somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসাদের জন্য ভালোবাসা (শেষ পর্ব)

২৯ শে মে, ২০১১ বিকাল ৩:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রথম পর্ব

দ্বিতীয় পর্ব

তৃতীয় পর্ব


অধ্যয়ণে গিয়ে দেখি তুষার ভাই ছাত্র পড়াচ্ছেন।

--তুষার ভাই,আপনার সাথে কিছু কথা ছিল।
--আমি জানি নীতু তুমি কি জানতে এসেছ। কয়েকদিন ধরে সবাই খালি আমার কাছে এটা জানতে চায়।
--কথা কি তাহলে সত্য? আপনারা রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন? সাম্যবাদের রাজনীতি? সমাজের অন্যায় মুছে দিবেন?
--সব দেখি শুনেই এসেছ নীতু। যা শুনে এসেছ সত্য।
--আসাদ ও আছে এসবের মধ্যে?
--হ্যাঁ। সবার অগ্রভাগেই আছে। আসাদের থাকতে হবেই। ওর মত ছেলেরাই দেশের ভব্যিষৎ।
--আমি আসাদকে এর মধ্যে জড়াতে দিবনা।
--সেটা তোমার আর আসাদের ব্যাপার। কথা বলে নিও ওর সাথে। পারলে ফিরাও। আসাদ এখানেই আছে। পোষ্টারের কাজ করছে। বিদ্রোহ শুরু হবে। অন্যায় আর নষ্ট রাজনীতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ।
--দয়া করে আমার সামনে লেকচার বন্ধ করেন তুষার ভাই।


আসাদ যে ঘরে কাজ করছিল সেখানে ঢুকে দেখি আমাদের পাড়ার আরো অনেক ছেলে সেখানে আছে। ইমন,আসিফ,পিকলু ভাই,হায়দার। সব গুলো ইয়াং ছেলেকে তুষার ভাই দলে টেনেছেন।

--আসাদ একটু বাইরে আসবি?
--নীতু! কেমন আছিস? কাজ করছি যে এখন! আমি বিকালের দিকে তোর বাড়ি যাব।
--তুই এখন,এই মুহুর্তে বাইরে আসবি।

আমার কন্ঠস্বরে খুব সম্ভবত কিছু একটা ছিল। আসাদ হাতে একটা মার্কস এর বই নিয়ে বাইরে বের হয়ে এল। আজকের সকালটা কেমন জানি বিষন্ন।

--আসাদ,তুষার ভাইয়ের থেকে সব শুনলাম। প্লীজ তুই এইসব রাজনীতি-ফাজনীতির মধ্যে যাসনা। প্লীজ।
--সেটা হয়না নীতু।
--কেন হয়না?
--প্রথম কথা,তুষার ভাইয়ের ঋণ আমাকে যেভাবেই হোক শোধ করতে হবে। উনি যা বলবেন আমাকে শুনতে হবে। আর দ্বিতীয় কথা...
--দ্বিতীয় কথা?
--দ্বিতীয় কথা হচ্ছে আমাদের এখন প্রতিবাদী হ্‌ওয়ার সময় এসেছে। শুধু নারায়নগঞ্জ না,সারা বাংলাদেশেই এখন সাধারণ মানুষ,গরীব মানুষের উপর শোষণ চলছে। এটা একদিনে বন্ধ হবেনা। প্রতিবাদ দরকার। সেটা নারায়নগঞ্জ থেকেই আমরা শুরু করব। আমাদের দাবী-দাওয়া গুলো আদায় করব।
--পাকা রাজনৈতিক নেতা হয়ে গেছিস দেখি? তিন মাস ঢাকায় থেকেই তুই এত বদলি গেলি আসাদ? এত ব্রেইন ওয়াশ হল কিভাবে?
--তুই আর কিছু বলবি নীতু?
--হ্যাঁ। বলব। আমি তোকে এসবের মধ্যে জড়াতে দিবনা। নারায়নগঞ্জে আমি অনেক বছর ধরে আছি। আমি জানি এখানকার রাজনীতি খুব খারাপ। মানুষ মারা রাজনীতি।
--আমার জীবন। আমি যা ইচ্ছা তাই করব। তুই এর মধ্যে কথা বলার কে?
--আমি কেউ না আসাদ?
--না।


আমি প্রথমে আসাদের হাত থেকে মার্কস এর সাম্যবাদের বইটা নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিলাম। তারপর সপাটে আসাদের গালে একটা চড় বসিয়ে তীব্র গলায় বললাম,"আমি যদি কেউ না-ই হয়ে থাকি,তাহলে তুই ও আমার কেউ না। আমি ভুল করেছি। আমি একটা ভুল মানুষকে প্রচন্ড ভালোবেসেছি।"

কথাগুলো বলতে গিয়ে নিজেকে সামলাতে পারলাম না। আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগল। সামনে তাকাতেই দেখি তুষার ভাই অধ্যয়ণের গেইট ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। আমাদের সব কথাই মনে হয় তুষার ভাই শুনেছেন। আসাদ,তুষার ভাই দু’জনের-ই অবাক কিংবা ঝাপসা দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে আমি বাড়ি ফিরে এলাম।

সেই ঘটনার পর থেকে আমি শামুকের মত গোটানো জীবন যাপন করা শুরু করলাম। পাড়ার কারো সাথে কথা বলিনা। বাসাতেও অনেক চুপচাপ থাকি। সারাদিন বই নিয়ে বসে থাকি। সকালে বাসে করে সানরাইজ যাই,বিকালের দিকে ফিরে আসি। মাঝে মাঝে কানে আসে বাসার পাশ দিয়ে চলে যাওয়া মিছিলের চিৎকার। আমার বুক কেঁপে ওঠে কোন এক অজানা আশংকায়। এভাবেই চলছিল। আসাদ বা তুষার ভাইয়ের সাথে আমি অনেকদিন কোন যোগাযোগ করিনি। তারাও আমার সাথে আর দেখা করেনি। তবে খবর পেতাম তারা তাদের রাজনীতি নিয়ে মহা ব্যস্ত। আসাদের জন্য মন অনেক বেশি খারাপ হয়ে গেলে রাতের বেলা অঝোরে কাঁদলাম বালিশে মুখ গুঁজে। সকালে ফোলা লাল চোখে পানি দিয়ে দিয়ে লাল টকটকে চোখ স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলাম। নিজের কষ্টটাকে লুকিয়ে রাখার হাজার পন্থা। আমার কেন জানি মনে হচ্ছিল আমার সব স্বপ্নগুলো ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে। আর এই স্বপ্নভঙ্গের অর্ধেক দায় অবশ্য-ই আসাদের। অথবা তুষার ভাইয়ের।

সেদিনের রাতটা আমি কোনদিন ভুলে যাবনা। ভুলে যাওয়া যাবেনা। সন্ধ্যা থেকেই সেদিন মেঘ করেছিল আকাশে। রাত ন’টার দিকে বৃষ্টি হ্‌ওয়া শুরু করল। ঝুম বৃষ্টি। সেই ঝুম বৃষ্টির মধ্যেই আমি সুর করে কেমিষ্ট্রি বইয়ের রাসায়নিক গতিবিদ্যা পড়ছি। এমন সময় প্রচন্ড জোরে জোরে কেউ বাসার দরজায় ধাক্কা দেওয়া শুরু করল। বাবা দৌড়ে গেল। আমি ও বাবার সাথে ছুটে গেলাম। বাবা দরজা খুলতেই হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকে পড়লেন তুষার ভাই। রক্তে আর বৃষ্টির পানিতে পুরো শার্ট মাখামাখি। বাবার দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় শুধু বললেন—“আসাদ আর পিকলুকে ওরা মেরে ফেলেছে কাকা।"

