তাহলে আমরা কোথা থেকে এসেছি?
একটি জিনিস আমরা নিশ্চিতভাবে জানি যে আমাদের বাড়ির গ্রহ অবশ্যই আমাদের বর্তমান সৌরজগতের বাইরে থাকতে হবে। এটি প্রায় নিশ্চিত যে আমাদের আদি গ্রহ আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির মধ্যে রয়েছে।
আসুন আমরা যে শারীরিক এবং পরিবেশগত অবস্থার আশা করতে পারি তা বিবেচনা করে- এবং এর আগে আলোচনা করা কারণগুলির উপর ভিত্তি করে আমাদের হোম গ্রহ খুঁজি।
১. স্থায়ী মেঘের আচ্ছাদন
এটা হতে পারে যে সূর্যালোক সেখানে অনেক শক্তিশালী, কিন্তু দ্বারা স্থায়ী বা আধা-স্থায়ী মেঘের আচ্ছাদন দিয়ে আলোর বিকিরণকে বাঁধা দেয়। মানে সরাসরি সূর্যালোক না থাকা সত্ত্বেও, গাছপালার স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে এবং আমরা এখনও ভিটামিন- ডি সংশ্লেষ করতে সক্ষম। সেখানে ত্বকের ক্যান্সার হয় না বা ছানি পরে না। এবং সূর্যালোকের কারণে আমাদের চোখ ঝলসে যায় না কেননা আমরা খুব কমই এটা দেখতে পাই/কখনই এটি দেখতে পাই না।
পৃথিবীর গাছপালা অবশ্যই আমাদের নিজস্ব গ্রহের মতো একই ধরণের হতে হবে, যেহেতু আমরা এগুলিকে পুরোপুরি পুষ্টিকর মনে করি (সম্ভবত এখন খুব পুষ্টিকর যা আমরা পেয়েছি তাদের স্বাদ আরও ভাল করার জন্য তাদের সাথে টেম্পার করা হয়), তাই আলোর মাত্রা এবং গুণ-মান সম্ভবত অনুরূপ, কিন্তু অবশ্যই খারাপ দিক হল যে পরিষ্কার আকাশ ছাড়া জ্যোতির্বিদ্যা প্রায় অসম্ভব হবে।
সেখানে বসবাসকারী লোকেরা হয়তো কখনোই তাদের নিজের সূর্য দেখেনি, এমনকি তারা অন্যান্য নক্ষত্র এবং গ্রহও দেখেনি কখনো। জ্যোতিষশাস্ত্র সম্ভবত বিদ্যমান থাকবে না, তবে তারা সম্ভবত অন্য কোন উপায়ে আমাদের থেকে অনেক বেশী মহাবিশ্ব সন্মন্ধে জ্ঞানার্জন করেছে।
২. ধ্বংসাত্মক ঘটনার অভাব
আমি উপরে উল্লেখ করেছি, যেভাবে পৃথিবীর স্থানীয় প্রাণীরা করে সেভাবে আমাদের ভূমিকম্প, সুনামি বা হারিকেন ভবিষ্যদ্বাণী করার কোন উপায় নেই । সবচেয়ে সম্ভবত কারণ এই জন্য যে তারা আমাদের আদি গ্রহে এধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে না, তাই আমরা এসবের পূর্বাভাস করার প্রক্রিয়ায় বিবর্তিত হই নি । সম্ভবত ঋতুর পরিবর্তন না হবার কারনে সম্ভবত সেখানে বড় হারিকেন/টর্নেডো, জলোচ্ছ্বাস হয় না। ভূমিকম্প ও সুনামির অভাব আমাদের গ্রহের একটি শক্ত কোর এবং টেকটোনিক প্লেট চলাচল না করার কারণে হতে পারে (মঙ্গল গ্রহের ক্ষেত্রে যেমনটি হয়), অথবা এটির খুব পুরু ভূত্বক থাকতে পারে (যা আমার নিজস্ব মতামত)। আমি অনুমান করব যে এটিতে একটি বড় ও কঠিন অভ্যন্তরীণ কোর রয়েছে যা প্রধানত লোহা দ্বারা গঠিত, একটি গলিত তরল ধাতু দ্বারা বেষ্টিত বাইরের কোর. গ্রহের আবর্তনের সাথে সাথে এগুলোর আপেক্ষিক গতিবিধি ফলে গ্রহে তীব্র চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে যা সম্ভবত পৃথিবীর তুলনায় উল্লেখযোগ্য-ভাবে শক্তিশালী।
৩। আমরা সম্ভবত একটি বাইনারি নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করি
মজার ব্যাপার হল, আমাদের জেনেটিক মেক-আপে আমাদের রঙ নিয়ন্ত্রণ করার একটি উপায় রয়েছে -আমাদের ত্বক মেলানিন ব্যবহার করে। প্রচুর সূর্যালোকিত পৃথিবীর কিছু অংশে আমাদের ত্বকের রঙ ঘুরে কয়েক প্রজন্মের মধ্যে প্রায় কালো হয়ে যায়। আর শিত প্রধান অঞ্চলে এটি মোড় নেয় প্রায় সাদা- ওদিকে ট্রপিক্যাল অঞ্চলে সাদায় কালোয় মেলানো শ্যামলা বর্ণ। যে অন্তর্নির্মিত জেনেটিক ক্ষমতা রঙ পরিবর্তন করে আমাদের বাড়ির গ্রহেও বর্তমান, এবং অবশ্যই এমনটা হবার পেছনে তেমন একটি কারণে সেখানে থাকতে হবে।
এটা ইঙ্গিত দেয় যে, আমাদের বাড়ির গ্রহে আলোর মাত্রা ভিন্ন সময়ে ভিন্ন রকম হতে পারে। ধ্রুবক মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়তে পারে, সম্ভবত কিছু সময়ের জন্য –কয়েক প্রজন্ম ধরে যেটা অব্যাহত থাকে। মেলানিনের সর্বোচ্চ স্তরে পৌছানোর আগে সেই আলো স্থিতিশীল হয় ফের কমতে থাকে। আমাদের ত্বকের রঙ এটির সাথে মানিয়ে নিয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ আলোতে ভিটামিন ডী গ্রহন করে শরির সতেজ হয় ও ইমিউনিটি টপ লেভেলে যায়। যথেষ্ট ভিটামিন ডি সংশ্লেষিত করার জন্য কম আলোর ব্যাধি যেমন অবসন্নতা বা বিষন্নতা থেকে মুক্তি মেলে।
এমনটা হবার জন্য বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে। সম্ভবত বেশ কয়েক প্রজন্ম ধরে আলোর এই ওঠানামা চলে।। সম্ভবত আমাদের আদি গ্রহটির একটি উপবৃত্তাকার কক্ষপথ রয়েছে যার ফলে গ্রহটি কখনো নক্ষত্রের কাছাকাছি কখনোবা আরও দূরে চলে যায়।এটা কয়েক যুগ থেকে শত শত বছর স্থায়ী হতে পারে,যা আমাদের তারকা থেকে বেশ কাছে কখনোবা যথেষ্ট দূরত্বে রাখবে।
সেই নক্ষত্রটাকে কি কি সূর্যের থেকে যথেষ্ট উজ্জ্বল বা বেশি বৃহদায়তন হওয়া দরকার?
