somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুবোধ কাজী ~১

০৩ রা অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৫:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


হায় হায় কতকিছু লেখার বাকি!! সারাদিন ভাবি; এইটা লেখা হয় নাই ওইটা লেখা হয় নাই। একটা লিখতে গিয়ে আরেকটা চলে আসে- আরেকটা লিখতে গিয়ে অন্যটা। আমার ছোট্ট অফিসে বেশ ইন্টারেস্টিং একটা চরিত্র আছে। তিনি সুবোধ কাজী। তাঁকে নিয়ে বহুদিন লিখব বলে ভেবেছি- বহুবার তাঁর ছোট ছোট ঘটনা তুলে রাখতে চেয়েছি কিন্তু লিখব লিখব করে ভুলে গিয়েছি। তবুও মাথায় যেটুকু জমানো আছে তাঁর থেকে কিছু ঘটনা ব্লগে তুলে ধরব ভাবছি। যদিও তাঁকে নিয়ে আস্ত একটা বই লেখা সম্ভব 'নসরুদ্দিন হোদজা' এর মত সরস প্রধান চরিত্রের রূপকার হিসেবে।
প্রথমে আসি কাশেম ভায়ের কথায়। আমার বন্ধু হাসান, এখন মাইক্রো ক্রেডিটে পিএইচ ডি করে দেশের বাইরে নামীদামী এক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় যুক্ত। যদিও সে আমার থেকে বয়সে একটু ছোট তবে বন্ধু হিসেবে চরম পরমতম ঘনিষ্ঠ। তাঁকে নিয়ে যে, কত শত গল্প কৌতুক জমে আছে তাঁর ইয়ত্তা নেই। হাসানের বড় ভাই কাশেম। যদিও তিনি আমার সমবয়সী তবুও বন্ধুর বড়ভাই হবার সুবাদে ভাই বলে ডাকি, সজ্জন কাশেম ভাইও আমাকে ভাই বলে সম্বোধন করেন। শিক্ষিত সজ্জন সুদর্শন এই মানুষটির ব্যবসায়িক সব গুণাবলী থাকার পরেও বেশী সৎ, মানুষের প্রতি অতিরিক্ত বিশ্বাস দয়া মায়া বেশী থাকার জন্য একের পর এক ব্যবসায় ধরা খেয়েছেন। আমার সাথেও তাঁর কিঞ্চিৎ ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল। পরিবার ও পারিপার্শ্বিক চাপে অবশেষে মধ্য চল্লিশে তিনি সব রকমের ব্যবসায় চিরতরে ইস্তফা দিয়ে ভীষণ ভগ্ন হৃদয়ে চাকুরী জীবনে প্রবেশ করেন।
ব্যবসায় ইস্তফা দেবার সময়ে তিনি সুবোধ সাহেবকে একদিন আমার অফিসে এনে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বিশেষভাবে অনুরোধ করেন তাঁকে একটা চাকুরী দেবার জন্য। ভদ্রলোকের তখন পঞ্চাশের কাছাকাছি বয়স হলেও কাঁচাপাকা দাড়ির এলোমেলো টাকের জন্য আরো বেশী বয়স্ক মনে হচ্ছিল। নিজের থেকে বয়স্ক মানুষকে আদেশ নির্দেশ দিতে বাধে বলে আমি সাধারণত বয়স্ক লোককে নিয়োগ দেই না। তবুও এই লোককে প্রথম দেখায় আমার পছন্দ হয়নি। চেহারায় গোবেচারা ভাব ফুটিয়ে তুললেও কেমন যেন ধূর্ত নয় তবে একটু ঝামেলা মনে হচ্ছিল। পরনে ক্যাটক্যাটা নীল ফুলহাতা পলেইষ্টারের শার্ট - টাইট জিনস আর বুট টাইপ জুতায়, কাঁচা পাকা দাড়ি, আধখানা দাড়ি আর বিরলকেশের, ভারি চশমা পড়া- বেশ মোটাসোটা নাকের, শ্যামলা গড়নের, ছোটখাটো মানুষটাকে কিম্ভুত লাগছিল।
কাশেম ভায়ের কথা ফেলতে পারলাম না। এতদিন ধরে বিশ্বস্ততার সাথে তিনি তাঁর একাউন্টস দেখেছেন- ইনি শুধু তাঁর এমপ্লয়ী নন দূরসম্পর্কের আত্মীয়ও বটে। ভদ্রলোক কম্পিউটারের এক্সেল-ফেক্সেল সহ অফিস ভালই জানে।
আমি অনিচ্ছা স্বত্বেও আমার অতি ছোট কোম্পানীতে চোট সাপের বড় ব্যাঙ গেলার মত করে তাঁকে চাকুরী দিলাম।
***
তবে প্রথম দিনই ভদ্রলোক আমাকে বড় ধাক্কা দিলেন। সেদিন ফ্যাক্টরি/ অফিসে ( ছোট্ট পরিসরে) ইফতার পার্টি ছিল- একেক জনকে একে কাজের দায়িত্ব দেয়া ছিল। বিকেলে দেখা গেল সব ফল আনা হয়েছে আপেল আনা হয়নি। হাতের কাছে সুবোধ সাহেবকে পেয়ে তাঁকে টাকা দিয়ে বললাম আপনি গিয়ে আপেল নিয়ে আসেন।
তিনি অতি সঙ্কোচে টাকাটা নিয়ে দেখি ভ্যাবাচ্যাকা মুখে দু'কদম অতি অনিচ্ছাসত্ত্বে এগিয়ে গিয়ে ফের দাঁড়িয়ে ঘুরে আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল।
আমি জিগ্যেস করলাম সমস্যা কি? ফলের বাজার চেনেন না? এইতো এখান থেকে বের হয়ে ডান দিকে একটু এগিয়ে গিয়ে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দিবে।
তিনি ভীষণ ইতস্তত হয়ে মাথা চুলকে বললেন, -তা না বস। সমস্যা হচ্ছে। আর কাউরে পাঠানো যায়?
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, ক্যান?
- মানে, আমি কোনদিন আপেল কিনি নাই তো তাই। ভাল মন্দ কি না কি আনি।

