এই দেশে মোছলমানদের ধর্মকর্ম করতে গিয়া বিপদ হয় নাই আগে কখনও। জুম্মায় মসজিদে জায়গা ধরে না। মনে পরে, আটানব্বইয়ের মাঝামাঝি সময়ে এক জুম্মায় বিক্রমপুর থেকা আমার মামা আসছিলেন বায়তুল মোকাররমে নামাজ ধরবেন, আমারে লগে কইরা নিয়া গেছিলেন তিনি।
তো, মসজিদের সিড়িতেও জায়গা ছিলও না সেইদিন। দুইটাকা কইরা সাদা সাদা লম্বা নিউজপ্রিন্ট বিক্রি করতে থাকতো সেইখানে হকাররা, সেইগুলা রাস্তায় উপরে বিছায়া নামাজে বসছিলাম আমরা।
গতকালকে মাগরিব কিংবা এশার ওয়াক্তে মুসল্লিরা ডরের চোটে জাতীয় মসজিদে নামাজে যায় নাই। বছরখানেক যাবত জুম্মাতেও নন পলিটিক্যাল লোকজন সেইখানে যাইতে রাজী হয় না। সূর্যের চেয়ে বালি গরম। এতদিন চলছে জামাতের তান্ডব, এখন শুরু হইছে হেফাজতি আক্রমন।
জাতীয় মসজিদে মাগরিবের আজান হইতেছে, নামাজের ওয়াক্ত যায়, অথচ হেফাজতিরা রাস্তায়- কোরান পুড়াইতে নিয়োজিত আছেন! প্রকাশ্যে মুসলমানেরা কোরান পুড়াইতেছেন এই দৃশ্য পৃথিবীর কোথাও আর এইভাবে দেখা গেছে কিনা জানি না। বিরোধী দল ঢাকাবাসীকে আহবান করছেন তাদের পাশে দাড়াইতে!
পল্টন দৈনিকবাংলা এলাকায় বিকালের পর থেকা হাজির ছিলেন পুলিশ, সাংবাদিক, ফায়ার সার্ভিস আর কিছু হকার যাদের ব্যাবসা সেইখানে। এর বাইরে যারা ছিলেন, তারা সবাই হেফাজতিদের লোক, যাদের আমরা প্রতি বছর কোরবানীর চামরা দান কইরা থাকি, মানে মাদ্রাসা পিপল। মোহামেডানের গ্যালারীতে যেমন আবাহনী সমর্থক থাকে না, তেমন হেফাজতের সমাবেশেও অন্য কেউ যায় না। যারা যায় তাদের তখন হেফাজতি বইলা জ্ঞান করতেই হবে, যেহেতু এই বিশাল পাবলিক গ্যাদারিং করতে পারার ক্রেডিট হেফাজতিরা অফিশিয়ালি দাবী করছেন।
হেফাজতিরা কোরান পুড়ানোর অভিযোগ গত চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে কোথাও সাংগঠনিকভাবে যেহেতু অস্বীকার করেন নাই, ফলে এই দায় তাদেরই। সমাবেশের অফিশিয়াল অনুমতি নিয়াই তারা সেইখানে হাজির হইছেন, দাড়ি টুপি থাকা লাগবে না, তাদের সমাবেশে অন্যেরা কোরান পুড়াইতেছেন তখন যদি তারা বইসা বইসা ইসলাম রক্ষা করার নাম কইরা বুইড়া আঙ্গুল চুষতে থাকেন, সেইটারে ভন্ডামী বলতে হয়। যারা সাংবাদিক পিটাইয়া খেদাইতে পারে, তারা কোরান পুড়াইতে দেইখা আঙ্গুল চুষবে না।
ফলে, হেফাজতিরা যে কোরান পুড়াইছেন তাতে আর কোন সন্দেহের অবকাশ নাই।
কামাল আতাতুর্ক আধুনিক তুরস্ক প্রতিষ্ঠার জন্য ৩০০০ কাঠমোল্লাকে পানিতে চুবায়া মাইরা ফেলছিলেন।
আমি হত্যাকান্ডের বিপক্ষে, কিন্তু ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওনের পক্ষে। সংবিধানে কাঠমোল্লাগিরির জন্য সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রাখা যাইতে পারে। গত ১৪০০ বছরে সারা দুনিয়ায় যত কোরান পুড়ে নাই, এই কাঠমোল্লাদের আয়োজনে গতকালকে বায়তুল মোকাররমে তার চেয়ে বেশি কোরান পুড়ানো হইছে অনুমান করি।
হায়রে মোছলমান, হেফাজতিদের হাত থেকে এছলামকে রক্ষা করবে কে?