অবশেষে হাম হাম ঝর্ণা !!!!
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
সবাই হামহাম ঘুরে আসলো । কিছু বিয়াইত্যা লোকজনের পাল্লায় পইরা আমরা এখনও যাইতেই পারলাম না :-(
ফেসবুকে দিদারের আক্ষেপভরা এই স্ট্যাটাস !!!! আফসোসটা হাম হাম না যেতে পারার জন্য বেশী নাকি বিয়ে করতে না পারার জন্য বেশী সেটা অবশ্যই তর্ক সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু তাই বলে বিবাহিত লোকজন মানেই গৃহবন্দী লোকজন এমনটাত মেনে নেয়া যায়না !!!! সদ্য বিবাহিত তারেক পিছুটান না দিলে আমরা বিবাহিত লোকজনই সংখ্যায় এগিয়ে থাকতাম ক্রেজী ভয়েজার গ্রুপের সদ্যসমাপ্ত হাম হাম ট্যুরে !!! তবুও আমরা হারিনি- দশ জনের দলে সমান সংখ্যক বিবাহিত এবং ব্যাচেলরের উপস্হিতি !!!!
দেশব্যাপী সদ্য বেশ আলোচিত এই হাম হাম ঝর্ণা দেখতে যাবার প্ল্যান বারবার এদিক সেদিক হলেও শেষমেষ আমরা রওয়ানা দিলাম শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশ্যে। সায়েদাবাদ থেকে শ্যামলী পরিবহনের শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশ্যে শেষ বাস ছাড়ে রাত সাড়ে দশটায় !!! সবাই একটা বিষয় নিয়েই চিন্তিত মাঝ রাত্তিরে বাস থেকে নেমে কি করব !!! আমাদের চিন্তা শেষ হবার আগেই রাত আড়াইটায় বাস আমাদেরকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল। এদিক ওদিক হেঁটে আমরা ভাবছি একটা হোটেলে উঠে কিছুক্ষন ঘুমিয়ে নিলে খারাপ হয়না । এমন সময় এক টহল পুলিশ বাইকে করে এসে হাজির। কোথায় যাব- আমাদের গন্তব্যের কথা শুনে তার অভিব্যক্তি দেখে মনে হল ঐটা কি কোন যাবার জায়গা হল , আমি এতদিন ধরে আছি আজও গেলাম না !!!! এইভাবে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করলে সমস্যা হতে পারে জানিয়ে হোটেলে উঠার পরামর্শ দিল সে, না উঠলে চোর ডাকাত হিসেবে গ্রেফতার করা হবে কিনা সেই নিয়ে অবশ্য কিছু বললনা । সে চলে যাবার পর আমরা ভাবলাম ধরে নিয়ে যদি সকালে ছেড়ে দিত মারধর ছাড়া তাহলে অবশ্য মন্দ হতনা, থানায় রাত্রিযাপনের একটা অভিজ্ঞতা !!!!! অবশ্য পুলিশের থেরাপি ছাড়া থানায় থাকা সম্ভবনা বলে সে ইচ্ছা ত্যাগ করে আমরা একটা হোটেলে উঠে গেলাম।
সকালে সাড়ে ছয়টায় নাস্তা শেষ করার আগেই হামহাম জয়ী নাসির ভাই এর ঠিক করে দেয়া গাড়ি নিয়ে হাজির ড্রাইভার আলাল ভাই আর তার সহকারী । পর্যাপ্ত পানি, চিপস, বিস্কিট নিয়ে শুরু হল আমাদের যাত্রা ।
জলপতনের যে শব্দ স্হানীয় ভাষায় তার উচ্চারন - হাম হাম ।৭ হাজার ৯শ ৭০ একর আয়তনের রাজকান্দি সংরক্ষিত বনাঞ্চল -শ্রীমঙ্গলের কুরমা বন বিটের পাহাড়ের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত ন্যাশনাল টি কোম্পানির চাম্পারায় চা বাগান আর পূর্ব-দক্ষিণে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্তাঞ্চল। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার পূর্ব দিকে দুর্গম পথের শেষে বনের মাঝে অবস্থিত এ জলপ্রপাতটি ।
