somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উচ্ছেদ ও মানবতা!!!

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফার্ম‌গেট, আনন্দ‌ ছন্দ সি‌নেমার সাম‌নের দুই পা‌শের ফুটপাত জু‌ড়েই হকার‌দের রমরমা বাজার। কেউ জুতা;কেউ মোজা,‌গে‌ঞ্জি,আন্ডারওয়্যার বেঁ‌চে। কেউ মোবাইলের কাভার বেঁচে, বেল্ট বেঁ‌চে। কেউ কেউ আবার সন্ধার পর দেহ বেঁচ‌তেও দা‌ড়ি‌য়ে থা‌কে!
বি‌কে‌লের পর থে‌কে সন্ধার সময়টা এ‌দের পিক আওয়ার। এসময় অ‌ফিস ফেরত কিংবা কাজ ফেরত মানুষগু‌লি নি‌জেদের প্র‌য়োজনীয় জি‌নিস‌টি সস্তায় কিনে নেয়। তাই সবার ব্যবসায় এসময়টা‌তেই ভাল চ‌লে।
সম্ভবত সে জন্যই সন্ধায় দোকানের সংখ্যা বেশী থা‌কে। ফুটপা‌তে এক‌চিল‌তে জায়গাও খা‌লি থাকেনা। আজ‌কেও তাই ছিল,সবাই নিজ নিজ দোকানর মালামাল সাজি‌য়ে যার যার ম‌তো ক্রেতা আকৃষ্ট কর‌ছি‌লো। কিন্তু হঠাৎ কোথা থে‌কে দশবা‌রো জন পু‌লিশ এ‌সে সব এ‌লো‌মে‌লো ক‌রে দি‌লো!!
পু‌লিশ এ‌সে‌ছে ফুটপাত হকার মুক্ত কর‌তে। তারা এক‌দিক থে‌কে বুট দি‌য়ে,লা‌ঠি দি‌য়ে ,হাত দি‌য়ে দোকানগু‌লো সব লন্ডভন্ড ক‌রে যাচ্ছে। মা‌টি‌তে চট বি‌ছি‌য়ে রাখা জুতার দোকানে লা‌ত্থি মে‌রে সব জুতা চতু‌র্দি‌কে ছড়াইয়া দি‌চ্ছে। বে‌ল্টের দোকা‌নে লা‌ঠি দি‌য়ে গুতা মে‌রে সব ফে‌লে দি‌চ্ছে। কাপ‌ড়ের দোকানের কাপ‌ড়ের নী‌চে বিছা‌নো চাদরটা ধ‌রে টান মার‌ছে, ফ‌লে উপ‌রে রাখা কাপড়গুলো চতু‌র্দি‌কে ছ‌ড়ি‌য়ে পড়‌ছে!‌
মাই‌রের ভ‌য়ে অ‌নেক হকার পু‌লিশ দে‌খেই দোকান ফে‌লে পালি‌য়ে‌ছে। কেউ কেউ আবার মাল গু‌ছি‌য়ে নি‌তে চেষ্টা ক‌র‌ছে। আর তখন হা‌তের নাগা‌লে পে‌য়ে পু‌লিশ হা‌তের লা‌ঠি দি‌য়ে স‌জো‌রে মার‌ছে কিংবা লু‌ঙ্গি‌র গিট্টু‌তে ধ‌রে টান দি‌য়ে গা‌ড়ি‌তে তুল‌তে চেষ্টা কর‌ছে। তা দে‌খে অন্যরা এগু‌তে চে‌য়েও এগু‌চ্ছে না। কেউবা পু‌লিশ আশার আ‌গেই যতটুকু পাড়‌ছে ততটুকু গু‌ছি‌য়ে নি‌য়ে নিরাপদ দূর‌ত্ত্বে দা‌ড়ি‌য়ে আ‌ছে।
গাড়ীর জন্য অ‌পেক্ষায় থাকা কিংবা পাশ‌দি‌য়ে ফুটপাত ধ‌রে চলা মানুষগু‌লো দা‌ড়ি‌য়ে হকার পু‌লি‌শের এই খেলা দেখ‌ছে! এ‌দের কেউ কেউ মজা নি‌চ্ছে, কেউ কেউ হকার‌কে মাল গু‌ছি‌য়ে দি‌তে সাহায্য কর‌ছে। কেউ কেউ আবার পু‌লিশ‌কে সা‌পোর্ট ক‌রে বল‌ছেঃ -
"উ‌চিত কাম হই‌তে‌ছে, হারামজাদারা ফুটপাত দখল কইরা ব্যাবসা ক‌রে, সাধারন মানুষ হাঁট‌তে পা‌রেনা! এগুলা‌রে মাইরা তক্তা বানা‌নো উ‌চিত!!"
দুএকজন আবার পু‌লিশ‌কে কটাক্ষও ক‌রছেঃ "এইগুলা অইতা‌ছে আইওয়াশ! মাল ম‌নে অয় ঠিক ম‌তো দেয় নাই তাই এমন করতা‌ছে! মাল পাই‌লেই আবার বসতে দি‌বো!"

আ‌মি হাঁটার গ‌তি স্লো ক‌রে ছন্দ সি‌নেমা হল থে‌কে ই‌ন্দিরা রো‌ডের দিকে যা‌চ্ছিলাম আর এসব দেখ‌ছিলাম। হাঁট‌তে হাঁট‌তে ওভারব্রী‌জের প্রায় কাছাকা‌ছি আস‌তেই দেখলাম এক পৌঢ় হকার তার কাঁপড়গু‌লো আঁক‌ড়ে‌ ধ‌রে চতু‌র্দি‌কে ত‌ড়িৎ তাঁকা‌চ্ছে। আর তখন পা‌শ থে‌কে একজন পৌঢ়কে তাগাদা ‌দিচ্ছে:
-‌"এই বুড়া? তাড়াতা‌ড়ি ভা‌গো! আইয়া পড়‌লো কইলাম! মাইর একটাও কিন্তু মা‌ডিত পড়‌তোনা!"

‌কিন্তু পৌঢ় নড়‌ছেনা। তটস্থ,আত‌ঙ্কিত হ‌য়ে বারবার পু‌লি‌শের গ‌তিপ‌থের দি‌কে তাঁকা‌চ্ছে। হয়‌তো ভাব‌ছে পু‌লিশ এ‌দিকে নাও আস‌তে পা‌রে অথবা দৌড়া‌দৌ‌ড়ি করার ম‌তো‌ যথেষ্ট শ‌ক্তি তার নেই, কারণ সে দেখ‌তে বেশ হ্যাংলা এবং রোগা‌টে। অ‌নে‌কেই পৌঢ়‌কে নি‌য়ে মজা কর‌তে ছি‌লো, হাসাহা‌সি কর‌তে ছি‌লো। তেম‌নি মা‌র্কে‌টের দোকান থে‌কে একটা কম বয়সী ছে‌লে বে‌রি‌য়ে এ‌সে কিছুটা মস্করার সু‌রে বল‌লো: "ও চাচা মিয়া দৌড়াও না‌ ক্যান! চা‌চিডা‌রে কি অকা‌লে বিধবা করবা না‌কি?তাড়াতা‌ড়ি ভা‌গো, নই‌লে কিন্তু লালদালা‌নের ভিতর মাইর খাইয়া মর‌তে অই‌বো!
পৌঢ় কিছুটা বিরক্ত হ‌লো। ভয়,আশঙ্কা নি‌য়েই ছে‌লে‌টি ও পু‌লি‌শের উপর রাগ ঝাড়‌লোঃ
-"তু‌মি তো মিয়া কচ্চ ম‌নের আন‌ন্দে আর আমার বু‌কের ভিতর চি‌পি মার‌তি‌ছে!!"
এটা‌ শুনে ছে‌লে‌টি হে‌সে দি‌লো এবং কিছু‌ বল‌তে উদ্ধত হ‌লো, কিন্তু ছে‌লে‌টি‌কে সু‌যোগ না দি‌য়েই চতুর্দি‌কে একবার তাঁ‌কি‌য়ে ক্ষো‌ভের সা‌থে পৌঢ় আবার বল‌লোঃ

-‌"হে‌তেরা(পু‌লিশ) তো বাসায় গি বেত‌নের টাকা আর ঘু‌ষের টাকা দি পেট ভইরা খাইয়া বউ নিয়া হুতপি? আর আমি?! আমার সারারাত উ‌পোস থাক‌তি হ‌বে এবং আমার বউ‌পোলা‌গো বল‌তি হ‌বে "আজ‌কে এগুলাই (মোজা,গে‌ঞ্জি,আন্ডার ওয়্যার দে‌খি‌য়ে) খা! পু‌লিশ মা‌রি খেদায় দি‌ছে, কিছুই বেঁচ‌তে ---------!!"

পৌঢ় কথা শেষ করতে পার‌লো না, একটু দু‌রে পু‌লি‌শের হুঙ্কার শুন‌লোঃ
-"অ্যাই বুড়‌া, ওই খানকির পোলা! যাসনা ক্যান, পিডাইয়া পাছার চামড়া তুইলা ফালা‌মো!"
পৌঢ় বিপদ অ‌তি নিক‌টে দে‌খে আর অ‌পেক্ষা না ক‌রে চাদ‌রের কোণায় ধ‌রে দৌড় দি‌তে উদ্ধত হ‌লো। ‌তখন তাড়াহু‌ড়োয় একটা কোণা হাত থে‌কে ফসকে বেশ কিছু জামা কাপড় নী‌চে প‌ড়ে গে‌লো। ‌পৌঢ় সেটা তুল‌তে চা‌চ্ছি‌লো। কিন্তু পা‌শের আ‌রেক হকা‌রের গাঁ‌য়ে ব‌সি‌য়ে দেওয়া লা‌ঠির শব্দ কা‌নে আস‌ায় আর সাহস পেল‌না। তাই ওগু‌লো ফে‌লেই যা হা‌তে ছি‌লো তা নি‌য়ে দৌড় দি‌লো । দৌড় দেয়ার সময় লু‌ঙ্গির সা‌থে লু‌ঙ্গির এবং হাটুর প্যাচ লে‌গে পৌঢ় মা‌টি‌তে প‌ড়ে গে‌লো। কাপঁড় গু‌লো আবার ছিট‌কে পড়‌লো,প‌ড়নের লুঙ্গির একপাশ কোম‌রের কাছা কাছি উ‌ঠে গে‌লো। পৌঢ় লু‌ঙ্গি ধর‌বেনা কাপড় ধর‌বে তাই ভাব‌তে ছি‌লো। আর সেটা দে‌খে চতু‌র্দি‌কে পথচারী উৎসুক জনতার হা‌সির রোল প‌ড়ে গে‌লো!!

আ‌মি ওখা‌নে দা‌ড়িয়ে ছিলাম। আমার হা‌সি আস‌তে ছি‌লোনা,হা‌সির বদ‌লে একটা দীর্ঘশ্বাস আস‌ছি‌লো। আমার পা‌শে একটা কম বয়সী ছে‌লে দাড়া‌নো ছি‌লো, তার মুখটাও হা‌সি হা‌সি নয় বিষন্ন ছি‌লো,হয়‌তো আমার ম‌তোই একটু বেশী আ‌বেগী হ‌বে! আ‌মি ওর দিকে তাঁকা‌তেই সে বল‌লোঃ
-"ভাই! এই কামডা ‌কি ঠিক করতা‌ছে? এরাও তো সবার ম‌তো মানুষ, এ‌দে‌শের নাগ‌রিক। এদেরও তো ছে‌লে মে‌য়ে আ‌ছে? তা‌দেরও ভাত কাপ‌ড়ের চা‌হিদা আ‌ছে! এভা‌বে তা‌দের পুঁ‌জি নষ্ট ক‌রে দি‌লে তারা খাবে কি!"
আ‌মি কিছু বল‌ার খু‌জে পা‌চ্ছিলাম না, ছে‌লে‌টির দিকে তাঁ‌কি‌য়েই ছিলাম। তখন ছে‌লে‌টি আবার বলা শুরু কর‌লো:
-"হয়‌তো সাধারন মানু‌ষের সু‌বিধার কথা চিন্তা কর‌লে সরা‌নো দরকার। কিন্তু এরাও তো সাধারন মানুষ! এ‌দের কথাও তো চিন্তা করা দরকার! আ‌গে না তা‌দের একটা জায়গা দিবে,‌বিকল্প ব্যবস্থা‌ র‌বে তারপর না উঠা‌বে!এভা‌বে উঠি‌য়ে পে‌টে লাত্থি মারা কি ঠিক? কি কন ভাই? ঠিক??"
আ‌মি একটা শুকনা হাসি দিলাম! হা‌সি দি‌য়ে হাঁটা দিলাম। হাঁট‌তে হাঁট‌তে ছে‌লে‌টি‌কে ম‌নে ম‌নে বললাম " তু‌মি-আ‌মি ব‌লে লাভ কি? আমরা তো‌ চু‌নোপু‌টি, যারা বল‌লে/ভাব‌লে কাজ হ‌বে তা‌দের হয়‌তো আ‌বেগ নেই অথবা তা‌দের আ‌বেগ ম‌রে গে‌ছে অ‌নেক আ‌গেই, নয়‌তো আ‌বেগ বি‌ক্রি হ‌য়ে গে‌ছে স্বা‌র্থের কা‌ছে!! তাই ব‌লে লাভ নেই, চ‌লো হাঁ‌টি!! নি‌জের জন্য বাঁ‌চি! অ‌ন্ধ্যের ম‌তো,ও‌দের ম‌তো,‌নিষ্ঠু‌রের ম‌তো‌ বাঁচি!!"
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:৩২
১১৭ বার পঠিত
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঢাকায় শান্তিতে বসবাসের জায়গাগুলো

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩০ শে মে, ২০২৫ রাত ৯:৪৪






ঢাকায় শান্তিতে বসবাস করা যায় যেসব এলাকা: একটি বাস্তবভিত্তিক পর্যালোচনা

ঢাকা, বাংলাদেশের রাজধানী শহর, জনসংখ্যা ও যানজটের দিক থেকে অন্যতম ব্যস্ততম নগরী হলেও এখানকার কিছু কিছু এলাকা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হেজেমনি, কাউন্টার-হেজেমনি ও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক যুদ্ধ !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩১ শে মে, ২০২৫ রাত ১২:২৪


একটি রাষ্ট্রের সবচেয়ে নিঃশব্দ অথচ গভীর যুদ্ধ চলে তার ইন্টেলেকচুয়াল সেক্টরে। গোলা-বারুদের বদলে এখানে অস্ত্র হয় কলম, টকশো, নাটক, পাঠ্যবই, এবং ইউটিউব। বাংলাদেশে এই হেজেমনি বহুদিন ছিল প্রথম আলো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে দলীয় সরকার কখনই জনগণের সরকার হয় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩১ শে মে, ২০২৫ রাত ১২:২৫



সবাই মিলে দেশ স্বাধীন করলেও আওয়ামী লীগ সেটা স্বীকার করলো না। সেজন্য তারা বাকশাল নামে একদলীয় শাসন শুরু করে ছিল। কিন্তু সেনা বিদ্রোহে তাদের বাকশালী শাসনের অবসান ঘটে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রস্থান-পথ কঠিন হয়ে গেছে মুহাম্মদ ইউনূসের

লিখেছেন কবির য়াহমদ্্, ৩১ শে মে, ২০২৫ রাত ২:২৪



অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের (৮ই আগস্ট ২০২৪ থেকে চলমান...) প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষমতা ছাড়ার পথ কঠিন হয়ে গেছে।

এমনিতেই তার পদ ছাড়ার প্রবল অনাগ্রহ, তার ওপর আছে ক্ষমতা গ্রহণের পরের মাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৃষ্টি ঝরছে সারাদিন

লিখেছেন সামিয়া, ৩১ শে মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:০৪



ইচ্ছা ছিল প্রথম আষাঢ়ে ছাদে যাবো
বৃষ্টি দেখতে,
যাওয়া হয় নাই।
বৃষ্টি তো আর ক্যালেন্ডার দেখে আসে না।
সে কখনো মাসের আগেভাগেই দরজায় কড়া নাড়ে,
আবার কখনো হুট করে হাওয়ায়
হালকা জলছবি আঁকে।

বৃষ্টি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×