somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"হেনরি কিসিঞ্জার" এক পাপিষ্ঠ ও এক রহস্যের নাম

২৩ শে জুন, ২০১৫ রাত ৮:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ইতিহাস ঘাটাঘাটি করে অথচ হেনরি কিসিঞ্জারের (হেঞ্জ আলফ্রেড কিসিঞ্জার) নাম শুনেনি এমন মানুষ দুলর্ভ । তাছাড়া বাংলাদেশের ইতিহাস ঘাটতে গেলে হেনরি কিসিঞ্জারের নাম অবধারিত ভাবে চলেই আসে । মানুষটাকে যতই অপছন্দ করি না কেন মানতে হবে এই মানুষটার মত কুটনৈতিক ব্রেইন ইতিহাসে আর দ্বিতীয় নেই । মানুষটি নিঃসন্দেহে সর্বকালের সেরা কুটনৈতিকদের মাঝে একজন । যার যার সামান্য কুট বুদ্ধিতে পানির মত রক্তস্রোত বেয়ে গেছে । দুঃখজনক হলেও সত্য যে বেটাটা এখনো বহাল তবিয়তে বেঁচে আছে এবং ২য় স্ত্রী ন্যান্সি ম্যাগিনেস সহ কানেক্টিকাটের কেন্টে এবং নিউইয়র্ক সিটিতে বসবাস করছে । সাথে সাথে মার্কিনদের অন্যতম গোপন পরামর্শদাতা/উপদেষ্টা হিসেবে এই মানুষটা আজও একটি পদ দখল করে আছেন ।

.
১৯২৩ এ জার্মানিতে জন্ম নেওয়া এই ইহুদী ব্যক্তিটি সম্পর্কে বেশ কিছু দুর্লোভ তথ্য আমার ডাইরীর তথ্য ভান্ডারে আজ অনেক দিন । যা বিভিন্ন রাজনৈতিক বই ও ফেসবুক (যেমন বিগ্রেডিয়ার জেনারেল অব. শান্তু রহমান) হতে সংগ্রহিত । যার মধ্যে একটি হল বাংলাদেশ সম্পর্কে তার বিখ্যাত মন্তব্য "তলাবিহীন ঝুড়ি" সম্পর্কিত (যা তিনি আদৈতেই করেননি) এবং ২য়টি হল বাংলাদেশের এক সাংবাদিকের সাথে তার তর্কাতর্কি ও ক্ষমা প্রার্থনার কাহিনী ।
.
.
তলাবিহীন ঝুঁড়ি মন্তব্য -
সেদিন ডিসেম্বরের ৬ তারিখ , ১৯৭১ । এ Washington Special Actions Group (WSAG) এর মিটিং এ যুদ্ধের সম্ভাব্য ফলাফল ও বাংলাদেশের অভ্যূদয়ের প্রেক্ষিতে আলোচনা হচ্ছিলো। সে মিটিং এই যুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশে “আকাল/দূর্ভিক্ষ” পরিস্থিতির বর্ননা/আলোচনা এভাবে হচ্ছিল । যেখানে মিঃ জনসনই বাংলাদেশকে international basket case বলে অবহিত করেন ।
.
"Mr. Johnson: They'll be an international basket case.
Dr. Kissinger: But not necessarily our basket case"
.
সুত্র - ( Document 235 in Volume XI of the Foreign Relations of the United States series for 1969-1976 titled "South Asia Crisis, 1971")
.
দুর্ভাগ্যজনক ভাবে সেই ভুল কে ‘সত্য’ বলে ইতিহাসে স্থান দেয়া হয়েছে । তবে এখানেও একটু বড় মাপের কিন্তু আছে
.
- Basket Case কি ? অবশ্যই এর বাংলা কিন্তু “তলাবিহীন ঝুড়ি” নয়, অর্থাৎ Bottomless Basket নয়। উত্তর আমেরিকার ইংলিশ ভাষার একটি Phrase হচ্ছে Basket Case । ২য় মহাযুদ্ধের পর এর ব্যবহার শুরু হয়। যে সকল সৈনিক যুদ্ধে অংগহানির পর অনেকটা “Vegetative Stage” জীবন যাপন করছিল । (“Vegetative Stage”: A disorder of consciousness, or impaired consciousness, is a state where consciousness is affected by an injury to the brain)
যাদের সরকারি সাহায্য ছাড়া চলার উপায় ছিলনা। তাদের বলা হত বাস্কেট কেইস। হ্যাঁ, যে কোন যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশই বাস্কেট-কেইস হয়ে যায়, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কেন আর কি উদ্দেশ্যে এ দেশের সংবাদপত্র বাস্কেট-কেস কে Bottomless Basket বানালো – সে ইতিহাস হয়তো কখনোই জানা হবে না। হয়তো এটা সাংবাদিকের ভুল হয়তো বা না ।
.
.
সাংবাদিক কর্তৃক অপমানিত হবার ঘটনা-
.
সচরাচর বাংলাদেশী সংবাদিকরা হেনরি কিসিঞ্জারকে নাগাল পান না কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে এক বাংলাদেশী সাংবাদিক কাজী ইনসানুল হক জাপানে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তার নাগাল পেয়ে যান । এবং চোখের সামনে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রত্যক্ষ বিরোধীতাকারী সেই দাম্ভিক ও প্রচন্ড ক্ষমতাবান বাক্তিকে দেখে নিজের অজ্ঞাতেই কঠিন সুরে প্রশ্নটি করে ফেলেন
.
-"১৯৭১ সালে আপনি তো আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিলেন"
.
সামলে নিলেন তিনি, রাগ চেপে অহেতুক বিনয় করেই দ্রুতার সাথে জবাব দিলেন -
"বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে নয়, ভারতীয় অগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমাদের পলিসি ছিল, যাতে ভারতীয়রা পূর্ব পাকিস্তানে ঢুকে না পড়ে । জেন্টেলম্যান, সত্যটা জানবার চেষ্টা করুন"
.
-"আমাদের ইতিহাস কিন্তু আপনাকে সেভাবেই জানে এবং গণহত্যাকারী পাকিস্তানিদের আমেরিকান সমরাস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে এবং কথাটাও মিথ্যাও নয়"
.
উনি বুদ্ধিমত্তার সাথে প্রসঙ্গটি এভয়েট করে গেলেন ।
কিন্তু সাংবাদিক সাহেব নাছোড়বান্দ -"এছাড়াও স্বাধীনতা পরবর্তী সরকারকে আপনি "বটমলেস বাস্কেট "বলেছিলেন"
-"ও ভাবে বলেছি কিনা মনে নেই"
.
.
সেইদিন সাংবাদিক সম্মেলনে নির্ধারিত ২৫ মিনিটের মাঝে ১৫ মিনিটই বাংলাদেশ নিয়ে তার সাথে তর্ক বিতর্ক হয়ে গেলো । সেখানে যাতে তাকে স্পষ্ট বুঝিয়ে দেওয়া হল যে , আমাদের দেশের মানুষ আজো তাকে ঘৃণার চোখে দেখে । ব্যাপারটা উপলদ্ধি করতে পেরে , লাঞ্চের সময় হেনরী কিসিঞ্জার সাংবাদিক কাজী ইনসানুল হক কে ডাকেন । উনি কাছাকাছি হতেই ঘাড়ে হাত রেখে ক্লান্ত সুরে বলেন,
-" তোমার দেশবাসীকে জানিও, আমি তাদের বিরুদ্ধে ছিলাম না, আমার কাছে সে সময়ের সব ডকুমেন্ট আছে, আমার জীবিতাবস্থায় তোমাদের সরকারের উচিত তা সংগ্রহ করে সে সময়ের প্রকৃত অবস্থা জানার ।"

