পবিত্র কোরআনুল কারীমে আল্লাহ্ তাবারক তা’আলা প্রথমে ছেলেদের হিজাবের কথা বলেছেন এবং পরে মেয়েদের হিজাবের কথা বলেছেন । আর এই ব্যাপারে কোরআন মাজীদের সূরা আন-নূরের ৩০ নং আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলা বলেন-
“মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে ।”
এই আয়াতে বলা হয়েছে ছেলেদের লজ্জাস্থানকে হেফাযত করার জন্য আর এর মানেই হল হিজাব অনুসরণ করা । আর দৃষ্টি নত রাখা মানে হল যখনই কোন অ-মুহরিম নারীর দিকে দৃষ্টি চলে যায় সাথে সাথে তা সরিয়ে ফেলা এবং চলার পথে অবশ্যই দৃষ্টিকে নীচু রাখা। এটাও হিজাবের অন্তর্ভূক্ত ।
পরবর্তী ৩১ নং আয়াতে আল্লাহ্ মেয়েদের জন্য বলছেন-
“ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও ।
এই আয়াতে খুব সুন্দর করে নারীদের হিজাব এবং দৃষ্টির ব্যাপারে বলা হয়েছে। এবং এই কথাও প্রতীয়মান ছেলেরা কোন কারণ ছাড়া যেমন মেয়েদের দিকে তাকাবে না তেমনি মেয়েরাও নয় ।
এখানে সবাই লক্ষ্য করতে পারেন উক্ত আয়াতদ্বয়ে নারী-পুরুষ উভয়েরই লজ্জাস্থান হেফাযতের কথা বলা হয়েছে । আর যে পোষাক তাদের লজ্জাস্থান পুরোপুরি হেফাজত করতে পারে তাকেই বলা হয় শালীন পোষাক , ইসলাম তাই বলে।
এখন কথা হল লজ্জাস্থান কতটুকুকে বোঝানো হয়েছে । এই ব্যাপারটাতেই আমরা ভুল করি । ধরে ফেলি উভয়ের জন্য একই এই ব্যাপারটা । তা নয়।
ছেলেদের জন্য সতর হল নাভি থেকে হাটু পর্যন্ত । আর মেয়েদের জন্য মুখ(সমস্ত মুখমন্ডল নয়,চোখ এবং তার উপর-নীচের কিছু অংশ), হাতের কবজি এবং পায়ের তালু ব্যতীত সমস্ত শরীর । যে পোষাক তাদের এই অংশ ঢেকে রাখে তাই হল শালীন-পোষাক ইসলামের দৃষ্টিতে ।
এখন কথা হল এই পোষাকটা কেমন হবে । পয়েন্ট আকারে দিচ্ছিঃ
১.তারা যে পোষাক পড়বে তা এমন আট-সাট হতে পারবে না যে দেহের গড়ন বা উথান-পতন বোঝা যাবে ।
২.পোষাক এমন স্বছ হবে না, যাতে করে ভেতর দিকে দেখা যায় ।
৩.পোষাক এমন আকর্ষণীয় হতে পারবে না যা বিপরীত লিঙ্গকে আকর্ষণ করে।
৪.পোষাকের ধরণ-ধারণে অমুসলিমদের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেতে পারবে না। যেমন, মাথায় সিদুর, কিংবা হাতে শাখা বা গলায় ক্রুস পরিধান করা যাবে না ।
৫. এমন পোষাক পরিধান করা যাবে না যা বিপরীত লিঙ্গের পোষাকের মত। অর্থ্যাৎ ছেলেরা মেয়েদের বেশ-ভূষা ধারণ করতে পারবে না। মেয়েরাও ছেলেদের বেশ-ভূষা নয়( প্যান্ট আর ফতুয়া বোধহয় মেয়েদের আধুনিকা করে তুলে! )।
ছেলেরা হয়তো বুঝতে পারছেন অনেকের প্রিয় পোষাক টাইট জিন্স পরিধান করা ইসলাম মোটেও সমর্থন করে না ।
ছেলেদের লম্বা চুল নিয়ে কেউ দেখি কথা বলেন না খালি মেয়েদের নিয়ে বিশ্লেষণ কেন এত?
মেয়েরা কি পড়বে তা নিয়ে মেয়েদের চাইতে ছেলেদের আগ্রহ খুব বেশি। তাই পোশাক নিয়ে সবাইকে একটু রিমাইন্ডার দিলাম।
যদি পোশাক নিয়ে সমস্যা থাকে লেখার আগে নিজের সম্পর্কে চিন্তা করবেন ।মোল্লাদের এই মধ্যযুগীয় দাবী কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না।
এই পোস্ট টিতে মেয়েদের পোশাক নিয়ে অনেক কষ্ট করেছেন প্রকৃতির প্রতিফলন নামক ব্লগার। যদি ও নিজের আরেক পোস্টে লেখা নিয়ম গুলো নিজেই মানেন না। প্রোফাইল পিক দেয়া টিশার্ট আর প্যান্ট পড়ে।
প্রকৃতির প্রতিফলনে এর আরেকটি পোস্ট এ পর্দা পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য। লেখা কিছু কথা
_ অন্য ৫ টি নিয়ম পুরুষ ও মহিলার জন্য একই।
২) তারা যে পোশাক পরবে সেটা এরকম আঁটসাঁট হবে না যে, তাদের দেহের গড়ন বোঝা যায়। পোশাক হতে হবে ঢিলা-ঢালা।
৩) পোশাক এমন স্বচ্ছ হবে না, যাতে ভেতর দিকে দেখা যায়।
৪) পোশাক এরকম আকর্ষণীয় হবে না যা বিপরীত লিঙ্গকে আকর্ষণ করে।
৫) পোশাক এমন হবে না, যা অবিশ্বাসীদের মতো, যেমন: ক্রুস পরিধান করা, পৈতা পরিধান করা ইত্যাদি।
৬) আর এমন পোশাক পরা যাবে না যা বিপরীত লিঙ্গের পোশাকের মতো। অর্থাৎ ছেলেদের সাঁজ-সজ্জা মেয়েরা করতে পারবেনা এবং মেয়েদের সাঁজ-সজ্জা ছেলেরা করতে পারবেনা
নিজে নিয়ম মানুন আর তারপর অন্যকে মানার জন্য পোস্ট দিবেন। নিজের বাপারে ঢন ঢন আর অন্যের বাপারে নিয়ম নিয়ে টন টন করলে ধর্ম নিয়ে উল্টা পাল্টা কথা তো ছড়াবেই।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৫:১৪