অফিসের অলি ভাই নতুন জামা পরে অফিসে এসেছেন। প্রশংসা করতেই বললেন দামতো মাত্র তিনশ' টাকা। এ কথাটা বলার কি দরকার ছিল? এ যুগে এতো সহজ সরল হলে কি হয়? কিন্তু আমাদের অলি ভাই এতটাই সহজ সরল। বয়স হয়ে গিয়েছে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। সবাইকে তিনি ভালবাসেন। স্নেহ করেন। ইনকিলাবে বহুদিন কাজ করেছেন। এখনও সংবাদ এডিট করেন নিরন্তর।
ভালই পড়ালেখা হচ্ছে্। চাকরির বয়স শেষ। তাই শেষ চেষ্টা। আজ সারাদিন স্টাডি করেছি। পড়াশুনা করতে কষ্ট হয়। কিন্তু ছোট হলেও একটা সরকারি চাকরির আশা। তাই নিরন্তর সাধনা। হয়তো হতেও পারে আবার নাও পারে। অাল্লাহ ভরসা। অনেক কিছু ভাবনায় চলে আসে। ঢাকায় যদি সেটলড হতে হয়, তবে ইনকাম বাড়িয়ে ফেলতে হবে। তা না হলে ফ্যামিলি নিয়ে কষ্ট হবে। হয়তো চলে যাবে। কিন্তু ছেলেটাকে একটু ভাল করে মানুষ করতে হবে। এজন্যই চিন্তা। ভাল স্কুলে পড়াতে গেলে বেশি খরচ। কিন্তু জেলা শহরে থাকলে এ চিন্তাটা আর অাসে না। জিলা স্কুল, পরে সরকারি কলেজ, পরে ভার্সিটি। তাছাড়া জেলা শহরে অনেক স্বস্তিতে জীবন কাটানো যায়। সেখানে ঢাকা শহরের মতো এতো হাঙামা নেই। যানজট। খুন ছিনতাই সারাদেশে থাকলেও ঢাকা শহর অনেক ভয়ঙ্কর মনে হয়। এজন্য শেষ চেষ্টা। বলা যায় জান প্রাণ দিয়ে। বিসিএস, ব্যাংক, হাইস্কুল শিক্ষক অথবা প্রাথমিকরে প্রধান শিক্ষক। সাংবাদিকতার কোনো সিকিউরিটি নেই। এজন্যই তো ভয়। আল্লাহ নিশ্চই মানুষের একান্ত বাসনাকে অপূর্ণ রাখেন না।
মাঝে মাঝে অনেক কষ্ট হয় ছেলেটার জন্য। কতদিন দেখা হয় না। বাবার প্রতি অভিমান তা বুঝতে পারি। কিন্তু চোখে জল আসে। ছোট্ট ছেলেটা এতো বুঝে কি করে? মায়ের কোলে ঝাপানোই ওর এখনকার প্রধান কাজ। কার্টুন আর রেসিং দেখতে দারুণ অভ্যস্ত। চ্যানেল চেঞ্জ করলেই রাগ করে অন্যদিকে হাটা দেয়। সব মিস করছি। শুধু শুনি। মনটা খারাপ হয়ে যায়।
ছোটকালেও এমন মন খারাপ হতো। যখন বাবার কাছে কোনো কিছু চেয়ে পেতাম না। কিংবা অযাচিত কেউ কোনো কথা বলে কষ্ট দিতো। লাইফটা এতো সহজ সরল ছিল যে কাউকে কিছু বলতাম না অভিমানে। আমার ছেলেটাও সেরকম। আমি কাছে গেলে ওর দুনিয়া যেন পাল্টে যায়। সমস্ত বাসা যেন আলোয় ভরে ওঠে। মায়ের মুখে বাবার কথা শুনলেই আনমনে তাকিয়ে থাকে। কি যেন ভাবে। হিসাব মিলাতে পারে না। বাবা একদিনের জন্য আসে আবার কোথায় চলে যায়।
সেই ছোট বেলায় ফিরে যায় মন। প্রাইমারি স্কুলের মাঠে কত খেলা করতাম। সোনালী দিনগুলো এখন স্মৃতির পাতায়। ক্লাস ফাইভেই ভাবতাম কবে হাইস্কুলে ভর্তি হবো। মনটা উশখুস করতো। সিক্সে ভর্তি হলে দুবছর পরে মনে হতো কবে ম্যাট্টিক পাস করবো। শুধু নানা চিন্তা হতো। কবে বড় হবো। সেই হাইস্কুলও পার করলাম। ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারের সময় মতো হতো বিশ্ববিদ্যারয় হাতছানি দিচ্ছে। কবে পাড়ি দেব স্বপ্নের পথে। (চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১৬ বিকাল ৪:২৯