক ব্যস্ততা নয়তো সীমির চাচাত মামাত বোনের বিবাহ অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার উত্তেজনায় আমার কথায় কর্নপাত করলো না। ব্যাগ হাতে ধরিয়ে দিল।
বেরিয়েই বুঝলাম ছোট্ট একটা ভুল করেছি। সেলফোনটা ফেলে এসেছি। রুনুর ইদানিং বদ অভ্যাস হয়েছে। আমার ফোন নিয়ে বসে বসে গেমস খেলে। সেদিন ইশিতা কে? জিজ্ঞেস করলো।
আমার কলিগ, এতটুকু বলেই দায়িত্ব শেষ করেছি। তারপরে অবশ্য আরও প্রশ্নের সম্মুখীন হব ভেবেছিলাম। ভাগ্য ভাল তা আর হয় নি। ইশিতা কখনোই আমাকে কল করে না, শুধু মেসেজ। মেসেজগুলো কী রুনু পড়েছে? পড়লেও কিছু বুঝতে পারারতো কথা না। অথবা বুঝেও না বুঝার ভান করে আছে। কে জানে।
চার
দুপুরবেলায় প্রচন্ড রোদের সমুদ্র পারি দিয়ে যখন কমিউনিটি সেন্টার নামক একটা বন্দীশালায় পৌছলাম ততক্ষণে দুপুর অনেক গড়িয়েছে। পরিচিত বেশ কয়েকজনকে দেখা গেল তারমধ্যে একজন হলে তারেকের হারিয়ে যাওযা প্রেমিকা। তারেক, বছর পাঁচেক আগে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। কি এক ভয়ানক মানসিক যন্ত্রণাই বেচারা পোহিয়েছিল মৃত্যুর আগে।
মেয়েটার সাথে হাসিমুখে কুশল বিনিময়পর্ব শেষ হবার পরে আমার ভিতরে খচখচানি শুরু হল। আরও কিছু জটলায় কয়েক পর্ব কুশল বিনিময়ের পরেও খচখচানি বন্ধ হল না। বরং মনে হচ্ছে বেড়েই চলেছিল। রুনু মেয়েদের দলে বেশ ব্যস্ত হয় পড়লো আর আমি এক কোণে দেখে বসে থাকলাম। তারেকের মৃত্যুতে প্রকৃতপক্ষে খুব একটা কষ্টের অনুভূতি যে হয়েছিল তা না। বরং তার মৃত্যুর পরে আমার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে যা ছিল তার নাম সুইসাইড নোট। এমনটা কেন হয়েছিল তার একটা যুতসই কারণ বের করা উচিত। পরিসংখ্যান কখনোই পুরোপুরি সত্য হয় না আবার সম্পূর্ণ মিথ্যাও হয় না। পরিসংখ্যান হলো সত্যের কাছাকাছি এবং একইসঙ্গে মিথ্যার কাছাকাছি একটা বিষয়। সত্যও না আবার মিথ্যাও না। একটা পরিসংখ্যানের ফলাফলে দেখে গিয়েছে নতুন নতুন প্রেমে পড়া যুগলদের মধ্যে চারপাশের ঘটে যাওয়া নিরীহ অথবা ভয়ংকর ঘটনাবলীর প্রভাব থাকে সাধারণ মাত্রার চেয়ে কম। যদি এই পরিসংখ্যান সত্য হয় তবে তারেকের মৃত্যু খুব একটা দুঃখের কারণ না হওয়াটাই যুক্তিযুক্ত। তবে এই যুক্তি বড্ড বেশি ঠুনকো মনে হল। ভাবতে হবে, ব্যাপারটা নিয়ে আরও ঠান্ডা মাথায় ভাবতে হবে।
পাঁচ
প্রাত্যহিক ব্যস্ততার নিয়মের ফেসে গিয়ে তারেক বিষয়ক সব ভাবনা চিন্তা ঐ বাকীর খাতাতেই তোলা রইল। আঠারই সেপ্টেম্বরের আসতে আর মাত্র দুদিন বাকী। আমার আর রুনুর বিবাহবার্ষিকী। ভাবছিলাম চমকপ্রদ কিছু একটা করে রুনুকে চমকে দিব। কিন্তু যুতসই কোন পরিকল্পনাই করতে পারছিলাম না। কথায় কথায় ইশিতাকে জানিয়েছিলাম। আর তখনই সে সন্ধান দেয় একজন শখের শিল্পীর। যে কিনা নতুন আঙ্গিকে মনোমুগ্ধকর সব শোপিস বানাতে সিদ্ধহস্ত। তাজমহল টাইপের কিছু একটা বানিয়ে উপহার হিসাবে চালিয়ে দেয়ার উপদেশ দেয় ইশিতা। ব্যাপারটা যদিও আমার কাছে তেমন কৌতূহলোদ্দীপক মনে হলো না তবুও রাজি হয়ে গেলাম। দেখিনা ব্যাপারটা কেমন হয়? আঠার তারিখ সন্ধ্যা, বিকালে অল্প বৃষ্টির কারণে আজকের সন্ধ্যাটা একটু বেশিই ভৌতিক। অন্ধকার নেমে গেছে দ্রুতই। ফ্ল্যাটের দরজায় হাত রাখতেই দরজা খুলে গেল। দরজাতো বন্ধ থাকার কথা এই সময়।