স্বেছায় বিদগ্ধজনেরাও অনিবার্য কিংবা চটুল কারণে দগ্ধ হয়ে মাঝে মাঝে মৃত্যু পাড়ার মাস্তানের আবাসের দরজায় কলিং বেল চাপে! ওপাশ থেকে তালা মারা দরজা খুলতেই এবং মাস্তান এর কলিজা নেয়ার চুম্বক যন্ত্র বের করতেই সাধারণ থেকে বিদগ্ধ শ্রেনী বলে ওঠে- আমি ভুল জায়গায় কলিং বেল চেপেছি!!
ভুল শিক্ষা, নষ্ট সংস্কৃতি, সামাজিক- রাষ্ট্রীয় ন্যয় বিচারের অনুপস্থিতি আমাদের স্বাভাবিক জীবনকে ব্যাহত করছে। সভ্যতার ক্রমবিকাশ প্রশ্নে ‘ক্ষমতা’ সকল কিছু্র ঊরধে থাকায় দার্শনিক শ্রেনীর প্রধান তত্ব অনুযায়ী জনশ্রেনীর মৌলিক চাহিদা ও যৌগিক বিলাসিতা এখন তাই অর্থ, ক্ষমতা ও সেক্স নির্ভর হয়ে পড়েছে।
তবে আমি মনে করি, প্রচলিত ক্রমবিকাশে অর্থ, ক্ষমতা এবং সেক্স অপরিহার্য হলেও সভ্যতার বিবর্তন আসে অপ্রচলিত পদ্ধতিতে। সেখানে প্রধান পুঁজি থাকে ‘আবেগ’।
বাংলার মাটির সামগ্রিক ঐতিহ্য নিয়ে আলোচনায় আজ যাচ্ছি না। কিন্তু বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় প্রশ্নে নজর দিলে সেখানে ‘আবেগ’ মূখ্য ছিল বলেই আমরা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ১৯৭১ সালে চূড়ান্তভাবে আবির্ভূত হই। সালাম -রফিকদের আত্ম ত্যাগের আবেগ কিংবা বঙ্গবন্ধুর কালো চশমার পিছনে অশ্রুময়ের আর্তনাদে জ্বালাময়ী আবেগী আহবান, উচ্ছ্বাসে ভেসে যাওয়া বিপ্লবী মনের আবেগী তরুণদের মুক্তির জন্য যুদ্ধ- এর পরেই তো এলো স্বাধীনতা।
আজ ৪৩ বছর পর আমি বলছি- সালাম, জব্বার, রফিকদের কে কি ৫০০ করে টাকা দেয়া হয়েছিল যে এই মর্মে, যাও তোমরা মিছিলে অংশগ্রহণ করো- আজকের রাজনৈতিক সংস্কৃতির মত।
‘আবেগ’ বদলায় সভ্যতা, শুরু করে নতুন আলোর মিছিল। তবে প্রচলিত আবেগ নিয়ে আমার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বলয়ের আয়োজনে ঘোর আপত্তি রয়েছে। যেমন সারাবছর অন্যায়, পাপ এবং অপরাধ শ্রেনীর তাবত কাজ সেরে লাইলাতুল বরাতের রাতে প্রহসনের দু;হাত তুলে পরম করুনাময়ের কাছে হাত তোলার সাংস্কৃতিক প্রার্থনার আবেগ আমাকে জাগায় না। জাগাতো, যদি ঠিক পরের দিন হতে ঐ ব্যক্তি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার প্রয়াসে যেতেন। ঠিক অনুরুপ ভাবে আগস্টের মাসে ১৫ কিংবা ২১ আগস্ট নিয়ে রাজনৈতিক আবেগ আমার কাছে খুব তুচ্ছ মনে হয়। কারণ যত আবেগ শুধু এই আগস্টেই দেখাতে হবে কেন? সারা বছর কেন এই জঘণ্যতম হত্যাকান্ড নিয়ে এবং বিচারিক প্রক্রিয়া নিয়ে আসল কাজ করা হবে না?
খুব দৃষ্টি দিলে দেখা যাচ্ছে, অত্যন্ত স্পর্শকাতর এই আবেগী বিষয় গুলো নিয়েও আমরা প্রতারণা করছি, রাজনীতিও করছি। প্রচলিত ধারায় আবেগের জায়গা অবশ্য থাকবে না। কারণ পুঁজি বাদের নীল দংশনে আমাদের কে বেঁচে থাকতে নকল কান্নায় ভেসে যেতে হয়!!!
তোমাদের বলছি, ‘রাষ্ট্র চিন্তার আবেগ’ আসে তবে তা একটু দেরীতে, একদা আসত বাঁচা- মরার লড়াইয়ে টিকে থাকতে- আর এখন আসে ৫০ কিংবা ১০০ বছর পর পর- যখন দেখা যায়, আমি গরীব নই, কিন্তু আমরা গরীব সেজে আছি অথবা আমাদের কেও গরীব করে রেখেছে।
যারা নিত্য আবেগী ছোয়ায় আত্ম হননের পথে বেছে নেন, তাঁদের বলছি- নিজের দু’চোখ দিয়ে পৃথিবীকে সন্দর করে আদর করুন। দেখবেন, তখন কলিং বেল বাজাতে হচ্ছে না!!!!