মানুষের মাথার খুলিতে পাপুয়া নিউ গিনির আদিবাসীদের শিল্পকলা!!
পাপুয়া নিউ গিনির আদিবাসীরা ছিন্ন মস্তকের উপর বিভিন্ন কারু কারয করত । এধরনের কারুকাজ করা ছিন্ন মস্তক আর কোথাও পাওয়া যায় না।মাইকেলের প্রথম লখ্য ছিল এধরনের ছিন্ন মস্তক। তাছাড়া বিস পোল (৩০ ফুট লম্বা কাঠের কারুকার্যখচিত পোল) এবং কাঠের ক্যানো (নৌকা) সংগ্রহ করার ইচ্ছা ছিল।

মাইকেল প্রথমবার পাপুয়া গিয়েছিলেন অভিজ্ঞ একটি টীমের মেম্বার হিসাবে। কিন্তু এবার তার টীমে কোন লোক নেই । তাই তিনি ডাচ সরকারের নিকট একজন গাইড চাইলেন । (পাপুয়া নিউ গিনি তখন ডাচ কলোনি ছিল ।) ডাচ সরকার তাকে ডাচ ব্যুরো অফ নেটিভ অ্যাফেয়ার্সের রেনে ওয়াসিন্ক সাথে দেন একজন গাইড হিসাবে।কিন্তু রেনে ছিলেন মুলত একজন নৃতত্ববিদ । বুশম্যান হিসাবে তার কোন অভিজ্ঞতা ছিল না ।

তারা ৩০ ফুট লম্বা একটি মোটর চালিত নৌকা (ক্যানু) নিয়ে অভিযানে বেড়িয়ে যান। তারা আদিবাসীদের কাছে যান এবং ডাচ মিশনারীদের সহায়তায় তাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেন। তিনি আদিবাসীদের বিভিন্ন শিল্পকর্ম যোগাড় করেন ।এই সময় মাইকেল ছিন্ন মস্তকের জন্যে ১০টি কুঠার দেবেন বলে ঘোষণা দেন। মাইকেলের এই আচরন ডাচ সরকারকে ক্ষুব্ধ করে । কারণ এটি আদিবাসীদের মানুষ হত্যা করতে উদ্বুদ্ধ করবে।

মাইকেলের জন্য এই অভিযান ছিল খুব কষ্টকর । তারপরও বিরল শিল্প কর্ম সংগ্রহের লক্ষ্যে তিনি তা চালিয়ে নিতে থাকেন।রেনের ভাষ্যমতে তাদের টীমে কোন ভাল বোট ম্যান ছিল না। শুধু কাজের সুবিধার জন্য অল্প বয়সী দুজন আদিবাসী বালক ছিল। ১৯৬১ সালের নভেম্বরের ১৮ তারিখে তারা আইলান্ডেন নদী দিয়ে যাচ্ছিল। সাগরের বিস্তীর্ণ মোহনায় এসে জোড়াল স্রোতের তোড়ে তাদের নৌকায় পানি ঢোকে ও তা উল্টিয়ে যায়। তাদের সাথের আদিবাসী দুই বালক পেট্রোলের জেরিকেনের তেল ফেলে সেটাকে লাইফবয় করে সাহায্যের জন্যে কুলের সন্ধানে ছুটে যায়। মাইকেল ও রেনে উল্টানো নৌকা ধরে ভাসতে থাকেন খরস্রোতা নদীর মোহনায়। স্রোত নৌকাটাকে এবং সাথে সাথে মাইকেল ও রেনেকেও সাগরের দিকে টেনে নিতে থাকে। তাদের আশা ছিল সাহায্য আসবে সহসাই – এবং এই আশায় একটি রাত ভেসে কাটায় তারা। ভোর পাঁচটার দিকে তারা তীরের দেখা পায় এবং আন্দাজ করে ৪ থেকে ৭ মাইল দুরে তা হবে। তারা নৌকার কাঠ ভেঙ্গে দাড় বাইতে চেষ্টা করে উল্টানো নৌকার দিক পরিবর্তনের জন্যে। কিন্তু ব্যর্থ হয়। তারা ক্রমশই সমুদ্রের দিকে ভেসে যাচ্ছে দেখে মাইকেল সাঁতরে কুলের দিকে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়। রেনে তাকে বোঝাবার ব্যর্থ চেষ্টা করে।মাইকেল রেনেকে বলেন “এতটুকু পথ তিনি পারি দিতে পারবেন”। রেনে সাঁতার ভাল মত পারেন না তাই বোটের কাছে থেকে গেলেন।