ঘরের পরিবেশটাই হঠাত করে কেন জানি গুমোট ঠেকল। নাকি আবহাওয়ার প্রভাব ঠিক বুঝা যাচ্ছে না। বেডরুমের বাতি নেভানো। হঠাত করেই আমার মনে হলো দরজা খুলেই হয়তো ভয়ংকর কোন দৃশ্য দেখতে পাব। হয়তো দেখা যাবে তেমন কিছুই না, কোন কারণে ক্লান্ত তাই বাতি নিভিয়ে রুনু শুয়ে আছে। এমনিতেও সারাদিন ঘরে বসে থাকলে সব ক্লান্তি ভর করে এই সন্ধ্যাবেলায়ই। প্রায়ই রুনু সন্ধ্যায় বাতি নিভিয়ে অন্ধকার ঘরে শুয়ে থাকে। আজকে হয়তোবা একটু বেশিই পরিশ্রম করেছে। ড্রয়িং রুমের টি টেবিলের উপর একটা বড় প্যাকেট। প্যাকেটের ভিতর কি আছে আমি জানি। প্যাকেট থেকে তাজমহল টাইপের একটা আদল বেরিয়ে এল। দেখতে খুব একটা খারাপ হয় নি। বিদ্যুত সংযোগ দেয়ার পর আমি নিজেই মুগ্ধ হয়ে গেলাম। একটা হালকা নীল আলো পুরো শোপিস থেকে, এই আলোর বোধহয় সম্মোহনী শক্তি আছে। তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।
রুনু ব্যাপারটা দেখে কেমন আনন্দিত হবে ভাবতেই ভালো লাগছে।
বেডরুমে ঢুকে যা দেখলাম তার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। বিষ্ময়ের ঘোর ঠিক কবে কেটেছিল আজ আর মনে নেই। আঠার তারিখের কথা মনে পড়লেই চোখের সামনে ভেসে আসে ফ্লোরে কাত হয়ে পড়ে থাকা একটা চেয়ার আর ঠিক তার একটু উপরেই শূন্যে ভেসে থাকা এক জোড়া পা।
ছয়
বাইরে থেকে কারাগারের পরিবেশ যতটা দমবন্ধ আর গুমোট মনে হয় আদতে ততটা নয়। বরং অনেকাংশেই সুশৃঙ্খল। ঘুম থেকে উঠবার পরই বিভিন্নমেয়াদে শাস্তিপ্রাপ্ত সবাই যার যার কাজে লেগে পড়ে। এখানে ভিতরেই তারা গড়ে তুলেছে নিজস্ব পৃথিবী। তবে ভয়ংকর একাকীত্বে গ্রাস করে রাখে আমাকে। তারেক বিষয়ে ভাবনার জন্য এক সময় কোন ফুরসত্ই ছিল না। এখন পর্যাপ্ত সময় কিন্তু আমি কিছুই ভাবছি না। চব্বিশ ঘন্টা একটা প্রায় অন্ধকার উত্কযট গন্ধময় কারাকক্ষে থেকে থেকে ভাববার ক্ষমতাই হয়তো নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
একমাস অন্তর অন্তর নিরাপত্তাবেষ্টিত হয়ে হাজির হতে হয় আদালত প্রাঙ্গণে। তখন আত্মীয়দের কেউ কেউ হাজির হয় এক পলক দেখতে অথবা দুয়েকটা কথা বলতে। আমি অর্থহীন চোখে তাকিয়ে শুনে যাই।
তীব্র মানষিক যন্ত্রণা দিয়ে স্ত্রী হত্যার দায়ে আমাকে দোষী সাব্যস্ত করতে গলদঘর্ম আইনজীবিকে দেখি।
কাঠগড়া বিষয়ক যেসব ফ্যান্টাসি সিনেমার পর্দায় দেখে দেখে আমরা অভ্যস্ত তেমন কিছুই এখানে হয় না। ম্যাজিস্ট্রেট অথবা বিচারকের দিকে তাকিয়ে শুধু দু'একটা বাক্য বিড়বিড় করে বলতে হয়। সেই বাক্যও আবার উকিলের শিখিয়ে দেয়া।
আমার চিত্কাকর করে বলতে ইচ্ছে হয়, আমিই হন্তারক, শাস্তি কার্যকর করে মুক্তি দাও দুঃসহ যন্ত্রণা থেকে। হৃদযন্ত্র প্রদত্ত শাস্তি ভোগ করতে করতে আমি ক্লান্ত!
কোন একটা কারণে এই শব্দগুলো ঠিকঠাক কারো শ্রবণকম্পাংকে পৌছে দিতে পারি না। দলা পাকিয়ে আটকে থাকে গলার নিচে।
আর আমার চোখ খুজে বেড়ায় রুনুর সুইসাইড নোট।
জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা
বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আত্মপোলব্ধি......
আত্মপোলব্ধি......
একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !
হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।
আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।
আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন