somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজউক স্কুলের ক্লাস সিক্স পড়ুয়া শিক্ষার্থীর প্রপোজ করার ভিডিও প্রসঙ্গে কিছু অপ্রিয় কথা

১১ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্লাস সিক্সে পড়ার সময় আমার মাথায় কী ঘুরত? স্কুলে যাব। বন্ধুদের সাথে গল্প করব। কী নিয়ে গল্প করব? ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট কার্টুন নিয়ে বা ড্রামা সিরিয়াল সিনবাদ নিয়ে। আমাকে প্রতিদিন টিফিন বাদে পাঁচ টাকা দেওয়া হত। তখনকার দিনে পাঁচ টাকা আমার জন্য অনেক কিছু। আমি বাজেট করতাম। আজ দুই টাকা দামের স্টিকার কিনব, এক টাকার তেঁতুল মাখা খাব আর সবশেষে দুই টাকার চটপটি খাব। আমাদের সময়ে আনন্দ ছিল গল্প করায়, খাওয়ায়, দৌড়াদৌড়িতে।

বর্তমান সময়ে ক্লাস সিক্সের ছেলেমেয়েরা আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। সম্ভাবত এখনকার ছেলেমেয়েরা মায়ের পেট থেকে বের হয়েই এগোনোর প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে। তারা প্রকাশ্যে প্রপোজ করতে জানে, তারা হাঁটু গেড়ে বসতে জানে, প্রিয়জনকে জড়িয়ে ধরতে জানে, এমনকি চুমু খেতেও ভয় পায় না। আসুন করতালি দেই।

আমরা ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের পরের প্রজন্ম এগিয়ে যাচ্ছে। বড্ড এগিয়ে যাচ্ছে। ওদের আর দোষ কী? টেলিভিশন খুললেই বিভিন্ন উসকানিমূলক বিজ্ঞাপন। বডি স্প্রে মাখলেই নাকি মেয়েরা রুমে টেনে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। রং ফর্সাকারী ক্রিম মাখার উদ্দেশ্যেই হচ্ছে কীভাবে ছেলেদের মন জয় করা যায়। এছাড়া বিদেশী রিয়েলিটি শো, সিরিয়াল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আর খারাপ ওয়েবসাইটগুলো তো আছেই। যেগুলো ক্রমাগত শিক্ষা দিচ্ছে ‘আসো, উপভোগ করো।’

এসব দেখতে দেখতে বড় হওয়া ছেলেমেয়েদের মাথার ভিতর ঢুকে গেছে যে বিপরীত লিঙ্গের মানুষটি সবসময় তার জন্যই অপেক্ষা করছে। প্রেম, ভালোবাসা এবং ফিলিংস (এই শব্দটির বিকল্প দিতে ইচ্ছা করল না) নেওয়ার জন্যই তারা এই পৃথিবীতে এসেছে। তাই দেরি করা যাবে না।

ক্লাস এইটের এক ছেলের সাথে সেদিন কথা হচ্ছিল। জানতে পারলাম তার তিনটা ফেসবুক এ্যাকাউন্ট, আর চারটা গার্লফ্রেন্ড। দুইজনের সাথে তার নিয়মিত দেখা হয়। বাকি দুইজনের সাথে শুধু চ্যাট হয়। তবে এর মধ্যে সে একজনকেই বিয়ে করতে চায়।

আমার এক বন্ধুর দূর সম্পর্কের ভাগ্নের গল্প শুনছিলাম সেদিন। ক্লাস ওয়ানে পড়ে। তার মা বাবা বর্তমানে ছেলের একটা বিষয় নিয়ে খুব বিব্রত হচ্ছেন। কোন মেয়ে তাদের বাসায় বেড়াতে এলেই ছেলে তাদের বলতে শুরু করে, “তুমি আমাকে বিয়ে করবে? আমি তোমাকে ভালোবাসি?” প্রথমদিকে সবাই ব্যাপারটা মজার ছলে নিলেও পরবর্তীতে বিষয়টা সিরিয়াসলি নিতে বাধ্য হয়েছে। কারণ বাচ্চাটা এসব নিয়ে একটু বেশিই পাগলামি করছে। যেমনঃ ''ওর সাথে ফোনে কথা বলিয়ে দাও, না হলে খাব না, পড়ব না। ও কেন আমাদের বাসায় আসে না?” বাচ্চাটির পাগলামির মাত্রা ক্রমশ বাড়ছে। শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও ঘটনা শতভাগ সত্যি।

