১২. পরিবেশ ধ্বংস
আমরা পৃথিবীতে একমাত্র প্রজাতি যারা আমরা স্বাভাবিকভাবে যা করি তা করার মাধ্যমে এর পরিবেশ পরিবর্তন (এবং ধ্বংস) করছি। শুধু তাই নয়, আমরাই একমাত্র প্রজাতি যারা স্বীকার করি এবং বুঝতে পারি যে আমরা এখন পরিবেশকে ধ্বংস করছি এবং এর ফলশ্রুতিতে আমরা ভয়াবহ সমস্যার মধ্যে পরতে পারি কিন্তু তার পরেও আমরা তা করতে থাকি। অন্যান্য প্রজাতি তাদের পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেয়। আমরা আমাদের উপযোগী করে পরিবেশকে আমাদের সাথে মানিয়ে নেবার চেষ্টা করাচ্ছি।
দ্রষ্টব্য: কিছু লোক দাবি করে বিবর(হালকা বাদামী রঙের ধারালো দাঁতওয়ালা একজাতীয় লোমশ উভচর প্রাণী যারা গাছ কেটে বাঁধ নির্মাণে পটু)
তার পরিবেশকে ধ্বংস করে গাছ কেটে, বাঁধ নির্মাণ এবং বন্যা সৃষ্টি করে। আমি তর্ক করব যে বীবর শুধুমাত্র তার পরিবেশ পরিবর্তন করে – তারা এটি ধ্বংস করে না, এবং আমরা যে স্কেলে করি তা অবশ্যই নয়। যদিও আমরা মেনে নিই যে বীবর করে এর পরিবেশ পরিবর্তন বা ধ্বংস করে,তবে পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ প্রজাতির মধ্যে মাত্র একটা প্রাণী এই কাজ করছে অবশ্যই আমরা বাদে।
~এবং কে বলবে যে বিবর’রা হয়তোবাএখানে ছিল না -তাদেরকেও অন্য পৃথিবী থেকে আনা হয়েছে?
কিছু লোক দাবি করে যে হাতির মতো প্রাণী তাদের ক্ষতি করে গাছ কেটে পরিবেশ। কিন্তু আসলে ডালপালা ছেঁটে গাছ পাতলা করা প্রয়োজন, এবং পুরানো এবং ক্ষতিগ্রস্ত গাছ যেভাবেই হোক কাটা দরকার, তাই তারা আসলে ক্ষতির চেয়ে ভালো করছে ।
যেখানে হাতিরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে (যতদূর পর্যন্ত মানুষ উদ্বিগ্ন) যখন তারা কৃষি জমির চারপাশে বেড়া ছিঁড়ে ফেলে।এখানেই মানুষ তাদের ভূখণ্ড দখল করেছে। আমরা বিরক্ত হই যখন তারা এটা করে, কিন্তু আমাদের হওয়ার অধিকার নেই। আমরা অবশ্যই আমাদের পরিবেশের ক্ষতি করার জন্য তাদের দোষ দিতে পারি না। মাঝে মাঝে পঙ্গপাল বা কাঁটার মুকুট ঝাঁকের প্রাদুর্ভাবে–বা স্টার ফিশের মত প্রাণী দ্বারা ব্যাপক ক্ষতি হয় পরিবেশের, কিন্তু এটি সর্বদা অতিরিক্ত জনসংখ্যা এবং অতিরিক্ত খাদ্যের প্রাচুর্যের কারণে হয়।
মাদার নেচারের এগুলির প্রাদুর্ভাব মোকাবেলা করার জন্য একটি কার্যকর পরিকল্পনা রয়েছে তাদেরকে দ্রুত বা স্বল্প সময়ের মধ্যে মোকাবেলা করা হয়, পরিবেশ পুনরুদ্ধার হয়, এবং একসময় সবকিছু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। কিন্তু মা প্রকৃতির (এখনও) কোন এমন কোন কার্যকর পরিকল্পনা করতে পারেনি যা দিয়ে অব্যর্থভাবে আমাদের মোকাবেলা করা যাবে।
অন্যরা বলছেন যে গবাদি পশু পরিবেশের ক্ষতি করছে-প্রধানত তাদের দ্বারা গ্রিনহাউজ গ্যাস উৎপাদিত হচ্ছে।
*(বিশ্বের ১.৫ বিলিয়ন গরু এবং কোটি কোটি অন্যান্য চারণকারী প্রাণী প্রচুর মিথেন সহ কয়েক ডজন দূষণকারী গ্যাস নির্গত করে। সমস্ত অ্যামোনিয়ার দুই-তৃতীয়াংশ আসে গরু থেকে। গরু ঢেকুর তোলার মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে মিথেন নির্গত করে। গড় দুগ্ধজাত গাভী কতটা মিথেন বের করে দেয় সে সম্পর্কে পরিসংখ্যানে কিছুটা গড়মিল আছে। কিছু বিশেষজ্ঞের মতে প্রতিদিন ১০০ লিটার থেকে ২০০ লিটার (বা প্রায় ২৬ গ্যালন থেকে প্রায় ৫৩ গ্যালন), অন্যরা বলে যে এটি দিনে ৫০০ লিটার (প্রায় ১৩২ গ্যালন) পর্যন্ত। যাই হোক না কেন, পরিমানটা বেশ উদ্বেগজনক। পরিমাণটা এক দিনে একটি গাড়ি দ্বারা উত্পাদিত দূষণের সাথে তুলনীয়। খবর -
নিউজিল্যান্ড তাদের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বেশী অবদান রাখে এই প্রাণীটিকে নিয়ে বেশ বিপদে আছে।)*
