আমরা সবাই জানি ইতিহাস রচিত হয় বিজেতার হাতে। তবে সেই ইতিহাস যুগে যুগে পাল্টে গেছে ভাষা দেশ জাতি ধর্মের কারনে। কখনো পণ্ডিত, আর্য শ্রেনীরা, ইতিহাস রচয়িতারা, শাসকেরা একটু একটু করে নিজেরদের মর্জি মত পাল্টে দিয়েছেন। ইতিহাস যত পুরনো তত বেশী গোজামিলে ভরা গোলমেলে। মুল সমস্যা হচ্ছে; কোন কোন ইতিহাসের জন্য একটা মাত্র রেফারেন্সের উপর নির্ভরশীলতার কারনে সত্য মিথ্যা নিরূপন করার কোন উপায় থাকে না।
কোন কোন ইতিহাস শুধু তদ্বেশীয় মানুষ দ্বারা নয়, বিদেশী ইতিহাসবিদ ও পর্যটকদের দ্বারাও ভুলভাল লিপিবদ্ধ ও বিকৃতভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।(এখানে নাম, স্থান ও জাতি গড়মিল খুব বেশী পরিলক্ষিত হয়।)
আজকে আমরা যখন কোন কিছু লিখতে বসে যে কোন কিছুর রেফারেন্স দেই তখন কেউ হয়তো প্রশ্ন করে বসেন এর সুত্র কি?
আমরা অবলীলায় বলে দিই; উইকিপিডিয়া, উইকিমিডিয়া, ওয়াশিংটন পোস্ট, হিন্দুস্টান টাইমস, অমুক হিস্টোরি সাইট ব্লা ব্লা ব্লা
যিনি প্রশ্ন কর্তা তিনি এসব শুনে নিশ্চিত হন যে, রেফারেন্স যেহেতু পোক্ত আছে সেহেতু কথা ঠিক। জেনে না জেনে আমরা বিভিন্ন অনলাইনের তথ্য বইয়ে পড়া, কিংবা পাঠ্য বইয়ের তথ্য বিশ্বাস করছি। কিন্তু আসলে এসব কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য।
***
বঙ্গভুমি, বাংলা ভাষা ও বাংলা সংস্কৃতি নয়ে যখন আলোচনা হয় তখন কিছু উগ্রপন্থী সনাতনধর্মী এমনভাবে কথা বলে যে, পুরো বাঙ্গালী মুসলিম জাতি আসলে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে। এই জাতিস্বত্তা, ভাষা ও ভুমির উপরে পুরো অধিকার তাদের। ওদিকে কিছু উগ্রপন্থী মুসলিম মনে করেন এই ভুমি ভাষা ও সংস্কৃতি পুরোপুরি হিন্দুয়ানী প্রভাবযুক্ত ও অপবিত্র। তারা দীর্ঘকাল ধরে বিভিন্ন আরবী-ফারসী শব্দ যুক্ত করে ভাষাকে পরিশুদ্ধ, পুত ও পবিত্র করার চেষ্টায় রত আছেন। এই দুই দল-ই বাঙ্গালী হবার পরেও সুযোগ পেলে একে অপরের বিরুদ্ধে উসকে দেই।
***
আমার আচমকা দুর্মতি হল, 'বাংলায় মুসলিম ইতিহাস' জানার। বলতে দ্বীধা নেই যে, আমার ধারনা থেকে অনেক বেশী কিছু জেনেছি। তবে এটা বলতেও দ্বীধা নেই যে, একটু ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে দেখি, আমি যা জেনেছি তাঁর প্রায় অধিকাংশই ভুল। আরো বেশী পরিসরে ঘেটে দেখি যাবত 'ইতিহাসই ভুলে ভরা'; আসলে আমাদের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ভুল ইতিহাস শিক্ষা দেয়া হয়।
আজ আপনাদের একটা ইতিহাসের গল্প শোনাব। মাত্র ৬১০ বছর আগের বাংলার ইতিহাস। অতি চমকপ্রদ সে ইতিহাস! কিন্তু কি বিকৃতি, কি ভু্ল কতটা ভয়াবহ গোলমেলে সে ইতিহাস, যা জানলে পৃথিবীর লেখ্য সব ইতিহাস থেকে আপনার মন উঠে যাবে।
বাংলায় মুসলিম শাসনের ইতিহাসের শুরু ১২০৩ সাল থেকে সেন সম্রাজ্যের পতনের দিন থেকে ইখতিয়ারউদ্দিন বখতিয়ার খিলজির হাত ধরে।