ছেলেমেয়েদের এহেন অধপতনের পিছনে সবচেয়ে বড় দায় অভিভাবকের। তারা ছেলেমেয়েদের সময় দেয় না, নৈতিকতা শিক্ষা দেয় না, শাসন করে না আবার প্রয়োজনমত ভালোবাসতেও জানে না। হয়ত রাজউক স্কুলের ক্লাস সিক্স পড়ুয়া এই অসভ্য ছেলেমেয়েগুলোকে বহিস্কার করা হবে। কিন্তু তার আগে এদের মা বাবাকে কি কোন শাস্তি দেওয়া যায়? জানি না বাংলাদেশের আইনে এমন কোন বিধান আছে কি না। তবে আমি খুব করে সেই অভিভাবকগুলোর শাস্তি চাইব।

প্রিয় অভিভাবক, কোনভাবেই কলেজে উঠার আগে আপনার সন্তানকে মুঠোফোন কিনে দেবেন না। এর বাইরে প্রতিনিয়ত তাকে সমাজের ভালো খারাপ দিকগুলো বোঝানোর চেষ্টা করবেন। চেষ্টা করবেন ধর্মীয় এবং সামাজিক রীতিনীতিগুলো জানানোর। এছাড়া তার ভালো কাজগুলোর প্রশংসা করতেও ভুলবেন না। তাকে সৃজনশীল বিভিন্ন কাজে ক্রমাগত উৎসাহ দিন। তাকে ভালো রেজাল্টের চেয়ে ভালো মানষ হওয়ার তাগিদ দিন।

সবচেয়ে বড় কথা আপনার সন্তানকে সময় দিন। তাকে চোখে চোখে রাখুন। প্রয়োজনে চড় মারতে শিখুন আবার বুকে জড়িয়ে রাখতেও শিখুন। না শিশু নির্যাতন করতে বলছি না। চড় মারা মানে মেরে দাঁত ফেলে দেওয়া নয়। বরং পিঠে একটা আলতো করে মারা চড়ে সে বুঝতে পারবে ‘আমি কোন ভুল করেছি।’

মা বাবার হাতেই একটা সন্তানকে ঠিকপথে রাখার শক্তিটা গচ্ছিত থাকে। আপনি যতই দায়িত্ব এড়াতে চান কথাটা শতভাগ সত্যি। আপনার শরীরের অংশকে দয়া করে এমন কুলাঙ্গার হতে দেবেন না, কিছুতেই না।

- রিয়াজুল আলম শাওন
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০১৬ রাত ৩:৩৮
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি অবিশ্বাস্য ঘটনা

লিখেছেন জুয়েল তাজিম, ২৮ শে মে, ২০২৫ সকাল ৯:৩৫

লিবিয়ায় এক হজযাত্রীর ঘটনা আমাদের আবারও মনে করিয়ে দিল—"আল্লাহর হুকুম ছাড়া কোনো কিছুই হয় না!"
ঘটনার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা:
একজন হজযাত্রী পাসপোর্ট জটিলতায় আটকে যান, ফলে তাকে ছাড়াই বিমান উড়াল দেয়। তিনি কেঁদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াত: ব্ল্যাক হর্স নাকি তুরুপের তাস?

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ২৮ শে মে, ২০২৫ দুপুর ২:০৫



বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শাসনকাল ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর যুদ্ধাপরাধ থেকে মুক্তি, এনসিপির সঙ্গে গোপন সম্পর্ক ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে বৈঠক—সব মিলিয়ে কী ইঙ্গিত দিচ্ছে?


বাংলাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বড়শি

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৮ শে মে, ২০২৫ দুপুর ২:৩৭


পুকুরে গোছল করা একদম নিষেধ ছিল আমার। কানের অসুখ,তাই গোছলের সময় তুলার ভেতর সামান্য নারিকেল তেল ভিজিয়ে নিয়ে দুই কানে সিপি দিয়ে গোছল করতে হতো। সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের পাঁঠারা দুধ দেবে, বীজ দেবে, গাভী-ছাগীদের চাকরি খাবে!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৮ শে মে, ২০২৫ রাত ৯:১২


গাইবান্ধা, কুষ্টিয়া আর জয়পুরহাট - তিন জেলার তিন পাঁঠা মিলে বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ খাতে এক নতুন বিপ্লব সৃষ্টি করেছে। এই পাঁঠারা শুধু প্রজননেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং এখন দুধ দিচ্ছে, এমনকি গাইবান্ধার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনাদের মতামত জানতে চাই।

লিখেছেন কাল্পনিক_ভালোবাসা, ২৮ শে মে, ২০২৫ রাত ১১:০২

প্রিয় ব্লগার,
আশা করি আপনারা ভালো আছেন।
বিগত এক দশকের বেশি সময় ধরে সামহোয়্যারইন ব্লগ শুধু একটি লেখার প্ল্যাটফর্ম নয়, এটি হয়ে উঠেছে এক ধরনের লেখালেখির মাধ্যমে সামাজিক সংলাপ তৈরির জায়গা—যেখানে গড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×