এক মিনিট অপেক্ষা করুন – কেন এত বেশী গবাদি পশু বিচরণ করে পৃথিবীজুড়ে? এদের-তো মানুষই পালে কিংবা এরা মানুষের ছত্রছায়ায় থাকে! আমাদের সাহায্য ছাড়া এদের বেশীরভাগই মারা পরবে , এর পরেও আপনি গবাদি পশুকে দোষ দিতে পারবেন না কেননা তারা যদি পরিবেশের ক্ষতি সাধন করে থাকে তবে সেটা অবশ্যই সচেতনভাবে বা তাদের আরাম আয়েশের জন্য করছে না।
গৃহপালিত বিড়াল-এর ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যেতে পারে তারা বহু সংখ্যক বন্য পাখি হত্যা করে। এটা সত্য যে তারা পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি করে। কিন্তু তারা কেবল তাই করছে যা তারা স্বাভাবিকভাবে করে; তাদের কোন সচেতনতা নেই তারা কোন ক্ষতি করছে। আমরা তাদের গৃহপালিত করতে পারি, কিন্তু আমরা তাদের বন্য শিকারের প্রবৃত্তি থেকে পরিত্রাণ পেতে পরিচালিত করিনি - এবং যাইহোক আমাদের সম্ভবত বিড়ালের মত কোন গৃহপালিত প্রাণী রাখবার প্রয়োজন নেই। অপ্রয়োজনে শুধুমাত্র আমরা এই প্রাণীটাকে পছন্দ করি বলে কিংবা আমার একটা বিড়াল থাকতে হবে এমন জেদের বশে এদের সংখ্যাকে বাড়িয়ে দিচ্ছই। আমরা সচেতনভাবে নিজেরাই শুধু পরিবেশ ধ্বংস করছি না – অন্যান্য প্রাণীদেরকেও আমাদের-সাথে এনে পরিবেশ ধ্বংসে অবদান রাখছি।
এটা শুধুমাত্র নিছক তাদের কারণে যে কোন সংখ্যা প্রকৃত ক্ষতি সৃষ্ট হয়. তাই আবার এটা আমাদের নিজের দোষ. এবং অবশ্যই একই জিনিস অন্যান্য অনেক উদ্ভিদ এবং প্রাণীর জন্য বলা যেতে পারে মানবজাতি তার প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে ছড়িয়ে পড়েছে এমন প্রজাতি -জাপানি knotweed( বিশেষ গাছ যা বনভূমির অন্যান্য গাছ প্রজাতির বৈচিত্র্য ধ্বংস করে পরিবেশের ক্ষতি ডেকে আনে*), harlequin ladybugs( নেটিভ বাগ-দের প্রতি হুমকিস্বরূপ, নতুন পরিবেশের ক্ষতি করছে) cane toads( ভিন্ন অঞ্চল থেকে মাইগ্রেটেট এক ধরনের বিষাক্ত বড় আকৃতির ব্যাঙ- অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড ও বিশেষ কিছু অঞ্চলে যে সকল পাখি, গিরগিটি, উভচর ও স্তন্যপায়ী প্রাণীরা যারা ব্যাঙ ও ব্যাঙ্গের ডিম খেয়ে থাকে তাদের বেশ বড় একটা অংশ এই ব্যাঙের বিষের সংস্পর্শে মারা যাচ্ছে*)।হতে পারে কীট ও প্রাণীদের এই মাইগ্রেশন সেই সময়ে ভাল উদ্দেশ্য ছিল। আমাদের কীটপতঙ্গ থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রয়োজনীয় ছিল এবং এই জিনিসগুলি মোকাবেলা করার একটি প্রাকৃতিক ( এবং নিরীহ) উপায় বলে মনে হয়েছিল।
তাদের আমরা সন্দেহ করিনি যে, একবার তারা তাদের স্বাভাবিকের ও তাদের নেটিভ পরিবেশের বাইরে নিয়ে গেলে নতুন পরিবেশ তারা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়বে এবং নিজেদের পরিবেশের ক্ষতি করবে। যদি আমরা যেখানে তারা ছিল সেখানেই রেখে দিতাম তাহলে তারা না থাকলে কোন সমস্যার সৃষ্টি হত না। তাই বলতে বাধ্য হচ্ছি বিশ্বব্যাপী পরিবেশ ও প্রকৃতির যে ক্ষতি সাধন হচ্ছে তার সিংহভাগ আমাদের নিজেদের দোষেই!
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনে (মার্চ ২০০৫) একটি নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে: যখন উদ্ভিদ এবং প্রাণীর প্রজাতি যেখানে তাদের অন্তর্গত নয় সেখানে চলে যায়, তারা বাস্তুতন্ত্র এবং অর্থনীতিতে আক্রমণ করতে পারে যার পরিণতি ভয়ানক হতে পারে। কিন্তু এই উদ্ভিদ এবং প্রাণী প্রজাতি তাদের আদিবাস থেকে নতুন পরিবেশে স্থান্তরিত হতে পারে? এটা না যে আমারা মানুষরাই শুধু তাদের আবাস্থল পালটে দিচ্ছি- ঠিক এই বক্তব্য আমাদের জন্যও সমানভাবে প্রযোজ্য।
আমরা এখানে কিভাবে এলাম? আমরা স্পষ্টতই বহিরাগত, আমরা কখনোই এখানে ছিলাম না। আমাদেরকে আমাদের আদি আবাস থেকে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে- এবং আমরা অবশ্যই পৃথিবী ও এর তাবৎ উদ্ভিদ ও প্রাণীকুলের ভয়ানক পরিণতি ঘটাচ্ছি!!!
আগের পর্বের জন্যঃ Click This Link
প্রথম পর্বের জন্যঃ Click This Link