এই হল আমাদের 'সুবোধ কাজী' সাহেব। পরে জানা গেল আপেল তো দুরের কথা কোনদিন কোন ফল কিনেন নাই তিনি। সব সময় 'কনফিউজ' থাকেন দেখে কেউ কিছু বাজারে তাঁকে কিনতে পাঠায় না। তিনি' ফুল অব কনফিউজড ম্যান'। নিজে সারাক্ষণ বিভ্রান্ত ও বিভ্রমের মধ্যে থাকেন- আপনাকেও পদে পদে বিভ্রান্ত করে ফেলবে!'
যে কোন ব্যাপারে তাঁর প্রথম কথা হবে, আমিতো জানিনা, আমিতো কখনো ওইখানে যাই নাই, আমি তো বস এই কাজ কখনো করি নাই। অপ্রয়োজনীয় কাজে ১০ বার ফোন দিবে কিন্তু ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ কাজে কোন ফোন দিবে না। তিনি যেইখানে যাবেন সেইখানে ট্রাফিক থাকে, সেইখানে গ্যাঞ্জাম বাধে, ওইকাহ্নে নেটোয়ার্ক থাকেনা আরো কত কি ব্লা ব্লা ব্লা!!!
আমি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আতঙ্কিত থাকি প্রথম ফোনটা যেন তাঁর না আসে। জানি প্রথম ফোনটা সে-ই করবে। কত করে চাই ওয়েলকাম ছবির 'নানা পাটেকারে'র মত 'মজনু কন্ট্রোল' করব নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি না। দিনের শুরুটা ভাল হয় না। মাঝে মধ্যে ম্যাসেজ পাঠাই কিন্তু তা তেও শান্তি নাই। টেক্সটের বিষ্যগুলো ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আর এক দফা মেজাজ খারাপ হয়। সবাই বলবে তবে কেন তাঁকে আমি চাকুরীতে রেখেছি? সে আর এক কাহিনী বস!

আজ দশ বছরের বেশী সময় তিনি আমার সাথে আছেন। বহুবার তিনি আমাকে ছেড়েছেন - বহুবার আমিও তাঁকে ছেড়েছি।

সুবোধ সাহেবের একটা গল্প দিয়ে আজকে শেষ করি;
খুব জরুরী একটা বিষয়ে আমি তাঁকে বাসা আসতে বলেছি। বাস থেকে নেমে আমার বাসা আসতে তাঁর বড়জোর পাঁচ মিনিট লাগবে। পাঁচ মিনিট যায় দশ মিনিট পনের মিনিট যায় সে আর আসে না । তাঁর ফোনের চার্জ ছিল না দেখে ফোন ও করতে পারছিলাম না। বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে তাঁর ফোনের চার্জ চলে যায়!
কোন সমস্যা হল কি না ভেবে আমি নীচে টেনশনে নেমে গেটের কাছে পায়চারি করছিলাম। প্রায় পঁচিশ মিনিট পরে দেখি সোজা রাস্তা না দিয়ে এসে অন্য এক রাস্তা দিয়ে সে ঘেমে নেয়ে হন হন করে বাসার দিকে এগিয়ে আসছেন। আমি হাঁফ ছাড়লাম! বকা দিতে গিয়ে নিজেকে সামলালাম। তাড়াতাড়ি কাগজপত্রে সই সাবুদ করে তাঁর হাতে তুলে দিয়ে বললাম, দ্রুত যান। সে দেখি ফের -সেই উল্টো রাস্তা দিয়ে ফিরে গেল! খটকা লাগল কাহিনী কি?

