প্রিয় পত্রলেখিকা
কেমন আছো?
ধুর বোরিং প্রশ্ন। প্রত্যেকবারই চিঠি লিখতে বসলে এই লাইনটা ছাড়া কিছু মাথায় আসে না। অবশ্য এই যুগে চিঠি লিখা। ভাবতেই কেমন কেমন লাগে। বেশ কিছুদিন ধরে চিঠিটা লিখব লিখব করেও লিখা হচ্ছে না।
এখন বাজে নয়টার মত। আজরাতে যে করেই হোক চিঠিটা শেষ করব।
পত্রের প্রথমেই....
-সাজ্জাদ ভাইয়া
পাশের রুমের হাসান এসে রুমমেট সাজ্জাদকে ডাকলো। একটা ব্যাপার হলো কোন কাজ মনোযোগ দিয়ে করার সময় কেউ না কেউ বাধা দিবেই। রুমে কোন শব্দ আমি সহ্য করতে পারি না। সবসময় পিনপতন নীরবতা দরকার। পিনপতন নীরবতা মানে হল
সিলিং ফ্যানের একটানা খটখট শব্দ
একটু পরপর লাইটার বা ম্যাচ জালানোর মধুর শব্দ
গান বা সিনেমার শব্দ
মাঝে মাঝে পাশের ফ্ল্যাট থেকে ভেসে আসা সদ্য টিনএজে পড়া মেয়েটার উচ্চকন্ঠে বাজানো লুতুপুতু গানের শব্দ।
যার মধ্যে সাজ্জাদ ভাইয়া শব্দটা নেই।
যে ডাকছে তার নাম হাসান। নিশ্চয় মেস সংক্রান্ত কোন অভিযোগ নিয়ে আসছে। প্রায়ই আসে বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে। এসেই সাজ্জাদকে ডাকে।
-কি হৈসে বল। বলে দ্রুত রুম ত্যাগ কর!
সাজ্জাদ ধমক দিতে একমুহুর্তও দেরী করে না।
কিন্তু মাঝখান থেকে আমি পড়ে গেলাম সমস্যায়। চিঠিতে লিখার জন্য যে কয়েকটা লাইন মাথায় ঘুরাঘুরি করছিল সেগুলো আর খুজে পেলাম না। একেবারেই গুরুত্বহীন একটা লোক এর জন্য দায়ী। ধুর!
আবার লিখতে শুরু করলাম।
আজকে সকালে কি হইসে জানো?
এই লাইন চিঠিতে লিখার কোন মানে হয়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কি কি করি সবই পত্রলেখিকা জানে। তাহলে কি লিখব। এখন চিঠি লিখাটা একটা বিরাট শাস্তি মনে হচ্ছে। একটা কবিতা কি লিখে ফেলব?
না কবিতা লিখা আমার কাজ না। ধার করা কবিতা দিয়ে অবশ্য চালানো যায়। তবে অবশ্যই ঠিক জায়গায় ঠিক শব্দ থাকতে হবে। একটা সিগারেট ধরিয়ে চিন্তিতমুখে বসে আছি আর ভাবছি কি লিখা যায় চিঠিতে।
সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন, সন্ধ্যা আসে
ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল
আমার মাথায় হাজার পোকা করে কিলবিল
এইসব লাইন দেখামাত্র আমার উপর দিয়ে ঝড় বয়ে যাবার সম্ভাবনার কথা চিন্তা করে বাদ দিলাম।
-সাজ্জাদ ভাইয়া। আপনি ইমতিয়াজকে কিছু বলবেন না?
কিছুক্ষণ পর আবার হাসানের ক্রোধান্বিত চিত্কানর।
একটু নড়েচড়ে বসলাম। তারমানে অন্তর্রুমীয় কোন্দল। সিনিয়রদের কাছে বিচার নিয়া আসছে। সাজ্জাদ কিছুই শুনতে পায় নি তার কানে বিরাট হেডফোন সামনে পি সি।
আমি বলতে গেলাম, অবশ্যই বিচার হবে কঠিন বিচার। এরমধ্যেই হাসান দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেল এবং বেশ কিছু অনাকাঙ্খিত শব্দ শুনতে পেলাম।
রুমমেটদের মধ্যকার শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাঝখানে বাধা দেয়াটা কি ঠিক হবে?