তুষার ভাইয়ের হাঊমাঊ কান্না আমার কানে ঢুকছে না। কোন কিছুই আমার কানে ঢুকছে না। কোন বোধ কাজ করছেনা। আমি শুধু অস্ফুট কন্ঠে জিজ্ঞেস করলাম—আসাদ কোথায় এখন? তুষার ভাই কোনভাবে উত্তর দিলেন--বটতলার হাটের মোড়ে আসাদের আর পিকলু ভাইয়ের লাশ পড়ে আছে। আমি বাবার হাত ধরে টান দিলাম। আমি এখন-ই যাব আসাদের কাছে। এক্ষুনি।

বটতলার মোড় তখন লোকে লোকারণ্য। পুলিশের গাড়ির হেডলাইটের আলো রাতের অন্ধকার ভেঙ্গে খান খান করে দিয়েছে। কেউ একজন চিৎকার করে কাঁদছে। আমি বাবার হাত ধরে ভীড় ঠেলে এগিয়ে গেলাম। আমাদের পেছন পেছন আসল তুষার ভাই। আমি দূর থেকে দেখলাম দুইটা মানুষ উপুড় হয়ে পড়ে আছে। সেখানে অনেক পুলিশ দাঁড়ানো। আমি জানিনা সেই দুইটা মানুষের মধ্যে কে আসাদ আর কে পিকলু ভাই। তুষার ভাই হঠাৎ পেছন থেকে এসে আমার হাত ধরে থামাল। “নীতু,সামনে যেওনা। সহ্য করতে পারবেনা। আর যেওনা।" আমার কি হল জানিনা। আমি হড়হড় করে সেখানেই বমি করে দিলাম। থরথর করে কেঁপে ঊঠে বললাম,"তুষার ভাই আমাকে ধরেন। আমি মরে যাচ্ছি। আসাদ কোথায়? আসাদকে ডেকে আনেন। আসাদ! ও আসাদ!” মাথা কেমন ঘুরে উঠল। মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছি এমন মুহুর্তে তুষার ভাই শক্ত করে আমাকে ধরলেন। যে মানুষটাকে আমি সারাজীবন মেয়েমানুষ বলে অপমান করেছি,সেই মানুষটার পুরুষালি বুকে মাথা রেখে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে আমি বললাম,"আমার মাথায় হাত রেখে কথা দেন তুষার ভাই,আপনি রাজনীতি ছেড়ে দিবেন। আসাদের কসম খান। বলেন রাজনীতি ছেড়ে দিবেন। আর কোনদিন এসব খুনাখুনির মধ্যে যাবেন না,বলেন?”

আসাদ মারা যাওয়ার পর আমি মানসিকভাবে প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়লাম। একটা সহজ সরল ছেলের এরকম পরিণতি আমরা কেই-ই মানতে পারছিলাম না। আমার মা প্রায়-ই আসাদের কথা মনে করে আঁচলে মুখ ঢেকে কাঁদত। আমি আসাদ মারা যাওয়ার দিন-ই শুধু কেঁদেছি। তারপর আর একবার ও আসাদের জন্য কাঁদিনি। আমি সারাদিন একা একা থাকতাম। বিড়বিড় করে কি সব বলতাম। আসাদ মারা যাওয়ার পর তুষার ভাই রাজনীতি ছেড়ে দিয়েছি্লেন। উনি আমাদের বাড়ি আসলে রাগে আমার গা কাঁপত। অসহ্য লাগত। মনে হত তুষার ভাইয়ের জন্য-ই আসাদ মরে গেছে। যদি তুষার ভাই রাজনীতির সাথে না জড়াত তাহলে নিশ্চয়-ই আসাদ বেঁচে থাকত। আসাদ বেঁচে থাকলে আমি আর আসাদ নতুন নতুন স্বপ্ন দেখতাম। কি সুন্দর সেই সব স্বপ্ন!

