প্রথমেই বাবা আইজ্যাক নিউটনের সুত্রটা আগে ঝালাই করে নেয়া ভাল । স্যার আইজ্যাক নিউটন একটা পরীক্ষা করেছিলেন পড়ন্ত বস্তুর গতি দেখার জন্য, নাম গিনি ও পালক পরীক্ষা । তিনি একটা "বায়ু শুন্য" কাঁচ নলের মধ্যে পরীক্ষাটা করলেন । তিনি একটা গিনি ( মুদ্রা ) ও একটি পালক নিয়ে একই সময়ে ছেড়ে দিলেন এবং লক্ষ্য করলেন , অভিকর্ষ বলের প্রভাবে গিনি ও পালক একই সময়ে নলের অপর প্রান্তে পৌঁছালো । তিনি সেখান থেকেই নিশ্চিত হলেন যে , বিনা বাঁধায় মুক্তভাবে পড়ন্ত বস্তু সমান সময়ে সমান দূরত্ব অতিক্রম করে ।
আমি খুব দক্ষতার সাথে ভালো মানুষের মুখোশ এটে থাকতে পারি । পাড়ায় (আমার গ্রামের বাড়ি চাটমোহর এর কথা বলছি) আমার মতো ভালো ছেলে আর একটাও ছিল কিনা এটা সন্দেহ আছে । কিন্তু পাড়া থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই আমার আসল রুপ বের হতো । বাসা থেকে স্কুলের উদ্দেশ্যে বের হয়েছি, সিনেমা হলের সামনে দিয়ে যাচ্ছি, শুট করে গন্তব্য পরিবর্তন হয়ে গেল ঢুকে গেলাম সিনেমা হলে । স্কুল প্যন্টের নিচে হাফ প্যন্ট আর শার্টের নিচে টি শার্ট পরা থাকতো । বাথরুমে ঢুকে চেঞ্জ করে ব্যগের ভেতর সব ঢুকিয়ে "মরন কামড়" টাইপ ছিনেমা দেখে বাড়ি ফিরতাম । ঝামেলা ছিল শুধু হলের গেট ম্যন । তিনি আমার বাবাকে চিনতেন কোনমতে তাকে পাশ কাটাতে পারলেই ঝামেলা খতম । ছবি দেখে টায়ার্ড হয়ে এসে মাকে বলতাম " উহ্...এতো ক্লাস করা যায় ! সার-রা "মরন-কামড়" দিয়ে পড়া আদায় করেছেন" আমি অতি সুক্ষ ভাবে ছিনেমার নামটা মা-র কাছে বলে দিতাম, যাতে হালকা করে হলেও পাপ মোচন হয় । মা " তাই নাকি !" বলে খুব আদরের সাথে, মাছে সবচেয়ে বড় পেটি টা আমার থালায় তুলে দিতেন । আমি মনে মনে হাসতাম আর মাছের পেটিতে "মরন-কামড়" বসাতাম । হায় সেসব দিন কোথায় গেল !
বদমাইসিটা বরাবরই গুরু মুথি বিদ্যা । আমারও গুরু ছিল (গুরুর প্রতি গায়েবি সালাম) । হ্যনো কোন অপরাধ নাই, যে তিনি আমাকে পরম আদরে তা করতে শেখাননি । যেমন গভীর রাতে উঠে অন্য বাড়ির টিনের চালে ঢিল ফেলা এবং সকালে গিয়ে চোখে মুখে যারপর নাই ভীতি ভাব ফুটিয়ে তুলে গল্প বলা "জানেন মিজান ভাই,গতকাল রাতে এমন ভয় পাইছি, আমাদের ছাদে কোথা থেকে যেন প্রচন্ড শব্দে ঢিল পরছে" রোগা পটকা মিজান ভাইয়ের ঘর ছাতিম গাছের নিচে,ব্যচারা থাকেন একা একা তিনি আশ্চর্য হবার একেবারে তৃতীয় মাত্রায় পৌছে প্রায় গুমরে উঠলেন " বল কি? কি সাংঘাতিক !আমার ঘরের চালের উপরও তো ঢিল পরছে রাত আড়ইটা-তিনটার দিকে । আমি ভয়ে পেশাব করতে বের হইনি । শেষে উপায় অন্ত না দেখে ঘরের কোনেই...যা দিনকাল পরছে " আমি বললাম " বলেন কি !" এর পর থেকে প্রতিদিনই নিয়ম করে রাতে মিজান ভাইয়ের ঘরের চালে ভুতে ঢিল ফেলতো ।
