পোস্ট অফিসের সকলেই বুঝে ফেললেন – পোস্ট-মাস্টার কার্যতঃ আসন্ন উন্নয়ন মেলায় অংশগ্রহণ প্রস্তুতি নিয়ে প্রচন্ড ব্যস্ত ছিলেন – যদিও তিনি এখন অত্যধিক ব্যস্ত মূলত বগুড়া সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নে অবস্থিত নিশ্চিন্তপুর পোস্ট অফিসের নামে কিংবা আমরা মনে করছি পোস্টমাস্টারের নামে আসা একটি ইমেইল নিয়ে।
পোস্ট অফিসের পিয়ন জনাব বিমল চন্দ্র দাস মনে করতে পারেন না ঠিক কতোদিন পর অথবা তিনি বুঝতে পারেন দীর্ঘদিন পর একটা হলুদ খাম পেয়ে আনন্দে খুব উদ্বেলিত হয়ে উঠলেন – যদিও এই চিঠির সাথে অথবা এই চিঠির প্রাপকের সাথে কিংবা চিঠির প্রেরকের সাথেও তাঁর অর্থাৎ পোস্ট অফিসের পিয়ন জনাব বিমল চন্দ্র দাসের সাথে আদতে কোনও সম্পর্ক নেই। তবুও তাঁর উত্তেজনার তীব্রতা এতোটাই গাঢ় যে তাঁর মনে হতে থাকে – অগ্রহায়ণের শেষ বিকেলের খুব কোমল, খুব নরোম এক টুকরো রোদ সে হাতে ধরে আছে। তখন রাজাপুর ইউনিয়নের আকাশতারা ফেলে সাবগ্রাম পার হয়ে জয় বাংলা গেট পেরিয়ে যে বিস্তীর্ণ প্রান্তরের খুব নিঃসঙ্গ বয়েসি বট যে এক সময় দীর্ঘ বছর ধরে শরীরের ভাঁজে ভাঁজে লুকানো যৌবন নিয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকত নির্বিঘ্নে – তার শরীরে হেমন্তের ভেজা হাওয়ার কাঁপন লাগতে শুরু করেছে।
পোস্ট-মাস্টারের কম্পুটারের লিকুইড ক্রিস্টাল ডিসপ্লেতে ভেসে উঠে সরকারি আদেশের ঝকঝকে তকতকে একটি কালো ছায়ার বাগান। ইমেইলে স্পষ্ট আদেশ – পোস্ট অফিসের হারানো গৌরব, আবহমান বাংলার দীর্ঘ বছরের ঐতিহ্য, আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার বিলুপ্তপ্রায় সর্বশেষ স্মৃতিচিহ্ন – চিঠিকে পুনর্জ্জীবিত করতে হবে। এলক্ষ্যে সপ্তাহ ব্যাপী গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে নানাবিধ আচার-অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে।
ফিরতি ইমেলে পোস্ট-মাস্টার এই মহৎ উদ্দেশ্যে গণজোয়ার জাগরণের লক্ষ্যে ঝাঁক-ঝমকপূর্ণ অনুষ্ঠানাদির আয়োজনের বাজেট পেশ করলেন – এবং সেইসাথে গত বছরে আয়োজিত অনুষ্ঠানাদির কিছু ছবি ও এর স্বপক্ষে ইতিবাচক পরামর্শ ও সপ্রশংস বক্তব্য পেশ করলেন। এরূপ অনুষ্ঠান আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষের ভূয়সী প্রশংসাপূর্বক প্রতিবছর এধরণের অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য সবিনয় অনুরোধও জানালেন।
নিশ্চিন্তপুর পোস্ট অফিসের পিয়ন জনাব বিমল চন্দ্র দাসের হাতে থাকা অগ্রহায়ণের শেষ বিকেলের খুব কোমল, খুব নরোম এক টুকরো রোদ ক্রমশঃ ত্রস্ত পায়ে নেমে আসা হেমন্তের কুয়াশায় ঢাকা পড়ছিল ধীরে ধীরে। এক কালের মর্দ জোয়ান শরীরের পরতে পরতে জীর্ণতা নিয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকা বয়েসী বটের পাতারা ঝরে পড়ছিল। তখন নিশ্চিন্তপুর পোস্ট অফিসের পিয়ন জনাব বিমল চন্দ্র দাস তাঁর নিজস্ব সম্পর্কহীন চিঠির ছবি তুলে প্রাপকের অনুসন্ধানে পোস্ট অফিসের নিজস্ব ফেইসবুক পেইজে পোস্ট দিলেন সেইসাথে সহৃদয়বান ব্যক্তিদের পোস্টটি ভাইরাল করার জন্য সবিনয় অনুরোধ জানালেন।
ইংরেজি ভাষার দক্ষতা যাচাই বিষয়ক কথোপকথন টেস্টে পরীক্ষক জনাব আব্দুস সবুরকে জিজ্ঞেস করেছিলেন – আপনি কী মনে করেন সময়ের আবর্তে মানুষ কিছু হারায়? প্রত্যুত্তরে তিনি সপ্রতিভ হয়ে বলেছিলেন – পোস্ট অফিসে এখন ইমেইল আসে – বিলুপ্তপ্রায় চিঠির পুনরুদ্ধারের নির্দেশ নিয়ে।
ছবি- ইন্টারনেট।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:৪৩