বুধবারে ঈদ করলাম। সিডনীর মত একটা জায়গায় ঈদ করার মজা হচ্ছে, নানা দেশের মানুষদের নানা কিসিমের ঈদের একটু আধটু ছোঁয়া পাওয়া যায়। এবার নামায পড়তে গিয়েছিলাম নতুন একটা জায়গায়। যাওয়ার কারণ--স্বল্প দুরত্ব আর বাসার কাছাকাছি একমাত্র ঈদের জামাত যা ঈদগাহ স্টাইলে খোলা আকাশের নিচে হচ্ছে। মূলত আফগান মাইগ্র্যান্টদের আয়োজিত ঈদের নামায। আরবি, ইংরেজি আর পশতু ভাষায় হচ্ছিল ঘোষণাগুলো। নামায শেষ হওয়ার সাথে সাথেই আমি এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখছিলাম রং বেরঙের জামাগুলো। আফগানরা বাড়াবাড়ি রকমের রঙিন পোশাক পড়ে। মরুভূমির রঙহীনতায় বিরক্ত হয়ে কি? আমার গোড়ালী সমান একটা পিচকি আফগান মেয়ে ঝিকমিকে বেগুনী, মেজেন্টা আর গাঢ় সবুজ জরিওয়ালা পোশাক পরে তাই তাই করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মাথার ওড়নাটা পেঁচিয়ে পিছনে বাঁধা, দেখতে গুটুশ কিউট লাগছে। এক আফগান বুড়ি মহিলা ফল আর মিষ্টি নিয়ে ঘুরছে। সবার সাথে ঈদের কোলাকোলি করে খাইয়ে দিচ্ছে। চলে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছি, তখনই হলো ঘটনাটা। ইমামের মাইকে আফগান গানের সিডি ছেড়ে দেয়া হলো।
ধুম ধাড়াক্কা গান। বাজনাটা ভীষণ পরিচিত, সানাই, হারমোনিয়াম, তবলা, বাঁশি সব আছে, পুরাপুরি বাংলাদেশি। শুধু কথাগুলো বিজাতীয়। এক পুরুষ গলা গান গাইছে। বেশ হাসি খুশি আসর জমানো গান। মাঝে মাঝে 'হই, হই' বলে তাল দেয়া। পুরা যাত্রার গানের মত লাগছিল! আমি বিহ্বলতা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই দেখি কাবুলী ড্রেস পড়া, টুপি পরা এক দল কম বয়সী ছেলে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে গেল। তারপর গানের তালে তালে মিশন কাশ্মীর স্টাইলে সম্মিলিত নৃত্য। হাঁটু ভেঙে, কনুই ভেঙে, আকাশ ছোঁয়া লাফ। আমি এই রকম ঘটনা আগে কখনও দেখি নাই। পুরাপুরি টাসকি খেয়ে গেলাম!
ঈদ মোবারক সবাইকে!
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০০৭ বিকাল ৫:২৪