
মাননীয় প্রতিমন্ত্রী আপনার মুখে আমাদের স্বগোত্রীয় নাম শুনে প্রচন্ড আবেগাপ্লুত হয়ে সকল মনোযোগ আপনার দিকে নিবিষ্ট করেছিলাম। ভেবেছিলাম ইতিহাসে বুঝি একটি নতুন পলক যোগ হতে যাচ্ছে। মহানবী (স) ঈদের নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে আমার মত এক টোকাইকে নিজের সন্তানের মর্যাদা দিয়ে কোলে তুলে নিয়েছিলেন। আমি জানিনা ঐ ছোট্ট ছেলেটির দিকে যখন মহানবী এগিয়ে আসছিলেন তখন ছেলেটি কি আন্দাজ করেছিলো। তবে আমি একটা আন্দাজ করেছিলাম। ভেবেছিলাম হয়তো আমাদেরকে আপনি নিজের ছেলে বলে কোলে তুলে দিবেন না তবে আমাদের অধিকার বাস্তবায়নে অন্তত কথায় চিড়া ভেজাতে চেষ্টা করবেন।তাই আপনার মুখে টকাই কথাটা শুনে সব ফেলে আপনার কথা কান রেখেছিলাম। কিন্তু আপনি একি করলেন মাননীয় প্রতিমন্ত্রী! আপনি আমাদের স্বগোত্রীয় নামটাকে একটি গালী হিসেবে ব্যবহার করলেন!! মানুষ মানুষের হীনতা বুঝাতে পশুর বা লম্পটের সাথে তুলনা করে। কিন্তু আপনার প্রতিপক্ষের হীনতা তুলনা করতে আমাদের স্বগোত্রীয় নামটা ব্যবহার করলেন আপনি। আপনাদের ভুলে যাওয়া তালিকার সর্বাজ্ঞে আমাদের নাম থাকে তা আগে জানতাম কিন্তু তাতে কিছুই মনে হতো না। কিন্তু আজ অনেক কষ্ট হচ্ছে যে আপনারা আমাদেরকে মানুষ ভাবেন না। এটা ভেবে আজ বড় কষ্ট হচ্ছে।
ভোটের আগে আপনারা দুহাত জোড় করে ভোট ভিক্ষা না চাইতেই আমরা তা দিয়ে দেই। অথচ আমাদের সারাজীবনের বুক ফাটা চিৎকার আপনাদের কানে পৌছেনা। তাতেও আমরা মনে কোন কষ্ট নেই না। জীবনের গ্লানী টেনে আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে। যেহেতু আপনারা আমাদের প্রিয় দেশটার কথা চিন্তা করে ব্যাস্ত সময় কাটান সেহেতু আমাদের এই নগন্য কিছু বঞ্চিতের আবহমান কাল ধরে বঞ্চিত থাকায় কোন সমস্যাই মনে করি না। কিন্তু আজ সত্যিই ইচ্ছে হচ্ছে হিসেব করে দেখতে যে আসলেই আপনারা দেশকে কতটা দিয়েছেন। মাননীয় প্রতিমন্ত্রী মহোদয়! আমি যে রাস্তায় কাগজ টোকাই সে রাস্তায় কাগজ টোকাবার জন্য আপনার দলের লোকদেরকে আমাকে চাদা দিতে হয়। সেই রাস্তার এবড়ো-থেবড়ো বক্ষ শেষ কবে মসৃন হয়েছিল তা বেমালুম ভুলে গেছি। আমি রাস্তার যে ডিভাইডারের উপর রাতে ঘুমাতাম সেটাও ভেঙ্গে গেছে সেই কবে। আর কাগযের কথা আর কি বলবো মহাশয়! আপনাদের কি যেন মুল্যস্ফিতির ক্রমাগত উর্ধগতির জোরে লোকজন আর ব্যবহৃত কাগজ বাইরে ফেলে না। বরং বছর ধরে জমিয়ে জমিয়ে তারা তা বিক্রি করে দেয়। সয়াবিন তেলের বোতল থেকে শুরু করে টিনের ড্রাম আর কাঁচের বয়ম সহ কোন কিছুই জনগন আর বাইরে ফেলে দেয় না। সব কিছুই তারা জমিয়ে রাখে বছর শেষে কাগজওয়ালার কাছে বিক্রি করবে বলে। চিন্তা করে দেখুন তো মাননীয় প্রতিমন্ত্রী দেশের পুরো জনগোষ্ঠিকেই কি আপনারা টোকাই বানিয়ে দেন নি?