সেই থেকে শুরু শেষ হল, মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের মধ্য দিয়ে আমাদের সিরাজুদ্দৌলার মাধ্যমে বৃটিশদের কাছে।
এর মাঝে মাত্র দুই বছর মতান্তরে ৪(মতান্তরে ৫ কিংবা ৬) বছর হিন্দু রাজার শাসন ছিল। সেই রাজার নাম ছিল ‘গনেশ’। কোথাও তাঁর উল্লেখ কংস রাজা। পৌরানিক কাহিনীতে কংস নামে এক রাজার উল্লেখ আছে, তবে সেই কংস এই কংস নন।
তবে উইকি আমাদের জানাচ্ছে যে, তাঁর নাম কানস রাউ বা কানস শাহ বলে উল্লেখ রয়েছে। ইন্দো-পারসীক ইতিহাসবিদরা তাঁকে রাজা কংস বা কানসি বলে উল্লেখ করেছেন। একে সংস্কৃত গণেশ শব্দের ভুল আরবি বানান বলে মনে করা হয়।
এক নামের কতগুলো রূপ;
তাঁর মুল নাম আমরা জানতে পারি (মহারাজ) গণেশ নারায়ণ রায়ভাদুড়ি
তাঁকে কোথাও কংস, কোথাও কানসি রাউ, কোথাও কানস শাহ, কোথাও কানসি, কানস, কাঁসি, কাংসি, খো-শো, শা-সে বলে উল্লেখ করা হচ্ছে।
****
মহারাজ গনেশের বাংলা শাসনের সময়কাল নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক এক ইতিহাসঃ
৬০০ বছর খুব কি বেশী সময়? ইতিহাসের বিচারে এটা খুব বেশি সময় আগের কথা নয়। আমরা বাঙ্গালীরা আমাদের ইতিহাস সংস্কৃতি ভাষা ঐতিহ্য নিয়ে খুব গর্ব-টর্ব করে বুক চিতিয়ে বেড়াই। যীশুর জন্মের বহুকাল আগে দ্যা গ্রেট আলেকজান্ডার ব্যর্থ বাংলা অভিযাজের গল্প বলে তৃপ্তির ঢেকুর তুলি। অথচ মাত্র দুশো পাঁচশ বছর আমরা পেছন ফিরে তাকাই-অজস্র ভুলে ভরা ইতিহাস আমাদের। তাঁর মানে ওই আদ্যিকালের ইতিহাসগুলো গপ্পের গরুর গাছে ওঠানো ইতিহাস কি? আমরা যা জানি তাঁর কতটুকু ঠিক জানি?
আমরা আসলেই কি ভুল জানা জ্ঞানী মানুষ সব? আসুন একটু দেখি 'মহারাজা গনেশের ইতিহাস'
উইকিপিডিয়া বাংলাঃ মহারাজ গণেশনারায়ণ রায়ভাদুড়ি (পঞ্চদশ শতাব্দী) (শাসনকাল ১৪১৫) ছিলেন বাংলার একজন হিন্দু শাসক। তিনি বাংলার ইলিয়াস শাহি রাজবংশকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতায় এসে সমগ্র বাঙ্গালা জুড়ে স্বাধীন হিন্দু সাম্রাজ্য স্থাপন করেন ।তাঁর প্রতিষ্ঠিত রাজবংশ ১৪১৫-১৪৩৫ সময়কালে বাংলা শাসন করে।
একটি ইসলামিক ওয়েব সাইটঃ খৃষ্টীয় ১৪১২ সনে সুলতান গিয়াসুদ্দীন আযম শাহের ইন্তিকালের পর তাঁর পুত্র সাইফুদ্দীন হামযা শাহ বাঙালাহর সুলতান হিসেবে পাণ্ডুয়ার মসনদে বসেন। তিনি পিতার যোগ্য ছেলে ছিলেন। সুলতানের সভাসদদের মধ্যে একটি ইসলামী গ্রুপ ছিলো। এই গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন রাজা কংস বা গনেশ। রাজা কংস সাইফুদ্দীন হামযা শাহকে হত্যা করেন।
হামযা শাহের অনুগত ব্যক্তিত্ব শিহাবুদ্দীন রাজা কংসের চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। তিনি রাজা কংসের শক্তি খর্ব করতে সক্ষম হন। তিনি শিহাবুদ্দীন বায়েজিদ শাহ নামে পাণ্ডুয়ার মসনদে বসেন। রাজা কংস মরিয়া হয়ে উঠেন। তিনি তাঁর সমমনা ব্যক্তিদেরকে সংগঠিত করে সুলতানের ওপর হামলা চালান ও তাঁকে হত্যা করেন।রাজা কংস এবার নিজেই পান্ডুয়ার মসনদে বসেন।