নয়নাভিরাম চা বাগানের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দুপাশে রেখে আমরা এগিয়ে যেতে থাকি, পেছনে রেখে যায় লাউয়াছড়া সংরক্ষিত বনাঞ্চল। কুরমা বন বিট থেকে আমাদের সাথে যোগ দিল গাইড মোহাম্মদ শামীম । কলাবন চা শ্রমিক পাড়ায় এসে আমাদেরকে গাড়ি থেকে নেমে যেতে হল, লোকালয়ের কাঁদা মাড়িয়ে আমরা পথ চলতে লাগলাম।
যেখান থেকে বনের শুরু সেখানে এসে শামীম ভাই আমাদের সবার হাতে একটা একটা করে বাঁশের লাঠি ধরিয়ে দিলেন, পূর্ববর্তী কোন দল সফর শেষে সেগুলো ফেলে গিয়েছিল যেমনটা আমরাও ফেলে এসেছিলাম অনাগত ভ্রমনকারীদের জন্য , ভ্রমনের একমাত্র বিশ্বস্ত সঙ্গী এই বাঁশ ।
হামহাম যাওয়ার জন্য দুটো রাস্তা আছে, ঝিরিপথে অথবা পাহাড়ি পথ ধরে। আমাদের গাইড মোকামটিলা নামক পাহাড়ি পথেই নিয়ে চলল সবাইকে। শুরুটা বেশ কোমল মসৃন পথ । ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে পথের রুক্ষতা, কোথাও হাঁটু পর্যন্ত পানি, কোথাও ঘন কাঁটাযুক্ত বন, কোথাও খাড়া পাহাড়ি ঢাল, যেতে হবেই, তাই বেশী ভাবার সময় নেই, আমরা এগিয়ে যায়, কপাল ভাল বৃস্টি ছিলনা, না হলে এই পথ পাড়ি দেয়া সহজ সাধ্য নয়। আমরা হেঁটে চলি কাঠুরেদের তৈরি করা ট্রেইল ধরে। শামীম ভাই জানান কিছুকাল পূর্বে ভালুকের আক্রমনে আহত হওয়া গ্রামবাসীর গল্প, অবশ্য আমাদের কাছে তা গল্পই মনে হয়- কারন ভালুক বা অমন কোন প্রানীর কোন অস্তিত্ব কোথাও চোখে পরেনি আমাদের। বনজ গাছের পাশপাশি পাহাড়ের খাজে আলোর সন্ধানে বেড়ে উঠা লিকলিকে লম্বা বাঁশের সাড়ি !!!!
ক্ষনে ক্ষনে থেমে পানি পান করে শক্তি সঞ্চয় করে আগানো ছাড়া হঠাৎ করে ট্রেকিং এ যাওয়া আমাদের আর কোন উপায় ছিলনা। তার উপর হঠাৎ করে নিচে নেমে যাওয়া পাহাড়ি ঢাল মাঝে মাঝে ভয় জাগিয়ে দিয়ে যাচ্ছিল , কখন শেষ হবে এই পথ !!! অবশেষে শামীম ভাই জানাল এটাই শেষ ঢাল তারপর পুরোটা পানি ময় পথ। প্রথমে স্বস্তি পেলেও সেটা উবে যেতে বেশী সময় লাগেনি যখন হঠাৎ করে কোমড় সমান পানি সামনে এসে হাজির হল। পানি মাড়িয়ে যাচ্ছিত যাচ্ছিই ঝর্ণাত সামনে আসেনা !!!!
ঝর্ণা নিয়ে কোন ক্লাশে যেন একটা কবিতা পড়েছিলাম-
ঝর্ণা ঝর্ণা
...........................
স্মৃতি শক্তি খারাপ হয়ে গেছে মনে, পড়ছেনা !!!! ঝর্ণার অপরূপ সৌন্দর্য কি সুন্দর করে কবি তুলে ধরেছিলেন হরিণের মত চপলা চঞ্চলা বিশেষনে বিশেষায়িত করে। কিন্তু আমাদের ঝর্ণা কই ???
আবারও কোমড় পানি ডিঙ্গানোর পর অবশেষে..............আহ !!!! বাঁক পেরোনর পরেই অপরূপ ঝর্ণা আমাদের সামনে ......