সাজ্জাদকে ধাক্কা দিয়ে উঠালাম। ঝড় পরবর্তী দৃশ্যের মঞ্চে কুশীলবের ভুমিকায় অবতীর্ন হবার মহান ব্রত নিয়ে উপস্থিত সবাই।
নিচ থেকে দারোয়ান চলে এসেছে বাকবিতন্ডা ও ধ্বস্তাধস্তির শব্দে। আশপাশের ফ্ল্যাটে বসবাসকারী শান্তিপ্রিয় জনগণ কিরুপ উষ্মা প্রকাশ করেছে তাও জানিয়ে গেল আমাদের।
উদাস ভঙ্গিতে সিগারেটের ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে পরিবেশ একটু শান্ত হবার অপেক্ষা করলাম।
যত কঠিন ঝড় তত দ্রুতই শান্ত হবে। সচরাচর এমনটাই হয়। আজও এর বাত্যয় ঘটলো না।
এখন পরিবেশ ঠান্ডা।
দুটোকেই ঘাড় ধরে বের করে দিব নাকি মেস থেকে?
নাহ এতরাতে ব্যাপারটা অমানবিক দেখায়।
যথাসম্ভব কঠিন গলায় কিছু নির্দেশ জারি করলাম। এটাই শেষ মাস তোমাদের। পরবর্তী মাসের একতারিখ থেকে দুজনের কাউকেই যেন এখানে দেখতে না পাই।
সাথে সাথে এও বলে দিলাম, অন্য কেউ যদি দোষী দুইজনের ব্যাপারে কোন কথা বলতে আসে তাকেও অন্য কোন জায়গায় চলে যেতে হবে। কেউ কোন কথা বলল না। এত সহজে মেনে নিলেও তো সমস্যা। ব্যাপারটা ঠিক জমল না।
প্রত্যক্ষদর্শী এবং দোষীদের কাছ থেকে ঘটনার বর্ণনা আবারও শুনলাম।
-ভাইয়া আপনি জানেন না ও আমার মা বাপ তুলে কথা বলসে? যেখানে মা বাপ তুলে কথা হয় ঐখানে আমি চুপ থাকি কেমনে?
সাজ্জাদ ততোধিক রেগে বলল, কুত্তার বাচ্চা শুয়রের বাচ্চা বলসে তোমারে?
আমি আর তন্ময় এই ধরনের কথা শুনে অতি কষ্টে হাসি চেপে রাখলাম। আমাদের রুমে তিনজন থাকি। আমি, সাজ্জাদ আর তন্ময়। সাজ্জাদ ততক্ষণে রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছে।
রাত দেড়টার মত বাজে। আমি আবার চিঠিতে মনোযোগ দিলাম।
জানো আজকে কি হইসে? জানবা কেমনে? আমিতো বলি নাই। আজকে মীম ফোন করসিল। ঐযে একা মেয়েটা, অনেকদিন পরপর ফোন করে। তার বিএফ এর সাথে কোন ঝামেলা হলেই ফোন করে। আজকেও নাকি কি ঝামেলা হৈসে। আমি অবশ্য ব্যস্ত ছিলাম ঠিকমত শুনতে পারি নাই। আচ্ছা তোমার খবর....
এই পর্যায়ে এসে আবারও বাধা পড়লো চিঠি লিখায়। এখন সব ধরনের ঝড় ঘুমিয়ে পড়েছে। সাজ্জাদ ল্যাপটপের কুলারের স্ক্রু খুলে পরিষ্কার করায় ব্যস্ত। তন্ময় আর আমি হাসান ও ইমতিয়াজ ঝড়ের পোস্ট মর্টেমের কাজে নেমে পড়লাম।
-কিরে তন্ময় তোর স্ক্রু তো দেখি সব খুইলা গেসে?
তন্ময় যতটা সম্ভব গম্ভীর মুখে বলল,
-কি? আপনে আমার স্ক্রু লইয়া কথা কৈসেন? যেখানে আমার স্ক্রু নিয়া কথা হয় ঐখানে আমি চুপ থাকতে পারি না।
তিনজনই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ি। সিরিয়াস টাইপের একটা ঝড়ের মধ্য থেকেও হাস্যরসাত্মক উপকরণ আহরণ করি।
এখন গভীর রাত। ঘুমানো প্রয়োজন। কালকে অফ ডে বলেই আজকে এখনো কেউ ঘুমাচ্ছি না। এদিকে চিঠিটাও শেষ করতে পারছি না। আবারও চিঠি নিয়ে বসলাম। আজ ঘুমানোর আগেই চিঠি লিখা শেষ করব।
তুমিতো আজকাল আমার কোন কথাই মনোযোগ দিয়ে শোন না............