পৃথিবীর ১৭ আলোকবর্ষের মধ্যে দুটি বাইনারি নক্ষত্র সিস্টেম রয়েছে। আমার এই নিবন্ধ লেখার সময়কালে সেই তারাগুলোর চারপাশে প্রদক্ষিণরত কোন গ্রহের সন্ধান এখনো মেলেনি। আমার সুপারিশ থাকবে অনুসন্ধান চালিয়ে যাবার।
পৃথিবীতে হিমশীতল একটি রাতে পোষাক বিহীন অবস্থায় আমরা জমে যাব, এমনকি উষ্ণতম মরুভূমির দেশগুলিতেও কাপড় ছাড়া আমরা এক্সপোজার বা হাইপোথার্মিয়ায় মারা যাব। এটা স্পষ্টতই আমাদের আদি গ্রহে রাতে কিংবা কম আলোকিত সেই দিনগুলোতে এত ঠান্ডা হয় না। আবার, একটি যুক্তিসঙ্গত এর ব্যাখ্যা হতে পারে; আমরা বাইনারি যে নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করি, যেখানে একটি দ্বীতিয় একটা সূর্য প্রাথমিক সূর্য অস্ত যাওয়ার পর গ্রহটিকে উত্তপ্ত ও আলোকিত করে।
আমাদের প্রানপ্রাচুর্যময় ও জলময় এই গ্রহটি মহাবিশ্বে বিশেষ একটি গ্রহ। কিন্তু কতটা বিশেষ? বিজ্ঞানীরা আমাদের মতো দূরবর্তী গ্রহের সন্ধানে ব্যস্ত, কিন্তু তারা হয়তো বাইনারি স্টার সিস্টেমে লুকিয়ে থাকা পৃথিবীর আকারের গ্রহগুলিকে উপেক্ষা করেছে। যদিও এই গ্রহগুলি সনাক্ত করা কঠিন। এক্সোপ্ল্যানেট (আমাদের সৌরজগতের বাইরের গ্রহ) খোঁজার আমাদের সর্বোত্তম পদ্ধতি হল দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দূরের নক্ষত্রের দিকে তাকানো ও আলোতে তলিয়ে যাওয়া অন্য আলোর সন্ধান করা যার মাধ্যম বোঝা যে একটি গ্রহ এগিয়ে যাচ্ছে, এটা এমন একটি বিষয় যাকে ট্রানজিট বলা হয়।
দুই-তারা সিস্টেমগুলিকে কেবলমাত্র একটি তারা সহ সিস্টেম ভেবে সহজেই ভুল করা যেতে পারে যখন দুটো তারা একসাথে বা পাশাপাশি থাকে। এটি এই সিস্টেমগুলির মধ্যে পৃথিবীর আকারের এক্সোপ্ল্যানেটগুলি সনাক্ত করা কঠিন। ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন জ্যোতির্বিদ্যা গ্রুপ নয়ারল্যাব সোমবার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘দ্বিতীয় নক্ষত্রের আলো গ্রহটি অতিক্রম করার সাথে সাথে প্রথম নক্ষত্রের আলোতে পরিবর্তন সনাক্ত করা কঠিন করে তোলে।‘একটি দ্বৈত তারকা সিস্টেমের ধারণাটি স্টার ওয়ার্স ভক্তদের কাছে পরিচিত, যেখানে লুক স্কাইওয়াকারের হোম গ্রহ ট্যাটুইনের দুটি সূর্য ছিল। বিজ্ঞানীরা Tatooine এর শৈলীতে বেশ কয়েকটি বাস্তব এক্সোপ্ল্যানেট আবিষ্কার করেছেন। ২০১৯ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, এই ধরনের পৃথিবীগুলি এলিয়েন জীবন খোঁজার জন্য ভাল জায়গা হতে পারে।
নাসার আমস রিসার্চ সেন্টারের গবেষকদের একটি দল TESS এক্সোপ্ল্যানেট হান্টিং মিশন থেকে পর্যবেক্ষণগুলি অধ্যয়ন করে ৭৩টি তারা সিস্টেম খুঁজে পেয়েছে যা আসলে বাইনারি। তারা হাওয়াই এবং চিলিতে অবস্থিত দুটি টেলিস্কোপ নোয়ারল্যাব জেমিনি অবজারভেটরি ব্যবহার করে তাদেরকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।)