স্কুলের প্রোগ্রেস রিপোর্ট এ নিজেই নিজের অভিভাবক সেজে কতবার যে সাইন করে সার দের হাতে জমা দিয়েছি তা মনে করা মুশকিল । আমার বাবা ফাইলান পরীক্ষার রেজাল্ট দেখার সময় একবার সন্দেহ করে বসলেন, গলা একবারে খাদে নামিয়ে জানতে চাইলেন "কি ব্যপার শোভন, তুমি না বলেছিলে ২য় সাময়ীক পরীক্ষার প্রোগেস রিপোর্ট এবার দেয় নাই, আমার সাইন আসলো কোথা থেকে... আমি কবে সাইন দিলাম" আমি ঘটনার এমন নিখুত বর্ননা করলাম,আব্বা নিজেই এক সময় স্বীকার করতে বাধ্য হলেন যে তার বয়স হচ্ছে,সব সময় সব কিছুু মনে থাকে না । এনিয়ে তিনি আমার কাছে দু তিনবার দু:খও প্রকাশ করে ফেললেন । একবার সাইন বিষয়ক হিসাব-কিতাবে এক ধরনের প্যচ লেগে গেল,আমি পরলাম অথৈ সাগরে না বাবা সেজে সাইন করা যাচ্ছে, না স্কুলে রিপোর্ট জমা দেয়া যাচ্ছে । উপায় অন্ত না না পেয়ে আমার গুরু দেবের সরনাপর্ন হলাম । "ভাই কি করি বলেন তো? এগারো সাবজেক্টে এর চারটায় ফেল, এবার আব্বা আমাকে নিশ্চিত ভাবে "ডেজার্ট" হিসাবে খেয়ে ফেলবেন, আমি শেষ..." আমার গলা শুকিয়ে কাঠ । হাত পা কাঁপছে কারন আব্বা ঘোষনা দিয়েছেন আমার স্কুলে গিয়ে তিনি নিজে রিপোর্ট তুলে আনবেন । এবার বাংলাদেশের "রাষ্ট্রপতি" আমাকে ক্ষমা করে দিলেও আব্বা ক্ষমা করবেন না । রাষ্ট্রপতি "প্রান ভিক্ষা" দিতে পারবেন আব্বার মাইর ঠেকাতে পারবেন না, আর এখানে উল্লেখ্য আমার আব্বার হাতের থাবা ছিল মারশাল্লাহ দেখার মতো... যার পিঠে একবার পরেছে, সে তিনদিন পর হাসপাতালের বিছানায় জ্ঞান ফিরে প্রথম যে কথাটা জিঞ্জেস করে তা হল "আমি কোথায়,আমার কি হয়েছিল" সবাই শান্তনা দেয় "না তেমন কিছু হয়নি সোনা তুমি ঘুমাও... একটু পরে গিয়ে ব্যথা পেয়েছিলে" এক চড়ে পেশাব করিয়ে ফেলাতে তিনি বিশেষ ভাবে পারদর্শী ছিলেন। আমার সব ভাই বোনেরই এই অসাধারন অভিঞ্জতা আছে শুধুু আমি বাদে । অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়ে দাড়িয়েছে রাতে ঘুমাতে পরিনা, ঘুমের মধ্যেও দেখি আব্বা তার বিশাল থাবা উচিয়ে আমাকে ধাওয়া করছেন ।
আমি ভেবে রেখেছিলাম এবার আব্বাকে এই ঘটনা জানাজানি হবার আগেই একটা ইসলামি বই উপহার হিসাবে দেবো । নাম "মহানবীর দয়া" । মহানবী কি ভাবে জীবে দয়া করেছেন, পরম শত্রুকেও কিভাবে পরম আদরে বুকে টেনে নিতেন তার সুনিপুন ও বিশদ বর্ননা থাকবে সেখানে । বাকিটা আল্লার ইচ্ছা । আমার নামাজ পরার পরিমান বেড়ে গেল । যাহোক "ভাই কিছুু একটা করেন,আমি তো শেষ... শেষ..." বলে যখন গুমরে গুমরে মরছি তখন দেখি গুরু দেব মিটমিট করে হাসছে । তিনি বললেন 'দেখি রেজাল্ট কার্ডটা'। তার হাতে রেজাল্ট কার্ডটা দিলাম । তিনি ফরাত করে টান দিয়ে ছিঁড়ে ফেললেন । ঘটনা দেখে আমার প্রায় ঞ্জান হারানোর অবস্থা হল । আমি ডুকরে উঠলাম "ভাই এটা কি করলেন?" আমাকে ছেড়া কাগজ গুলো হাতে দিয়ে বললেন এটা প্রথমে একগ্লাস পানির মধ্যে আধা ঘন্টা ডুবিয়ে রাখবি তার পর কাগজ ফেলে দিয়ে পানি টা পশ্চিম দিকে মুখ করে একচুমুকে খেয়ে ফেলবি আর কাল এসে আমার সাথে দেখা করবি । আমি ঠিক আছে বলে চলে আসালাম । বড় ভাই যা বললো তাই করলাম অক্ষরে অক্ষরে... পরের দিন দেখা করলাম দেখি তিনি ছু মন্তর দিয়ে কোথা থেকে যেন একটা নতুন রিপোর্ট কার্ড বের করলেন । " খালুু তোর স্কুলে কবে যাবে ? আমি বললাম " আগামী বৃহশ্পতি বার অফিস খেকে আসার পথে" ভাই বললো " তুই আজই কার্ড জমা দিয়ে আসবি । খেয়াল করে দেখলাম মোটামুটি ষাটের ঘরে সবগুলা নাম্বার । সেবার কানের কাছ দিয়ে গুলি গেল । আব্বার বিখ্যাত থাবা আর খাওয়া আর হলো না,বেচে গেলাম ।