এখানে ক্ষমতাশাল দেখানো হচ্ছে ১৩ থেকে ১৪ সাল নাগাদ। তিনি হত্যা করলেন; সাইফুদ্দিন হামজা শাহ্ ও শিহাবউদ্দিন বায়েজিদ শাহ্ কে।
বাংলাদেশের ইতিহাস/ রমেশচন্দ্র মজুমদার। মহারাজা গনেশ ছিলেন গৌড়ের রাজা। প্রথম দিকে তিনি ইলিয়াস শাহী রাজবংশ-এর চতুর্থ শাসক হামজা শাহ (১৪০৯-১৪১৩ খ্রিষ্টাব্দ) অধীনে জমিদার ছিলেন। হামজা শাহ-এর মৃত্যুর পর, শিহাবউদ্দিন বায়াজিদ অল্প সময়ের জন্য সিংহাসনের অধিকারী হন। এই সময় রাজা গণেশ ক্ষমতার শীর্ষে চলে আসেন।
'রিয়াজ-উস-সুলতান' নামক গ্রন্থ মতে তিনি রাজশাহী অঞ্চলের ভাতুরিয়ার জমিদার ছিলেন। তিনি হামজা শাহ -এর আমলেই একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন। ১৪১৫ খ্রিষ্টাব্দে সুলতান আলাউদ্দিন ফিরোজ শাহ-কে হত্যা করে, সিংহাসন দখল করেন। এই সূত্রে ইলিয়াস শাহী রাজবংশ প্রথম পর্যায় (১৩৪২-১৪১৫) শেষ হয় এবং শুরু হয় রাজা গণেশের রাজত্বকাল।
এখানে তিনি আলাউদ্দিন ফিরোজ শাহ্ কে হত্যা করে ক্ষমতায় আসলেন। আরেকটা ব্যাপার লক্ষ্য করবেন;হামজা শাহ ক্ষমতায় আসীন হয়েছেন ১৪১২ সালে , তাঁর মানে গিয়াসুদ্দিন আজম শাহ্ ১৪০৯ সালে নয় ১৪১২ সালে মৃত্যুবরন করেছিলেন।
ওদিকে আমাদের বাংলা পিডিয়া কি বলছে শুনে আসি আসুন;
বাংলা পিডিয়াঃ রাজা গণেশ
রাজা গণেশ রাজশাহী জেলার ভাতুরিয়া ও দিনাজপুরের হিন্দু জমিদার গণেশ (মুসলিম ঐতিহাসিকদের রচনায়‘কন্স’ হিসেবে উপস্থাপিত) পনের শতকের প্রারম্ভে ইলিয়াসশাহী বংশের দুর্বল সুলতানের নিকট থেকে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে বাংলার রাজা হন।
তাঁর জন্ম ও বংশ পরিচয় সম্পর্কে সঠিক কিছু জানা যায় না। গিয়াসউদ্দীন আজম শাহের রাজত্বকালের শেষের দিকে ফিরুজাবাদের ( পান্ডুয়া) ইলিয়াসশাহী রাজদরবারে যেসকল অমাত্য প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন, গণেশ তাঁদের অন্যতম। তিনি সাইফুদ্দীন হামজাহ শাহ, শিহাবউদ্দীন বায়েজীদ শাহ ও আলাউদ্দীন ফিরুজ শাহের রাজত্বকালে বাংলার রাজনীতিতে ষড়যন্ত্রমূলক ভূমিকা পালন করেন এবং কম করে হলেও চার বছর (১৪১০-১৪১৪) রাজ্যের প্রকৃত ক্ষমতা তাঁর হাতে কেন্দ্রীভূত ছিল। তিনি রাজ্যের শাসন কর্তৃত্ব কুক্ষিগত করেন এবং বিশৃঙ্খলা ও রাজনৈতিক গোলযোগের সুযোগে আলাউদ্দীন ফিরুজ শাহকে সিংহাসনচ্যুত (সম্ভবত হত্যা) করে ১৪১৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলার সিংহাসন দখল করেন।
এখানে বলা হচ্ছে আলাউদ্দিন ফিরোজ শাহ্কে সিংহাসনচ্যুত (সম্ভবত হত্যা) করে ১৪১৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলার সিংহাসন দখল করেন। বাংলাপিডিয়া বলছে ১৪১৪ থেকে ১৪১৮ সাল পর্যন্ত বাংলা শাসন করেন। বাহ্
এবার দেখে আসি আরবী উইকিপেডিয়া কি বলে;
