প্রথম পর্বের জন্যঃ Click This Link
আগের পর্বের জন্যঃ Click This Link
কেন যেন প্রথম দর্শনেই এলিনার সবকিছুই আমাকে মুগ্ধ করেছিল।ভেবেছিলাম এ মেয়ের সাথে কেন আগে দেখা হয়নি? সে সুন্দরী তবে একটু ভারী শরির। চর্বিবহুল নয় কিন্তু চ্যাপ্টা হৃস্টপুস্ট গড়ন। সোনালী আর বাদামীতে মেশানো তাঁর কাধ ছাড়ানো চুলের কথা আগেই বলেছি। চোখদুটো হাল্কা নীল। ঘন গাঢ় ভ্রু-দ্বয়ে তাকে সুন্দর লাগে। হাব ভাবে কথায় রক্ষনশীল মানসিকতা ব্যক্তিত্বের ছাপ স্পষ্ট প্রকাশ পায়। মেটামুটি শিক্ষিতা-কোন এক কিন্ডার গার্ডেনে শিক্ষকতা করত তখন। এত শান্ত নিরীহ ঢঙ্গে চলত আর মেপে মেপে কথা বলত যে, তাকে সমীহ না করে উপায় ছিলনা। মনে হত এ মেয়ে নিজেকে সহজে বিলিয়ে দিতে চায়না।
দ্বীতিয়বার কোন কাজ নাথাকলে আমি-ই ইচ্ছে করে গেলাম তাদের বাসায়। ততদিনে সেখানে সাবলেট থাকা বন্ধুরা অন্য বাসায় চলে গেছে।
আমি এমন ভাবে গেলাম যে, ওদের সাথে দেখা করতে গিয়েছি। দরজা খুলল এলিনা’ই। ‘ওরা এখানে আর নেই’ শুনে আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম।
-তুমি জাননা তোমার বন্ধুরা আর এখানে থাকেনা?’ বলেই এমন একটা বাঁকা হাসি দিল যে, দেখেই আমার গা জ্বলে গেল!
-ঠিক আছে আসি তাহলে-বলেই ঘুরলাম!’
- চা খাবে?’ বলেই ফের হেসে ফেলল।
আমি ঘার ঘুরিয়ে তার তাকিয়ে দেখতে পেলাম, তার উজ্জল চোখের আন্তরিক আমন্ত্রন!
এখন কি আর যাওয়া যায়।তবুও একটু ইতস্তত করতেই দরজা থেকে সরে বলল সে, আসো ভিতরে আসো।
আমি অতি ধীর পদক্ষেপে করিডোরে ঢুকে দেখি বাসা সুন-শান! সাবলেট চলে যাওয়ায় একটা রুম এমনিতেই খালি হয়ে গেছে। ও মা-বোনের কথা জিজ্ঞেস করতেই বলল, ওরা বাইরে গেছে কাজে।
মা মনে হয় আজ ফিরবে না। আর নাদিয়া কখন কোথায় থাকে কোথায় যায় এ খবর মা ছাড়া কেউ রাখে না।
সদ্য ছেড়ে যাওয়া ভাড়াটিয়াদের রুম খানা ঝাড়-পোছ করে ভদ্রস্ত ভাব আনা হয়েছে। সেখানে আমাকে বসতে বলে সে গেল চায়ের এন্তেজাম করতে। রুশীয়দের সামোভারে গরম পানি সারাক্ষণই থাকে। দু’মিনিটেই চা নিয়ে হাজির সে- সাথে দুখানা কুকিজ।
আজকে হল সব ঘরোয়া গল্প। ওর বাবা কোথায় কি করেন?
-সে নাকি সরকারি বেশ বড় অফিসার ছিলেন। তিনি নাকি অন্য বাসায় তার সৎ মাকে নিয়ে থাকেন।
ওর মা ছোট খাট একটা চাকুরি করে সংসার চালায়- আর সে মাষ্টারি করে যৎ সামান্য কিছু উপার্জন করে। বাবা কোনই সহযোগীতা-তো করেনই না, এমনকি মেয়ে দুটোর খোঁজ খবরও নেয় না।
বাবা চলে গেলে হঠাত সংসারে অসচ্ছলতা! ওদের কোন বিকল্প আয়ের পথ জানা নেই। কোন মতে খেয়ে পড়ে বোনের পড়ার খরচ চালাতে হিমশিম খায়।ওর মা এক বান্ধবীর কাছে বিদেশীদের কাছে ঘর নাকি সাবলেট দেয়া যায় এটা জেনে- কিছু বাড়তি আয়ের পথ হবে ভেবে, বাঙ্গালীদের ভাড়া দিয়েছিল।
ও বরাবরই এর বিরোধিতা করেছে। মা-কে বোঝাতে চেয়েছে, যেভাবে চলছে চলেতো যাচ্ছে। বাইরের লোকের ভাড়া দিলে একটা রুমে তিনজন মানুষ কেমনে থাকবে।
ওর মা ভীষণ বেয়াড়া টাইপের মহিলা কারো কথাই শোনে না- যে কারনে বাবার সাথে বনিবনা হয়নি। তারপরে বোনটা আবার বেশী চঞ্চল, খানিকটা উগ্র আর খরুচে। সেও মায়ের সাথে লাফাল। মা আবার তাকে বেশী প্রশ্রয় দেয়।
ইস এ কটা দিন কি যে ভয়াবহ ছিল। একটা রুমে অচেনা অন্য ভাষাভাষী সাত আটজন পুরুষ মানুষ! ওরা তিনটে মাত্র রমণী। সারাক্ষণই কেউ না কেউ আসছে যাচ্ছে। ওর মায়ের খবরদারীতে সবাই চুপ চাপ থাকলেও-একই রান্না ঘরে এতগুলো লোকের ভিন্ন ধরনের রান্না। একটা মাত্র বাথরুম সবার ব্যাবহার করা!