সেই বছর আমার আর ভর্তি পরীক্ষা দেওয়া হলনা। মনের সেই অবস্থার উপর আমার কোন নিয়ন্ত্রন ছিলনা। বাবা প্রচন্ডভাবে আমার বিয়ের জন্য পাত্র খুঁজতে লাগলেন। কিন্তু কেউ আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়না। যদিবা দুই এক জন রাজি হয়-ও,কিভাবে যেন রটে যায় আমি একটা মাথা পাগল মেয়ে। বরপক্ষ সাথে সাথে পিছিয়ে যায়। সেই সময় তুষার ভাই এগিয়ে এলেন। সাহস করে আমার বাবাকে বলেই ফেললেন উনি আমাকে বিয়ে করতে চান। বাবা প্রথমে খুব গড়িমসি করলেন। তুষার ভাই গরীব ছেলে--এইসব বাহানা তুলতে চাইলেন। কিন্তু আমার বুদ্ধিমতী মা বাবাকে আড়ালে ডেকে বুঝিয়ে দিলেন আমার মত মাথা খারাপ মেয়ের জন্য তুষার ভাই-ই ভাল পাত্র। নাহলে সারাজীবন চিরকুমারী থাকতে হবে। এই প্রথম দেখলাম বাবা মা’র মতের মিল হল। তাঁরা তুষার ভাইয়ের সাথে আমার বিয়ে পাকাপোক্ত করে ফেললেন। আমি ও কিভাবে কিভাবে যেন নিমরাজি হয়ে গেলাম। এক আষাঢ় মাসের সুন্দর সময়ে আমার সাথে তুষার ভাইয়ের বিয়ে হয়ে গেল।

তুষার ভাইয়ের সাথে বিয়ের পর আমার বিষন্ন জীবনটা খুব সুন্দর হয়ে গেল হঠাৎ করে। বিয়ের পর প্রথম দিকে আমি ভুল করে তুষারকে তুষার ভাই বলেই ডেকে ফেলতাম। তুষার তখন সুন্দর করে হাসত। নিষ্পাপ হাসি। আসাদের সাথে যে হাসির অনেক বেশি মিল।

তুষার আমার জীবনে আসার পর আমি আসাদকে ধীরে ধীরে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করতাম। পারতাম না। হঠাৎ হঠাৎ রাতের বেলা আমার ঘুম ভেঙ্গে যেত আসাদের হাসির শব্দ শুনে। তখন আমি বারান্দায় এসে দাঁড়াতাম। রাতের আকাশে অনেক তারা। আমার মনে হত অন্ধকার কালো আকাশটা একটা নোংরা পৃথিবী। আর তার মাঝে ফুটে থাকা সাদা তারাগুলো এক এক জন আসাদ। আসাদ বড়লোকদের মুখে লাথি মারতে চেয়েছিল। গভীর রাতে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমার বাংলাদেশের রাজনীতিকে লাথি মারতে ইচ্ছা করত। যে রাজনীতি আমার আসাদকে কেড়ে নিয়েছে। আসাদ মারা যাওয়ার পর তার মামলাটা কয়েক মাস ঝুলে থেকে থেকে থেমে গেছে। এমন একটা দূর্ভাগা দেশ আমার বাংলাদেশ! রোজ কত আসাদ মরে যাচ্ছে! কে তার খবর রাখে?

আমি আর তুষার “অধ্যয়ণ কোচিং সেন্টার” বদলিয়ে “আসাদ অধ্যয়ণ কেন্দ্র” বানিয়েছি। এখানে এখন আসাদের মত গরীব শিশুরা পড়াশোনা করে। আসাদের খুব শখ ছিল এই গরীব শিশুদের জন্য কিছু করার। আসাদ নেই,আমরা আছি আসাদের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য। আসাদকে কিছুতেই হেরে যেতে দিবনা আমি আর তুষার। আমি ঠিক করেছি আমার আর তুষারের ছেলে হলে নাম রাখব ‘আসাদ’। আসাদের জন্য লেখা ভালোবাসার অসমাপ্ত কবিতাটা আমি অনেকদিন ধরে অল্প অল্প করে শেষ করেছি। সেটা “আসাদ অধ্যয়ণ কেন্দ্র”-এর দরজায় বাঁধানো আছে। আমি মাঝে মাঝে সেখানে দাঁড়িয়ে কবিতাটা পড়ি।

