'দারিদ্র্যকে আমরা জাদুঘরে পাঠাতে পারি'
-মুহাম্মদ ইউনূস
এই কথাটি শুনলে আমার হাসি পায়। কষ্টের হাসি।
কেন হাসি পায় আগে আমার কথাটি শোনেন। তারপর গালি দেন আর তালি দেন মাথা পেতে নেব।
একদিন আমার বাড়ির দারোয়ানের সাথে কথা হচ্ছিল। সে তাঁর দুঃখ কষ্টের কথা শোনাচ্ছিল। কথায় কথায় সে জানাল যে তার চল্লিশ হাজার টাকা গ্রামীণ ব্যাংকের কাছে ঋণ আছে। সেই ঋণ শোধ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। এই স্বল্প বেতনের চাকরি দিয়ে সংসার চালাবে না ঋণ শোধ করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছেনা। তখন আমি বললাম যে, তাহলে তো মানুষের কাছে যা শুনি তাইতো সত্যি। গ্রামীণ ব্যাংক গরিবের রক্ত চুষে খায়। এই কথা বলতে দেরি সে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠতে দেরী নাই। সে বলল গ্রামীনের বিরুদ্ধে কথা বলবেন না। আমিতো অবাক! যে লোক একটু আগে গ্রামীনের ঋণ পরিশোধ করা নিয়ে চিন্তিত ছিল সেই এখন গ্রামীনের পক্ষে সোচ্চার। সে তখন আমাকে বলল যে আপনি জানেন, গ্রামীণ ব্যাংক আছে বলেই আমি আপনার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছি, গ্রামীণ ব্যাংক যদি না থাকত শুধু আমি না, আমার পরিবারই দুনিয়ার বুক থেকে হাওয়া হয়ে যেতাম। গ্রামীনের ঋণ ছিল বলেই আমি আমার বোনটাকে বিয়ে দিতে পেরেছিলাম, আমি যখন অসুস্থ হয়েছি তখন চিকিৎসা করাতে পেরেছিলাম, বাবার চা দোকানটা ধরে রাখতে পেরেছিলাম। তাহলে আমি কোন মুখে গ্রামীণের বিরুদ্ধে কথা বলবো? যে চল্লিশ হাজার টাকা আমি গ্রামীণ থেকে পেয়েছিলাম সেটা কি আপনি দিতেন বা আপনাদের কোন বড়লোকি ব্যাংক থেকে পেতাম? শুনে চিন্তা করে দেখলাম আসলেইতো ঠিক। এই অসহায় মানুষগুলোকে কে ঋণ দিত?
কিন্তু ইদানীং নতুন করে আমার মনে আরেকটি প্রশ্নে জেগেছে। ডঃ ইউনুছ ও গ্রামীণ ব্যাংক দারিদ্র বিমোচনে অবদান রাখার জন্য সারা পৃথিবীতে আজ আইকন। কিন্তু আসলেই কি দারিদ্র বিমোচন হচ্ছে? যদি হয় সেটা কতটুকু? এই যে আমার দারোয়ান, সে গ্রামীণ থেকে তার কষ্টের সময় ঋণ পেয়েছে। সেটাদিয়ে সে হয়তো সাময়িক ভাবে উপকৃত হয়েছে। কিন্তু তার কি দারিদ্র বিমোচন হয়েছে? কিংবা আদো কি তার দারিদ্রবিমোচন হবে? আমি জানি গ্রামীনের ঋণ নিয়ে এই দেশের লক্ষ লক্ষ গরীব দুঃখী মানুষ উপকৃত হচ্ছে কিন্তু সেটাকে কোন ভাবেই দারিদ্রবিমোচন বলা যাবে না। এত ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে আসলেই দারিদ্র বিমোচন করা সম্ভব নয়। এই কারণেই যখন বারাক ওবামার মুখে ডঃ ইউনুস দারিদ্রবিমোচনে অবদানের জন্য প্রশংসা করে বক্তব্য দিতে দেখি তখন মনের মধ্যে খচ্ খচ্ করে উঠে। আমার ইচ্ছে করে তাদের বক্তব্যকে শুধরে দিতে, শব্দটি আসলে হবে ডঃ ইউনুস নোবেল পেয়েছেন দরিদ্রদের সহায়তা করার জন্য। দারিদ্রবিমোচনের জন্য নয়।
অনেকেই হয়তো ভাবছেন আমি ডঃ ইউনুসকে ছোট করে দেখছি। মোটেই না। ইউনুস নোবেল পাওয়ার জন্য যোগ্যবলেই হয়ত তা পেয়েছেন। কিন্তু তিনি যে বলেন দারিদ্র্যকে আমরা জাদুঘরে পাঠাতে পারি এই কথাটি আমার একদমই বিশ্বাস হয় না। গ্রামীণের ঋণ নিয়ে কেউ ধনী হয়েছে এমন আমি কখনও শুনিনি। হয়তে খেয়ে পরে বাঁচতে পারে কিন্তু এটাকে কোন ভাবেই আমি দারিদ্রমুক্তি বলে মানতে রাজি নয়।
আমার মনে হয় গ্রামীণ যদি তাদের ঋণ দেওয়ার পলিসি বদল না করে তাহলে কোন ভাবেই গ্রামীনের ঋণ নিয়ে কেউ আর যাই হোন অন্তত ধনী হতে পারবে না।
সুতরাং গ্রামীণের ঋণ কর্মসূচী এভাবে চলতে থাকলে সারা দেশই একটি দারিদ্রের যাদুঘরে পরিনত হবে।