ও বজ্বা মোই!’ বলেই তার গায়ে ঝাঁকুনি দিয়ে উঠল- ঘেন্নায় মুখ খানিকটা কুঁচকে গেল।
আমি চা খেতে খেতে দু একটা প্রশ্ন করি আর, তার নীল চোখের দিকে তাকিয়ে ভাষা পড়ার চেষ্টা করি। কি শান্ত ভঙ্গিতে সে বলে যাচ্ছে, আমি না জানি তার কতই আপনজন। এমনিতে এরা ভালই ছিল- সোভিয়েতের সময়ে, এই অর্থ আর সরকারি অনুদানে সংসারটা ভালই চলে যেত। তখন চারিদিকে এত চাকচিক্য ছিলনা- ছিলনা রেসের ঘোড়ার দৌড়।
সোভিয়ের ভেঙ্গে যাবার সাথে সাথেই সেই অল্প বিস্তর সরকারি অনুদান বন্ধ হয়ে গেছে। মুদ্রাস্ফিতির ভয়ঙ্কর উম্ফলনে রুবলের মান কমে গেছে( উক্রাইন তখন নিজেদের মুদ্রা ছাপানোর চেষ্টা করছে। সাধারন কাগজে চার রঙ্গা ছবি ছেপে নাম দিয়েছে কুপন!)। নিত্য পন্যের দাম সাধারনের নাগালেরর বাইরে। বলা যায় মধ্যবিত্ত থেকে এক ধাক্কায় নিন্মবিত্তে নেমে গেছে তারা।
তারপরেও তার মুখে হাসি। মনে হয় এইতো আছি বেশ!
একা বাসায় সুন্দরী এক রুশ রমণীর অতি সন্নিকটে বসে আমি তখন উসখুস করছি।
তার নীল চোখের দিকে চেয়ে আমি না বলা ভাষাগুলো পড়ার চেষ্টা করি। লম্পট মানুষের ধান্দা থাকে কোন দুর্দশাগ্রস্থ রমণীর চরমতম ফায়দা লোটার। মাঝে মধ্যে আমার চোখ খানা পিছলে নজর বুলিয়ে নেয় শরিরের ভাঁজগুলোতে। এ মেয়েকে ফাঁকি দেয়া সহজ নয়-সে বোঝে আমার চাহনীত অন্তর্নিহিত মর্ম- একটু মিষ্টি হেসে গায়ের পোষাকটা গুছিয়ে নিয়ে ফের গল্প শুরু করে।
এরকম প্রতিদিন কত পুরুষের দৃষ্টিকে তার তাচ্ছিল্য বা উপেক্ষা করতে হয়।
কিন্তু এলিনার এমন গুরুভার ব্যাক্তিত্ব দেখে, মাঝে মধ্যে মনে হচ্ছে-কদমবুচি করে দোয়া খায়ের নেই।
তবে আমার দিকে তার চাহনীতে বন্ধুত্বের আহ্বান। মনের মধ্যে তারও একটা অপরাধবোধ জমে আছে- আমার বিগতা প্রেমিকার সাথে সম্পর্কচ্ছেদের জন্য পরোক্ষ সম্পর্ক থাকায়। সে সে অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত্ব করতে চায়।
আমি মনে মনে হেসে গড়াগড়ি খেয়ে বলি, আমিও চাই তুমি এগিয়ে আস।
সে আমার কথা জিজ্ঞেস করে, আমি ইনিয়ে বিনিয়ে সত্য মিথ্যা মিলিয়ে বলি। নিজেকে বেশ একটা ঋদ্ধিমান কেউকেটা হিসেবে জাহির করি।
সে তার নীল চোখ তুলে অবাক হয় শোনে... এত এলেমদার লোক রুশ ভুমিতে চরণ রেখেছে বলে। আশে পাশে কাঁচা মাটি খুজে কপালে ছোঁয়াতে চায়। আমার আগে যারা এখানে এসেছে- তারাও এমন ধারার গল্প করেছে ভেবে সে হয়ত নিজের মনে হাসে।
এর মধ্যে কয়েক প্রস্থ চা চক্র হয়ে গেছে। আমাদের গল্পে গল্পে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে গেছে।তার শরিরের অনাবৃত অংশ বলতে ঝুল স্কার্ট ছাড়িয়ে এক বিঘৎ পায়ের গোছা থেকে গোড়ালী। চোখের নজর ওখানে গিয়েই চড়কা কাটে। আর সে মাঝে মধ্যে অন্যমনস্ক হবার ভান ধরে স্কার্টের ঝুল আরেকটু টেনে নামায়।
মনের মধ্যে বড় আনচান করে আমার। মনে হয়- একে না পেলে জীবন বৃথা! হায়রে জীবন কতবার কত কারনেই না বৃথা হোল।
তৃতীয় পর্ব সমাপ্ত
পরের পর্বের জন্যঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০২১ দুপুর ২:২৭