মনে আছে তোর?
ইচ্ছে দুপুর?
সেই যে সটান রাস্তাটা-
যার এপার-ওপার জীবন চলে-বেখেয়ালে।
তুই চিনিয়েছিলি রোদের ঢেউ
পথের বালাই, খেয়ালী বাঁক
আর আমি বলি, নদীর মতন;
না না তোরই মতন
তুই বললি, আমি কি আর ভাঙ্গতে জানি?
আমার জবাব; আমি তো তোর গড়ার পারে-
ইচ্ছে হলে ভাঙ্গতে পারিস,
ডুববো; সেতো তোরই জলে!
কমল না পাই কোমল পাব-এটুকু জানি।
তা না হলে পাওয়ার আশা জলাঞ্জলিই!
সে'ও তো তুইই। একই কথা।

তোর হাসিটা বিষাদ মাখা
বয়েই গেল!
ওদিকে নয়,
এদিক আমি।
তোকে না পাই তোর ছায়াকে ধারণ করি
দেখনা তুই, কেমন করে ভেঙ্গে পড়িস!
জানিতো তুই তাকাবিনা,
চোখে যাকে ধারণ করিস-
তাকে কি আর দেখতে আছে!
তুই তো বেজায় পাগল আছিস!

তোর ঠোঁটে হাসির রেখায় অশ্রুবিন্দু-
পারিসনি তো?
দেখনা কেমন ধরা পড়িস!
বলছিলি তুই;
ঝড়ের জলে ভিজব জানি,
তার দুহাতে ভরিয়ে দেব মেঘের জোয়ার
সেই নদীটা দুপুর নদী
যার দু'পারের কেউ ভাঙ্গেনা-
নিজেই ভেঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে।
জড়িয়ে পড়ে-ঠিক যেমন আমার ছায়া;
তোরই গায়ে! ভিজবি তুই?
পথ না ফেরে-ফিরবনা আর।
তাও না পারি,
পথের পিঠে সওয়ার হব।
যাবি না তুই?

আর আমি বলি,
জলাঞ্জলি হবার আশায় ঝাঁপ দিলাম এই অথই জলে
জল নিজেই শেষে পথ হয়ে যায়-
আমার সাথেই সে পথ চলে।


আমি কবিতাটা পড়তে পড়তে দীর্ঘশ্বাস ফেলি। মনে মনে বলি—আসাদ রে,তোর ভালোবাসার অথই জলে আমি ঝাঁপ দিয়েছিলাম। তারপর সেই ভালোবাসার জল নিজেই পথ হয়ে আমার সাথেই পথ চলছে প্রতিনিয়ত। আমার ভালোবাসা বাঁচিয়ে রেখেছে তোকে। তাই আমি তুষারের মাঝে তোকে খুঁজে পাই, অধ্যয়ণের শিশুগুলোর মাঝে তোকে খুঁজ়ে পাই,নারায়নগঞ্জের উত্তপ্ত রাজনীতিতেও তোকে খুঁজে পাই। তোর ছায়াকেই আমি আমার মাঝে ধারণ করে রেখেছি আসাদ। তুই বলেছিলি আমি নাকি তোর মোহে পড়েছি। কিন্তু আমি আজ বুঝি সেটা মোহ ছিলনা,সেটা ভালোবাসাই ছিল। তোর জন্য ভালোবাসা। আসাদ নামের ছেলেটার জন্য ভালোবাসা।

(সমাপ্ত)

--------------------------------------------------------------------------------------------

পুনশ্চ ১# কথক পলাশ । নিভৃতচারী এক ব্লগার। নিজের লেখা মনঃপূত না হ্‌ওয়ায় যিনি নিজের লেখাগুলো প্রথম পাতা থেকে সরিয়ে রেখেছেন। তাঁর লেখা চিঠিতা কবিতাটা আমি এই গল্পে ব্যবহার করেছি। কবিতাটা ব্যবহার করতে দেওয়ায় পলাশ ভাইয়ের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা।