.
তার শেষ বাক্যটায় বোধ হয় কিছুটা দুঃখবোধ ছিল । একসময়ের কৃতকর্মের জন্য আফসোস আর অজ্ঞাতেই ক্ষমা প্রার্থনার আর্তিটাও ছিল । কিন্তু সাংবাদিক কাজী ইনসানুল হকের কাছে তার এই করুণ সুর পাত্তা পায়নি । কারণ মায়ের অপমানকারীকে কেউ কখনো মাপ করতে পারে না । উনি তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে হেনরি কিসিঞ্জার হতে বিদায় নেন । বিদায়ের সময় ইনসানুল চাইলে আমাদের পক্ষ হতে সরাসরি একটি কথা বলেও আসতে পারতেন
-"স্যার বাংলা ভাষায় কিসিঞ্জার বলে একটি গালি আছে , আপনি সৌভাগ্যবান এই গালির জনক কিন্তু আপনিই"
.
এছাড়াও সত্য কথা বলতে কি, আমরা তাকে মাপ করে দিলেও কি বা না দিলেও কি । এই মানুষটাকে ইতিহাস ক্ষমা করবে না ইন্দোচীন, বাংলাদেশ, চিলি, সাইপ্রাসএবং পূর্ব তিমুরের ৩০ মিলিয়ন মুক্তিকামী জনতা, বিপ্লবীদেরকে হত্যা অপহরণ অত্যাচারের কলকাটি নাড়াবার জন্য । ইতিহাস তাকে চিরকালই এক পাপিষ্ট খলনায়ক হিসেবে মনে রাখবে ।

সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৭
৮টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×