হাম হাম, পাহাড়ের বুক চিরে জলের পতন, অপরুপ ছন্দে জলের পতন । ক্লান্তিকর ভ্রমন পথের কথা এক নিমিসেই ভুলিয়ে দিবে হাম হাম তথা জলের কলতান । ।
এনার্জী ড্রিংক গুলো আসলেই কোন কাজের কিনা জানিনা তবে এর মাঝে মনস্তাত্বিক কোন ব্যাপার থাকতে পারে ! বন্ধু ধ্রুব সকাল বেলা ব্যাগ থেকে স্পীড বের করে বলল কে কে খাবি ? যদি একটু শক্তি পাওয়া যায় মন্দ কি, আমরা ও এই আশায় খেয়ে নিলাম। ফলাফল কি হল জানিনা , তবে আসার সময় সবাই তার কাছে আবারও চাইলাম , হতাশ করল সে, আমরা ও হতাশ হয়ে ভাবলাম থাকলে মনে হয় ভাল হত !!!
ফিরতি পথ- যে পথে এসেছি সে পথেই ফিরব নাকি ঝিরি পথ ধরে ফিরব , এই কিছুক্ষন আলোচনার পর আমরা দুটো পথই দেখার মানষে ঝিরি পথ ধরলাম।
শুরুটা তেমন ঝামেলার না হলেও হঠাৎ করে দেখা গেল কোমর সমান বা তার বেশী পানি ঝিরিতে, উপায় নাই, ব্যাগ মাথায় নিয়ে নেমে যেতে হল পানিতে। সামনে যে আরও বিপদ সংকুল পথ সেটা কি আর আমরা জানতাম । ঝিরিতে পানি এত বেশী যে তা দিয়ে পার হবার কোন উপায় নেই, বাধ্য হয়ে পাহাড়ের খাজ বেয়ে উঠা নামার পিচ্ছিল পথ দিয়ে আমাদেরকে ফিরতে হল, সামান্য পিছলে গেলেই ভয়ংকর ইনজুরির হাতছানি।
ঝিরি পথের অবস্হা এত খারাপ যে তার একটা উদাহরন হতে পারে ফিরতি পথে আমাদের কোন ছবি তোলা হয়নি, ব্যাগ থেকে ক্যামেরা বের করার কোন সুযোগই ছিলনা !!! কোন কোন জায়গায় কোনমতে পাটা রাখা যায় , তাও এদিক সেদিক হলেই শেষ এমন অবস্হা, এই বিপদ সংকুল পথ একসময় শেষ হলে আমরা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম । পরক্ষনেই ভুল ভাংল, এইবার অত্যাচার শুরু হল কাঁদা মাটির, বৃষ্টির কারনে আর আগে আর অনেক ভ্রমনকারীর কারনে প্রায় হাঁটু সমান কাঁদা, তাও বিশাল একটা পথ জুড়ে, সেই সাথে আছে কাঁটা যুক্ত বেত বন ।
সমতলে এসে যেন আমরা হাফ ছেড়ে বাঁচলাম । আহ অবশেষে আমরা.....................নিত্যসঙ্গী এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সঙ্গী বাঁশগুলোকে পথের ধারেই রেখে আসলাম পরবর্তী কোন দলের জন্য, নিশ্চিত ভাবে তারাও ফিরে এসে আমাদের মত ঘোষনা করবে আর কখনোই যাবনা ঐ ঝর্ণা দেখতে ।
এই ট্যুরেই মৃত্যু ঘটল আমার নিত্য ভ্রমন সঙ্গী , সামুতে যত ভ্রমনপোস্ট আছে তার প্রায় সবগুলোরই সাক্ষী প্রিয় স্নিকার এর। পুরোটা পথে যে চমৎকার ভাবে পিচ্ছিল পথে নিজের জীবনের বিনিময়ে আমাকে টিকে থাকতে সাহায্য করেছিল, শেষ ঝিরি পথে এসে কাঁদার চাপ আর সামলাতে পারলনা !!!
I left it safe and sound..........................
৪৭টি মন্তব্য ৪৭টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
কাঁঠালের আমসত্ত্ব
কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে
এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে । ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!
সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন
কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী
ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)
সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)
সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন