গুরুকে বললাম; খুব দুঃশ্চিন্তায় আছি, গুরু। রাজ্যের হতাশা আমাকে জাপটে ধরেছে।
কী বিষয়ে? বললাম, ক্যারিয়ার নিয়ে, গুরু। গুরু ভাবলেশহীন। যেমনটা প্রতিনিয়ত দেখা যায়। আমাকে সুযোগ না দিয়েই গুরু হাঁটা ধরলেন। আমি সচরাচর প্রশ্ন করি না, যেমনটি এবারও। গুরু নিউমার্কেটে নিয়ে গিয়ে, খুব চকচকে তিন পাটির মজবুত দেখে আস্ত একটা কেরিয়ার ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ওতেই চলবে না মিটে গেছে?
আমি সেদিন গুরুকে আষ্টে-পৃষ্টে আঁকড়ে ধরে চীৎকার দিয়ে বলে উঠেছিলাম- আমি পেয়ে গেছি, গুরু! সেদিন আশে-পাশের গণজমায়েত ঘাঁই খাওয়া মাছের মতন হয়ে উঠেছিল।
আমার কলেজ পড়ুয়া ছোট ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম, কত লাগবে? বল্ল- দুই হাজার হলেই হবে। জিজ্ঞেস করলাম- বাড়িভাড়া কত? দেড় হাজার টাকা। আচ্ছা এখন দেড় হাজারই দেও। পরে আর পাঁচশ দিলেই হবে।
আমি কী সেদিন নির্বাক হয়ে ওঠেছিলাম? কতোটা অল্পেই তুষ্ট হই আমাদের প্রিয়জনেরা। মাটির মতনই কতোটা কোমল।
আমার বোন, তামান্না। চাকরির কাজে বান্দরবান গেলো। একা। সাথে অবশ্য ওর বান্ধবী আছে, যারে ছাড়া কিছুই করে না। আমি সন্ধ্যায় ফোন দিয়ে বললাম, ঠিকমত পৌঁছায়ছ? ও প্রায় হাউমাউ করে কেঁদেই ফেলছিল। আমি খোঁজ নিয়েছি এর জন্য।
আমাদের প্রিয়জনদের চাওয়া এটুকুই? আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।
আমাকে এবার একটা বিগ এ্যামাউন্ট দিও। অনেক প্রয়োজনীয় জিনিসপত্তর কিনতে হবে। আমি হকচকিয়ে উঠলাম। সামলে নিয়ে বললাম, ঠিক আছে। আপনার বিগ এ্যামাউন্টটা কত? বিগ এ্যামাউন্ট...। তুমিই বলো। না। আপনি বলেন। কত? পাঁচ হাজার। আমি চুপ হয়ে গেলাম। আচ্ছা ঠিক আছে। চার হাজার। আমার বুঝতে বেগ পেতে হইনি, চার হাজার বলার সময় উনার ঠোঁট কেঁপে উঠেছিল। আমাদের প্রিয়জনদের বিগ এ্যামাউন্ট এত্তো বড়?
তখন সদায় করছিলাম। রাতে রাঁধতে হবে। একটা স্পেশাল ডিস। একটু হ্যাং আউট হবার প্রস্তুতি। বিষুদবারটা ভালো যায়নি। আজকাল খুব হাউকাউ হচ্ছে চারদিকে। আমাদের পরিবারে একজন লিউ... আক্রান্ত। আমাকে ফোন দিলেন সেসময়। কেমন আছি, কী করছি। এটা সেটা। কবে দ্যাখতে যাবো। আরো কত কী। তারপর রেখে দিলেন। আমি ফিরতি কলে একটা বিকাশ নাম্বার চাইলাম। খুব কাঁচুমাচু হয়ে বললেন- কাল সকালে দিবেন। দুপুরে ফোন দিলেন। বললাম, বিকাশ নাম্বার দেন। একটা নাম্বার দিলেন। আজ তো শুক্কুরবার। সব দোকান বন্ধ। এই একটা নাম্বার পাওয়া গেল। নাম্বারটা দিতে দেরি বা একটা মাত্র নাম্বার দেওয়াটা অন্যায় ঠেকল উনার কাছে। আমি খুব সামান্য, অই বিগ এ্যামাউন্টের চেয়েও ছোট একটা এ্যামাউন্ট দিলাম। পেয়ে, আমাকে আমাকে ফোন দিলেন। বুঝতে পারছি, ওপাশের মানুষটার গলাটা ধরে আসছে। চোখ চিকচিক করছে। আনন্দে।
আমাদের প্রিয়জনেরা এতো অল্পতেই তুষ্ট হই।
আমার চোখ কী বন্ধ হয়ে আসছিল তখন। আমি শুধু চীৎকার দিয়ে বলেছিলাম, সুখ, তুমি কত সস্তা!
গুরু ফোন দিলেন। সুখ খুব আপেক্ষিক, পাগল। সহজেই মেলে। জীবন, খুব ভয়ঙ্কর সুন্দর! কিন্তু অধিকাংশরা বুঝতে পারেন না। আমি এতোটা অধিকাংশ! আফসোস! এমন সময় স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ গেয়ে উঠলেন-চরণ ধ্বনি শুনি তব নাথ...।
ছারা ভিটার বাঁশঝাড়ে চৈত মাইস্যা পুবাল হাওয়া লাগছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১০:৫৭