রাজা গণেশ (বাংলা: রাজা গণেশ; শাসিত ১৪১৫) ছিলেন বাংলার একজন হিন্দু শাসক, যিনি প্রথম ইলিয়াস শাহী রাজবংশের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বাংলায় ক্ষমতা দখল করেন। মধ্যযুগের আধুনিক ইতিহাসবিদরা তাকে একজন দখলদার বলে মনে করেন। তিনি যে গণেশ রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তা ১৪১৫ থেকে ১৪৩৫ সাল পর্যন্ত বাংলা শাসন করেছিল। তাঁর নাম তাঁর পুত্র সুলতান জালালুদ্দিন মুহাম্মদ শাহের মুদ্রায় "কাংস শাহ" হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইন্দো-পারস্য ইতিহাসবিদরা তাঁর নাম রাজা কাঁসি বা কাঁসি বলে উল্লেখ করেছেন। অনেক সমসাময়িক পণ্ডিত ধনুজামর্ধনদেবের সাথে রাজা গণেশকে চিহ্নিত করেছেন কিন্তু এই পরিচয় সর্বজনীনভাবে গৃহীত নয়।
এখানে খুব বেশী গড়মিল না পেলেও সামনে আসবে। ‘ধনুজামর্ধনদেব’ এই নামটা খেয়াল রাখবেন।
এবার দেখি রুশ উইকিপেডিয়ায় তাঁর রাজত্বকাল সন্মন্ধে কি বলেছেঃ
রাজা গণেশ (? - ১৪১৮) - বাংলার হিন্দু শাসক (১৪১৪-১৪১৫, ১৪১৬-১৪১৮)। রাজা গণেজা ইলিয়াস শাহ রাজবংশের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বাংলার ক্ষমতা দখল করেন। সমসাময়িক মধ্যযুগীয় ঐতিহাসিকরা তাকে একজন দখলদার হিসেবে দেখেন। তাঁর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত গণেশ রাজবংশ ১৪১৪ থেকে ১৫৩৬ (!!! এখানে ১০১ বছর বাড়িয়ে বলা হয়েছে ১৪শ সালের যায়গায় ১৫শ ভুল হলেও ৩৫ সালের যায়গায় ৩৬ সালটা ভুল নয়, ১ বছর বেশি দেখানো হচ্ছে।) সাল পর্যন্ত বাংলা শাসন করেছিল। তাঁর পুত্র সুলতান জালাল আদ-দীন মুহম্মদ শাহের মুদ্রায় তাঁর নাম খো-শো বা শা-সে হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইন্দো-পারস্য ইতিহাসবিদরা তাঁর নাম রাজা খো বা খে উল্লেখ করেছেন। অনেক আধুনিক পণ্ডিত তাকে দেবতাদের সাথে শনাক্ত করেছেন, কিন্তু এই পরিচয়টি সাধারণত গৃহীত হয় না।
আর হিন্দী উইকিতে মাত্র ছয় লাইনে নমঃ নমঃ করে এই বাঙ্গালী হিন্দু রাজার কাহিনী শেষ করা হয়েছে। তবে এখানে একটা বড় স্ট্রোক আছে;
মহারাজা গণেনারায়ণ রায়বাদুরী (১৫শতক) (রাজত্বকাল ১৪১৫) ছিলেন বাংলার একজন হিন্দু শাসক। বাহ ইলিয়াস শাহী রাজবংশকে উৎখাত করে সমগ্র বাংলায় একটি স্বাধীন হিন্দু ব্রাহ্মণ রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার পুত্র ছিলেন যদুনারায়ণ বা জালালুদ্দিন মুহম্মদ শাহ। ইন্দো-পারস্য ঐতিহাসিকরা তাকে কংস বা কংস নামে অভিহিত করেন। কাঁসি। আকারে উল্লেখ করা হয়েছে যা সংস্কৃত শব্দ "গণেশ" এর একটি ভুল গঠন বলে মনে করা হয়। তবে এটি অবশ্যই দনুজমর্দন দেব ছিলেন না। কারণ তিনি ছিলেন বরেন্দ্রী সম্ভ্রান্ত ব্রাহ্মণ এবং দনুজমর্দন দেব ছিলেন কায়স্থ।
তাঁর মানে 'ধনুজামর্ধন' বা 'দনুজামর্দন' যাই হোক এই নাম কায়স্ত বা ব্রাহ্মণের ফেরে পড়ে বাতিল হল। (তবে এই নাম পরে ফের ফিরে আসবে)।