সেই আদিবাসী ছেলে দুটি সাঁতরে তীরে পৌঁছে খবর দেয়, যে মাইকেল ও রেনে বিপদে পড়েছে। পরদিন সকালে ডাচ সরকার ১২টি নৌকা ও সার্চ প্লেন সহকারে উদ্ধার টিম পাঠায়। নভেম্বরের ১৯ তারিখ বিকেলে রয়্যাল ডাচ নেভি রেনেকে সাগর থেকে উদ্ধার করে। কিন্তু মাইকেলের কোন হদীস পাওয়া যায় নি।
এই খবর পেয়ে মাইকেলের বাবা গভর্নর নেলসন রকফেলার পাপুয়া ছুটে আসেন। তার তত্ত্বাবধায়নে ডাচ এবং অস্ট্রেলিয়ার নেভি আরও দশদিন সার্চ করে, কিন্তু মাইকেলকে আর পাওয়া যায় নি। রকফেলার পরিবারের গুরুত্ব বিবেচনা করে সংবাদপত্র বিভিন্ন ধরনের চটকদার সংবাদ তৈরি করতে থাকে । যদিও রেনে মনে করেন যে মাইকেল ভাটার সময় সাঁতরে কুলে যেতে পারেন নি।প্রথম দিকে প্রচার হয় কোন কুমীর বা হাঙ্গর মাইকেলকে খেয়েছে তাই সে কুলে পৌঁছাতে পারে নি। এর পর বিভিন্ন সময় প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে খবর এসেছে মাইকেলকে জঙ্গলিরা ধরে রেখেছে বা সে স্বেচ্ছায় তাদের সাথে আছে। এ জন্যে মাইকেলের পরিবার কখনই তার ফিরে আসার আশা ছাড়ে নি।
তবে মুল রহস্য উম্মচন করেন সাংবাদিক এবং আরগসি(Argosy) ম্যগাজিনের সম্পাদক মিল্ট মাখলিন । মাইকেলের অন্তর্ধানের সাত বছর পর তার আরগসি পত্রিকার অফিসে এক অস্ট্রেলিয়ান চোরাকারবারি দনাহুর (Donahu) সাথে সাক্ষাৎ হয়। এই লোক মিল্টকে বলেন “সে মাইকেলকে তিনি ১০ সপ্তাহের মধ্যে নিজ চোখে দেখেছেন”। তিনি আর বলেন। মাইকেল যে জায়গা থেকে হারিয়ে গেছে, সেখান থেকে শত মাইল দূরে ট্রবিয়ান্ড দ্বীপের কানাপুয়া গ্রামে একজন সাদা চামড়ার লম্বা দাঁড়ি ওয়ালা এক লোক দেখেছেন । লোকটি ঠিক মত হাটতে পারে না । তার দু পায়ে পুড়ান জখম বোঝা যায়। এবং সে ভয়ার্ত ভাবে তাকে ফিস ফিস করে বলেছে “আমি মাইকেল রকফেলার , আমাকে বাচান......।“ মিল্ট মাখলিনের সামনে তক্ষণ একটা লোভনীয় সংবাদের হাতছানি। দনাহুরকে আর জিজ্ঞাসা করার আগেই সে চম্পট দেয়। মিল্ট মাখলিন ভাবেন মাইকেল হয়ত কোন ভাবে বেঁচে গেছেন এবং মানুষ খেকোদের হাতে বন্দী হয়ে আছেন। কিন্তু তার পারিবারিক পরিচিতির কথা চিন্তা করে সংবাদটা প্রচার করার পূর্বে নিজে একবার যাচাই করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু চোরাকারবারি যে দ্বীপের কথা বলেছিল ম্যাপে তা পাওয়া যাচ্চিল না।
মিল্ট মাখলিন মাইকেলের অন্তর্ধানের আট বছর পর পাপুয়া নিউ গিনি যান এবং নিজ উদ্যোগে অনুসন্ধান চালান । তার অনুসন্ধানে বেরিয়া আসে চমকপ্রদ সব তথ্য । এবং পাপুয়া নিউ গিনি বিশ্বব্যাপি পরিচিতি লাভ করে “ মানুষ খেকোদের দেশ” হিসাবে। তিনি আসমাতদের গ্রামে কাজ করা এক ডাচ মিশনারীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন যে জঙ্গলিরা তাকে ধরে খেয়ে ফেলেছে। এই মিশনারী জানান যে মাইকেল যেখানে অদৃশ্য হয়েছে তার অনতিদুরেই পাঁচজন আসমাত লোককে ডাচ পুলিশ মাইকেল রকেফেলারের অন্তর্ধানের বছর দুই আগে হত্যা করে। তারা প্রতিশোধ নেবার জন্যে মুখিয়ে ছিল। পানিতে থাকা অবস্থায়ই জঙ্গলিরা তীর মেরে মাইকেলকে আহত করে। এর পর তাকে ডাঙ্গায় তোলা হয় এবং মাথা কেটে নেয়া হয়। তার শরীরের কিছু অংশ রেঁধে তারা খায় এবং বাকি অংশ মাটিতে পুঁতে ফেলে। দুজন আদিবাসী যোদ্ধা জানায় যে তারা একজন সাদা চামড়ার লোককে ধরে মাথা কেটে ফেলে এবং তার যাদু এখন তাদের কাছে। এদের একজন যাদু হিসেবে একটি চশমা দেখায় যা পরবর্তীতে মাইকেলের চশমা বলে সনাক্ত করা হয় । মাখলিন ১৬ম ম ক্যামেরায় এইসব তথ্য ধারন করেন।
মাইকেলের এই ঘটনা নিয়ে বেশ কটি বই লেখা হয়েছে, টিভিতে ডকুমেন্টারি ও চলচ্চিত্রায়ন হয়েছে যাতে তার রহস্যময় অন্তর্ধানের বিভিন্ন ব্যাখ্যা করা হয়েছে। অনেক গুলো ডকুমেন্টারিতে তার পরিবারের লোকজনের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছিল।
পাপুয়া নিঊ গিনি মানুষ খেকোদের দেশ ৩
পাপুয়া নিঊ গিনি মানুষ খেকোদের দেশ ২
পাপুয়া নিউ গিনি মানুষ খেকোদের দেশ ১
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:০২