ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ একের পর বাংলাদেশীকে হত্যা করছে। নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের হত্যা, নির্যাতন, অপহরণ যদি নিয়মিত ঘটনা হয়ে যায় তাহলে দুই প্রতিবেশী দেশ কি সুপ্রতিবেশী সুলভ মনোভাব নিয়ে চলতে পারে? ভারত প্রায়শ দাবী করে যে বাংলাদেশ তাদের বন্ধু প্রতিম দেশ। কিন্তু সীমান্তে নানা কারণে বাংলাদেশী হত্যা নির্যাতন অপহরণ ভারতের দাবিকে সমর্থন করে না। পৃথিবীর আর কোথাও সীমান্তে এত লোক হত্যার নজির নেই। বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর সীমান্ত সংঘর্ষের ব্যাপারে পররাষ্ট্র পর্যায়ে অসংখ্যবার ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে। বৈঠকগুলো ভারতীয় কর্মকর্তাগণ সীমান্তে আর গুলি চলবে না। একতরফাভাবে সীমান্তে আর মানুষ হত্যা করা হবে না- ইত্যাদি চটকদারী বাক্যের ব্যবহার করলেও তা যে একেবারে অসার তার প্রমাণ আমরা প্রতিদিনের পত্রিকাগুলোতে দেখতে পাই। ভারত বার বার বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক স্থাপনের দাবি জানালেও এদেশের নাগরিকদের সাথে ভারতের আচরণ চরম শত্রুতামূলক। এভাবে বেপরোয়া হয়ে সীমান্তে প্রতিবেশী দেশের নাগরিক হত্যা কোনো সুসভ্য দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী করতে পারে না। আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতি এবং মানবাধিকার দৃষ্টিতে এ ধরনের হত্যাকান্ড মারাত্মক অপরাধ হিসেবেই বিবেচিত। আর এই অবিচারমূলক হত্যাকান্ডের ক্ষেত্রে বিএসএফ ঔদ্ধত্যপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসী বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। তারা কোনো ধরনের ন্যায়নীতি, বিবেক ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করছে না। কয়েকমাস আগে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে বাংলাদেশী যুবক হাবিবুর রহমানকে নির্মম নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। যার ভিডিও চিত্র এদেশবাসীই নয়, বিশ্ব বিবেককে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আত্মরক্ষার নামে কৃষক দিন মজুর, গরু ব্যবসায়ীসহ শত শত লোককে গুলি করে হত্যা করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীবাহিনী বিএসএফ। বিএসএফ’র হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে ভারতেরই অনেক মানবাধিকার সংগঠন। সম্প্রতি একটি মানবাধিকার সংস্থা বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে মানবাধিকার লংঘন সংক্রান্ত এক অ্যাডভোকেসি সভায় জানিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা ২০০০ সালের ১ জানুয়ারী থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ১২ বছর বা এক যুগে ৯৬৬ জন বাংলাদেশীকে হত্যা, ৭৫৪ জনকে নির্যাতন এবং ১০৩২ জনকে অপহরণ করেছে। কেবল চলতি বছরেই হত্যা করেছে ৩৩ জন বাংলাদেশীকে গুলি ও নির্যাতন করেছে ২২ জনকে আর অপহরণ করেছে ৫৮ জনকে। সকল বৈঠক আলোচনায় ভারত বলেছে তারা আর হত্যা, নির্যাতন, অপহরণ ইত্যাদি মানবাধিকার বিরোধী কার্যকলাপ চালাবে না। কিন্তু ভারত কখনোই যে কথা রাখেনি তার জলন্ত প্রমাণ। চলতি বছরে ৩৩ জন বাংলাদেশীকে হত্যা ইত্যাদি মানবাধিকার সংস্থার দেওয়া তথ্য। ভারতীয় এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বিএসএফ কোনো নিরপরাধ নাগরিককে হত্যা করে দায়মুক্তি পেতে পারে না। বিএসএফ শুধু আত্মরক্ষার জন্যই গুলি করতে পারে। কিন্তু এই সুযোগের চরম অপব্যবহার করে আসছে তারা। ভারতের সবচেয়ে বৈরী প্রতিবেশী পাকিস্তান। চীনের সংগেও ভারতের বৈরিতা রয়েছে। তা সত্ত্বেও ভারত পাকিস্তান-চীন সীমান্তে কোনো রকমের হত্যাকান্ড সংঘটিত হয় না। যে কোন হত্যাকান্ডের পর বিএসএফ দাবী করে গরু আনতে গিয়ে চোরাকারবারীরা মৃত্যুবরণ করছে। কিন্তু ফেলানীতো নিশ্চয়ই গরু চুরি করতে যায়নি। তাহলে কেন ফেলানীকে হত্যার পর কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। ১২ বছর বয়সী সুমি বা ১৩ বছরের আবদুর রকিব কি কোন চোর ছিল? এরা দুইজনই ২০০৯ সালে বিএসএফের গুলিতে মারা যায়। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, সীমান্ত চোরাকারবারীরা উপস্থিত নেই। উভয় সীমান্তে হয়ত কিছু কিছু নাগরিক চোরাচালানের সাথে জড়িত। কিন্তু শুধু গরু চোরাচালান হয় না। মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান হয়। দীর্ঘদিন থেকেই সীমান্তবর্তী ভারতীয় গ্রামগুলো হয়ে উঠেছে ফেনসিডিল ও অস্ত্র তৈরী অভয়াশ্রম। প্রতিদিন ওপার থেকে হাজার হাজার বোতল ফেনসিডিল এপারে পাচার হচ্ছে, পাচার হচ্ছে অস্ত্রও। ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও এ বিষয়ে তেমন কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। ফেনসিডিলের সর্বগ্রাসী ছোবলে দেশের লাখ লাখ যুবক আজ নেশার জগতে আচ্ছন্ন। অবৈধভাবে আসা অস্ত্র রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক নিরাপত্তার জন্য দিন দিন হুমকি হয়ে উঠেছে। এসব সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু ভারতের কাছ থেকে আমরা যথার্থ সহযোগিতা কামনা করি। যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা কি সে উদারতা দেখাতে সক্ষম? বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ভারত একটি উদীয়মান শক্তি। বাংলাদেশের মতো একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের পক্ষে এত শক্তিশালী প্রতিবেশীকে মোকাবেলা করা কঠিন। তাই সরকারের উচিত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিষয়টি উত্থাপন করা। এ জন্য আমাদের নীতি নির্ধারক মহলের আরও কৌশলী হওয়া প্রয়োজন।

আলোচিত ব্লগ
দেশের দরীদ্র সমাজ এখনো ফুটপাতে ঘুমাচ্ছেন
বেরিয়েছিলাম উত্তরা যাওয়ার উদ্দেশ্যে। মানিক মানিক মিয়া এভিনিউ পার হওয়ার সময়ে, খামারবাড়ির সামনে গোল চত্বরে হঠাৎ চোখ গেলো। চত্বর ঘিরে সারি সারি মানুষ শুয়ে আছেন। গত সরকারের আমলে আমার এলাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন
ড. ইউনূসের ক্ষমতার ভারসাম্য এবং পিনাকী গং-এর সংঘবদ্ধ মিথ্যাচার ও সামাজিক প্রতারণা
এই পোস্টটি মূলত ঢাবিয়ানের পোস্ট "বিএনপি - জুলাই বিপ্লবের বিশ্বাসঘাতক" এবং জুল ভার্নের পোস্ট "আব তেরা ক্যায়া হোগা কালিয়া!"-এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে লেখা।
বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংস্কারের দাবির বিষয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বর্তমান রাজনৈতিক টালমাটাল অবস্থার প্রেক্ষাপট এবং প্রত্যাশা......
বর্তমান রাজনৈতিক টালমাটাল অবস্থার প্রেক্ষাপট এবং প্রত্যাশা......
বিএনপি নেতারা ডক্টর ইউনূসের দেখা করতে সময় চেয়ে এক সপ্তাহ ধরে ঘুরতেছেন। কিন্তু ইনটেরিম প্রধানের শিডিউল- ই পাচ্ছেনা। আর ওদিকে নাহিদ শুনলেন, ডক্টর... ...বাকিটুকু পড়ুন
ওগো ভিনগেরামের নারী, তোরে সোনাল ফুলের বাজু দেবো চুড়ি বেলোয়ারি......
সেই ছোটবেলায় আমার বাড়ির কাছেই একটা বুনো ঝোপঝাড়ে ঠাসা জায়গা ছিলো। একটি দুটি পুরনো কবর থাকায় জঙ্গলে ছাওয়া এলাকাটায় দিনে দুপুরে যেতেই গা ছমছম করতো। সেখানে বাস করতো এলাকার শেষ... ...বাকিটুকু পড়ুন
নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না : ড. ইউনূসের মনে কেন এমন আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে ?
দৈনিক সমকাল থেকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর বরাতে আমরা জানতে পারি —প্রশাসন, পুলিশ এবং নির্বাচন কমিশনের ওপর সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেই—নির্বাচনের পূর্বপ্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে এক গভীর... ...বাকিটুকু পড়ুন