( গেল রোজার মধ্যে কার ঘটনা )"হাউ ডিসগাস্টিং".... "মাত্র ৫০০ টাকার নোট ভাংতি নাই" ! রিকশাওয়ালা মাথা নিচু করে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে,রোজার দিনের পরন্তু বিকেল, সে পিচ করে একদলা থুথু ফেললো । খালি পা,ডান পায়ের বুড়ো আঙ্গুলের নখ দিয়ে সে মাটি আলগা করছে । "৫০০ টাকা ভাঙতি নাই কেন" সেই লজ্জায় সে ভীষন ভাবে লজ্জিত । সে ঠিক করেছে আর মাথা তুলে তাকাবে না । যাত্রিকে আর মুখ দেখাবে না । বুড়ো আঙ্গুল দিয়েই মাটি সরিয়ে গর্ত করে মাটির নিচে ঢুকে বাঁচবে !!! যে মেয়েটা "হাউ ডিসগাস্টিং" "হাউ ফানি" বলে চিৎকার করছে, জীবন যে "হাউ ডিসগাস্টিং" নয় সেটা বোঝার বয়স হয়েছে কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ থাকতে পারে,একে তো "নব পুষ্প প্রস্ফুঠিত"-শরীর তার উপর "টিনটপস" আর "থ্রি কোয়াটার" পরিহিতা । সে জীবন কে "হাউ ফানি" হিসেবেই বিবেচনা করবে, এটাই স্বাভাবিক (আধুনিক মেয়ে তো !!!) । কিন্তু সাথে যে "মা"-টা রয়েছেন তার কি হবে ? তিনিও কি "আধুনিক মা"!!!??? পোশাকে-পরিচ্ছদে মনে হল মাত্র হিন্দি সিরিয়াল "সেরে" এলেন বা "ছেড়ে" এলেন, ঠিক বোঝা গেলো না । এখানে উল্লেখ করা ভালো মা-মেয়ে দুজনই বের হয়েছেন সংযোম এর মহাযঞ্জ ইফাতার পার্টিতে যোগ দিতে ।
মেয়ের "হাউ ডিসগাস্টিং" সহ্য করতে না পেরে রিকশাওয়ালাই শেষে হার মানলো । মুখ তুলে তাকালো । তবে দৃষ্টি অন্য দিকে । এবার বোঝা গেলো আসলে কেন মাথা নিচু করে মাটির দিকে তাকিয়ে ছিল । প্রাপ্ত বয়স্ক একজন মেয়েকে "টিনটপস" আর "থ্রি কোয়াটার" এতোক্ষন রিকশাওয়ালা ভদ্র্রলোক ঠিক নিতে পারেননি !!! ওর কালচারে খাটেনা । ছোটলোক দের কালচার তো !!!! মহিলা রীতিমতো হুংকার ছাড়লেন-
- ৫০০ টাকার ভাংতি নাই ...এটা কোন কথা...
-কই পামু খালা কন? মাত্রইতো বাইর হইছি....("খালা" শব্দটা মনে হয় মহিলা হজম করতে পারলেন না )
-(মহিলার একেবারে ফেটে পরলেন) অসভ্য সব লোকজন...ক্যান যে এসব ঢাকায় আসে...তুমি জান আমি কত আর্জেন্ট কাজে যাচ্ছি....
-দ্যান খালা ভাঙ্গায়া আনি....
-হমমমমমমম তোমাকে দেই আর তুমি পালাও.....
-রিকশা কি মাথায় কইরা লইয়া যাইতাছি ?....আর এই রমজানে আমনের ৫০০ টাকা খাইয়া মরার আওশ নাই....(বিরক্ত আর ক্ষোভ)
-কি বেয়াদব দেখছিস.... যাও যাও অনেক দেড়ি করিয়ে দিলে....তোমাদের কোন কমন সেন্স নেই ....আমাদের দেখেও বুঝতে পারছোনা আমরা কোথায় যাচ্ছি.....!!! যত্ত সব গাধার দল !!!
-( এদিকে "হাউফানি" আফা ! মহাবিরক্ত) ওফফফ....... মম তুমি পারও .... ইফতার পার্টির টাইম হয়ে গেছে....এবরিবডি ওয়েট ফর আস....প্লীজ হারি ম্যান....
একে তো দুর্বল, রোগা পটকা রিকশাওয়াল, তার উপর ইংরেজীর গুলি,ধাতে ঠিক সহ্য হল না । "প্লীজ হারি ম্যান"... শুনে সে "হাড়ির" খবর বলবে না "সুপার ম্যান" এর মতো উড়াল দিয়ে ভাংতি আনবে ঠিক বুঝতে পারছে না । "ইফতারের যে পার্টি হতে পারে,এবং তাতে যে হাতা-কাটা, পায়া-কাটা ড্রেস পরে যেতে হয়, তা সে ঠিকই বুঝেছে" সে আমার দিকে তাকিয়ে, মুচকি হাসি দিয়ে, বুঝিয়ে দিল । আমিও বুঝলাম, হাসির উত্তরে হাসলাম ।
আমিও হয়েছি এক ঘাটের মড়া...."পরবি পর মালির ঘাড়েই" অবস্থা.... । অফিসে যাবার সময় প্রতি দিনের বিপত্তির মতোই, ভাংতি বিপত্তিতে দাঁড়িয়ে ছিলাম একই জায়গায় । ভাংতি টাকা-র বিপত্তিকেই এক্ষেত্রে ধন্যবাদ জানাতে হয়, না হলে তো এই আধুনিক ইফতার পার্টির আধুনিকতা সম্পর্কে জানাই হতো না । হে আল্লাহ !!! একটা দড়ি ডাউন লোড করো, না হয় আমাকে আপলোড করে তোমার কাছে নিয়ে যাও..... আর সহ্য হয়না..... হায়রে রোজা .... হায়রে সংযোম !!!!.........
(এই লেখাটার "মূল ভা..বো..না" আমাদের এডিটর শামীম খান (ইউভরাজ) সাহেবের, আমি শুধু তার থিমের উপর হাত ঘুরিয়েছি মাত্র .... সেজন্য ক্ষমা প্রার্থী..... )
ভাই শামীম,
একই অধমকে মাফ করবেন দয়া করে ।
(চরনো ধরিতে দিও গো মোরে...... নিও না, নিও না সরায়ে.... রবিঠাকুরের দোহাই....)
বিনীত,
শোভন
৭১ । (সংবাদ নয় সংযোগ)