মাননীয় প্রতিমন্ত্রী মহাশয় আমার জন্মদাতা পিতা নৌকা চালিয়ে খেতেন। তিনি নৌকা খুব ভালোবাসতেন। কিন্তু আপনাদের গত টার্মের ফারাক্কা ও পানি চুক্তির ছোবলে যখন সকল নদ-নদীর বক্ষ শুকিয়ে কাঠ হয়ে যেতে শুরু করলো তখন থেকে আমার বাবার নৌকা ছেড়ে চরে আসা। কিন্তু বিধি বাম। বর্ষার সময় যখন আমরা নিজেরাই পানি উপরিতে ভুগতাম ঠিক তখনি আপনার পার্শবর্তী দেশের দাদাদের আমাদের পাওনা পানি মিটয়ে দেয়ার কথা মনে পড়তো। তারা ফারাক্কার মরন ফাঁদের অন্যরকম লিলা খেলা দেখাতেন তখন। রাতের আঁধারে সবার আগোচরে খুলে দিতেন ফারাক্কার মরন বাঁধ। আর মুহুর্তেই আমাদের ভিটেবাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যেতো। এভাবেই সর্বস্ব হয়ে আমার স্কুল ছেড়ে টোকাই হয়ে উঠা। মাননীয় প্রতিমন্ত্রী মহোদয় টোকাই ভর্তি দেশের মন্ত্রী হয়েও আপনি আমাদের টোকাইদের এভাবে অপমান করলেন!
মাননীয় প্রতিমন্ত্রী মশাই! আপনাদের বৃহদাকায় হৃদয়ের কথা আমি বেশ অবগত। আপনাদের ত্যাগের মহিমা আমাদের জনতার উৎকন্ঠার কারন হয়ে থাকবে আজীবন। আপনাদের নেত্রী মহাদয়া নিজের দেশের মান ইজ্জত কে আকাশ থেকে মাটিতে নামিয়ে এনে বাংলাদেশের প্রধান্মন্ত্রীত্ব ত্যাগ করে ভারতের মুখ্যমন্ত্রীত্ব সহাস্যে বরন করার যে নজীর রেখেছেন তা আর কে রেখেছে বলুন। এটা কি কম ত্যাগের কথা মাননীয় প্রতিমন্ত্রী? আপনাদের ত্যাগের মহিমা কি আর গেয়ে শেষ করা যায়! দেশের বিশাল জনগোষ্ঠির যেখানে বসবাসের সংকুলান নেই সেখানে তালপট্টি দাদাদের দিয়ে দেয়ার বাসনা, দেশের বাকী নদীগুলো শুকিয়ে হলেও ফারাক্কার মতো আরেকটি মরন ফাঁদ টিপাইমুখ নিজের কাধে তুলে নেয়া। দাদাদের মনোরঞ্জনের নিমিত্তে ট্রানজিটকে (অস্থায়ী) করিডোরে (স্থায়ী) উন্নীত করার মাধ্যমে দেশে চুড়ান্ত পরাধিনতার পরিনাম ডেকে আনা। এগুলো তো ত্যাগের ইতিহাসে মহোজ্জল তারকা হয়েই থাকবে অনন্তকাল।

এতকিছু ত্যাগ করার পর আর বাকি আছে গুটিকয় তেল গ্যাস ও খনিজ। সেগুলোও নাকি দিয়ে দিবেন মহাশয়। প্রতিমন্ত্রী মহাশয়! বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করেছেন বলেই কি এগুলো আপনাদের বাপের সম্পত্তি হয়ে গেল যে যখন চাইবেন দুহাত খুলে দিয়ে দেবেন? মাননীয় প্রতিমন্ত্রী মশাই তাহলে একটা কথা জেনে রাখুন। আগামী হরতালে আমি ও আমার সঙ্গী টোকাইদেরকে রাস্তায় দেখতে পাবেন। এই দেশকে রক্ষায় আমরা আজীবন টোকাই হতে রাজি আছি। আপনারা উপরতলার লোক আছেন আপরা নাহয় টোকাই হলাম। আমাদের লাশের উপর দিয়ে যদি দেশে বেচতে পারেন তাহলে করুন না দেখি!
ফেসবুকে আমার লেখা গুলো