আমার প্রাথমিক ধারণা ছিল যে এই ধরনের একটি গ্রহ সম্ভবত জীবনের জন্য অযোগ্য হবে। দুটি নক্ষত্র থেকে সদা পরিবর্তনশীল মাধ্যাকর্ষণ একে সব দিকে টানবে, টেকটোনিক প্লেটের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটার ফলে সারাক্ষণ ভূ-কম্পন অনুভূত হবে, আগ্নেয়গিরির অগ্নুতপাতের ফলে সার্বক্ষণিক লাভা উৎগিরিত ও প্রবাহিত হবে।
যাইহোক, আমি যখন একজন খ্যাতিমান জ্যোতি-র্পদার্থবিজ্ঞানর সাথে এই বিষয়ে আলোচনা করেছিলাম, তার মতামত ছিল যে, তারা থেকে মহাকর্ষীয় টান গ্রহের উপরে এমন বড় ধরনের প্রভাব বিস্তার করার তুলনায় দুর্বল হয়। এর বাইরে আমাদের গ্রহের সম্ভবত পৃথিবীর চেয়ে ঘন ভূত্বক আছে এবং কোন টেকটোনিক প্লেট নাও থাকতে পারে। তাই সেখানে দুটি সূর্য থাকার পরেও এখনও পুরোপুরি বাসযোগ্য।
আমরা বাইনারি নক্ষত্রগুলির একটির চারপাশে অন্যটিকে হয়তো প্রদক্ষিণ করছে - অথবা তারা একই আকারের হলে একে অপরকে ঘিরে প্রদক্ষিণ করতে থাকবে। এটা আমাদের গ্রহ (প্রায়) কখনই অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল না বা সেখানে কোন রাত্রি নেই। এমনটি হতে পারে একে অপরের চারপাশে দুটি তারার কক্ষপথের গতির উপর নির্ভর করবে এবং এটি কতটা ঘনিষ্ঠভাবে আমাদের গ্রহের ঘূর্ণনের গতির সাথে সিঙ্ক্রোনাইজ করে।
পাশাপাশি ঘুর্নয়াণরত দুটো নক্ষত্রের নিকটে কিংবা দূরে এমন একটা গোল্ডি-লক জোন থাকতে থাকতে পারে যেখানে পরিস্থিতি জীবনের জন্য নিখুঁত, ঠিক যেমন একটি একক নক্ষত্রের গোল্ডি-লক জোনে আমাদের বর্তমান আবাস পৃথিবী রয়েছে।
কিন্তু এই ক্ষেত্রে, দুটি নক্ষত্র প্রায় একই সময়ে উঠতে এবং অস্তমিত হতে দেখা যাবে, তাই এখনও দিন গরম এবং রাত ঠাণ্ডা হবে. আমি নিশ্চিত নই কিভাবে জামাকাপড় বা পশম ছাড়া এমন একটি গ্রহে রাতে কিভাবে শরীরকে উষ্ণ রাখা যায়! সম্ভবত আমরা ভূগর্ভস্থ কোন আবাসস্থলে উষ্ণতার জন্য একতাবদ্ধ হয়ে থেকেছি।
*****
আগের পর্বঃ
অসুখী-বিষণ্ণতা ও আত্ম-ধ্বংস!
প্রথম নয় পর্বঃ
আমরা কোথা থেকে এসেছি
আমরা কিভাবে পৃথিবীতে বেঁচে/টিকে আছি
আমরা আমাদের প্রয়োজনে বিকশিত হইনি
মানব-বিজাতীয় সংকরায়ন ও মিসিং লিঙ্ক
আমাদের শরীরের চুলের অভাব
খড় জ্বর,হাঁপানি ও ডায়েট
অত্যধিক প্রজনন ও প্রতিরক্ষামূলক ক্ষমতার অভাব
আমরা পৃথিবীর প্রকৃতি পাল্টে দিচ্ছি!
প্রযুক্তিগত উল্লম্ফন ও দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা!
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:৫৪