পরদিন ধরলাম, দেরি হল কেন আর উল্টো রাস্তা দিয়ে আসল গেল কেন?

তিনি প্রথমে একটা লাজুক হাসি দিলেন তারপরে একটু কাঁচুমাচু ভঙ্গীতে হাতের উপরে হাত ঘষে বললেন,
-বস সত্যি কথা বলব। রাগ করবেন না তো?
- রাগ করবার মত কিছু না হলে রাগ করব কেন? বলেন আসল কাহিনী কি?
- আপনার বাসায় যাবার অনেকগুলা রাস্তা! প্রায় সবগুলা রাস্তাতেই 'চোরা স্পিড ব্রেকার' আছে। আমার চশ্মার কাঁচ প্রায় প্রায় ঘোলা হয়া যায়, চোখের একটু সমস্যা তো এগের থেকেই আছে - মাঝে মধ্যেই ওইগুলাতে উষ্টা (হোঁচট) খাই। আমার দাদী আবার কইছে কোন রাস্তায় উষ্টা খাইলে সেই রাস্তায় না হাঁটতে। আমরা আবার দাদীরে খুব মানি। তাই আমি সেইদিন ম্যলা ঘুইরা আপনার বাসায় ওই রাস্তা দিয়া গেছিলাম। ওই রাস্তা দিয়া এখনো উস্টা খাই নাই।

আমি তাঁর কথা শূনে তব্ধা ধরে গেলাম!!! মেলাক্ষন বাদে শুধু একটা প্রশ্ন করলাম; যদি ওই রাস্তাতেও উস্টা খান তাহলে কি আমার বাসা পাল্টাতে হবে?
***
অ.ট.
দুপুরে লেখাটা একবার পোষ্ট দিয়েছিলাম; কিন্তু প্রথম মন্তব্য পেয়েই মনে হল এলেখার মুল চরিত্রের সাথে ব্লগের বেশ পরিচিত একজনের নামের মিল আছে। অযথাই এটা নিয়ে একটা ক্যাচাল বেঁধে যেতে পারে তাই সুবোধ সাহেবের নামের পদবী পাল্টে দিলাম। তবে সেই মন্তব্যটি পরে সংযুক্ত করে দিব।। আশা করি আর কোন ক্যাচাল হবে না।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৫:২২
৩৭৫ বার পঠিত
২৯টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভিসা বন্ধ করায় ভারতকে ধন্যবাদ।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩



ভারত ইদানীং ভিসা দিচ্ছেনা; তারা ভিসা না দিয়ে আমাদেরকে শিক্ষা দিতে চায়! তাদের করদ রাজ্য হাতছাড় হওয়া খুবই নাখোশ, এতোই নাখোশ যে মোদী মিডিয়া দিনরাত বয়ান দিচ্ছে এই দেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতের চিকিৎসা বয়কট এবং

লিখেছেন পবন সরকার, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৫৬


ভারতের এক হাসপাতাল ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশের কোন রুগিকে তারা চিকিৎসা দিবে না। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো যে হাসপাতাল থেকে এই ঘোষণা দেয়া হয়েছে সেই হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার জন্য বাংলাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। চামচা পুঁজিবাদ থেকে চোরতন্ত্রে পরিণত হয়েছিল দেশ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:১৩






চামচা পুঁজিবাদ থেকে দেশ চোরতন্ত্রে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, আমলা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা মিলে চোরতন্ত্র করেছে।

সোমবার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখ হাসিনাকে ভারত ফেরত পাঠাবে তবে............

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪২


শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে বিচারের জন্য ভারতের কাছে ফেরত চাইতে হলে অবশ্যই বাংলাদেশকে প্রতিহিংসামূলক বিচারপদ্ধতি বাদ দিতে হবে। বিচারে শেখ হাসিনা যাতে ন্যায় বিচার পান বাংলাদেশকে আগে তা নিশ্চয়তা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত সোনার ডিম পাড়া হাঁস হারিয়েছে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৫২



শেখ হাসিনা ভারতে বসে ষড়যন্ত্র-অপপ্রচার করছেন। ভারত চাচ্ছে বাংলাদেশে একটি অশান্তি হোক। কারণ ভারত একটি মসনদ হারিয়েছে। সোনার ডিম পাড়া হাঁস হারিয়েছে।

আওয়ামী লীগ প্রতিদিন একটি সোনার ডিম পেড়ে নরেন্দ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×