``নব জ্যামিতি''র ছড়া
অপ্রচলিত--- সুকান্ত ভট্টাচার্য
সিদ্ধান্ত:
আজকে দেশে রব উঠেছে, দেশেতে নেই খাদ্য;
`আছে', সেটা প্রমাণ করাই অধুনা `সম্পাদ্য'।
কল্পনা:
মনে করো, আসছে জাপান অতি অবিলম্বে,
সাধারণকে রুখতে হবে অতি দৃঢ় `লম্বে'।
``খাদ্য নেই'' এর প্রথম পাওয়া খুব `সরল রেখা'তে,
দেশরক্ষার `লম্ব' তোলাই আজকে হবে শেখাতে।
অঙ্কন:
আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবীর ক্ষুদ্র বিন্দু থেকে,
প্রতিরোধের বিন্দুতে নাও ঐক্য-রেখা এঁকে!
`হিন্দু-মুসলমানে'র কেন্দ্রে, দুদিকের দুই `চাপে'
যুক্ত করো উভয়কে এক প্রতিরোধের ধাপে।
প্রতিরোধের বিন্দুতে দুই জাতি যদি মেলে,
সাথে সাথেই খাদ্য পাওয়ার হদিশ তুমি পেলে।
প্রমাণ:
খাদ্য এবং প্রতিরোধ উভয়েরই চাই,
হিন্দু এবং মুসলমান মিলন হবে তাই।
উভয়ের চাই স্বাধীনতা, উভয় দাবীই সমান,
দিকে দিকে `খাদ্যলাভ' একতারই প্রমাণ।
প্রতিরোধের সঠিক পথে অগ্রসর যারা,
ঐক্যবদ্ধ পরস্পর খাদ্য পায় তারা॥
বিয়ে বাড়ির মজা মিঠেকড়া
--- সুকান্ত ভট্টাচার্য
বিয়ে বাড়ি: বাজছে সানাই, বাজছে নানান বাদ্য
একটি ধারে তৈরী হচ্ছে নানা রকম খাদ্য;
হৈ-চৈ আর চেঁচামেচি, আসছে লুচির গন্ধ,
আলোয় আলোয় খুলি সবাই, কান্নাকাটি বন্ধ,
বাসরঘরে সাজছে ক'নে, সবাই উত্ফুল্ল,
লোকজনকে আসতে দেখে কর্তার মুখ খুলল:
``আসুন, আসুন--- বসুন সবাই, আজকে হলাম ধন্য,
যত্সামান্য এই আয়োজন আপনাদেরই জন্য;
মাংস, পোলাও, চপ-কাটলেট, লুচি এবং মিষ্টি
খাবার সময় এদের প্রতি দেবেন একটু দৃষ্টি।''
বর আসেনি, তাই সকলে ব্যস্ত এবং উত্সুক,
আনন্দে আজ বুক সকলের নাচছে কেবল ধুক-ধুক,
`হুলু' দিতে তৈরি সবাই, শাঁক হাতে সব প্রস্তুত,
সময় চলে যাচ্ছে ব'লে মনটা করছে খুঁত-খুঁত!
ভাবছে সবাই কেমন ক'রে বরকে করবে জব্দ;
হঠাত্ পাওয়া গেল পথের মোড়ে গাড়ির শব্দ:
হুলুধ্বনি উঠল মেতে, শাঁক বাজল জোরে,
বরকে সবাই এগিয়ে নিতে গেল পথের মোড়ে।
কোথায় বরের সাজসজ্জা, কোথায় ফুলের মালা?
সবাই হঠাত্ চেঁচিয়ে উঠে, পালা, পালা, পালা।
বর নয়কো, লাল-পাগড়ি পুলিশ আসছে নেমে।
বিয়েবাড়ির লোকগুলো সব হঠাত্ উঠল ঘেমে,
বললে পুলিশ: এই কি কর্তা, ক্ষুদ্র আয়োজন?
পঞ্চাশ জনে কোথায়? এ যে দেখছি হাজার জন!
এমনি করে চাল নষ্ট দুর্ভিক্ষের কালে?
থানায় চলো, কাজ কি এখন এইখানে গোলমালে?
কর্তা হলেন কাঁদো কাঁদো, চোখেতে জল আসে,
গেটের পাশে জড়ো-হওয়া কাঙালীরা হাসে॥
পুরনো ধাঁধাঁ
মিঠেকড়া --- সুকান্ত ভট্টাচার্য
বলতে পারো বড়মানুষ মোটর কেন চড়বে?
গরীব কেন সেই মোটরের তলায় চাপা পড়বে?
বড় মানুষ ভোজের পাতে ফেলে লুচি-মিষ্টি,
গরীবরা পায় খোলামকুচি, একি অনাসৃষ্টি?
বলতে পার ধনীর বাড়ি তৈরি যারা করছে,
কুঁড়েঘরেই তারা কেন মাছির মতো মরছে?
ধনীর মেয়ের দামী পুতুল হরেক রকম খেলনা,
গরীব মেয়ে পায় না আদর, সবার কাছে ফ্যালনা।
বলতে পার ধনীর মুখে যারা যোগায় খাদ্য,
ধনীর পায়ের তলায় তারা থাকতে কেন বাধ্য?
`হিং-টিং-ছট্' প্রশ্ন এসব, মাথার মধ্যে কামড়ায়,
বড়লোকের ঢাক তৈরী গরীব লোকের চামড়ায়॥
ছবির ছেলেটি হয়তো বড় হয়ে সুকান্তের মতই কোন বিদ্রোহী মানুষ হবে, কিংবা হয়তো হবে না । তবু আশা করতে তো দোষ নেই । হয়তো এরকম কিছু সুকান্ত ই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আমাদের চারপাশে । আমরা তাদের প্রতীক্ষায়..
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৯:২৪