পুনশ্চ ২# এই ব্লগে অনেক ক্ষুদে ব্লগার আছে। তাদের মধ্যে একজন ছোট ভাই,যে এবার এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন ফাইভ পেয়েছে। আমার এই অগোছালো গল্পটা ছোট ভাই সহ সকল ছোট্ট ব্লগারদের জন্য একটা সামান্য উপহার।
এই ছোট্ট মানুষগুলোর জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় সময়টা যখন পরিবারের মানুষগুলোর সাথে গল্প করে অথবা সুন্দর কোন বই পড়ে কেটে যাওয়ার কথা,তখন আশ্চর্যজনকভাবে তাদের সেই সুন্দর সময়টা কাটছে ফেইসবুকে মন খারাপ করা স্ট্যাটাস এবং ব্লগে দুঃখবিলাসী পোষ্ট দিয়ে। এভাবে নিজেদের মনটাকে তারা অকারণ আরো খারাপ করে দিচ্ছে। তারা বড় হয়ে যখন জীবনের একটা নতুন পর্যায় শুরু করতে যাবে,তখন দ্বিতীয় পর্বে লেখা আসাদের জীবন সংগ্রাম একবারের জন্য-ও তাদের মনে পড়ুক,এই প্রত্যাশা রইল।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৪৩
৬৯টি মন্তব্য ৬৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

'অপ্রেমের মৃত্যু' - ব্লগার আলমগীর সরকার লিটনের এক দারুণ সৃষ্টি

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ০৬ ই মে, ২০২৫ রাত ৮:৫৮



চর্ম চোখ আমাদের অনেক কিছু দেখায়। আমরা তা বুঝার চেষ্টা করি। কোন কোনটাকে সত্যি বলে মেনে নেই। কখনো কি নিজেকে প্রশ্ন করেছি, আমরা যাকে সত্য বলে মেনে নেই,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামীর তরুণ রাষ্ট্র নায়কদের জন্য ড. ইউনূস হতে পারেন অনুকরণীয় আদর্শ !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই মে, ২০২৫ রাত ৯:৪০


আগামীর বাংলাদেশে আমরা কি করাপ্টেড অথবা বাবার উত্তরাধিকারী কাউকে রাষ্ট্রনায়ক হিসাবে ক্ষমতায় দেখতে চাই ? অবশ্যই না ! বাংলাদেশের তরুণেরা চায় ভবিষ্যতের রাষ্ট্রনায়ক হবে ইয়ং এবং ডায়নামিক চরিত্রের অধিকারী। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Natural Justice.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৬ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:০৯

Natural Justice.....

Natural Justice বা প্রকৃতির বিচার কিম্বা রিভেঞ্জ অব ন্যাচার বলে যে একটা কথা আছে, সেই ব্যাপারটা গভীরভাবে অনুধাবন করার একটা বাস্তব উদাহরণ আশা করি সবার সামনেই এখন ভিজিবল।

আমরা অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড. ইউনূসের মতো বোকা হওয়া শিখতে হবে! | দৈনিক কালবেলা উপসম্পাদকীয়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ০৬ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:৫৭



আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সারা জীবন উল্টো কাজ করে সাফল্য পেয়েছেন। কনভেনশনাল ব্যাংকগুলো ধনী ব্যক্তিদের ঋণ দেয়, অথচ তার গ্রামীণ ব্যাংক দরিদ্রদের মধ্যে ঋণ বিতরণ করে। বাংলাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মধ্যরাতে পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালাল ভারত

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৭ ই মে, ২০২৫ রাত ৩:৫২


পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুর, কোটলি ও মুজাফফরাবাদের পাহাড়ি অঞ্চলের কাছে একাধিক জায়গায় হামলা চালিয়েছে ভারত। এ হামলায় এক শিশু নিহত ও ১২ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী এক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×