চলছিল ভালই । বন্ধুরা মিলে স্কুলের পেয়ারা চুড়ি, পাশের ক্ষেতের টমেটো চুড়ি । অন্যের বাসার জানালা খোলা পেলে কুকুরে গু জানালা দিয়ে ছুুড়ে মারা । চিঠির খামের মধ্যে মরা ইদুর ভরে পোষ্ট করা, হ্যনো অন্যায় নাই যে করিনি । হঠাত সব অন্যায় ধুপ করে একদিন নিভে গেল যেদিন মহা লজ্জাটা পেলাম । কথায় বলে পাপ বাপকেও ক্ষাম করেনা । আমাকেও করেনি । এরপর আর কোনদিন কাউকে ফাঁকি দেইনি,বা কারো অনিষ্ট করিনি। ঘটনাটা ছিল এমন -
আমাদের বন্ধুদের মধ্যে সব সময় একটা প্রতিযোগিতা চলতো কে গাছের কতো উঁচু ডাল থেকে লাফ দিয়ে পানিতে পরতে পারে । নদীর ধারেই গাছ । ঘাট ভর্তি মানুষ । বিশেষ করে মেয়ে মানুষ । তখন নতুন নতুন মাত্র লুঙ্গি পরতে শিখেছি । নিজের লুঙ্গির উপর কন্ট্রোল খুবই সামান্য । আমি সব সময়ই পরে লাফ দেবার পক্ষপাতি ছিলাম করন অন্যদের হাইট আগে বুঝে নেবার ব্যপার ছিল । মান সম্মানের ব্যপার, যদি ওদের চেয়ে উঁচু ডাল থেকে লাফ না দিতে পারি । গাছের সবচেয়ে উঁচু ডালে উঠেছি । একটা অলিখিত নিয়ম ছিল প্রত্যেক জন লাফ দেবার আগে উপস্থিত সবার দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য কিছুু একটা বলতে বলতে পানিতে পরবে যেমন আমার এক বন্ধুর নাম ছিল খোকন... সে চিতকার করে বলতো "আমি হারকিউলিস খোকন... ইয়ালি..." বলে ঝুপ করে লাফদিয়ে পানিতে পরতো..... মেয়ে মহিলারা কেউ তাকাতো বা বিরক্ত হতো তবে যাই হোক, তারাও এনজয় করতো । এবার আমার পালা আমি উঠেই টারজানের ডাক দিলাম (ও.....ও....ও.....) যেই না লাফ দিয়েছি হঠাত আবিষ্কার করলাম আমার লুঙ্গির গিট খুলে গেছে । ঠিক তিন সেকেন্ডের মাথায় বাতাসে লুঙ্গি ফুুলে উপরের দিকে উঠে গেল এবং আমি লুঙ্গি থেকে বেড়িয়ে ঝপাত করে পানিতে পরলাম । মান ইজ্জতের একেবারে ফালুুদা । আমি পানিতে পরেই বুঝতে পারলাম সবাই হো হো করে হাসছে... গন্ডারের মতো শুধু মাথা ভাসিয়ে চোখ তুলে তাকিয়ে দেখি আমার স্বাধের লুুঙ্গি তখনও হেলে দুলে আস্তে আস্তে বাতাসে ভাসতে ভাসতে আমার থেকে সামান্য দুরে এসে পরলো । রাগে দু:খে ক্ষোভে আমি ওই অবস্থাতেই আল্লার কাছে দোয়া করলাম হে আল্লাহ আমি আর মানুষ হয়ে বাচতে চাই না । আমাকে মাছ বানিয়ে দাও । আমি বাকিটা জীবন পানিতেই থাকতে চাই, মানব সমাজ আমার জন্য অসহ্য । সর্বশক্তিমান আমার ডাক শুনলেন না । আমাকে জীবন বাচানোর তাগিদে ভেসে উঠতে হল । তবে সাতার দিয়ে অন্য ঘাট গিয়ে উঠলাম ।
বাংলাদেশ সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ, বাচ্চাকাচ্চারা বুঝুক আর নাই বুঝুক সার আইজাক নিউটনের গিনি ও পালক পরীক্ষার ব্যপারটা যেন ক্লাস ফোর বা ফাইভ এর সিলেবাসে যুক্ত করে দেয়া হয় । যাতে এদেশের ভবিষ্যত প্রজন্ম লুঙ্গি বিষয়ক জটিলতায় না পরে তাদের মান-সম্মান বাঁচিয়ে ঘরে ফিরতে পারে । অনন্তত, এটুকু বুঝতে পারে বাতাসে লাফ দেবার আগে নিজের মান ইজ্জত বাচাতে লুুঙ্গির গিটটি যেন সঠিক ভাবে পুন:নিরীক্ষার সহিত সতর্ক হয় । শোভন ।