এবার চমক লাগানো এক তথ্য নিয়ে আসছেন;
© তমাল দাশগুপ্তঃ মধ্যযুগের সমস্ত ফার্সি নথিতে রাজা ‘কানস’ বলে পরিচিত গণেশ রাজত্ব করেছেন ১৪০৯-১৫ খ্রিষ্টাব্দের সময় (এই বিষয়ে সবকটি ফার্সি নথিই একমতঃ রিয়াজ-উস-সালাতিন, তারিখ-ই-ফিরিশ্তা, তবাকত-ই-আকবরি সবাই বলছে গণেশ মোটামুটি সাত বছর ক্ষমতায় ছিলেন) । তিনি নিজের নামে মুদ্রাঙ্কন করতেন না, ইলিয়াস-শাহী বংশীয় বায়াজিদ শাহের নামে মুদ্রা চালাতেন। গণেশ নিজে সিংহাসনে বসেন নি, গৌড়ের সিংহাসনে কাফিরের পক্ষে সরাসরি শাসন করা সে যুগে প্রায় অসম্ভব ছিল।
এই ইতিহাস বলছে একেবারে ভিন্ন কথা। তিনি নাকি রাজত্ব করেছেন ১৪০৯ সাল থেকে ১৪১৫ সাল পর্যন্ত! তাজ্জব ব্যাপার, বাকি সবার শুরু যখন ইনার শেষ হল তখন। আর তিনি নাকি সিংহাসনেই বসেন নি। এই ইতিহাস পড়ে আমি তব্ধা মেরে গিয়েছিলাম। এটা কিন্তু ফেলা দেবার মত ইতিহাস নয়।
তাঁর এই কথায় সুর মিলিয়েছেন ' নিউজ নাইনে'র অনিন্দ্য দত্ত তাঁর
Raja Ganesh: How Bengal’s Hindu kingmaker put his son on the throne as a Muslim - নিবন্ধে
তিন বছর পর যখন শিহাবুদ্দিন বায়েজিদ শাহ্ মারা যান, গণেশ একটি পরিকল্পনা নিয়ে প্রস্তুত ছিলেন। তিনি একজন চতুর ব্যক্তি ছিলেন এবং জানতেন যে তিনি যদি সিংহাসনের জন্য দাবি করেন তবে মুসলিম ধর্মতত্ত্ববিদেরা ও রাজ্যের মিত্ররা তাকে সমর্থন করবে না - একজন কাফের। সুলতানি শাসিতদের মানসিকতা সম্পর্কে গভীর উপলব্ধি এবং রাজদরবারের জটিলতা সম্পর্কে জ্ঞানের সাথে বিপুল ছলচাতুরি ব্যবহার করে গণেশ একটি অভ্যুত্থান ঘটান।
তিনি তার বছর বয়সী ছেলে যদুকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করেন এবং তাকে বাংলার সালতানাতের সিংহাসনে বসান। অল্পবয়সী ছেলেটি মূলত নামেই মহারাজা ছিল আসলে পেছন থেকে রাজ্য শাসন করেছিলে রাজা গণেশ। পরিস্থিতির একটি উদ্ভট সংমিশ্রণ বলে মনে হয় , গণেশ একজন হিন্দু সম্ভ্রান্ত জমিদার দারুণ চতুরতা ও কৌশলের সাথে এখন বাংলার মুসলিম সালতানাতের দায়িত্বে ছিলেন।
**** ও ভাই .... কি বুঝলেন????
****
তাঁর ছেলে যদু বা জালালুদ্দিনকে নিয়ে ফের গল্প হবে। তবে এর পরের পর্বে লিখব মহারাজা কংস বা গনেশ কি আদৌ মুসলিম নিপীড়ক ছিলেন না হিতৈষী এই নিয়ে বিভ্রান্তিকর এক ইতিহাস।
এখন ব্লগাররা বলুন; আপনি কি জানেন আসলে মহারাজা গনেশ কত সাল থেকে কত সাল বাংলা শাসন করেছিলেন? তিনি আসলে কোন মুসলিম রাজাকে হটিয়ে বা হত্যা করে সিংহাসনে বসেছিলেন নাকি তিনি কোনদিন মহারাজ পদবী গ্রহন করেননি( এর পক্ষে তো নিরেট যুক্তি আছে)?
এমন বিভ্রান্তিমূলক ইতিহাস আসলে আমাদের কি শেখাচ্ছে? পৃথিবীর সব ইতিহাসই কি এমন ভুলে-ভরা বিভ্রান্তিকর এলোমেলো? অতীত নিয়ে আমরা যা জানছি তার সব-ই কি প্রায় ভুল?
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মার্চ, ২০২৪ সকাল ১০:২৭